নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৪

গত রাতে আনন্দ-বেদনার এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।



চায়ের দোকানে আড্ডা দিই। আড্ডাবাজরা সব অফিস আদালত থেকে আসে, নয়টা সাড়ে নয়টার আগে এসে জমতে পারে না। রাত সাড়ে নয়টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলে আড্ডা। বিএনপি-জামায়াত-এর হরতাল সফল করতে গাড়ি ভাংচুর এবং হরতাল ব্যর্থ করতে সরকারের আন্তরিক চেষ্টা, সব মিলিয়ে সারাদেশে একটা মারমার কাটকাট অবস্থা। রাত দশটাতেই নিশাচর ঢাকা যেন ঘুমে কাতর।



সোয়া দশটার দিকে হঠাৎ একটা পুলিশের গাড়ি এসে থামলো। থেমেই পুলিশ সুলভ হুমকি ধামকি--যান বাসায় যান, এত রাতে এখানে কী’ এবং আরও হালুম-হুলুম-এর সাথে দোকানের বাতি নিভিয়ে দেওয়া, শাটার ফেলে দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। বুঝি ওদের করার কিছু নেই, সব উপর ওয়ালার ইচ্ছা এবং এটা ওদের দায়িত্বের মধ্যেই পরে। তবু কানটা খানিকটা গরম হয়ে ওঠে, গালটা হয়ে ওঠে একটু লাল, খানিকটা অপমানের অনুভূতি হয়। এরকম পরিস্থিতিতে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার পড়লাম। প্রথমবার ছিল ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন এর সামরিক আমলে। মানবাধিকার লঙ্ঘন সামরিক আমলে তাও মানা যায়, কিন্তু পুরোদস্তুর গণতান্ত্রিক(!) আমলে যথা তথা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপতো অগ্রহণযোগ্য। আমরা বিনাদোষে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত।



মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর রাগ করে বাসায় ফিরে সংবাদ পত্রের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে দেখলাম উনার একটা মানবীয় ছবি। সাকিব আল হাসান হাসপাতালের বিছানায় বসে আছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ছবিটা আমাকে নাড়া দিল। প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে নয়, বরং নাড়া দিল সাকিব আল হাসানের দিক থেকে। একজন মানুষ নিজেকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গেলে তার জ্বর হলে তাকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়াটা আমাদের সদাব্যস্ত প্রধানমন্ত্রীরও দায়িত্ব বা সৌজন্যতার মধ্যে পড়ে? এবং গুরুত্বপূর্ণ কথাটা হলো যেখানে প্রফেসর ইউনূসের মতো মানুষের জন্য আমাদের সৌজন্যতার সঙ্কুলান হয়না। সাকিবের মা এবং স্ত্রীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ব্যপারটা আরও গর্বের আরও আনন্দের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সামান্য সফলতা থেকে আমি জানি নিজে গর্বিত হবার থেকে ঢের বেশী আনন্দের বিষয় পরিবারকে গর্বিত হতে দেখা, পরিবারকে গর্বিত করা।



এরকম অনেক আনন্দের সংবাদ জেনে প্রতিবারই আমার ইচ্ছে করেছে এই মহৎ মানুষগুলোকে বলি : আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধুলার তলে। সাকিবকে দেখে এমন মনে হয়েছে, ডক্টর ইউনুসকে দেকে এমন মনে হয়েছে, মাকসুদুর রহমানকে দেখে মনে হয়েছে, পালন সরকার, ঝর্ণা বেগমকে দেখে মনে হয়েছে, মনে হয়েছে এসএসসি এইচএসসির অদম্য মেধাবীদের দেখে, রিক্সা চালিয়ে, অন্যের জমিতে কাজ করে, বাজারে জুতা সেলাই করে জিপিএ ফাইভ কিংবা চায়ের দোকনে কাজ করে ঢাকা মেডিকেলে চান্স পায়--প্রতিবারই মনে মনে বলেছি আমার মাথা নত করে দাও হে। আর আমার মধ্যে একটা অদ্ভুদ স্বার্থপরতা কাজ করে, যে-ই আমাকে আনন্দিত করে, গর্বিত করে, আমাকে সফল করে তার প্রতি আমি একটা ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে যাই। তাকে মনে হয় আমার ভাই, আমার বন্ধু, আমার অতি আপনজন! আর আমাকে ছোট করে, ব্যর্থ করে এমন যে কাউকেই মনে হয় সে আমার কেউ না, কেউ না।



