নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায় ব্রাজিল, হলুদ জামার ব্রাজিল

১০ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:১৪





একে একে সাত-সাতটা গুলি এসে লাগলো আমার বুকে। আগে নাটক সিনেমায় দেখা যেত লোকেদের হাতে যে পিস্তল তাতে ছয়টা গুলি আটত। এখন আধুনিক যুগ, পিস্তলের গুলিও ছয়টার বেশী। সেখান থেকে সাতটা গুলি এসে লাগল আমার বুকে।



মিরাকল কিছুর আশা ২৯ মিনিটেই বাদ দিতে হয়েছিল, তারপরও কীসের প্রত্যাশায় পুরো ৯০ মিনিটই বসে ছিলাম। নিশ্চিতভাবেই আমার ফুটবল প্রেমের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন ছিল এটা। এমন একটা দিন যা আমরা যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে চাইব। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই দিনটিকে ইতিহাস কখনোই ভুলতে দেবে না। তবে ম্যাচ শেষে সবকিছু ছাপিয়ে প্রথম যে কথাটা আমার মাথায় আসলো তা হলো আমি আগামীকাল আড্ডায় যাবো কোন মুখে? আড্ডায় আর্জেন্টিনার সংখ্যাগরিষ্ঠতা, আর এই ম্যাচের আগেই শাওন প্রথমবারের মতো দাবী করলো সে জার্মানির সমর্থক এবং সাথে হুঙ্কার দিয়ে রাখলো ব্রাজিলের নামের থেকে ছোটখাটো পোশাকের প্রথম অংশটি আজ জার্মানি খুলে দেবে। আর দাবী করার ঘন্টা চারেকের মধ্যে ঘটিয়েই দিলো ইতিহাস।



দুর্বল কোন মানুষ হয়তো বলবে ব্রাজিলের মূল দুই খেলোয়াড় মাঠে ছিল না, এবং এই দুই খেলোয়াড়তো কেবল দুইজন খেলোয়াড় নয়, এই দু’জন হলো চারজন খেলোয়াড়ের সমান--এজন্য ব্রাজিল হেরেছে। তবে আমি তাদের দলে নই। আমি সবল সমর্থক। দু’জন খেলোয়াড়ের অভাবে একটা দল পরের ম্যাচে সাত গোল খাবে এমন দলের সমর্থক তো আমি নই। আমার তাই চিরন্তন দর্শনেই সান্তনা--জয় পরাজয় খেলারই অংশ। কিন্তু তার পরও সান্তনা পুরোপুরি না পাওয়া যাওয়ায় এর পর আরও যোগ করতে হয়--জয় পরাজয় খেলাড়ই অংশ আর ৭ গোলও পরাজয়েরই অংশ।



তেমন কোন যুক্তিগত কারন ছিলনা, কিন্তু কেন যেন ম্যাচের আগের দুইদিন আমি বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম ব্রাজিলে জয়ের ব্যাপারে। এমনকি বিশ্বকাপের খেলাগুলো নিয়ে আমারা সাধারণত যে এক লিটার কোক বাজি ধরি ব্রাজিলের এই ম্যাচ নিয়ে নাদিমের সাথে ডাবল বাজি লাগলাম। সব কিছু আমার পক্ষেই ছিল। গোলটা বাধলো যখন মহামতি পেলেকে বলতে শুনলাম ”ব্রাজিলই জিতবে।” খেলোয়াড় হিসেবে যতখানি সফল ছিলেন পেলে, ভবিষ্যৎবক্তা হিসেবে ঠিক ততখানিই ব্যর্থ। খেলাধূলা ছাড়ার পর পেলে চাইলেই বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তরে একটা চাকরি পেতে পারতেন। কারন তার ফোরকাস্টিং-এর সাথে আবহাওয়াবিদদের ফোরকাস্টিং-এর অবিশ্বাস্য মিল খুজে পাওয়া যা। তারা প্রচন্ড গরমের দিনে আমাদের আবহাওয়াবিদরা যখন ”আগামীকাল থেকে বজ্র ও বজ্রসহ ভারীবর্ষণ” শুরুর ঘোষণা দেন তখন থেকেই আমরা যেমন একটা আশঙ্কায়-আতঙ্কে থাকি, পেলের ব্রাজিলের জয়ের ঘোষণার পর তেমনি এক আশঙ্কায় ছিলাম। গভীর রাতে সেই আশঙ্কাই নিষ্ঠুরভাবে সত্য প্রমাণিত হলো।



