নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি বেঁচে ছিলাম তোমাদের সময়ে

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৮

কোন একটা বিশেষ সময়, কোন একটা বিশেষ ঘটনা, কোন একটা বিশেষ ব্যাক্তি অনেক সময় মানুষের জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে, মানুষের জীবনকে মহিমান্বিত করতে কিংবা ব্যর্থ করে দিতে পারে। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বদলে দিয়েছে পৃথিবীর গতিপথ, ধ্যান-ধারণা, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি সব, সবকিছূ। এ যুদ্ধ এ্যানি ফ্রাঙ্ক-কে ঠেলে দিয়েছে করুণ মৃত্যুর দিকে, তেমনি এ যুদ্ধই তাকে চিরতরে অমর করে গেছে। আমাদের ভাষা আন্দোলন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ--আমাদের জীবনকে করেছে বিপর্যস্ত, আবার সেই জীবনকেই করেছে মহৎ। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী অমর হয়ে গেছেন ২১ শে ফেব্র“য়ারীর জন্যে, শিকাগো’র ধর্মসভা জন্ম দিল একজন স্বামী বিবেকানন্দকে, সলফেরিনোর যুদ্ধ হেনরি ডুনান্টকে দিল রেডক্রসের অণুপ্রেরণা, চে-কে চে হতে সাহায্য করল রাউল কাস্ত্রো-ফিদেল কাস্ত্রোর সাক্ষাৎ।



মহৎ মানুষেরা এমনই। তাঁরা একজন আরেকজনকে খুঁজে পান, কিংবা সেইসব পরিস্থিতির সম্মুখিন হন নিজেরা আরও বড়, আরও মহান হবার জন্য। আর আমরা সাধারণেরা থাকি তাদের সাক্ষ্য দেবার জন্য। আর সেই সাক্ষ্য দেবার সৌভাগ্যেই আমরা ধন্য হয়ে যাই,আমরা পূর্ণ হয়ে যাই। কখনও কখনও ব্যকুল হয়ে যাই আমাদের সেই সৌভাগ্য, আমাদের সেই পূর্ণতা, আমাদের সেই দুর্লভ অভিজ্ঞতা অন্যদের জানাতে। ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চেষ্টা করি -- রবীন্দ্রনাথকে যেমন দেখেছি, আমার দেখা নজরুল, বঙ্গবন্ধুর সাথে কিছুক্ষণ ইত্যাদি ইত্যাদি।



আমরা যারা, সেই সাধারণেরও আরেকটু নিম্নস্তরে অবস্থান করি, আমাদের যাদের ওই অতটুকু সৌভাগ্যও জোটেনা আমরা কিন্তু তবুও হাল ছাড়ি না। আমরা আরও একটু দুরে দাড়িয়ে দেখি, আরও একটু গলা উচু করে দেখি কী ঘটে ঘটনার কেন্দ্রে। তারপর আমরাও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বলার জন্য সাজাতে থাকি কথামালা। আমরা জীবনান্দ-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়দের পাইনি, কিন্তু আমার সময়ে ছিল হুমায়ূন আহমেদে-সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়রা। রবীন্দ্রনাথের বাসি কবিতা পড়েছি, শরৎচন্দ্রের পুরনো উপন্যাস পড়েছি, কিন্তু কখনও বর্তমানদের সান্বিধ্য ধন্য না হলেও, ভাবের ধন্যি-ধান্যিতেই আমি বিভোর। যেই মিলন মেলায় হুমায়ূন আহমেদ-নির্মলেন্দু গুণরা এসেছেন সেই বই মেলায় আমিও গিয়েছি, যেই উপন্যাস, যেই কবিতা, যেই নাটক বা সিনেমা তারা তৈরী করেছেন তা আমাদের জন্যই করেছেন। পড়েছি তাদের সদ্যজাত লেখা। সত্যজিত-হিচকক-ডি সিকা-কুরোসাওয়ারা যা দেবার অনেক আগেই দিয়ে গেছেন। স্টিভেন স্পিলবার্গ, জেমস ক্যামেরুনরা আমাদের জন্য বানালেন তাদের সব মাস্টারপিস। পেলে-ম্যারাডোনারা ইতিহাস গড়ে অনেক আগেই বিদায় নিলেন, মেসি রোনালদোরা আমাদের দেখাচ্ছেন কিভাবে ইতিহাস হয়।



