নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

যাবজ্জীবন সংসার যাপন

১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ১:৫৭

সময়ের নায়কেরা হয়তো তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারেন একাত্তরের এই দিনের কথা বা উত্তাল ঊণসত্তুর কিংবা বায়ান্নর ফেব্রুয়ারীর কথা। আমরা যারা এই সেদিনের তারা জাহাজের কথা বাদ দিয়ে বড় জোর বলতে পারি আদার কথা। আমরা জাতীয় জীবনের চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের কথা না বলতে পারি, বলতে পারি ব্যক্তি জীবনের দু’চার বছরের কথা, বলতে পারি সাফল্যের চতুর্থ বছরে পদার্পণ-এর কথা।

বিয়ের চতুর্থ বছরে পদার্পণকেই সাফল্য বলা যায় কিনা তা নিয়ে যারা সন্দিহান তাদের কে অন্তত বলা যায় ”মেইড ইন চায়না”র এই যুগে তিন তিনটে বছর সাফল্যই বটে। জ্যাসন আলেক্সেন্ডারের সাতে ব্রিটনির বিয়ে টিকলো ৫৫ ঘন্টা, এডি মারফি এবং ট্র্যাসি এ্যাডমন্ড সংসার করলো ২ সপ্তাহ, ক্রিস হামফ্রিসের সাথে কিম কারদাসিয়ানের বিয়ে ৭২ দিন, কিড রক এবং পামেলা এন্ডারসনের সেই তুলনায় বেশী দিনই টিকেছে বলা যায়-১২২ দিন। জেরমি থমাসের সাথে ড্রিও ব্যারিমোরের সংসার টিকলো ১ মাস, আর গ্রিনের সাথে ৫ মাস। এরকম হাজারো উদাহরণ আছে।

সেলিব্রেটিদের কথা বলা হলো কারন তাদের চেনাতে কষ্ট করতে হবে না। চাইলে আমার চারপাশের বেশ ক’জনের কথা বলা যেত। এতে কেবল তাদের পরিচয়দানের কষ্টটুকু বেশী করতে হতো।

ওদের এই সংসার ভাঙাগড়ার প্রধান কারন তাদের স্বাবলম্বিতা, আত্মনির্ভরশীলতা। কেউ কারও উপর নির্ভরশীল নয়। অতএব চালাও হাতুড়ি, চালাও বুলডোজার। বিয়ে ভাঙার ক্ষেত্রে সমাজের ওই উচু শ্রেণির সাথে অদ্ভুদ মিল আছে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণিরওÑÑতারাও সমাজের কথা ভেবে কপটতার চেয়ে নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে অকপটে আরেকটি বিয়ে করে ফেলে বা অন্য কিছু করে। কারণ এই শ্রেণিও আত্মনির্ভরশীল—স্বামী-স্ত্রী দুজনই উপার্জন করতে, দু’জনই যার যার মতন আর্থিক এবং আত্মিক ভাবে স্বাধীন। এই দুই সীমার মধ্যবর্তী যে শ্রেণি তারাই সমাজের ধারক, বাহক এবং সমাজের শৃক্সক্ষলে বন্দী। তারাই পুরোপুরি আত্মনির্ভরশীল নয়। তবে এই শ্রেণিও শিক্ষিত হচ্ছে, স্বাবলম্বী হচ্ছে, হচ্ছে স্বাধীনচেতা। যেনতেন ভাবেই যাবজ্জীবন সংসার যাপনের বাধ্যবাধকতার বাইরে এসে খুজে ফিরছে উন্নত জীবন।

ওদের কী এমন ভালোবাসা উপচে পড়তে থাকে যে তারা বিয়ের পিড়িতে বসেন আবার পনের দিনেই কীই বা এমন হয় যে সেই পিড়ি আবার নতুন আরেকটা বানাতে হয়? এর পক্ষেও ওদের নাকি যুক্তি আছে--যতক্ষণ প্রকৃত ভালোবাসা থাকে ততক্ষণই তারা একসাথে থাকেন। ভালোবাসা না থাকা সত্বেও তারা সমাজের কথা ভেবে অভিনয় করতে পারেন না।

