নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুরানের গল্প: একটা বেবি এলিফ্যান্ট আর একটা বেবি জিরাফের গল্প

১৩ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:৫১

তুরানের বয়স হলো সাড়ে তিন।

সারাদিন যেমন-তেমন, কিন্তু রাতে ঘুমাতে গিয়ে সে বাবার ঘুম হারাম করে ছাড়ে--বাবা, গল্প শোনাও, গল্প শোনাও, গল্প শোনাও। এবং কোন রেডিমেড গল্প হলে চলবে না, কাস্টম মেড হতে হবে। কারণ গল্পের পাত্র-পাত্রী এবং বিষয়বস্তু সে নিজে নির্বাচন করে দেবে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সেই পাত্র-পাত্রীর সাথে দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার বা উপেন্দ্র কিশোর রায়ের পাত্র-পাত্রীর কোন মিল নেই। যদি কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় তবে তা একান্তই কাকতাল মাত্র। কোনদিন তার পাত্র-পাত্রী হলো একটা মা সিএনজি আর একটা বেবি সিএনজি, কোনদিন বাবা ফ্যান আর বেবী ফ্যান, কোনদিন স্পাইডারম্যান আর ব্যাটম্যান।

গল্পগুলি জমিয়ে রাখছি তুরানের ত্রিশ বছর বয়সের জন্য, কোনদিন যদি তার পুত্রও ঘুমাতে গিয়ে শুনতে চায় একটা মা সাইকেল আর একটা বেবি সাইকেল কিংবা একটা মা টেম্পু আর একটা বেবি টেম্পুর গল্প।


আমাদের আজকের গল্প একটা বেবি এলিফ্যান্ট আর একটা বেবি জিরাফের গল্প

অনেক অনেক দূরে আফ্রিকা নামে এক মহাদেশ আছে। আফ্রিকার বিস্তির্ণ জঙ্গলে অনেক পশুপাখি বসবাস করে। তেমনি এক জঙ্গলে ছিল বন্ধু--একটা বেবি এলিফ্যান্ট আর একটা বেবি জিরাফ। দুই বন্ধু ছিল খুব দুষ্ট।

দুই বন্ধু সারাদিন ঘুরে ফিরে খায় দায়, খেলা করে আর দুষ্টুমি করে। ওদের বাবা-মা বার বার বলে, সারাদিন যাই করোনা কেন, সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফিরতে হবে, পড়তে বসতে হবে। আর খেলতে খেলতে বেশী দূরে চলে যাওয়া যাবেনা, অচেনা কেউ ডাকলে কাছে যাওয়া যাবেনা, কিছু খেতে দিলে খাওয়া যাবে না। কিন্তু দুই বন্ধু বাবা-মার কথা শুনতেই চায় না।

এভাবেই দিন কাটছিল।

একদিন দুই বন্ধু খেলতে খেলতে ওদের বাসা থেকে অনেক দূরে চলে গেল। অনেক দূরে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখতে পেল একটা বড় গাড়ি। গাড়ির পাশে একজন অচেনা লোক দাঁড়িয়ে আছে।

অচেনা লোকটা বললো, বেবি, তোমরা ভালো আছো?

ওরা বললো, ভাল আছি। তুমি কে? আমরা তোমাকে চিনি না।

লোকটা বললো, আমি তোমাদের মামা, আমার নাম অচেনা মামা।
অচেনা মামাটা বললো, তোমরা চকলেট খাবে? আমার কাছে অনেক মজার চকলেট আছে। চিপস ও আছে, খাবে?

বেবি এলিফ্যান্ট বললো, মা বলেছে অচেনা মামার কাছ থেকে কিছু খেতে না।

অচেনা লোকটা তখন বললো, ঠিক আছে, খেও না। তবে তোমরা আমার গাড়িতে করে একটু ঘুরে আসতে পারো। গাড়িতে চড়েছ কখনো তোমরা?

দুই বন্ধু বললো, না, আমারা কোনদিন গাড়িতে চড়িনি।

লোকটা তখন বললো, তাহলে চলো আমার সাথে। গাড়িতে চড়তে অনেক মজা। তোমাদের বাবা-মাকে আমি বলবো না। তাই কেউ তোমাদের বকাও দেবে না।

একদিকে গাড়িতে চড়ার উত্তেজনা, অন্যদিকে বাবা-মার কথা অমান্য করে অচেনা মামার সাথে ঘুরতে যাওয়া, দুই বন্ধু খুব চিন্তায় ছিল। অচেনা মামার কথা শুনে দুই বন্ধু কিছুটা আস্বস্ত হলো।

মামাটা ওদেরকে আদর-যত্ন করে গাড়িতে উঠিয়ে, দরজা লাগিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। গাড়ি চলছে চলছে চলছে। দুই বন্ধুর শুরুতে ভালোই মজা লাগছিলো। গাছপালা ছুটে চলে যাচ্ছে। পশু-পাখিরাও গাড়ি দেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

বেশকিছুক্ষণ চলার পর গাড়ি জঙ্গল ছেড়ে শহরের ভেতর দিয়ে চলতে লাগলো।

বেবি জিরাফ বললো, আমরা আর যাবোনা, আমাদের দিয়ে আসো।

লোকটা তখন বললো, তোমাদেরতো আরো দূরে যেতে হবে। অনেক দূরে।

বেবি এলফ্যান্ট বললো, আমাদের নামিয়ে দাও, আমরা মার কাছে যাবো।

লোকটা বললো, তোমারা আর তোমাদের মার কাছে যেতে পারবে না।
এই কথা বলে লোকটা গাড়ি আরও জোড়ে চালাতে লাগলো।

একথা শুনে দুই বন্ধু ভয় পেয়ে গেল। লোকটাকে ওরা বার বার বলতে লাগলো নামিয়ে দেবার জন্য। দুই বন্ধু যতই কান্না করতে লাগলো লোকটা তত জোড়ে গাড়ি চালাতে লাগলো। গাড়ি চালিয়ে অনেক দূরে গিয়ে লোকটা বেবি এলিফ্যান্ট আর বেবি জিরাফকে একটা চিড়িয়াখানায় বিক্রি করে দিল।

চিড়িয়াখানার লোকেরা দুজনকে দুটি খাঁচায় আটকে রেখে দিল। অনেক কান্নাকাটি করেও দুই বন্ধু আর বাবা-মার কাছে ফিরে যেতে পারলো না। দুজন আর এক সাথে খেলতেও পারে না, মজার মজার খাবারও খেতে পারে না।

দুই বন্ধু নিজেদের ভুল বুঝতে পারলো। ওরা ঠিক করলো, কোনদিন যদি আবার ওরা জঙ্গলে ফিরে যেতে পারে, বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে পারে, তাহলে আর কোনদিন বাবা-মার মনে দু:খ দেবে না, তারা যা বলবে তা মন দিয়ে শুনবে, অচেনা কেউ ডাকলে আর যাবে না, গাড়িতেও চড়বে না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৭ দুপুর ২:১২

নাগরিক কবি বলেছেন: খারাপ না। ভাল লেগেছে। :)

১৫ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:৪৭

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.