নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি আছি সবসময়

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩

আমাদের ক্রিকেট যেমন পুরো জাতিকে অনেকবারই আনন্দে ভাসিয়েছে তেমনি অসংখ্য বার ডুবিয়েছে লজ্জায়, পুড়িয়েছে হতাশার আগুনে। হাজারোবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই দলের সমর্থন আর জীবনে করবো না, এরচেয়ে বরং নেপাল ক্রিকেট, টোগোর ক্রিকেট ভালোবাসবো। কিন্তু বলা বাহুল্য আজ পর্যন্ত সেই প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেনি।



এসব সমর্থকের অভিমানের কথা। তবে ক্রিকেটারের নিজেদেরও অনেক অভিমান আছে সমর্থকদের নিয়ে। তাদের অভিমান, জিতলে সমগ্র জাতি জেতে আর পরাজিত হলে শুধু পরাজিত হয় ক্রিকেট দল। একথা সত্য যে পরাজয়ের বেদনা আমাদের চেয়ে ওদেরকেই বেশী পোড়ায়, তবে একথাও মিথ্যে নয় যে দল পরাজিত হলে আমরা সমর্থকেরাও পরাজিত হই। কথা সত্য না মিথ্য, যুক্তি সঙ্গত বা যুক্তিহীন সেসব ভেবে লাভ নেই। অভিমানের কথা তো অভিমানেরই। বন্ধু-বন্ধু, প্রেমিক-প্রেমিকা মান অভিমান থাকেই। মেনে নিলাম। কিন্তু এখানেও সমস্যা ওই অভিভাবক।



এশিয়া কাপের এই ব্যর্থতা নিয়ে আমার উপলদ্ধি হচ্ছে এবারের এই ইতিহাস রচনার পেছনে আমাদের ক্রিকেটের অভিভাবকের দায়ও কম নয়। আমাদের বোর্ড বাংলা সিনেমার ’নীতিবান পুলিস অফিসার’-এর মতো কোন একটা গোপন তথ্য পেয়েই চিৎকার করে উঠলো ’শয়তান, আমি এক্ষুণি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ ভিলেন তখন ’মুহাহাহা, তুই সেই সুযোগ কখনোই পাবি না’ বলেই দুম করে একটা গুলিতেই সেই নীতিবান অফিসারকে ঠান্ডা করে দিল। অথচ অফিসার যদি তখন মাথা ঠান্ডা রেখে সেই গোপন তথ্য নিয়ে এসে তার পর যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে তারপর শোরগোল তুলতো তাহলে সর্পও মরতো আবার যষ্ঠিটাও রেখে দেয়া যেত পরবর্তীতে আরও সর্প নিধনে।



সাকিবের শাস্তি নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই, তবে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে। দলীয় শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই। কিন্তু শাস্তির ধরনটা অন্যরকম হতে পারত। সাকিবকে ৩ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞাতো কেবল সাকিবের শাস্তি নয়, এটা জাতীর দলের শাস্তি, জাতির শাস্তি। ৩ ম্যাচ ও ৩ লক্ষ টাকা না হয়ে এটা হতে পারতো ১ ম্যাচ ও ১০ লক্ষ টাকা অথব কোন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা না আরও বড় অঙ্কের কোন অর্থ জরিমানা। আমার এই প্রস্তাব শুনে অনেকেই বলেছে দশ লক্ষ টাকা সাকিবের জন্য কোন ব্যাপার? তাকে আর কিভাবে বোঝাবো টাকা অবশ্যই ব্যাপার, দশ লাখ ব্যাপার না হলে বিশ, বিশ না হলে পঞ্চাশ। কিন্তু অর্থ জরিমানা হলে তা কেবল সাকিবেরই থাকতো, দলের উপর পরতো না।



অনেকেই এ পর্যায়ে বললো, আফগানিস্তানের সাথে জিততেও সাকিবকে লাগবেই? সাকিবকে ছাড়া সম্ভব নয় তা না, কিন্তু ম্যাচ শেষে আরও একবার মনে হয়েছিল সাকিবকে প্রয়োজন ছিল।