আমাদেরতো এটুকুই সান্তনা। তবে এটুকুও নেহাৎ কম নয়। বরং যথেষ্ট এটুকুই।



বলছিলাম মহৎ মানুষেরা একজন আরেকজনকে খুঁজে পান, কিংবা সেইসব পরিস্থিতির সম্মুখিন হন নিজেরা আরও বড় আরও মহান হবার জন্য। আর আমরা সাধারণেরা থাকি তাদের সাক্ষ্য দেবার জন্য। যেমন ২০১৪ সাল থেকে যে শিশু বুঝতে শিখবে সে জানবে শচীন টেন্ডুলকার নামে একজন অসাধারণ ক্রিকেটার পৃথিবীতে এসেছিলেন। তারা শচীনকে চিনবে পুরনো খেলার পুন:প্রচার, পত্র পত্রিকার লেখালেখি আর পরিসংখ্যানের মাধ্যমে। আর তখন আমরা বলব পরিসংখ্যানের বাইরেও শচীন কী ছিলেন। বলব "শচীনকে যেমন দেখেছি"।



প্রায় সিকি শতাব্দীর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের চেয়ে বেশ কম সময় বেঁচে থেকে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন সুকান্ত ভট্টাচার্য, ভারতের ইতিহাস কোনদিন ভুলবেনা ক্ষুদিরামকে, বেশ কম সময় বেঁচেছেন তুতান খামেন বা এ্যানি ফ্রাঙ্ক, তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের চেয়ে মাত্র বছরখানেকের দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন কার্ট কোবেন বা জন কীটসরা।



আমরা বলব শচীন-লারা দ্বৈরথের কথা। আমরা দেব একটা সমতল ভূমিকে এভারেস্ট হয়ে উঠার সাক্ষ্য। আমরা বলব একজন মানুষের ঈশ্বর হয়ে উঠার গল্প। আমরা কিংবদন্তীর কথা বলব, আমি আমার সমকালের আলেখ্য বলব।



গত কিছুদিন যাবৎ চলছিল শচীন ফেস্টিভ্যাল। আজ তার যবনিকা পড়ল। ল্যাপ অব অনার, গার্ড অব অনার, সথীর্তকর্তৃক কাধে নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ, মাঠ ভর্তি দর্শকদের অভিবাদন, আবেগি বিদায়ী সম্ভাষণ, পরিবার পরিজন নিয়ে ফটো সেশন সব অনুমিতই ছিল। বিসিসিআই কোনও কার্পণ্য করেননি তার বিদায়ী আয়োজনে। বলা যায় গোটা একটা সিরিজ আয়োজন করেছে তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানকে ঘরের মাঠে বিদায় জানাতে, যা বিশ্ব ক্রিকেটেই এক অভিনব আবিস্কার। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে পূর্বনির্ধারিত সিরিজ বিসিসিআই একতরফাভাবে অনেকটা বাহুর জোরেই কমিয়ে এনে, ওয়েস্টইন্ডিজের সাথে আয়োজন করে ফেলল এই বিদায় উপলক্ষে। যেকোন যায়গাতেই ক্ষমতার ব্যবহার দৃষ্টিকটু ঠেকে। তবে দৃষ্টিকটু হলেও শচীনের বিদায় উপলক্ষে একটু না হয় হলোই। কারণ এ পৃথিবী একবারই পায় তারে, কোনদিন পায় নাতো আর।



তবে শচীনদের বদৌলতে আমদের জীবনে একটা সান্তনা পুরষ্কারও পেল। আমরাও এই অর্ধেক জীবনে কম দেখলাম না। এক ক্রিকেটেই শচীন টেন্ডুলকারকে খেলতে দেখলাম, ব্রায়ান লারাকে খেলতে দেখলাম, শেন ওয়ার্ন, মুরালিধরণ, ওয়ালস-এ্যামব্রোসদের দেখলাম। এছাড়াও অন্যান্য খেলার অনেক মহানায়ক চোখের সামনে মহানায়ক হয়ে উঠলেন। দেখলাম সাম্প্রাসকে, রজার ফেদেরারকে, সেরেনা উইলিয়ামসকে দেখলাম। দেখলাম লিওনেল মেসি, মাইকেল শুমাখার, মাইকেল ফেলপস, উসাইন, ইসেনবায়েভারা খেলছেন আমাদের সময়ে, আমার সময়ে।



যখনই ভাবি, মন থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে মহৎ করার জন্য, পূর্ণ করার জন্য, ধন্য করার জন্য। পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা থেকে বলি আমি গর্বিত, আমি বেঁচে ছিলাম তোমাদের সময়ে।

.

.

