নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাজার বছর ধরে...

১৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:৪২



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার গর্বেরও সীমা নেই।



এই গর্বের বেশ কিছু বায়বীয় ব্যাপরতো ছিলই, ছিল কিছূ জলজ ব্যাপারও। প্রথম কথা ছিল টিউশনির বাজারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া প্রাইভেট টিউটরের বেশ একটা মূল্য ছিল। দু:সময়ের আমার যৌবনের ওই সময়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবাদে গৃহশিক্ষক হিসেবে প্রাপ্ত বাড়তি মূল্যটুকু আমার কাছে ছিল অমূল্য। কেবল আমার কাছেই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালপড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের সিংহভাগই আমার মতন প্রান্তিক পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাদের সবার জীবনেই এই অবদান অনেক বড়। পরবর্তীতে একটা ভালো চাকরি পেতে সহায়তা করা ছাড়াও আরও অনেক অবদান ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। সদ্য পরিচিত কোন মেয়েকে বুক ফুলিয়ে বলা যেত আমি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড-এর ছাত্র (এখন আমার অবস্থা যাই হোক না কেন, ভবিষ্যৎ আমার উজ্জল)। ভার্সিটির হলগুলো নিয়ে নানান উপকথা থাকলেও এই হল মাথাগোজার ঠাই দিয়ে কতজনকে নিয়ে গেছে বিশ্বআসরে। আর লাল বাসে চড়লেই মনে হত কেউ আমাকে দেখুক আমি লাল বাসের যাত্রী। জীবনে কখনো লালা ফোন বা লাল পাসপোর্টের যোগ্যতা অর্জন করতে পারি আর নাই পারি, কিন্তু দীর্ঘদিন আমি ছিলাম লাল বাসের একজন গর্বিত যাত্রী।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার ভেতরের এই গর্বটা আরও বেড়ে যায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অধিকাংশকেই যখন দেখি এই বিশ্ববিদ্যালয়জাত। তখন মনে হয় আমিও এই গৌরবের অংশ। আমিও এই কৃতিত্বের দাবিদার।



আর একইভাবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছেলে যখন অপহরণ করার পর সেই টাকা আদায় করতে যেয়ে ধরা খায় তখন তেমনিভাবে আমার মাথা হেট হয়ে আসে। বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও যেখানে যত বন্ধু, সহযোগী, সহযাত্রী, সহআড্ডাবাজ আছে সবার সামনে মাথা নত হয়ে আসে।



ধরাপরা ৪ জনের অন্তত দুই থেকে তিনজনের পিতা হয়তো কৃষক, মজুর বা ছোট কোন চাকুরিজীবী। অনেক আশা নিয়ে তারা অপেক্ষা করছেন ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হলেই আর কোন কষ্ট থাকবে না পবিরারে। এই আশাতেই বুক বেধে হয়তো তারা আরও একটি বেলা অর্ধাহারে কাটিয়ে দেবার প্রস্তুতি নেন সেই পিতা-মাতা, তখন তাঁদের ছেলেরা প্রস্তুতি নেয় কিভাবে অপহরণের টাকা আদায় হবে তা নিয়ে। কিভাবে প্রতিপক্ষের ছাত্রদের পেটাবে তা নিয়ে।



আমি তাদের পারিবারিক অবস্থা নিয়ে নিশ্চিত নই। পুরোপুরি উল্টোটাও হতে পারে। কিন্তু একজন ছাত্র কেন একটা কাজে নামলো? তার কি অনেক টাকা প্রয়োজন?