সাকিব ইস্যু ছাড়াও, আমাদের অভিভাবকরা আরও কিছু কাজ করলেন, তারা দল ঘোষণা করলেও দীর্ঘদিনের অধিনায়কের সাথে কোন পরামর্শ ছাড়াই। মুশফিক যে অত্যাধুনিক কোন পরামর্শ দিতেন তা হয়তো নয় কিন্তু তার পরও এই পরামর্শ না করাতে মুশফিক অভিমান করতে চাইলে তার পূর্ণ অধিকার আছে অভিমান করার। পাপন সাহেব বললেন আমাদের হাতে এমন কোন অপশন ছিল না যে এত লোকের পরামর্শ প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রত্যেক অধিনায়কেরই একান্ত নিজস্ব একটা স্কোয়াড থাকে। রাণাতুঙ্গার যেমন ছিল কালুভিথারানা, জয়সুরিয়া, মুরালিরা। একইরকম ছিল ইমরান খানের ছিল, ছিল কপিল দেবের। যুবরাজ, কাইফরা ছিল গাঙ্গুলির খাস লোক। ধোনির ছত্র ছায়ায় যেমন আছে রবীন্দ্র জাদেজারা।



বোর্ড যদি মনে হয় মুশফিকের পরামর্শ দেবার কোন যোগ্যতা নেই তা হলে অন্য কাউকে নিয়োগ দিক, আর যদি মনে করে তার কোন যোগ্যতা আছে তা হলে একজন অধিনায়কের অবশ্যই অধিকার আছে। তবে তারা যদি মনে করে মুশফিকের যোগ্যতা আছে, কিন্তু অধিকার নেই তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা। তখন ব্যাপারটা আর আমার আপনার হাতে থাকে না। তখন ব্যাপারটা চলে যায় ড. মিজানুর রহমানের হাতে।



সংবাদপত্রে দেখলাম এই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানেএখনই তদন্ত হচ্ছে। যে দেশে মেজর মঞ্জুরের মতো হত্যাকান্ডের তদন্ত ত্রিশ বছরে শেষ হয় না সে দেশে সিরিজ চলাকালীন তদন্ত শুরু হওয়া অভিনবই বটে। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে কিছু খেলোয়াড় মাঠে সিরিয়াস ছিল না, ম্যাচের আগের রাতে খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ার কথা থাকলেও কেউ কেউ রাত একটা পর্যন্ত অনলাইন চ্যাটে অ্যাকটিভ ছিল, কোচ খেলার ফাকে ফাকে যে সেব রণকৌশল পাঠিয়েছেন অনেকেই মাঠে তা পরিপালন করেনি, আফগানিস্তান-পাকিস্তান ম্যাচ স্টাডি করার কথা থাকলেও অনেকেই তা করেনি, অনুশীলনেও অনেকেই সিরিয়াস নয় ইত্যাদি ইত্যাদি।



আফসোস আমাদের দলে কেউ শেন ওয়ার্ন নেই। নয়তো কাউন্টি ম্যাচের চতুর্থ দিনের খেলা শেষে শ’খানেক মাইল গাড়ি চালিয়ে দু’জন মডেল/টিভি উপস্থাপিকার সাথে সারা রাত কাটিয়ে আবার পর দিন একই পরিমান দুরত্ব অতিক্রম করে মাঠে নেমে পাঁচ-ছয় উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ। এবং সেই মডেলদ্বয়ের বর্ণনায় শেন ওয়ার্ন এমন একটা পুরুষ বিছানায় যাকে যে কোন মেয়েই চাইবে!



এই বর্ণনায় তথ্যগত কিছু গড়মিল থাকতে পারে, কিন্তু ঘটনা মোটামোটি এই রকম। আর এই ঘটনাই প্রমাণ করে, মাঠের পারফরম্যান্স ভালো থাকলে মাঠের বাইরের পারফরম্যান্স অনেক সময়ই কোন ব্যাপার হতে পারে না। যেমন ওয়াসিম আকরামকে পাকিস্তান উপেক্ষা করতে পারেনি। এরকম হাজারো উদাহরণ আছে।



আর মাঠের পারফরম্যান্স ভালো না হলে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলেও হোমওয়ার্কগেট কেলেঙ্কারিতে দু-চার জনকে সফররত দল থেকে দেশে ফিরে যেতে হয়। চাকরি হারাতে হয় কোচকে।



