নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

সর্বোচ্চ উচ্চতায় দেশের পতাকা উত্তোলনের প্রত্যয় নিয়ে দেশ সেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান এখন অস্ট্রেলিয়ায়। উদ্দেশ্য ২১-২৪ নভেম্বর রয়্যাল মেলবোর্ন গলফ ক্লাবে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ গলফ-এ অংশ নেয়া। ১৯৫৩ সালে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ গলফে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ২৪ বারের চ্যাম্পিয়ন এবং ৯ বারের রানার-আপ। নিকটতম প্রতিদন্দী দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন এবং ৪ বারের রানার-আপ।



সিদ্দিকুর রহমান প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এ আসরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার এই অনন্য যোগ্যতা অর্জন করলেন এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ দেশে গলফের আগমন সিদ্দিকুর রহমানের হাত ধরে না ঘটলেও বাংলাদেশের টাইগার উডসখ্যাত এ তারকার হাত ধরেই দেশের গলফের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদার্পণ ও বিচরণ। তার সাফল্যেই নিতান্ত অভিজাতের খেলা গলফের এ দেশে প্রচার ও প্রাসার।



প্রধানত ইংরেজিভাষী এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নত বিশ্বের দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশগুলো গলফের অবাধ চারণভূমি হলেও সা¤প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্রমাগ্রসরমাণ দেশ যেমন চীন কিংবা ভারতেও খেলাটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে। পেশাদার গলফ প্রধাণত দুই ধরনের হয়ে থাকে--ম্যচ প্লে এবং স্ট্রোক প্লে। এছাড়া বুগি প্রতিযোগিতা, স্কিন গেম, ৯-পয়েন্ট, ফোরবল, বেস্টবল ইত্যাদি নামে আরও কিছু উপ-আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক গলফ-ও প্রচলিত আছে।



যদিও বর্তমান বিশ্বে গলফ আক্ষরিক অর্থেই ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরূষ সবার খেলা, এর পরও গলফ সম্পর্কে একটা বেশ চালু মিথ আছে--ইংরেজি GOLF শব্দটি Gentlemen Only, Ladies Forbidden-এর একটি এক্রোনিম বা অদ্যক্ষরা । সাম্যবাদীরা জেনে খুশি হবেন যে এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। গলফ-এর উৎপত্তির ইতিহাস সম্পর্কে নেদারল্যান্ডস, চীন, পারস্য, রোম প্রতৃতি দেশ নিয়ে নানা মুনির নানা মত থাকলেও আধুনিক গলফ বলতে মূলত ১৫ শতকে স্কটল্যান্ডে জন্ম নেয়া গলফকেই বোঝানো হয়ে থাকে। গলফ সম্পর্কে প্রথম যে ঐতিহাসিক লিখিত রেকর্ড পাওয়া যায় তা হলো ১৪৫৭ সালে জেমস্ দ্বিতীয় কর্তৃক ধনুর্বিদ্যা শিক্ষার অন্তরায় হবার দায়ে খেলাটিকে নিষদ্ধ করা।



গলফ খেলায় উপকরণের লম্বা তালিকা থাকলেও প্রধান সরঞ্জাম মূলত দুইটি--গলফ ব্যাট বা গলফ ক্লাব এবং গলফ বল। অন্যান্য উপকরণের মধ্যে ইচ্ছে করলে টী, নিশানদন্ড, বল মার্কার, গলফ ব্যাগ, ক্লাব কভার এমনকি গ্লাভ্স, ক্যাপ এবং কেড্সও অন্তভূক্ত করা যেতে পারে। গলফে টী ব্যবহার করা হয় প্রথম শটটি খেলার জন্য বলকে মাটি থেকে একটু উচুতে রাখতে। নিশানদন্ড ব্যবহৃত হয় দূর থেকে ’হোল’ চিহ্নিত করার জন্য। কোন ব্যবহারবিধি না থাকলেও খেলার সময় প্রয়োজনভেদে একজন গলফার বিভিন্ন প্রকারের সর্বোচ্চ ১৪ টি ক্লাব ব্যবহার করতে পারে। পলফ ক্লাব সাধারণত কাঠ, লোহা, পুটার এই তিন ধরনের বা এদের শংকর হয়ে থাকে।



"যে খেলা যতটা অভিজাত সেটা ততটাই উত্তেজনাহীন এবং খেলার প্রক্রিয়াও সাধারণের জন্য যথেষ্ট দুর্বোধ্য"--সাধারণ এই নীতি গলফের ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য নয়। উত্তেজনা ক্রিকেট-ফুটবলের মতো না হলেও নিয়মনীতিতে গলফ খেলা আর দশটা খেলার চেয়ে বেশ সরল। "ক্লাব" এর আঘাতে বলকে নির্দিষ্ট দুরুত্বে অবস্থিত হোল-এ ফেলাই হচ্ছে গলফের সার সংক্ষেপ। গলফ গুটিকয়েক ব্যাট-বলের খেলার অন্যতম যেখানে মাঠের কোন নির্দিষ্ট আয়তন নেই। বরং ১০০ থেকে ২০০ একরের গলফ খেলার মাঠ বা গলফ কোর্স-কে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে বল ফেলার নির্দিষ্ট গর্ত বা ’হোল’ দিয়ে। কিছু ব্যাতিক্রম বাদে গলফ ১৮ হোলের খেলা। এবং খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয় সবকটি হোল সম্পন্ন করতে নেয়া সর্বমোট স্ট্রোকের ভিত্তিতে। নির্ধারিত স্ট্রোকের চেয়ে সবচেয়ে কম খেলা স্ট্রোকের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয় বিজয়ী।



