নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, বুকে ঠেকে গেছে বুলডোজার

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:২৪

”অবশেষে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে রাজনীতি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং তা কেবল রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না।”--এই সিদ্ধান্তে উপনীত হবার পর যা করনীয় শার্ল দ্যা গল তার পক্ষে যা সম্ভব করে দেখালেন। আমরাও একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, কিন্তু আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে পারছি না। যে রাজনীতির মূলমন্ত্র এখনও ”পোড়মাটি নীতি”, যে রাজনীতি এখনও জনগনের রক্তের বিনিময়ে সিংহাসন চায় আমি তাদের পুরোপুরি দোষ দিতে পারি না। কারণ ”কজ এন্ড ইফেক্ট”-এ এটা ইফেক্টমাত্র, কজতো আমরা জনগণ নিজেরাই।



চলন্ত বাসে আগুন ধরিয় মানুষকে ঝলসে দেওয়া, ফিশ প্লেট খুলে শত শত যাত্রীবাহী একটা যানকে উল্টে দেওয়া, যত্রতত্র ককটেলে মানুষের মৃত্যু, কুড়িয়ে পাওয়া ককটেলে শিশুর আঙ্গুল উড়ে যাওয়া, বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হবার জন্যে অনেক্ষা করতে করতে শিশুদের আনন্দ আতঙ্কে পরিণত হওয়া এতকিছুর পরও আমাদের সাধারণ মানুষের কী করনীয় আমরা জানিনা।



সুশীল সমাজের কথাবার্তা, টকশো বা পেপার-পত্রিকায় যা দেখি সাধারণ মানুষ এই সহিংসতা চায় না। কিন্তু কারা এই সাধারণ মানুষ? আমদের দেশে সাধারণ মানুষ বলে কেউ আছে আমি বিশ্বাস করি না। বাংলাদেশে সবাই ”অসাধারণ মানুষ।” লাটভিয়ায় বিপণিবিতান ধ্বসে একশ মানুষের মৃত্যুতেই প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন, আর আমাদের দেশে রানা প্লাজা ধ্বসে সহাস্রাধিক মানুষ মারা গেলেও প্রধানমন্ত্রী নিজেতো পদত্যাগের কথা কল্পনাতেও আনেন না, এমনকি আমরা সাধারণ মানুষও যে ঠিকমতো তার পদত্যাগ চাই তাও নয়। কেননা এতকিছুর পরও আমাদের সিংহভাগ মানুষই হয় আওয়ামীলীগ অথবা বিএনপি। এবং সকলপ্রকার সহিংসতারই আওয়ামী অথবা জাতীয়তাবাদী একটা তর্জমা আছে আমাদের কাছে। এবং ”সাধারণ মানুষ সহিংসতা চায় না”-এর প্রকৃত তাফসির হলো ”সরকারদলীয় সাধারণ মানুষ বিরোধীদলীয় সহিংসতা চায়না।” আর বিরোধীদলীয় সাধারণ মানুষের মুখে এই পেট্রোলবোমার সাফল্যে বলতে শুনেছি ”মাশাআল্লাহ অবরোধ ভালো হচ্ছে!” আর অভাগা মানুষের অপমৃত্যুকে দেখা হচ্ছে দাবা খেলায় মন্ত্রী বাঁচানোর জন্যে সিপাহি স্যাক্রিফাইস হিসেবে। আক্ষরিক অর্থেও তাই, মন্ত্রীত্ব বাঁচানোর জন্যে আমজনতার আত্মোৎসর্গ।



চলছে চকুক। থাক না। যাক আরও কিছুদিন। এভাবে আমরা অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেলি না চাইতে না চাইতেই। একটা ছোট ফোড়া হয়, আমরা গা করিনা। তারপর সেটা টিউমার হয়, তাও ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি-যাব করতে করতেই আরও কিছু দিন কাটিয়ে দিই। অবশেষে সেই টিউমার যখন মারাত্বক আকার ধারন করে তখন আমরা ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার যখন সেটিকে ক্যানসার হিসেবে সনাক্ত করেন ততক্ষণে তার আর কিছুই করার থাকে না। রাজনীতিতে জ্বালাও পোড়াও এদেশে বহুদিন। আমরা দেখছি। প্রতিবাদ করব করছি, আজ দেখি, কাল শুরু করবো করতে করতেই কয়েক দশক কেটে গেল। তবে অবস্থা এখন সত্যিই বেগতিক। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বললেও কম বলা হবে। এখন অবস্থা দাড়িয়েছে এমন যে, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, বুকে ঠেকে গেছে বুলডোজার! নিজেকে না বাঁচাতে চাই অন্তত দেয়াল বা বুলডোজারটার কথা আমাদের ভাবতে হবে।