আমার ধারণা টাকার প্রয়োজনের চেয়ে যে ব্যাপারটা তাকে বেশী অনুপ্রাণীত করেছে তা হলো--নিশ্চিত মুনাফা। চুরি করার পরও আপনি ধরা পরবেন না বা ধরা পড়লেও আপনার কোন বিচার হবে না, জেল জরিমানা বা শাস্তি হবে না এই নিশ্চয়তা যদি থাকে তাহলে অনেক ভালো মানুষের পক্ষেও চুরি না করে থাকা অসম্ভব।



কোন নেতা তার গদি টিকিয়ে রাখতে ব্যাবহার করে এই সব ছাত্রদের। বিনিময়ে ছাত্ররা কোন ’ভুল’ করে ফেললে সেই নেতা তাদের দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। কোন সাবেক আইজিপি যেন বললেন সেদিন--রাষ্ট্রযন্ত্র তার প্রয়োজনে যখন কাউকে দিয়ে কোন অপরাধ করায় সে ব্যক্তি নিজেই তখন তার প্রয়োজনে আরও দশটা অপরাধ করে।



খুব সত্য কথা। নিজের স্বার্থে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের শায়েস্তা করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রাষ্ট্র যে ইনডেমনিটি দিয়ে রেখেছে সেই ইনডেমনিটিতে তারা তাদের সহপাঠী পেঠাচ্ছে, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের জিম্মি করে রাখছে, বাদ দিচ্ছে না শিক্ষকদেরকেউ। সেই ছাত্র-শিক্ষক-সাধারণত জনতার দোষ তারা সরকারী আমলে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী--বিএনপি আমলে লীগ, লীগ আমলে দল বা জামাত-শিবির। অতএব এমনকি এদের হত্যা করাও আইন সঙ্গত। কিংবা তাদের আরও গুরুতর অপরাধ, তারা কোন দলই করে না। দল করলে তাও পাঁচ বছর কষ্ট পাঁচ বছর সুখ, আর দল না করলে পুরো জীবনই কষ্ট।





সাত খুন মাফ কথাটা এতদিন কেবল শুনেই এসেছি। এবার আমরা তা দেখার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।



সাতজন মানুষকে মেরে ফেলা হলো। এবার যাও একটু সোরগোল উঠলো, দু-চারজনকে খুন-গুম করে ফেললে সচরাচর তও উঠে না। জানি সরকার বিচারের নামে দীর্ঘসুত্রিতার ফাদে সব ধামা চাপা দিয়ে দেবে। জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড কথাটা একেবারে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করেই বলা হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। মিডিয়া কতদিন এক ইস্যু নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে? নতুন ঘটনা আসবে, নতুন কাহিনী তৈরী হবে, শুরু হবে নতুন সোরগোল। লিমন, ইলিয়াস আলী, মিল্কি, সাগর-রুণি, নারায়ণগঞ্জে সাত খুন...চলতেই থাকবে।



র‌্যাব ক্রসফায়ারে দিচ্ছে। র‌্যাব বা গোয়েন্দা পুলিশ গুম করছে। ক্ষমাতসীন নেতা ক্ষমতাহীন নেতা-কর্মীদের খুন করছে।



কারো কোন বিচার হচ্ছে না। মহামানবেরা সাধারণত নাকি কাছাকাছি সময়ে বা কাছাকাছি ভৌগলিক অবস্থানে জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবীর এত যায়গা থাকতে মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি বড় বড় বেশ কটি ধর্মের জন্ম ওইটুকু মধ্যপ্রাচ্যে। বিশ্বখ্যাত শিল্পী-ভাস্কর সব জন্মনিল প্যারিসেই। এক কুরি পরিবারই পাঁচজন পেল নোবেল পুরস্কার।



অভাগা আমাদের দেশে যত সন্ত্রাসী, খুনি, দুর্নীতিবাজ কিভাবে কিভাবে যেন পরস্পরের আত্মীয়। মাননীয় সাংসদ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরি মায়ার জামাতা নারায়ণগঞ্জ তারকা কর্ণেল তারেক সাঈদ, তার পুত্র দিপুও একজন বড় তারকা। শামীম ওসমান-নাসিম ওসমান দুই ভাই। আজমেরি ওসমান নাসিম ওসমানের সুযোগ্য পুত্র।