ওদের যুক্তি মানলে আমাদের ভালোবাসা হয় আসলেই অফুরন্ত, ত্রিশ-চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের সংসার জীবনেও তা নিঃশেষ হয় না অথবা এদেশের বড় একটা অংশ আমরা সবাই ভালো অভিনেতা-নেত্রী। আমাদের পিতা-মাতাদের সময়েযে পৃথিবীতে সীমাহীন প্রেম ভালোবাসা ছিল এতদিন তাই জেনে এসেছি। তবে বর্তমানে সেলিব্রেটি ছাড়াও আত্মনির্ভরশীল উঠতি স্বামী-স্ত্রীদৈর মধ্যে ’সংসার ত্যাগের’ যে একটা আপেক্ষিক উদারতা দেখা যায় তাতে মাঝে মাঝে আমাদের অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত কিংবা শিক্ষিত কিন্তু কোন অর্থকরী কাজে যোগদান না করা পরনির্ভরশীল মা আর পরাক্রমশালী বাবাদের যুগ-যুগান্তরের ভালোবাসার মহিমা কিছুটা ফিকে হয়ে আসে। তাদের অভিনয় প্রতিভার কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। ভালোবাসা ছাড়াও হয়তো সেই সব নারীদের মধ্যে কাজ করেছে আশ্রয়দাতার প্রতি অসহায় একজনের আনুগত্য। অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো হয়ে এসেছে দাদাকে ভালো না বেসে দাদীর কোন উপায় ছিলনা, চাচার সংসার না করে চাচীর। কিংবা তাদের হয়তো প্রকৃত ভালোবাসাই ছিল, কিন্তু যতযাই বলি না কেন, তাদের সেই ভালোবাসায় হয়তো রাজনীতির পরিভাষায় যাকে বলে--একটা ”লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” ছিল না।

কেননা যতই দিন দিন তরুণ-তরুণীরা শিক্ষিত হচ্ছে, হচ্ছে স্বাবলম্বী, ততই তারা সংসারের মায়া কাটাতে শিখছে। নির্ভরশীলতার সংসারে কোন আসবাব ভেঙ্গে গেলে চেষ্টা করা হতো গোটাদুই পেরেক মেরে আরও যতদিন পারা যায় চালিয়ে নিতে। আর স্বামী-স্ত্রী দুজনই যেখানে স্বাধীন সেখানে পেরেক মেরে চালানোর চেয়ে নতুন আসবাব জোগাড় করাই কখনও কখনও দুজনের কাছে অধিক পছন্দনীয় হচ্ছে।

তবে কি শিক্ষা, আর্থিক স্বাধীনতা, স্বাধীন চেতনা আমাদের ক্ষতি করছে?

যে কথা বলতে যেয়ে এত কথা বলা তা হলো, এখনকার স্বাবলম্বী নারী-পুরুষকেও যখন দীর্ঘসময় এক ছাদের নিচে বসবাস করতে দেখা যায় তখনই বলা যায় প্রকৃত ভালোবাসা কী জিনিস। আমারতো মনে হয় স্বর্ণযুগের সংসারের চতুর্থ বছরে পদার্পনের চেয়ে টিস্যু, ফাস্ট ফুড, রেডি মিক্স ভুনা খিচুরী, ওয়ান টাইম কাপ-গ্লাসের এই কলিকালে চতুর্থ বৎসরে পদার্পণ আরও অনেক বড় সাফল্য। তাছাড়া এই তিন বছর কেবল দিনগুনে ১০৯৫ টি দিন পার করাই নয়, সকলের দোয়ায় আামদের হাতেও আছে বিশ মাস বয়সী একটি বিশ্বকাপ ট্রফি।

এই তিন বছরে জাতীয় জীবনে কী পরিবর্তন এসেছে কে জানে, তবে ব্যক্তি জীবনে আমার বয়স বেড়েছে তিন বছরের চেয়ে খানিকটা বেশীই। স্বাধীনচেতা আমি দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে শিখেছি। আর যেই আমি দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে শিখলাম আস্তে আস্তে আমার সব দরজাই বন্ধ হবার উপক্রম হলো। আমি অফিস, অফিস শেষে আড্ডা, আড্ডার পর বাসায় এসে সংবাদপত্র, ইন্টারনেট এসব নিয়ে নিজেকে মুক্ত-স্বাধীন ঘোষণা করেই চলছিলাম। সেই সসাগরাসন্দীপা পৃথিবীর আমি এখন প্রায় গৃহপালিত।

তারপরও বউ এর মুখে শুনলাম না আমি এখন বাসায় সময় দিচ্ছি। বছরখানেক আগের চেয়ে আমি এখন বাসায় ঢের বেশী সময় বেশী দিচ্ছি। তার পরও বউ এর মুখে এখনও সেই একই কথা--আমি আগের মতো সময় দিচ্ছি না। এই তিন বছরে আমার একটা শিক্ষা হয়েছে, গ্রেট মাইন্ডস থিংঙ্ক এলাইক। সারা বিশ্বেও সকল স্ত্রী-ই গ্রেট। তা না হলে তারা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একইভাবে ভাবতে পারেন কিভাবে? স্ত্রী জাতির থিঙ্ক এলাইক এর ছোট্ট একটা উদাহরন হলো তাদের কিছু ”বাণী চিরন্তনী” আছে যা আবহমান কাল ধরে বংশপরম্পরায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রেম করে বিয়ে করার পর যেমন একটা কমন সংলাম: তুমি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছ। কিংবা: তোমার সংসারে এসে আমি কী পেলাম? অথবা আমি বলেই তোমার সংসার করে গেলাম।