এই সকল মহৎ মানুষের সাথে আমার পরিচয় ঘটে প্রথম আলোতে। রাতে বাসায় ফিরে খূটিয়ে খুটিয়ে পেপারটা পড়া হয়। তখনই এদের সাথে পরিচয় ঘটে। ঘটে আনন্দের ঘটনা, ঘটে বেদনার ঘটনা। আজ রাতেও তেমনি পুলিশের অদৃশ্য অর্ধচন্দ্র ভুলে গেলাম সাকিবের গর্বে গর্বিত হয়েই। প্রথম আলোর কাছে এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। এরকম আরও হাজারো মানুষের কৃতজ্ঞতায় প্রথম আলোর আজ পনের বছর পূর্তি।



প্রথম আলোকে এক কথায় মূল্যায়ন করতে গেলে বলতে হয় প্রথমা আলো কেবল একটা সংবাদপত্র নয়, প্রথম আলো একটা দর্শন, প্রথম আলো একটা বিপ্লব, প্রথম আলো একটা আন্দোলন। সমাজ, সংস্কৃতি, মুল্যবোধ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ক্রীড়া, সাহিত্য সব ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনের একটা পরিবার। এখানেই প্রথম আলোর সফলতা। তবে প্রথম আলো বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অসন্তোষের জায়গাওটাও আবার এখানেই--অতিরিক্ত সামাজিক দায়বদ্ধতা। এবং এই দায়বদ্ধতা থেকে অনেকসময় সংবাদকে ’বদলে দেওয়া’। একটা অতি সস্তা উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রভাকান্ড। প্রথম আলো পড়ে মনে হয়েছে বাংলাদেশে প্রভা নামে কেউ কখনো জন্মেনি। আর এই প্রভাকে এড়িয়ে যাওয়া আমার কাছে মানে হয়েছে সত্য গোপন করা। সমাজের মঙ্গল চিন্তার চেয়েও একটা সংবাদপত্রের বড় দায়িত্ব সত্য প্রকাশ করা। একটা ভালো খবরও সত্য খবর, একটা খারাপ খবরও সত্য খবর।



আমার বেশ ভালো লাগার একটা পত্রিকা হলো নিউ এইজ এবং এর মূল কারিগর নুরুল কবির প্রিয় বুদ্ধিজীবীর তালিকার উপরের দিকেই থাকেন। নিউ এইজের ”মটো” Biased towards people-টাও যথেষ্ট চমকপ্রদ মটো মনে হয় আমার কাছে। বায়াজ্ড টুয়ার্ডস পিপল এর প্রতি আমার মুগ্ধতাকে এক বন্ধু এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিল। ওর বক্তব্য, কোন পক্ষপাতই ভালো নয়, এমনকি সেটা জনগণের পক্ষে হলেও।



বন্ধুর ব্যাখ্যাটা অনেকটা এরকম--গ্যলিলিও যদি আজ বলতো সুর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে এবং জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করে, বায়াজ্ড টুওয়ার্ডস পিপল-এ বিশ্বাসীরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে খবরটা ’বদলে দেবে’, বলবে গ্যলিলিও মিথ্যা। ওর ব্যাখ্যাটা শুনে আমার মনে হয়েছে প্রথম আলো অবশ্যই তাই করতো। আমার কাছে মনে হয় সংবাদ হবে ঐতিহাসিক উপন্যাসের মতো। সত্যের অপলাপ না করেও তাতে থাকবে কিছু শিল্পসত্যের রস। কিন্তু প্রথম আলোর সংবাদ অনেক ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যান আর পিওর ইতিহাসের মতো রসবিহীন।



