নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৮

রাস্তা পার হতে হতে রিকশায় ভেসে যাওয়া সুন্দরী দেখতে যেয়ে একাধিকবার রিকশাওয়ালার কাছ থেকে হলুদ কার্ড পেয়েছি।

তবে আজ বোধ হয় কেবল হলুদ কার্ডেই পার পাওয়া গেল না। কারণ, সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে রিকশা একেবারে থেমেই গেল। ঘটনা কী বুঝে ওঠার আগেই দেখি রিকশা থেকে সেই সুন্দরী হাতের ইশারায় কাছে ডাকছে।

কোন এক জ্ঞানী লোকের কাছে শুনেছিলাম সেই অমর বাণী--কোন রূপসীকে আপনার দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখলেই বিগলিত হয়ে যাবেন না। আগে খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনার জিপার ঠিকমতো লাগানো আছে কিনা। প্যান্টের জিপার ঠিকমতোই আছে নিশ্চিত হয়ে এদিক ওদিক খোঁজ নিলাম--অন্য কাউকে ডাকছে কিনা। ডানে-বায়ে, সামনে-পেছনে ভালমত তাকিয়েও যখন নিশ্চত হলাম নাহ্, আমাকেই ডাকছে, বিভ্রান্তি আরও বেড়ে গেল। সুন্দরীরা দূরে ঠেলে দিলে তা কষ্টের কারণ হয়, কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই বলছি, এভাবে কাছে ডেকে নিলেও তা সুখের কারণ হয় না।

কাছে এগিয়ে যেতেই আমাকে কোন সুযোগ না দিয়েই একগাদা প্রশ্ন--
-স্যার আপনি কেমন আছেন?
-অফিস কেমন চলছে?
-আপনি তো আর আসলেন না বাসায়...

'স্যার' বলে সম্বোধন করায় সম্বিত এবং স্বস্তি দুটোই ফিরে পেলাম। সুন্দরী মেয়েদের 'স্যার' হতে পারার একটা আলাদা শ্লাঘা থাকে। সে তো ছিলই, তাছাড়াও, আমার এক যুগের শিক্ষকতা যে সিকি যুগের চাকরীর কাছে এখনও বিলীন হয়ে যায়নি সেটা জেনেও ভালো লাগলো।

এই শতাব্দীর প্রায় শুরু থেকেই শুরু আমার শিক্ষকতা জীবনের। বড় লোক বন্ধুদের মধ্যে দেখা যেত এক অদ্ভুদ আত্মসম্মান বোধ--হাত খরচের জন্য পিতার কাছে হাত পাততে তাদের অহং-এ লাগতো, তাই তারাও টিউশনি করতো। আমাদের যাদের জন্মই হয়েছে ’পিতার কাছে টাকা চাহিয়া পত্র লিখিবার জন্য’ তাদের এই টিউশনির পিছনে অন্যান্য হাজারো ’কারনাবলী’ সক্রিয় ছিল, কিন্তু তা কখনই অহং ছিল না। বরং টিউশনির প্রথম দু’এক বছরের উত্তেজনা কেটে যাবার পরের বছরগুলোতে মাধবী সকাল, ক্লান্ত বিকেল কিংবা আয়েশী সন্ধ্যায় এই বাসা থেকে সেই বাসায় ছুটে বেড়াতে বেড়াতে এক রকম হীনমন্যতা ভর করত।

সেই হীনমন্যতা পুষিয়ে দিতেই যেন আজকাল সেখানে একটা গর্ব এসে ভর করে। গর্বিত হই যখন স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাস্তায় বের হবার পর কোন ছাত্রের মুখোমুখি হয়ে যাই এবং সে বিনীত ভঙ্গিতে সালাম দিয়ে জানতে চায় স্যার কেমন আছে। ছাত্র সিগারেট টানে অথবা রূপসী ছাত্রী আরেক তরুণের বাহুলগ্না হয়ে বসে থাকে তাতে দুঃখ না পেয়ে বরং ভালো লাগে যদি দেখি দূর থেকে দেখতে পেয়েই ছাত্র তার হাতের সদ্য কেনা সিগারেট ফেলে দেয় কিংবা ছাত্রীরা অপরের বাহুমুক্ত হয়ে বসার চেষ্টা করে।

