নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শনিবারের বৃষ্টি

০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ১:২৪

কোন এক বিচিত্র কারনে রোমান্টিক বৃষ্টিগুলো সাধারণত হয় সাপ্তাহিক কর্মদিবসগুলোতে। শুক্র বা শনিবারে কোন কাব্যিক বৃষ্টি হয় না। বাকি দিনগুলোতে যে বৃষ্টি হয় জন্মগতভাবে তা রোমান্টিক হলেও কর্মগতভাবে হয় ট্র্যাজিক বৃষ্টি। কারন সেই বৃষ্টি অফিসে পৌছাতে পেীছাতে ভিজিয়ে একাকার করে করে দেয়। কাকভেজা হয়ে অফিসে যাওয়া ট্র্যাজেডি ছাড়া আর কী?



আকাশটা একটু মেঘলা থাকলেই আর অফিসে যেতে মন চায় না। অবশ্য মনটা কবে অফিসে যেতে চায় সেটাও একটা প্রশ্ন। সব সময়ই এমন কারণ খুজতে থাকে মনটা। আকাশে প্রচন্ড মেঘ অথবা আকাশে কোন মেঘ নেই, প্রচন্ড রোদ। কিংবা কোন কারনে মনটা একটু বেশী ভালো থাকলে অফিসে যেতে ইচ্ছে করে না, মনটা একটু খারাপ থাকলেও তো কথাই নেই।



এতদিন মনে হতো এমন কাব্যিক দিনে অফিস আদালত, স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে বনে-বাদাড়ে, মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াতে পারলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেত। কেউ একজন মাথায় ঢুকিয়ে দিল তারা নাকি এমন দিনে স্কুল ফাকি দিয়ে বন্ধুরা মিলে পদ্মা নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকত। তারপর থেকে বন-বাদাড় ভুলে আমার মনও পদ্মার পাড়ে গিয়েই পরে থাকে।



কিন্তু গতকাল প্রকৃতি চাকুরিজীবীদের প্রতি কিছুটা উদারতা দেখাল। শনিবার বেলা বারোটায় আকাশে কালিমাখা মেঘ।



বউ এর স্যান্ডেলের ফিতা ছিড়ে গেছে। ক’দিন যাবৎই বলছিল, বাইরে গেলে মনে থাকে না। স্যান্ডেল কেনার নাম করে বৃষ্টিতে ভেজার উদ্দেশ্য নিয়ে রাস্তায় নামলাম। বাচ্চাটা তার ওয়াকার নিয়ে পেছন পেছন আসলো, আমার সাথে যাবে। কিন্তু বউ এর স্যান্ডেল কেনার পথে কেউ আমার বাধা হয়ে দাড়াতে পারবে না।



বৃষ্টিতে ভিজতে যাই শুনলে বউ হয়তো খুব দ্রুত ছাদে মঞ্চ সাজিয়ে ফেলবে, বন্ধুদের সাথে রাস্তায় ভেজা বাদ দিয়ে ছাদে গিয়ে ভেজার আবদার মেটাতে হবে। বন্ধুদের সাথে রাস্তায় বৃষ্টিতে ভেজা বড় কথা নয়, স্ত্রীর স্যান্ডেল টাই আমার কাছে বড়। অতএব রাস্তায় নামলাম।



চাতকের মতো অপেক্ষায় থেকেছি বৃষ্টি নামলে দু’জনে ভিজব। কতবার আমরা দুজনে ক্যাম্পাসে বৃষ্টিতে ভিজেছি, রমানয় ভিজেছি, রিক্সায় করে ভিজেছি। এসব ভাবতে ভাবতে মনে একটু খচখচে অনুভূতি নিয়ে পোলাপানকে ফোন করা শুরু করলাম।



জিয়াকে ফোন করলাম। আজকে ওর ডিউটি আছে। তবুও আশ্বস্ত করলো ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আসছে।



সোহাগের অফিস নাই। তবে ওরও ’ডিউটি’ থাকে শনিবারে। তারপরও ফোন করলাম, বললো বাসায় ফিরছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই মাসুদ ভাইএর চায়ের দোকানে উপস্থিত থাকবে।



ফোন করা মাত্রই দিপু রাস্তায় নেমে গেল। শুভ ফোন পেয়েই উঠলো ঘুম থেকে। বললো নামছি। আরিফ ভাইও জানালো আসছে। রবিন ফোন ধরলো না। বরকতের সামনে পরীক্ষা। বৃষ্টিতে ভেজার ঝুকিতে যাবে না। কী আর করা, বৃষ্টি কমলে ছাতা মাথায় নামতে বললাম। (পরে জেনেছিলাম ওর পরীক্ষা আরও তিন সপ্তাহ পরে!)।