এদের অনেকেই অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত হলেও অনেকেই আবার দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যপীঠের ছাত্র। অনেকেই আমার বিশ্ববিদ্যালয়েল পূর্বসূরি। শামীম ওসমান, সাকা চৌধুরি, কাদের মোল্লা। আরও অনেকেই আছেন।



বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, অপহরণকারী ছাত্ররাইতো বড় হয়ে একদিন জাতীয় নেতা হয়, র‌্যাব হয়, পুলিশ হয়, আমলা হয়। শরৎচন্দ্রের ভাষায় বলতে হয়, দেবী বীণাপানির বরে সঙ্কীর্ণতা ইতাদের মধ্যে আসিবে কী করিয়া?



তারা জাতীয় সেবা বাদ দিয়ে নিজেদের পারস্পারিক সেবায় সদা নিয়জিত। সরকার নির্দেশে দলীয় ছাত্রদের হাজার অপরাধ মাফ। যদি র‌্যাব-পুলিশ-সাংসদ পরিবারের কাউকে কখনো অভিযুক্ত করাও যায়, তারা গ্রেপ্তার হন না, গ্রেপ্তার হলেও বিচার হয়না, এবং যদিওবা বিচার হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রমাণিত হন নির্দোশ হিসেবে। আর সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে যদিও কালেভদ্রে দোষী প্রমাণিত হন, শেষ পর্যন্ত আছে রাষ্ট্রপতির সাধারণত ক্ষমা।



মাফ পেতে অভ্যস্ত সেই ছাত্র একদিন ছাত্র নেতা হয়, কালক্রমে ছাত্র নেতা থেকে হয় জাতীয় নেতা। নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই সেই নেতা সরকারি ক্ষমতায় তার চার পাশে আরও নিয়োগ দিতে থাকে আপনজনদের। নিয়োগ ছাড়াও মেয়ের বিয়ে দেয়া, ছেলেকে বিয়ে করানো, এমনকি নিজেই বিয়ে করা। এই সুযোগে যারা শেষ পর্যন্ত নেতা হতে পারেনা, শেষ পর্যন্ত শেষ করে লেখাপড়াটা, তারা ওই সব নেতাদের বন্ধু, ছোটভাই, স্নেহাশীষ এবং আশীর্বাদে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে কর্ণেল তারেক সাঈদ, পুলিশের ডেপুুুুটি কমিশনার হারুন-অর রশিদ।



এইসব আশীর্বাদপুষ্টরাও আবার অনেকটা বাংলা সিনেমার নায়কের মতো--গরীব হতে পারে কিন্তু ছোটলোক নয় বা চরিত্রহীন হতে পারে কিন্তু বেঈমান নয়। তারাও তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্র থেকে প্রতিদান দিতে থাকে নেতাকে, দলকে। উঠে আসতে থাকে আরও নেতা, তাদের মতো আরও সুবিধাভোগী। নেতার দুর্দিনে দেখভাল করে প্রশাসন, প্রশাসকের বিপদে আছে নেতা।



আড়ৎদারদের এই জাল ছিড়ে বের হতে পারেনাই আমার বাবা, তার বাবা, তার বাবা...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১১

মুহাই বলেছেন: জাস্টিস
ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড
কথাটা একেবারে বাংলাদেশের বিচার
ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করেই
বলা হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস।

৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:০৩

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: তরুণদের হতাশ হলে চলবে না।

কিন্তু আজকাল আমি হতাশ হয়ে যাচ্ছি। হয়তো এই ছাব্বিশেই তারুণ্য থেকে খানিকটা দূরে চলে গেছি।

২| ১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৩৬

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: মাহমুদুজ্জামান বাবুর একটা গান আছে,

দেশটা যেন এক শিশুপার্ক, নিজের ইচ্ছের দোলনায় দুলি সবাই

৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:০৩

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: সব বুড়ো খোকা.......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.