নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হে জন্ম, আমায় ফিরিয়ে নাও

২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৩৯



সংবাদপত্রের পাতায় চোখ বুলানোর মতো প্রতিদিন ফেইসবুকের পাতায় একবার অন্তত ঢু মারা দিন দিন নাকি সচেতন নাগরিকতার অংশ হয়ে যাচ্ছে। ওরা বলে সংবাদ মাধ্যমের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক বেশী ’মানবিক সংবাদ উৎস’। একথা সত্য যে মাইকেল জ্যাকসন বা স্টিভ জবস-এর মত লোকেদের মহাপ্রয়াণ আমি প্রথম ফেইসবুকেই প্রথম পাই। আর সেটা সংবাদের মতন পরিসংখ্যানপত্র নয়, চিঠির মতন আবেগী সংবাদ। তবে আমি অতশত বুঝি না, যখনই জানলাম একটা সামাজিক যোগাযোগের সাথে না থাকলে ইদানিং আর নিজের লেভেল মেইনটেইন করা যাচ্ছে না আমিও সংখ্যাগরিষ্ঠের দলে ভিরে গেলাম।



তবে আজকাল বুকে আর সেই সুখ নাই’ ফেইসবুকের বুক জুড়ে গাজার অসহায় মানবতার ক্ষত। মানবতার পরাজয় আর গোলার জয় জয়কার। গুলি এবং বোমারু বিমানের এক মহান সাম্য--শিশু, বৃদ্ধ, নারী কাউকেই ভেদাভেদ করে না। নিথর শিশু, রক্তাক্ত শিশু, ছিন্ন ভিন্ন শিশু। বিধ্বস্ত গাজা, বিধ্বস্ত স্বপ্ন।



একটা কাকের ছানা বাসা থেকে পড়ে গেলে বা আক্রান্ত হলে তার আর্ত আহ্বানে শত শত কাক জড়ো হয়। কিন্তু একজন মানুষের ছানার বিপদে শত ডাকা ডাকিতেও মানুষ জড়ো হতে চায় না। এখানেই বোধহয় আমরা কাকেদের চেয়ে উন্নত প্রাণী। মাঝে মাঝেই মনে হতো এ একান্তই বাঙ্গালী সংস্কৃতি, বাংলাদেশী সংস্কৃতি। কিন্তু এটুকু ভেবে অন্তত স্বস্তি পাচ্ছি যে, এই বিপদে পাশে না দাড়ানোর অপবাদ কেবল বাঙ্গালীরই নয়। গাজার মতো এমন পরিস্থিতিতেই আবিস্কিৃত হয় মানবতায়, উদারতায়, মহানুভবতায় আরব, আফ্রিকা, ইউরোপ সবাই একই সংস্কৃতিতে গাথা।



বিশ্ব মোড়লেরা এক বেশ একটা শান্ত ¯িœগ্ধ অপেক্ষায় আছেন। এই হত্যযজ্ঞে তারা মোটেই উদ্বিগ্ন নন, অন্তত এখন পর্যন্ত নন। একটা সমাজ, একটা রাষ্ট্র, একটা সভ্যতার ইতিাহসে দু-চারশ মানুষের জীবন হয়তো আসলেই তেমন কিছু নয়। কিন্তু একটা পরিবারের জীবনে, একজন ব্যাক্তির জীবনে একটা জীবন অনেক কিছূ। একটা ছোট্ট শিশুর পিতাহারা হওয়া, একজন প্রেমিকের প্রেম হারা হওয়া, পিতামাতার সন্তান হারা হওয়া অনেক কিছূ। একাট মানুষের অনেকগুলো জীবন থাকলে ভালো হতো। কয়েকটা জীবন থাকলে একটা জীবন ইসরায়েলি ট্যংকের গোলায় উড়িয়ে দেয়া যেত, একটা জীবন আমেরিকার ড্রোনে বিলিয়ে দেয়া যেত, একটা জীবন আল কায়েদা-বোকো হারাম বা আল শাবাবদের বিলিয়ে দিয়ে বাকি জীবনটা নিয়ে ’অবশেষে সুখে-শান্তিতে বসবাস করা যেত।’ আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে ঘৃণা ও ভালোবাসা, সৃষ্টি বা ধ্বংস, জয়Ñপরাজয়, হত্যা ও জন্মদানের জন্য একটা মানুষের একটাই জীবন।



’মরনে ক্ষতি নাই’--সত্য। শরৎচন্দ্রের মাপকাঠি মেনে নিয়েও বলছি, মরনে হয়তো আসলেই ক্ষতি নেই, কিন্তু সেটা যদি নিজের মরন হয়। কিন্তু নিজে বেঁচে থেকে পিতা-মাতা বা সন্তানের মৃত্যু একজন মানুষ কীভাবে বইতে পারে কে জানে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষ পারে। ¯্রষ্টার এ এক অপার মহীমা--যাকে সুখ দেন তাকে সে সুখ বোঝার ক্ষমতা না দিলেও যাকে দুঃখ দেন তাকে সে দুঃখের ভার বহনের ক্ষমতা দিয়ে দেন।