সবশেষে নাদিমকে ফোন করলাম। ও বৃষ্টিতে ভিজবে। তবে রাস্তায় নয় ছাদে, ’পরিবার’ নিয়ে।



ছাদে বৃষ্টিতে না জিজে ’স্যান্ডেল কিনতে’ রাস্তায় নামায় এতক্ষণ মনে যে একটা অস্পষ্ট অস্বস্তি ছিল নাদিমের সাথে কথা বলার পর তা স্পষ্ট হয়ে উঠলো। পোলাপান একসঙ্গে কোন চক্রে বসলে (না, কোন চা চক্র নয়) একজন যদি না টানে তাহলে যেমন অন্যদের ’আবেগ’ও ঠিকমতো আসে না, নাদিমের এই অংশগ্রহণ না করায় আামার আবেগও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেল।



যাই হোক শেষ পর্যন্ত মাসুদ ভাই এর দোকানে গিয়ে দেখা গেল দিপু আর আরিফ ভাই চলে এসেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুভও আসলো। ব্যাস এই কজনই। নাদিম-রবিন-বরকতরাতো কথাই দেয়নি আর জিয়া-সোহাগরা শেষ পর্যন্তও আসি আসি করে আসলো না। বৃষ্টিও জিয়া-সোহাগের মতই। কেবল আসি আসিই করে গেল। জামা যাও ভিজল গা তেমন ভিজল না। তাও গা যতটুকু ভিজল মন ততটুকুও ভিজলো না।



অফিসে একদিন দুই সিনিয়র কলিগ শুনছিলাম নিজেদের মধ্যে মধ্যে আস্তে আস্তে কোন রসিকতা করছে। আস্তে কথা জোরে শোনা, দূরের জিনিস কাছে দেখার বিশেষ এক ক্ষমতা বিধাতা কাউকে কাউকে দেন। আমার দূরের জিনিস কাছে দেখাতো দুরের কথা চশমা ছাড়া দুরের জিনিস দেখার ক্ষমতাই কেড়ে নিলেও সেটা হয়তো পুষিয়ে দেয়া হয়েছে আস্তে কথা জোরে শোনার ব্যবস্থা করে। যাই হোক তাদের সেই আস্তে কথা আমার কানে ভালোমতোই আসলো।



শুনলাম কোন এক স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ নিয়ে কথা হচ্ছে। উপসংহারে এক ভাইকে বলতে শুনলাম--ঝামেলা হবে না? আপনি তাওয়া গরম করবেন আর রুটি সেকবেন না--ঝামেলা তো হবেই...



কথাটা এতদিন ঠিক বুঝিনি। কিন্তু এই অর্ধ সিক্ত অবস্থায় চায়ের দোকানের পাশের কদম গাছের নিচে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে মনে হলে হলো হঠাৎই আমি সহকর্মীর সেই আস্তে কথার মর্মোদ্ধার করতে পারলাম। এত আয়োজনের পর বৃষ্টি কেবলই তাওয়া গরম করে গেল, রুটি আর সেকলো না।



দাড়িয়ে থাকতে থাকতে চুল যখন শুকিয়ে আসতে লাগলো তখন বাসার পথ ধরলাম। সমাজ রাজনীতি অফিস আদালত সংসার অফিস পোলাপানগুলোকে অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছে, গেছে। আমরা এখন অফিসের, স্ত্রীর, সন্তানের, পরিবারের আমরা এখন ব্যস্ততার। আমরা আর নিজের নই, বন্ধুর নই, আয়েশের নই।



এসব ভাবতে ভাবতে যখন বাসায় ঢুকলাম মনে পড়লো স্যান্ডেল কেনা হয়নি। আমার ইহকার পরকাল দুটোই গেল। না পেলাম বন্ধু, না বৃষ্টি না বউ এর মন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ১:৪১

পংবাড়ী বলেছেন: কাব্যিক বৃস্টি প্রতিদিন হয় বস্তিতে; কয়েকদিন বস্তিতে থাকেন, কাব্য বেরিয়ে যাবে লাল/নীল সুতা হয়ে

০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:১৩

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: কিছু রঙ্গিন সুতা থাক না ভেতরে।

২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ১:৫২

নিশ্চুপ দেবদূত বলেছেন: এমনই হয় রে ভাই :( :(

০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:১৪

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: হুমম এমনই হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.