খেলার মিনিট পঁচিশেক পর থেকেই এই মাঝরাতে হঠাৎ করেই আমি একজন সেলিব্রেটি হয়ে গেলাম। ওই সময়ের মধ্যে গোটাদশেক ফোন, গোটা পনের ক্ষুদ্রবার্তা। কেউ খেলার কথা বলছে না, সবাই আমার শরীর-স্বাস্থ্যের খবর নিল, সেহরী খাওয়া এবং ছেলের খবর নিল। আমি থ্রি জি ভিডিও কল ছাড়াই দিব্যি দেখতে পেলাম ওদের মুখের নিঃশব্দ হাসি।



আমার ধারনা ছিল আমি স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই খেলা দেখছিলাম। কিন্তু আমার মা এবং স্ত্রীসহ বাকী সবার ধারণা ছিল অন্যরকম। মা সেহরী খেতে উঠে আমাকে কিছুটা সান্তনা দেবার চেষ্টা করলো। বার বার বলতে লাগলো, দেখিস আর্জেন্টিনাও হারবে। তার দৃঢ় ধারনা আর্জেন্টিনাও হারলে আমার দুঃখ কিছুটা কমবে। শেষ রাতে ঘুমাতে যেতে যেতে তুলিও বলার চেষ্টা করলো নেইমার-সিলভারা থাকলে কিছুতেই এমনটা হতে পারতো না। ... এর চেয়ে মা বা তুলিরা যদি দৃঢ়ভাবে বলতো ব্রাজিল বাজে খেলেছে তাই হেরেছে হয়তো অপেক্ষাকৃত কম বিষবত মনে হতো।



ম্যাচ শেষে ব্রাজিল দলকে মনে হচ্ছিল সেন্ট হেলেনা দ্বীপনিবাসী সম্রাট নেপোলিয়ন। নাকি পথে পথে ঘুরে বেড়ানো রাজ্যহারা বাদশাহ হুমায়ূন? হুমায়ূনই বেশী উপযুক্ত--বাদশাহ আবার ফিরে পাবেন রাজ্য, দিল্লীর সিংহাসন।



খানিকটা সঙ্কোচে আছি এই ভেবে যে ছেলেটাকে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে ব্রাজিল সমর্থক বানিয়ে দিয়েছিলাম। জার্সি গায়ে সেই ছবি দিয়েছি আমার ফেইসবুকেও। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপেই তাকে এভাবে বিব্রত করার অপরাধবোধে ভুগছি।



তবে স্বপ্নবাজেরা এখন আগামী দিনের দিকে তাকিয়ে। পেলের বাবার কান্নার প্রতিদান পেলে দিয়েছিলেন তিনটি বিশ্বকাপ জিতে। মারাকানার সেই কান্না ভুলতে ব্রাজিল ঘরে তুলেছিল পাঁচটি বিশ্বকাপ। চক্র আবার নতুন করে শুরুহবে। ঘরের মাটিতে ব্রাজিলিয়ানদের এই কান্নার প্রতিদান দিতে সেলেসাওরা আরও পাঁচটি বিশ্বকাপ হয়তো জিতবে। শিশু সন্তানকে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে পরাজিত করার গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে পিতা। আমি অপেক্ষায় আছি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:১৯

রিফাত হোসেন বলেছেন: লোল :) ২ ২ ৪ হাহাহাহা

মেসী একাই ৪ জন !

পারলে ঠেকাক । ছেলেটা অনেক অভিজ্ঞতা পুজি করে এসেছে । :)

কেন জানি ব্রা জিলিয়ান দলকে ভাল লাগে না, যদিও তারা ভাল খেলা উপহার দেয় ।

আর্জেন্টাইন ফুটবল সাপোর্টার হওয়াতে একটু রেসিস্ট ভাবটা আছে । তবে নেইমার থাকলেও হারত ।

কারন মেসি আর নেইমার এক নয় ! ;)

আশা করি ব্রা জিল আবার সাম্বা নাচঁতে শিখবে !

২| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:০৩

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: আশা করি ব্রা আর জিল দ্রুতই আবার জোড়া লেগে যাবে।

৩| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:২০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এমনিতেই ব্রাজিলের খেলা দেখলে অসুস্থ হয়ে যায় টেনশনে। ২০১৮ তে চোখা রাখলাম দেখাযাক কি হয়। স্কলারীরর তারুন্য প্রিয়তা ব্রাজিলকে ডুবিয়েছে। হাসের ছানারা কিভাবে জিতবে। বয়স একটা ফ্যাক্টর। নেইমাররা পরবর্তী বিশ্বকাপে ২৫+ বয়সের হবে। তখন ভাল করার একটা সম্ভাবনা থাকে ।

তবে পেলের মত ৩ বিশ্বকাপ জেতা তারকা আর হবেনা বোধ হয় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.