তার পরও বলা যায়, যে শিশু, যে কিশোর-তরুণ-বৃদ্ধ, যে নারী যুদ্ধে প্রাণ দিলেন ব্যাক্তিগত ভাবে তিনি বা তারা বেঁচেই গেলেন। কেননা তাকে আর এভাবে প্রতিনিয়ত মরে যেতে হবে না। আর যিনি মারা গেলেন না, এভাবে প্রতিনিয়ত মরে যেতে যেতে তারা যে জীবন কাটাবেন তারা কি পারবেন কোনদিন মন-প্রাণ উজার করে গভীরভাবে কাউকে ভালোবাসতে? গোয়াল ভরা গরু আর গোলা ভরা ধানের জীবন দিলেও তার জীবন আটকে থাকবে রানা প্লাজা আর তাজরীনের জীবনে।



তবে নিতান্ত সাধারণ কিছু মানুষ, যাদের ’খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই’, পথে ঘাটে আন্দোলন করছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে, নিজেদের ক্ষুদ্র সামর্থ নিয়ে এই বর্বরতার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। যা কিছু করছে সাধারণ মানুষেরাই করছে। আর অসাধারণ মানুষেরা, যাদের খাওয়া দাওয়ার পরও কাজ থাকে, তারা বসে বসে রোজা রাখছে-ইফতার করছে, পার্টি করছে, সংসার করছে, গলফ খেলছে।



আমিও বোধহয় সাধারণ কেউ নই, আমিও বোধহয় অসাধারণ মানুষের দলেই। যতবারই ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক ছবিগুলো দেখি ওদের জন্য কিছু একটা করতে ইচ্ছে করে। কী করব ভাবতে থাকি। ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটির কোন মেয়ের ছবিতে কমেন্ট করি আর আন্তর্জাতিক কোন সেলিব্রেটির ফ্যানপেজে লাইক দিই। কমেন্ট আর লাইক দিতে দিতেই আমি গাজা থেকে অনেক দূরে সরে যাই। অসহায় শিশুদের পক্ষে সোচ্চার না হয়ে ফেইসবুক বন্ধুর সাথে চ্যাট করে সময় কাটিয়ে ঘন্টা খানেক পরে খানিকটা হীনমন্যতা নিয়ে ঘুমাতে যাই। আমার ঘুমের কোন সমস্যা হয় না।



ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লুট, চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, নারায়ণগঞ্জে সাত খুন, যত্রতত্র ধর্ষণ...যে কোন সঙ্কটেই স্বার্থপরের মত প্রতিনিয়তই আমার মনে হয় এই আধপোড়া দেশে না জন্মালে কী এমন ক্ষতি হতো? একটু এদিক ওদিক হলেইতো ইউরোপ বা আমেরিকার লৌকিক স্বর্গে জন্মাতে পারতাম।



তবে গত কিছুদিন যাবৎ মনে হচ্ছে একটু এদিক ওদিক হলে আমিতো ফিলিস্তানেও জন্ম নিতে পারতাম--হয়তো গাজার রাস্তায় পড়ে থাকত আমার সন্তানের লাশ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যে লাশের ছবি দেখে অক্ষমেরা আক্ষেপ করত, আহাজারি করতো আর ক্ষমতাবানেরা থাকতো নির্বিকার।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩

সুমন কর বলেছেন: আজকাল বুকে আর সেই সুখ নাই’ ফেইসবুকের বুক জুড়ে গাজার অসহায় মানবতার ক্ষত। মানবতার পরাজয় আর গোলার জয় জয়কার। গুলি এবং বোমারু বিমানের এক মহান সাম্য--শিশু, বৃদ্ধ, নারী কাউকেই ভেদাভেদ করে না। নিথর শিশু, রক্তাক্ত শিশু, ছিন্ন ভিন্ন শিশু। বিধ্বস্ত গাজা, বিধ্বস্ত স্বপ্ন।

...............

আমিও বোধহয় সাধারণ কেউ নই, আমিও বোধহয় অসাধারণ মানুষের দলেই। যতবারই ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক ছবিগুলো দেখি ওদের জন্য কিছু একটা করতে ইচ্ছে করে। কী করব ভাবতে থাকি। ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটির কোন মেয়ের ছবিতে কমেন্ট করি আর আন্তর্জাতিক কোন সেলিব্রেটির ফ্যানপেজে লাইক দিই। কমেন্ট আর লাইক দিতে দিতেই আমি গাজা থেকে অনেক দূরে সরে যাই। অসহায় শিশুদের পক্ষে সোচ্চার না হয়ে ফেইসবুক বন্ধুর সাথে চ্যাট করে সময় কাটিয়ে ঘন্টা খানেক পরে খানিকটা হীনমন্যতা নিয়ে ঘুমাতে যাই। আমার ঘুমের কোন সমস্যা হয় না।

..............

ভালো বলেছেন। সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.