১৬.১১.২০১৩

[email protected]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সব তারকার বিদায় হয়েছে। জাভেদ মিয়াদাদ,ওয়াকার,ওয়াসিম,স্টিভওয়া, ইমরান খান, এলান বোর্ডার,গ্রাহাম গুচ,অরবিন্ড ডিসিলভা,ব্রায়ান চার্লস লারা,ম্যাক গ্রা, ওয়ালস এম্ব্রুস,গাঙ্গুলী দ্রাবিড়, এমনকি শচিন রমেশ টেন্ডুলকার সবাই বিদায় নিলেন। ওদের কীর্তি মনে থাকবে। শচিন ছিলেন সেরাদের সেরা। অন্তত রেকর্ড তাই বলবে। ওয়ান্ডার বয় শচীন ওয়ান্ডার ম্যান হিসেবে বিদায় নিলেন।তাদের ক্রিকেট পরিসংখ্যান তাকে অমরত্ব দিয়েছে। ভারতের ১০০ কোটি মানুষ তাকে গড হিসেবে জানে। :)

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৬

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়...

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: অনিরুদ্ধ রহমান,


আপনার লেখার ভাবটুকুর আলোকে বলতে চাই, নীৎসের (Nietzsche) কিছু কথা ।

ব্যক্তি মানুষের সৃষ্টি ব্যাপারে নীৎসে তার আগ্রহের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন যে, কোনও একটি রাষ্ট্রের সামাজিক অবস্থা আশ্চর্য্যজনক ভাবে ব্যক্তিত্ব সৃষ্টির স্বপক্ষে ছিলো , এর মানে এই নয় যে সেখানকার মানুষগুলো সৎ ছিলো বলেই মহৎ ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব সম্ভব হয়েছিলো - বরং জনতার দুষ্ট প্রবৃত্তির সংঘাতের ভেতর দিয়েই সম্ভব হয়েছিলো সেটা ।

তার " শোপেনহাওয়ার এ্যাজ এডুকেটর " বইতে তিনি লিখেছেন - মানবজাতির উদ্দেশ্য নিহিত থাকা চাই উর্দ্ধতম ব্যক্তিসৃষ্টির কাজে । মানবজাতি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলবে মহামানুষ সুষ্টি করার জন্যে ।

তাই আপনি যাদের যাদের কথা বললেন তারা কিন্তু আপনার - আমার সৃষ্টি । আপনার যেমন গর্ব তাদের সময়ে ছিলেন বলে , তেমনি তারাও কৃতজ্ঞ হয়তো আপনার এই ব্যক্তিসৃষ্টির অনবদ্যতার জন্যে । আমাদের মতোন জনতার বিভিন্ন প্রবৃত্তির সংঘাতের ভেতর দিয়েই তারা প্রনম্য ব্যক্তিমানুষ হয়ে উঠেছিলেন ।

শুভেচ্ছান্তে ।

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫১

সুষুপ্ত পাঠক বলেছেন: লেখাটা যে কি নিয়ে বুঝতেই পারলাম না। একটা জায়গা খুব আপত্তিকর। "রবীন্দ্রনাথের বাসি কবিতা" কবিতা বাসি হয়? পুরোনোও হয় না।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৩

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: কে বলল আপনি সুষুপ্ত পাঠক? আপনি একজন জাগ্রত পাঠক।

এসকল ক্ষেত্রে আমার মনে হয় সরল স্বীকারোক্তিই শ্রেয়--আপনাদের আপত্তি আমার পাথেয়, আমার শিক্ষা, আমার উপলদ্ধি।

জীবনানন্দ বাহিনীর পঞ্চপান্ডবকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের মহৎ আধুনিক। রাবিন্দ্রীক ধারার গীতি কবিতা সাধারণত সেই আধুনিকতার মধ্যে পরে না। যা আধুনিক নয় তাকে হয়তো পুরনো, সেকেলে বলা যেতে পারে।

সর্বোপরি এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত উপলদ্ধি। উপলদ্ধিতে থাকুক না হয় একটু ভুল।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫২

আহমেদ জী এস বলেছেন: অনিরুদ্ধ রহমান,


খুব দুঃখিত , বলা হয়নি যে আপনার লেখাটি ভালো লেগেছে বলেই উপরে এতো কথা লিখেছি ।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩১

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: Nietzsche আমার প্রায়োরিটি লিস্ট-এ আছে। এখন পর্যন্ত পড়া হয়নি খুব একটা। আপনার 'গঠনমূলক প্রশংসা' বেশ ভালো লাগল।

৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১২

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: পোষ্টে প্লাস এবং আহমেদ জী এস এর কমেন্টের জন্য উত্তম জাঝা।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৬

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: ভাই, উত্তম জাঝা কী জিনিস?

৬| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৬

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: লেখক বলেছেন: নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়...

৭| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৭

ইয়েন বলেছেন: + ,,,,, আপনার লেখা সত্যিই অনেক ভাল লাগে ,,,,

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৯

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.