নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাল সারারাত কোন এসএমএস আসেনি। সকালে ঘুম থেকে উঠেও ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম, নাহ, কোন এসএমএস নেই।
সকালে নাস্তার টেবিলে বসে ছোট বোনকে বললামও পর্যন্ত--পিংকীর বড় কোন সমস্যা হলো নাকি কে জানে।
ছোট বোন ভুলে গিয়েছিল কোন পিংকী। মনে করিয়ে দিলাম, ভার্সিটির বন্ধু পিংকী। ও জানতে চাইল, কেন, কী হয়েছে?
কী হয়েছে ছোট বোনকে বললাম। ভার্সিটিতে পরিচয়ের পর পিংকীর হাতে যেদিন থেকে মোবাইল ফোন এসেছে সেদিন থেকে কোন জন্ম দিন, পহেলা বৈশাখ, ঈদ, বন্ধু দিবস এবং এতদ সম্পর্কীয় যত দিবস আছে পিংকীর শুভেচ্ছা ছাড়া পার হয়েছে কিনা মনে করতে পারলাম না। আজ প্রায় বছর দশেক হতে চলল। শুধু দায়সারা এসএমএস পাঠানোই নয়, সব দায় নিজের কাধে নিয়েই যেন সেই এসএমএসও আসে সাধারণত ঘড়ির কাটা রাত বারোট পাঁচ বাজার আগেই। ফোনে যোগাযোগ হয় কমই। কিন্তু বাদ যায়না একটি দিবসও।
তাই সকাল পর্যন্ত এসএমএস না পেয়ে মনে হলো কী সমস্যা হলো কে জানে। ভাবলাম অফিসে যেয়ে কোন এক সময় ফোন করা যাবে।
অফিসের অনেক বদ নাম আছে জানি। কিন্তু অফিসের সবচেয়ে ভালো গুণটা হলো, অফিসে প্রবেশ করা মাত্রই তা একজন মানুষের রোগ-শোক-দুঃখ-ব্যাথা সব নিমিষেই ভুলিয়ে দিতে পারে। পিতার অসুখ, সন্তানের জন্মদিন সব ভুলিয়ে দিতে পারে। সেই তুলনায় এসএমএস না পাঠানো কোন বান্ধবীর খোজ নেবার কথা ভুলে যাওয়া তো নিতান্ত মামুলি বিষয়।
তবে পড়ন্ত দুপুড়ে বাসের টিকেট-ট্রেনের টিকেট, হাজার মেগা ডাটা ফ্রী, ধন্যবাদের আর স্টার প্রোগ্রামের ছাড়ের মেসেজের ভিড়ে কোন সময় যেন পিংকীর শুভেচ্ছা বার্তা এসে পড়ে আছে। মেসেজ পড়ার আগেই ফোন করলাম, হ্যালো, কোন সমস্যা?
মেয়েটা প্রথম কথাতেই সমস্যার প্রশ্ন শুনে কিছুটা হতচকিত হয়ে গিয়েছিল। ধাতস্থ হয়ে যা জানাল তাতে বুঝলাম ধারনা সত্য। ওর ছেলেটার ক'দিন যাবৎ প্রচন্ড জ্বর। আজই একটু কম। শুভেচ্ছা পাঠানোর বিলম্বের হেতু জানা গেল।
এ পর্যায়ে এসে কর্মী প্রনোদনা নিয়ে শোনা কোন একটা গল্প মনে পড়ে গেল।
কোন এক বসের একজন নিষ্ঠাবান টাইপরাইটার গল্প।
যে টাইপরাইটার কোন দিন অফিস কামাই দেন না, টাইপ রাইটিং-এ অত্যন্ত নির্ভুল, দক্ষ একজন কর্মী। তার টাইপ করা স্কিপ্ট এ ছুড়ি চালানোর উপায় নেই। বরং মাঝে মাঝে ওই টাইপরাইটার বিনয়ের সাথে ধরিয়ে দেন বসের দু’একটা ভুল ।
কোন একদিন কোন জরুরী কাজে বস সেই টাইপরাইটারকে বললেন পরের দিন একটু সকাল সকাল আসতে। যাতে করে কাজটা একটু ধীরে-সুস্থে যত্ন সহকারে করেও যথাসময়ে শেষ করে ফেলা যায়।
টাইপরাইটার সেই অনুযায়ীই অফিসে চলে আসলেন। বসের দেয়া চিঠি দেখে টাইপ করে দিলেন। স্ক্রিপ্ট চেক করার কিছু নেই জেনেও বসের বেসিক ইন্সটিঙ্কট থেকেই বস চিঠিটাতে একবার চোখ বুলাতে লাগলেন। এবং এই চোখ বুলাতে গিয়েই মহা বিশ্ময়ের সাথে বস আবিষ্কার করলেন বেশ কয়েকটা ভুল। যে অফিসার সাধারণ কাজটিও এত যত্নসহকারে করে যে, তাতে কলম ধরার সুযোগ পাওয়া যায়না সে আজকের জরুরি কাজটায় একাধিক ভুল করলো? উপরন্তু তাকে বলা হয়েছিল সময় নিয়ে মনযোগ দিয়ে কাজটা করতে। বসের রাগ হবার কথা।
কিন্তু বস তার কর্মীকে চেনেন। তিনি রাগ করলেন না। রেগে যাবার বদলে বরং টাইপরাইটারকে কাছে ডেকে কাধে হাত রেখে জানতে চাইলেন, সে কোন সমস্যার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে কিনা।
এ পর্যায়ে টাইপরাইটার নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। কান্নায় ভেঙ্গে পরে কোন রকম জানালেন তার ছেলেটা আজ সকালে মারা গেছে। মৃত ছেলেকে বিছানায় রেখে সে আজ অফিসে এসেছে জরুরী চিঠি টাইপ করতে।
***
মোরাল অব দ্যা স্টোরি কী আমি জানি না। যিনি বক্তা ছিলেন, শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তিনি উপসংহার টেনেছিলেন এই বলে যে, "এই টাইপরাইটারের মতো মৃত ছেলেকে বিছানায় রেখে অফিসে আসার প্রয়োজন নেই। তবে..."
এই ’তবে’ টুকু বলে বক্তা আরেকটু যোগ করেছিলেন--"তবে এই টাইপরাইটারকে দেখে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।"
©somewhere in net ltd.