নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বকাপ কিংবদন্তী: জিনেদিন জিদান

৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:১৮





সব মহান ফুটবলারের মধ্যেই কিছু বিষয়ে চমৎকার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, তারা প্রত্যেকেই ছিলেন তাঁদের প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়, প্রতিভায়-দক্ষতায় ছিলেন আর দশজনের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে, জাতীয় দল কিংবা সর্বোপরি ফুটবলকেই তারা প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন উচ্চ থেকে উচ্চতর আসনে। তবে কেউ কেউ আবার বলে থাকেন তাঁদের মধ্যে আরেকটি বড় মিল, তারা তাদের সেরাটা উপহার দিয়ে গেছেন বর্তমান সময় থেকে অনেক অনেক আগে। পুসকাস, পেলে, মুলার, ক্রুইফরা তাদের সেই যাদু দেখিয়ে গেছেন ১৯৫০, ৬০ বা ৭০-এর দশকের ঐতিহাসিক কোন একটা সময়ে!



তবে এই তত্বের এক উজ্জল ব্যতিক্রম জিনেদিন জিদান। মাঝের ২০১০ এর বিশ্বকাপটি বাদে খেলেছেন ২০০৬ বিশ্বকাপেও। খেলা মানে ’অংশগ্রহণই বড় কথা’ নয়, আসরের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন গোল্ডেন বলও। তবে সকল সদগুণে গুণন্বিত কোন অতিমানব নয়, বিশ্বকাপ ইতিহাস জুড়েই জিদানকে দেখা যায় উত্থানে আর পতনে, প্রতিভা আর দক্ষতার পাশাপাশি ছেলেমানুষী আবেগের এক রক্তমাংসের নায়ককে। একটি বিশ্বকাপ জিতেছেন, রানার আপ হওয়া আরেক বিশ্বকাপে জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল, দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে করেছেন গোল আবার দুটি বিশ্বকাপে দেখেছেন লাল কার্ড, ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে পেয়েছেন ৩ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা।



নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯৮ বিশ্বকাপেই প্রথম অংশ গ্রহণ করেন জিদান। দেশের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপাটি জয় করেন একেবারে প্রথম বিশ্বকাপেই। জিদানের বড় কোন অবদান ছাড়াই প্রথম রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব এবং ডেনমার্কের সাথে সহজ জয় পায় ফ্রান্স। বরং সৌদি আরবের সাথে ম্যাচে প্রথম ফারাসী খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন জিদান। জিদান ছাড়াই ১-০ গোলে দ্বিতীয় রাউন্ডে জেতে ফ্রান্স। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে জিদানের মাঠে ফেরার ম্যাচে গোলশুন্য খেলায় ট্রাইব্রেকারে ৪-৩ এ ইতালিকে হারায় ফ্রান্স। বিশ্বকাপ যত গুটিয়ে আসতে থাকে ততই খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে থাকেন ’আসল’ জিদান। সেমি-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ফ্রান্সের ২-১ গোলে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ফাইনাল ম্যাচের আগ পর্যন্ত গোলশুন্য থাকে জিদান।



ফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। দুটি গোলই করেন পুরো আসরে গোলশুন্য জিদান। শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলে জেতা ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে জিদানের এই অসামান্য অবদান রাতারাতি জাতীয় বীর-এ পরিণত করে ’জিজু’কে। আবির্ভাব হয় ফুটবলের এক ’আধুনিক গ্রেট’ এর।



ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ফেবারিট হিসেবেই অংশ নেয় ২০০২ সালের জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপে। উরুর ইনজুরির কারণে প্রথম দুটি ম্যাচ খেলতে পারেননি জিজু। সাইড বেঞ্চে বসে বসে দেখেন বিশ্বকাপের উদ্ভোধনী ম্যাচে সেনেগালের সাথে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পরাজয়। পরের ম্যাচে উরুগুয়ের সাথে গোলশুন্য ড্র পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই জিদানকে বাধ্য করে তৃতীয় ম্যাচে ডেনমার্কের সাথে মাঠে নামতে। কিন্তু জিদানের উপস্থিতিও ডেনমার্কের সাথে ২-০ গোলে পরাজয় আটকাতে পারেনি। আগের বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জিদান এবার দেখেন বিশ্বকাপের ইতিহাসে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সবচেয়ে বাজে খেলা ফ্রান্সের একটিও গোল না করেই প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়।