ছাত্রীর সাথে ভাব-ভালোবাসা টিচিং এথিকস-এর বাইরে--এ বিষয়ে বরাবরই সজাগ ছিলাম। কিন্তু একথাও সত্য--শিক্ষকও তো মানুষ! তার উপর বয়স আবার যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়ের। টেবিলের ওপারে একটা সুন্দরী ছাত্রী বসে থাকলে শত অনটনের মধ্যেও তরুণ শিক্ষকের মনে এক বৈশি^ক উদারতা কাজ করে-- জ্ঞান বিতরণ তুচ্ছ টাকার চেয়ে অনেক মহৎ জিনিস; দু’এক মাস বেতন না পেলে কীই বা এসে যায়? কেবল তরুণ টিউটরের কেন, যে কোন সুস্থ পুরুষেরই ভালো লাগার কথা। কারণ মুগ্ধ করতে সৌন্দর্যতো কোন সম্পর্ক মানে না। অবশ্য যারা মুগ্ধ হতে হতে শেষ পর্যন্ত ”ভালোমতো পড়াশোনা করানোর নামে” স্টুডেন্টকেই জীবনসঙ্গী করে নিয়েছে ”টিচিং এথিক্স” বিষয়ে তাদেরও অকাট্য যুক্তি আছে--মুগ্ধতা যেমন সম্পর্ক মানে না, প্রেমও তেমনি এথিক্স মানে না।

হাতের এত কাছে হাত, পায়ের এত কাছে পা নিয়ে এই যে দিনের পর দিন মুখোমুখি বসে থাকা, আমি তো আমিই, জীবনানন্দও সাকুল্যে এত সময় বনলতার মুখোমুখি বসেছে কিনা সন্দেহ। হাতের কাছে পেলেই যে ছেলে সুযোগ নিতে চায় তার উপর সুন্দরীরা যারপরনাই বিরক্ত থাকে সত্য, কিন্তু যেই ছেলেটি দিনের পর দিন পাথরের মতো সামনে বসে থাক তার উপরও সুন্দরীরা যে খুব প্রীত থাকে তাও না। এই পাথরকে তারা সহজ ভাবে নেয় বলে মনে হয় না।

তারা যদি জানতো সেই পাথরের বুক চিরে বয়ে চলা ঝর্ণার কথা! তাদের সামনে উদাসী ভঙ্গিতে ঘন্টা দেড়েক বসে থাকতে তাদের তরুণ শিক্ষককে নিজের সাথে কতখানি সংগ্রাম করতে হতো! তারপরও শেষ পর্যন্ত সুযোগ নিতে চেষ্টা না করার যে আত্মত্যাগ, সেই ত্যাগও বৃথা যায় না, কালেভদ্রে ফল পাওয়া যায়। যেমন আজকে--

”-স্যার আপনি কেমন আছেন?
-অফিস কেমন চলছে?
-আপনি তো আর আসলেন না বাসায়...”

হাস্যোজ্জ্বল ছাত্রীটি পাশে শুকনোমুখে বসে থাকা তার স্বামীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। ভদ্রলোক শুকনো মুখটি আরও শুকনো করে আমার দিক হাত বাড়িয়ে দিলেন। সভ্যতার কিছু সমস্যা থাকে--কখনও কখনও বিষপান করেও আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে সভ্যতা বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হয়। ছাত্রীটির স্বামী কিংবা আমি, আমরা কেউই সভ্যতাকে ধ্বংস হতে দিলাম না--কিছুক্ষণ হাত ঝাকাঝাকি করলাম।

রাত প্রায় এগারোটায় স্বয়ং স্বামীকে পাশে নিয়ে কোন তরুণী যখন চলন্ত রিকশা থামিয়ে সাবেক শিক্ষকের কুশলাদি জানতে চায়, মনের মাঝে তখন অবধারিত ভাবেই বাজতে থাকে--

"আজ হতে চির উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শির..."

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


"রাস্তা পার হতে হতে রিকশায় ভেসে যাওয়া সুন্দরী দেখতে যেয়ে একাধিকবার রিকশাওয়ালার কাছ থেকে হলুদ কার্ড পেয়েছি। "

-বাস ট্রাক থেকে লাল কার্ড পাবেন।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:২৬

উড়োজাহাজ বলেছেন: ভাল উপলব্ধি।

৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩১

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

ভাল লাগল এবং মজাও পেলাম।


ধন্যবাদ।

৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১৫

এনামুল রেজা বলেছেন: কোন এক জ্ঞানী লোকের কাছে শুনেছিলাম সেই অমর বাণী--কোন রূপসীকে আপনার দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখলেই বিগলিত হয়ে যাবেন না। আগে খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনার জিপার ঠিকমতো লাগানো আছে কি..

হাহাহহাহা।

স্মৃতিচারণা পড়ে আনন্দই পেলাম। শিক্ষকের কদরটা প্রাচীন ছাত্রীরা মন্দ করেনা। এই ব্যাপারে আমারও কাছাকাছি ধরণের অভিজ্ঞতা আছে। :D

৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮

আবু শাকিল বলেছেন: ভাল লাগল।

৬| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৯

সুমন কর বলেছেন: অনেক দিন পর, অাপনার লেখা পেলাম। কেমন অাছেন?

লেখা চমৎকার লাগল।

৭| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৬

এহসান সাবির বলেছেন: টেবিলের ওপারে একটা সুন্দরী ছাত্রী বসে থাকলে শত অনটনের মধ্যেও তরুণ শিক্ষকের মনে এক বৈশি^ক উদারতা কাজ করে B-)) B-))

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.