মানুষ যখন অস্বস্তিতে থাকে তখন সেই ব্যক্তিগত অস্বস্তি প্রভাব ফেলে তার পারিবারিক, তার সামাজিক তার সামষ্টিক জীবনে। আজ পুলিশের রাগ হয়তো আমি প্রথম আলোর উপর চাপিয়ে দিচ্ছি। তাও ভালো, রাগটা রিলিজ করে যদি শরীরটা মনটা একটু ভালো ঠেকে তাহলে নাহয় চাপালামই প্রথম আলোর উপর। কেননা যতক্ষণ সুখী এই আমার হাতে দেশ, পথ হারাবেনা বাংলাদেশ। আর তাছাড়া সমালোচনা করে দুই দলের লোক, এক যে খুব পছন্দ করে আর দুই যে খুব অপছন্দ করে। আমি আনন্দিত যে আমি প্রথম দলের লোক।



প্রথম আলোর পনের বছরে পদার্পণ। এ উপলক্ষে তারা ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। ক্রোড়পত্র প্রথম আলোর চোখে গত একবছরের উল্লেখযোগ্য ঘটানাবলীর আনন্দ-বেদনার কাব্য দিয়ে সাজানো। এর মধ্যে একটা হলো রানা প্লাজা ধ্বস নিয়ে। লেখাটা পড়ে চায়ের দোকানের অপমান, সাকিবের গর্ব কিংবা এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা ভুলে কেবল নিখাদ এক দু:খভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমি ঘুমাতে গেলাম।



রানা প্লাজার ঘটনাটা এরকম: রানা প্লাজার কোনও এক উদ্ধারকর্মী একটা মৃত দেহের পাশে একটা মোবাইল ফোন পেলেন। স্বজনকে অন্তত মৃত্যুর সংবাদটা নিশ্চিত করার জন্য ডায়াল লিস্ট থেকে ’মা’ নাম্বারটিতেই ডায়াল করলেন। ওপাশ থেকে ফোন ধরেই প্রথম কথা ছিল--আমি জানতাম তুই বেঁচে আছিস!



সেই মা'কে আমি দুর থেকে শুধু বললাম, ”সামনে আমাদের অনেক শুভদিন। কিন্তু মা, আমরা এখনো আপনার মেয়ের মতোই বেঁচে আছি।”



আমাদের সাফল্য, আমাদের অগ্রগতি, আমাদের অর্জন, আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ক্ষুধা, আমাদের রাজনীতি, আমাদের তথ্য অধিকার, আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের মানবিক অধিকার সবকিছু নিয়েই আমরা আপনার মেয়ের মতোই বেঁচে আছি।

০৪.১১.২০১৩

.

.

.

[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৬

পাজল্‌ড বলেছেন: আমাদের সাফল্য, আমাদের অগ্রগতি, আমাদের অর্জন, আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ক্ষুধা, আমাদের রাজনীতি, আমাদের তথ্য অধিকার, আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের মানবিক অধিকার সবকিছু নিয়েই আমরা আপনার মেয়ের মতোই বেঁচে আছি


প্রথম আলোর অনেক নীতির সাথেই আমি একমত না কিন্তু মন্দের ভালো হিসেবে পড়ি,আর সবচেয়ে বড় কথা এইটার বিকল্পও নেই তেমন কোন।

আপনার অনুভূতি জেনে ভালো লাগলো।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৬

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: প্রথম আলোর অনেক নীতির সাথেই আমি একমত না কিন্তু মন্দের ভালো হিসেবে পড়ি,আর সবচেয়ে বড় কথা এইটার বিকল্পও নেই তেমন কোন।--আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত।

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৩

ইয়েন বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন .. যদিও আমি বেশ কিছুদিন ধরে সচেতন ভাবে প্রথম আলো বর্জন করেছি ,,,, শেষ এ রানা প্লাজার ঘটনা টা মন খারাপ করে দিল ,,,,,,

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৬

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৯

সুমন কর বলেছেন: ভালো বলেছেন।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৯

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: অনকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.