জিদান ২০০৬ সালে খেলেন তার তৃতীয় ও শেষ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ফ্রান্সের নড়বড়ে অবস্থানের কারণে কোচ রেমন্ড ডমেনেখের পীড়াপীড়িতেই জিদান অবসর পাশ কাটিয়ে ফিরে অধিনায়ক হিসেবে ফ্রান্সকে নিয়ে যান মূল পর্বে। বাছাইপর্বের মতো বিশ্বকাপের মূলপর্বেও নড়বড়ে শুরু ফ্রান্সের। সুইজারল্যান্ডের সাথে গোল শুন্য ড্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ১-১ এ ড্রয়ের পর টোগোর সাথে ২-০র জয় নিয়ে নকআউট পর্বে যায় ফ্রান্স। নকআউট পর্বের শুরুতেই স্পেনের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয় দিয়ে ঘুরে দাড়ায় ফ্রান্স। জিদান ১ টি গোল করেন, প্যাট্রিক ভিয়েরাকে দিয়ে করান আরও একটি গোল। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতা ম্যাচে জিদানের বাড়িয়ে দেয়া বল থেকেই গোল করেন অঁরি, জিদান হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। সেমি ফাইনালে জিদানের পেনাল্টিতেই পর্তুগালের বিপক্ষেও ১-০ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে পৌছে যায় ফ্রান্স।



আগে থেকেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে শেষ বিশ্বকাপটি খেলতে নামা জিদানের তাই বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটিই হয়ে যায় ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। ফাইনাল ম্যাচের আগেই গোল্ডেন বল বিজয়ী হিসেবে জিদানের নাম ঘোষণা করা হয়। পেলে, ব্রেইটনার এবং ভাভা’র পরে মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে জিদানের করা গোলে ৭ মিনিটে এগিয়েও যায় ফ্রান্স। তবে এতকিছুর পরও ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা বললেই চলে আসে ইতালির মার্কো মাতেরাজ্জিকে মারা জিদানের সেই ঐতিহাসিক ঢুসের কথা। লাল কার্ড পেয়ে ম্যাচের ১১০ তম মিনিটে মাঠ ছাড়েন জিদান। অতিরিক্ত সময়েও ১-১ এ সমতা থাকা ফাইনালের ট্রাইব্রেকারেও অংশগ্রহণ করতে পারেননি তিনি। ৫-৩ এ পরাজিত হয় জিদান বিহীন ফ্রান্স।



মাতেরাজ্জিকে ঢুস মারার দায়ে ফিফা পরবর্তীতে ৩ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা দেয় জিদানকে। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিতে এমন নিষেধাজ্ঞা পাওয়ায় সে শাস্তি যদিও আর কখনোই ভোগ করতে হয়নি আধুনিক ফুটবলের এই অন্যতম মহান খেলোয়াড়কে তবে বাকি জীবন হয়তো নিজে নিজেই বয়ে বেড়াবেন ছেলেমানুষী আবেগের কারণে ২০০৬ বিশ্বকাপটি হারানোর যন্ত্রণা। অনেকেরই ধারনা ট্রাইব্রেকার পর্যন্ত জিদান থাকলে ইতিহাস অন্যরকমও হতে পারত।



প্রথম আলো অনলাইনে মাঝে মাঝে আমার কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। সেই ভালোলাগা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কখনও কখনও ব্লগেও তা শেয়ার করি। কিন্তু এখানেই ঘটে বিপত্তী। অনেকেই সঙ্গত কারণেই বিভ্রান্ত হন, 'পুরোটাই কপি করার দায়ে' তেড়ে আসেন। বিভ্রান্ত হবেন না, এটি তেমনই একটি প্রয়াস।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩

সুমাইয়া আলো বলেছেন: সুন্দর একটি পোস্ট ভাই

২| ৩০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬

জন রাসেল বলেছেন: বিশ্বকাপ ১৯৯৮ তে জিতলেও জিদান তার আসল খেলাটা ২০০৬ তেই খেলেছেন। ব্রাজিলের রোনালদো-রোনালদিনহো-আদ্রিয়ানো-কারলোসকে নিয়ে গড়া দানবীয় লাইন আপকে গুড়িয়ে কোয়ারটার ফাইনালে তিনি যা খেলেছিলেন সেটাই নতুন করে জানিয়েছিল ফ্রান্সের জার্সি গায়ে আসল জিদান এটাই।

সেই খেলা অনেক অশ্রু ঝড়িয়েছিল। বিশ্বাস হতে চায়নি যে এই ব্রাজিলকেও কেউ হারাতে পারে!

আর ক্লাব ফুটবলে ব্রাজিলের রোনালদো আর জিদান মিলে রিয়ালে যে তান্ডবটা চালাতেন সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা। ম্যারাডোনা পরবর্তী সময়ে রোনালদো-জিদান যুগটাই আধুনিক ফুটবলের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শৈল্পিক প্রদর্শনী।

৩| ৩০ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আমার দেখা সেরা খেলোয়াড়দের একজন।রুমারিওর মত ফিনিশার তিনি ছিলেন না। বাট তিনিও ছিলেন ম্যাচ উইনার। ২০০৬ এ তিনি লালকার্ড না পেলে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হতো।অবশ্যই আমার পছন্দের খেলোয়ার।
সুন্দর পোস্ট । :)

৪| ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৩৯

সুমন কর বলেছেন: এই সিরিজের সাথে ছিলাম। ভালো হয়েছে।

৫| ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০২

ক্লান্ত তীর্থ বলেছেন: লেখাটা ভালো লেগেছে!

৬| ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৫১

আছিফুর রহমান বলেছেন: জিদানকে নিয়ে বললে কখনো তা শেষ হবে না। আমার এখনো মনে আছে হাওয়ায় বল নিয়ে রোনালদিনহোকে কিভাবে ছিটকে ফেললেন জিদান, কিভাবে একাই গুড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান লাইন আপ। অনেক গালি দিয়েছিলাম সেদিন জিদানকে এখন তোমাকে অনেক মিসস করি অলস জাদুকর জিজু

৭| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৫৬

মিয়া মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান বলেছেন: ২০০৬ এ ফ্রান্সের সাপোর্টার ছিলাম না। ব্রাজিলের সাপোর্টার হয়েও ব্রাজিলকে যখন জিদান একাই হারিয়ে দিলো, তখন দুঃখ পাবার বদলে ভালো লাগছিলো জিদানকে। ফাইনালে ফ্রান্স হারার পরে নিজের অজান্তেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলাম।

৮| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ৩:৩৭

সকাল হাসান বলেছেন: জিদানের সেরা খেলাটা ছিল ব্রাজিলের সাথে ২০০৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।

ব্রাজিল সাপোর্টার হয়েও ঐদিন জিদানের খেলায় মুগ্ধ হয়েছিলাম।
তার কারনেই ব্রাজিল হারলো - কিন্তু চাইছিলাম ট্রফিটা যেন তার হাতেই উঠে।

কিন্তু উঠল আর না। ব্রাজিল হারার চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম জিদানের হাতে ট্রফি না উঠায়।

ট্রু লি অ্যা লিজেন্ড অফ দ্যা গেম।

৯| ৩১ শে মে, ২০১৪ ভোর ৪:২৫

স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন: জিদান তেমনি একজন গ্রেট খেলোয়াড় যার খেলা নিজে চোখে দেখেছি!!!


নাইস পোষ্ট!!!
চতুর্থ ভালোলাগা।

১০| ৩১ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০

সময়ের ডানায় বলেছেন: আমার দেখা সেরা ও প্রিয় খেলোয়াড়। শুধু জিদানের কারনেই ফ্রান্সকে সাপোর্ট করতাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.