আমার কথা হলো নিউজিল্যান্ডকে বাংলাওয়াশ করা দলের কেউ কি আগের রাতে একটা পর্যন্ত চ্যাট করেনি? তখনকি কেউ অনুশীলনে অমনোযোগী ছিল না? তখন কি সবাই নিউজিল্যান্ডের পূর্বের ম্যাচগুলোর ভিডিও ফুটেজ খুবই ভালোভাবে স্টাডি করেছিল? তখন তাদের ধরা হয়নি কেন? বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটি তখন কি ঘুমিয়েই ছিল নাকি? তখন ব্যাপার গুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেতো এতবড় আসরে এসে আমাদের দৃষ্টান্ত রাখতে হয় না।



বিসিবি এতদিনে এসে শাসন করা শুরু করেছে। যখন প্রয়োজন øেহের। যে অস্ট্রেলিয়া দল আগের অ্যাশেজেই নাস্তানাবুদ হয়ে আসলো ইংল্যান্ড থেকে তারাই নিজেদের মাটিতে এমন কী গুপ্তধন পেল পরের অ্যাশেজে? সেই খেলোয়াড়েরাইতো।



আমাদের ছেলেদেরও এখন প্রয়োজন রিলাক্স হতে দেয়া। শান্ত হতে দেয়া। স্বাভাবিক হতে দেয়া। তারপর যা হয় হোক। আফগানিস্তানের কাছে পরাজয়ের চেয়েতো আর বেশী কিছূ হবে না। আর আফগানিস্তানের কাছে পরাজয়ে আমরা মর্মাহত হয়েছি, শোকে বিহ্বল হয়েছি, লজ্জায় মাথা নত হয়েছে সবই ঠিক আছে। কিন্তু এই অঘটন কিন্তু ক্রিড়া ইতিহাসে অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। ক্রিকেটেতো নয়ই। বাংলাদেশও একদিন প্রথম অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল, প্রথম ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল। আফগানিস্তান আজ বাংলাদেশকে হারিয়েছে। তারাও একদিন প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে হারাবে, প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাবে, শ্রীলঙ্কা ভারত বা পাকিস্তানকে হারাবে। একইভাবে অস্ট্রেলিয়ারাও একদিন প্রথমবারের মতো হারে বাংলাদেশের কাছে, জিম্বাবুয়ের কাছে, নামিবিয়ার কাছে, চীন, জাপান বা রাশিয়ার কাছে।



বুকে পাথর বেধেই আমাদের দলকে বলছি, আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো। আমরা আছি সবসময়, তোমাদের সময়ে, তোমাদের অসময়ে। আমরা অধীর আগ্রহে তোমাদের সেইদিনের জন্য অপেক্ষা করবো যেদিন সবাই আবার তোমাদেরকে নিজেদের একান্ত আপন বলে পরিচয় দেবে, তোমাদের কথা বলতে বলতে যাদের বুক ভরে যাবে গর্বে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০

সমকালের গান বলেছেন: সহমত

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:১৯

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: দুঃখের কথা আর কাকেইবা বলব? এখন টি-২০ বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে আছি...

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৫১

মুদ্‌দাকির বলেছেন: Sakib issue was too much, bcb could've easily said he did nothing, & then could've punished him secretly,like all board dose on this kind of issue, more over match refree had no complaints,too. without sakib bcb punished all the team and the fans too

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২১

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: বিসিবির সব মাথামোটাদের আবিস্কার এইসব।

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪২

সুমন কর বলেছেন: সাকিবের বিষয় নিয়ে একমত হতে পারলাম। আমার মতে, সাকিবকে ৬মাস নিষেধাজ্ঞা করতে পারত।

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫২

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: সাকিবকে আজীবন নিষিদ্ধ করতে পারত।
কিন্তু তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কী লাভ?

আমার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্ষতি না করেও ওকে শাস্তিটা দেওয়া যেত। আরও বেশী আর্থিক জরিমান করতে পারত, এ বছর কাউন্টি বা আইপিএল-এ অনুমতি না দিতে পারত বা এধরনের কিছু একটা করতে পারত।

সাপ মরুক আমিও চাই, শুধু লাঠিটা ভাঙ্গাতেই যা আফসোস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.