অবশ্য ভেবেই বা কী? মানুষ আর কতটুকুই বা করতে পারে? নির্বাচন আসলেই যেভাবে ”পর্যবেক্ষণ” শুরু হয় তাতেই বোঝা যায় বাংলাদেশের রাজনীতিতো আর বাংলাদেশীদের হাতে নেই, এটা ভারতের দাদা, সৌদি আরবের ভাই আর আমেরিকা-ইউরোপের ব্রাদারদের হাতে। শত পেট্রোল বোমাতেও কোন ফায়দ নেই যদি না দাদা-ভাই এবং ব্রাদাররা সম্মত হন। কাজেই যিনি মারছেন দিন শেষে তার শ্রম পন্ডশ্রম এবং যিনি এভাবে মরছেন তারও বৃথাই মানবজন্ম।



এদেশে পঞ্চাশ-ষাট বছর বেঁচে থেকে প্রতিনিয়ত মরার চেয়ে ১৭ বছরের শরীরটির ৯০ শতাংশ পুড়ে একবারে মরা শ্রেয়তর কিনা তা নিয়ে একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য টকশো আয়োজন করা যেতে পারে। যদি ১৫-২০ শতাংশ শরীর পুড়িয়েও আপনি বেঁচে যেতে পারেন তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও ১০ হাজার টাকা পাবার একটা সম্ভবনা আছে। এভাবেই সান্তনা খুজতে হবে আমাদের। ইসলামেও সুখবর আছে একটা-- পানিতে ডুবে বা আগুনে পুড়ে মারা গেলে শহীদের সম্মান পাবার একটা সম্ভবনা আছে। আর আমি নিশ্চিত বিজ্ঞ সক্রেটিস এই বাংলাদেশ সম্পর্কেই বলে গেছেন তার শেষ বিখ্যাত উক্তি-- “The hour of departure has arrived, … I to die, and you to live. Which of these two is better only God knows.”



একথা সত্য যে সাধারণ মানুষ ফুসে উঠলে অনেক কিছুই সম্ভব। জনগণ যখন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে রাজনীতি কেবল রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না তখন পরিবর্তনের জন্যে অতীতে অনেক সময়ই তারা রাজপথে নেমে এসেছে। ঊণসত্তুর বা নব্বইতে মানুষ এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কেবল রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেননি। বিষয়টি নিজেদের হাতেও তুলে নিয়েছিলেন। তার ফলও পাওয়া গিয়েছিল হাতে নাতে। কিন্তু তাদের সেই আন্দোলনের ফল শেষ পর্যন্ত ভোগ করল কারা? সেই এরশাদ, সেই জামায়াত আজও রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক। নব্বইতে যারা স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন করলেন সেই সাধারণ মানুষ কোথায়? তারাও কী আজ আওয়ামীলীগ অথবা বিএনপির ”রেজিস্টার্ড সাধারণ মানুষ”? আমরা চাইনি ব্রিটিশরা চলে গেছে, আমরা চাইনি পাকিস্তানিরা থাকতে পারেনি, আমরা চাইনি এরশাদ বা মঈন ইউ রা থাকতে পারেনি। আওয়ামীলীগ-বিএনপি আছে তার মানে নিশ্চই আমরা চাইছি। এদেশে ড. মোহাম্মাদ ইউনুস একটা দল করুক, ড. কামাল হোসেন বা মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ছেলে মেয়ে আর স্ত্রী পরিজন ছাড়া আর যে কয়টা ভোট তারা পান তা হাতের আঙ্গুলে গোণা যাবে। তবুও আরেকটু আশাবাদী হয়ে এমনটাও বলা যায়, আমরা চাইনা, চাইনা করতে করতেও আমাদের একটা উল্লেখযোগ্য সময় পার করতে হবে, তারপর আমাদের চাওয়া পুরণ হবে, অতীতে যেমন হয়েছে।



আমরা সেই শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের ”না চওয়ায়” অটল থাকবো। নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।



০৮.১২.১৩

.

.

.

[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪৭

রাজীব বলেছেন: আমরা সেই শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের ”না চওয়ায়” অটল থাকবো। নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৮

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: রাজনীতিতে শেষ দিন যে কোনটা সেটা নিয়েই সংশয়ে আছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.