তাই খেলাটির স্কোরিংও করা হয় প্রতিটি হোল এর জন্য নির্ধারিত স্ট্রোক বা ’পার’-এর সাথে তুলনা করে। ১৮ হোলের জন্য নির্ধারিত সর্বমোট স্ট্রোকের সংখ্যা ৭২।



যার মধ্যে চারটি হোল ৩ স্ট্রোকের, মোট ১২ স্ট্রোক; দশটি হোল ৪ স্ট্রোকের, মোট ৪০ স্ট্রোক এবং চারটি হোল ৫ স্ট্রোকের, মোট ২০ স্ট্রোক। পারের চেয়ে এক স্ট্রোক কম খেলাকে বলা হয় ’বার্ডি’। যথাক্রামে দুই, তিন ও চার স্ট্রোক কম খেলার নাম ঈগল, এ্যালবাট্রস বা ডাবল ঈগল ও কন্ডোর। এই বার্ডি বা ঈগলই একজন গলফারের পরম আরাধ্য। যেহেতু গলফ খেলায় কম সংখ্যক স্ট্রোকই একমাত্র বিবেচ্য, তাই একটা বার্ডি বা ঈগলের অর্থ হলো পারের চেয়ে -১ বা -২ এ এগিয়ে থাকা এবং জয়ের দিকে অগ্রসর হওয়া। অপরদিকে পারের চেয়ে বেশী স্ট্রোক খেলাকে স্ট্রোকের সংখ্যার ভিত্তিতে যথাক্রমে ’বুগি’, ডাবল বুগি ও ট্রিপল বুগিতে সংজ্ঞায়িত করা হয়।



প্রতি বছরই পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিভিন্ন গলফ টুর্নামেন্ট ও চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রাইজ মানি’র হিসেবে প্লের্য়াস চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ার্ল্ড গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ, দুবাই, ইউরোপিয়ান ট্যুর প্রভৃতি প্রতিযোগীতা এগিয়ে থাকলেও ঐতিহ্য ও মর্যাদার দিক থেকে বিশেষ উল্লেখযোগ্য মেজর চ্যাম্পিয়নশিপ বা শুধুই মেজর। মেজর-এ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়েরাই অংশগ্রহণ করে থাকে এবং একজন খেলোয়াড়ের খ্যাতি এবং প্রতিপত্তি বহুলাংশে নির্ভর করে মেজরের সংখ্যার উপর। প্রতি বছর ’মাস্টার্স টুর্নামেন্ট’, ’ইউ.এস ওপেন’, ’ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ’ এবং ’পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপ’ নামে পুরুষদের চারটি মেজর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্যের ’ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ’ ছাড়া এই চারটি মেজরের তিনটিই যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ক্রাফ্ট নাবিস্কো চ্যাম্পিয়নশিপ, এলপিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপ, ইউ.এস ওমেন্স ওপেন, ওমেন্স ব্রিটিশ ওপেন এবং ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এভিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ মিলে প্রতি বছর মেয়েদের অনুষ্ঠিত মেজর পাঁচটি। বিখ্যাত খেলোয়াড় এবং শিরোপার সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র অন্য যে কোন দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। বিশ্বের প্রায় ৩৫ হাজার গলফ কোর্সের মধ্যে ৫০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত।



সেদিন হয়তো আর বেশী দূরে নয় যেদিন এ দেশেও ফুটবলের গোল এর সাথে একই কাতারে উচ্চারিত হবে গলফ এর স্ট্রোক আর হোল কিংবা ক্রিকেটের উইকেট-ছয়-চার এর সাথে উচ্চারিত হবে বার্ডি-বুগি-পার শব্দগুলো। সিদ্দিকুর রহমান যে পথ আমাদের দেখালেন কে জানে সে পথ ধরে এ দেশ থেকেও একদিন উঠে আসবে না টাইগার উড্স, জ্যাক নিকলাস, বেন হোগান, আর্নল্ড পালমার, গ্রেগ নরম্যান, কেরি ওয়েবরা।



বিদেশ বিভূঁইয়ে দেশের পতাকা এর আগেও অনেকবার সগৌরবে উড়েছে। অধিকাংশ সময়ই সেই পতাকা বহনের গুরুভার হয়তো বইতে হয়েছে এগারো জনের একটা দলকে। দেশের সেই পতাকার ভার সিদ্দিকুরের একার কাধে। একজন শেরপা দিনের পর দিন এভারেস্ট জয় করে চলেন কিন্তু দিন শেষের তারার মেলায় তার দেখা পাওয়া ভার। তখন তিনি নিঃসঙ্গ শেরপা। আমাদের নিঃসঙ্গ শেরপা সিদ্দিকুরের জন্য শুভ কামনা।



তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি।

.

.

.

[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬

দূষ্ট বালক বলেছেন: অভিনন্দন সিদ্দিকুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৩

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: হুমম।

২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৩

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: পোস্টে ++

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৩

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.