যাদের বিয়ের পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই প্রথম প্রথম এমন সংলাপ শুনলে কিছুটা ঘাবড়ে যেতে পারে। তবে বছর তিন-চারেক পার করলে তারাও বুঝে ফেলবে এমন ডায়লগ বারাক ওবামাকেও মিশেল ওবামার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শুনতে হয়। প্রতি সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং প্রতি রাতে ঘুমাতে যাবার আগে মেলিন্ডা গেটস্ও হাজার বার বিল গেটস্ কে বলেন--তোমার সংসারে এসে আমি কী পেলাম? প্রিসিলা চ্যানের কাছ থেকে মার্ক জাকারবার্গ শোনেন--শুধুু আমি বলেই এতকিছুর পরও তোমার সংসার করে গেলাম।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিশেল বা মেলিন্ডারা অবশ্য তাদের স্বামীদেরকে দোষ দিতেই পারেন। বিল গেটস কয় রাতে মশারি টাঙায়? অথচ আমি প্রতিরাতেই মশারি টাঙাই এবং শুধু টাঙিয়েই ক্ষান্ত দেই না, যতœ করে তা বিছানার চারপাশে গুজেও দেই। এবং সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সেই মশারি আবার ঠিকঠাক খুলে রেখে দেই যথাস্থানে। মশারি টাঙানো এবং তা বিছানার চারপাশে ঠিকঠাক গুজে দেয়া যে কত বড় কাজ যিনি এ কাজটা করেন শুধুই তিনিই তা বুঝবেন। মশারি টাঙানো কী জিনিস জানেন বিল গেটস? বারাক ওবামা?

একটা শান্তিপূর্ণ সংসারের ত্বাত্তিক পূর্বশর্ত হচ্ছে সমান অংশীদারীত্ব। সব কিছু দুইজন সমভাবে মিলেমিশে করাতেই নাকি শান্তি নিহিত। কিন্তু এটা পুরোটাই ডাহা ত্বত্ত। আশ্চর্যজনকভাবে প্রায়োগিক পূর্বশর্ত হচ্ছে ঠিক তার উল্টো। সবকিছুতেই বৈষম্যতেই নিহিত একটি শান্তিপূর্ণ সংসার। আমাদের বাবারা কর্তৃত্বই করে গেছেন আর আমাদের মায়েরা মুখ বুজে সব সয়ে গিয়ে আমাদের উপহার দিয়েছেন একটা শান্তিপূর্ণ সংসার। অনেক শখ করে আমরা যখন স্বামী হলাম ততদিনে সমাজ অনেক পাল্টে গেল। এখনও শান্তিপূর্ণ সংসার মানে একজনের মুখ বুজে সব সয়ে যাওয়া--শুধু রোল পাল্টে গেছে। এখনকার শান্তিপূর্ণ সংসারের স্ত্রীদের অন্যতম একটা শ্লাঘার যায়গা--পৃথিবীতে অন্তত একজন মানুষ তাকে সমীহ করে চলে!

কথিত আছে পুরুষেরা ভংঙ্কর কোন হরর মুভি দেখার চেয়ে বেশী চমকে ওঠে যখন দেখে ফোনে স্ত্রীর পাঁচটা মিসকল।

কীভাবে জগতে শান্তি আসে সেটা বড় কথা নয়, শান্তিটাই শেষ কথা। কে কিভাবে শান্ত হচ্ছে, কে কোথায় শান্তি পাচ্ছে সেটা তার ব্যাপার। ব্যক্তি স্বাধীনতায় পূর্ণ সমর্থন রেখেই সাফল্যের চতুর্থ বছরে সন্তানের কাছে প্রতিজ্ঞা--সন্তান হিসেবে যখন পিতা-মাতার সংসারের রজত জয়ন্তী-সুবর্ণ জয়ন্তী দেখছি, আমার সন্তানেরাও দেখুক তাদের পিতা-মাতার যত জয়ন্তী। অস্থির আগামীতেও তারা মন্ত্রণা পাক যাবজ্জীবন সংসার যাপন মন্দ নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.