নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুরানের গল্প: দুষ্ট জ্বর আর দুষ্ট মশার গল্প

২১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১:০৬

এক দেশে ছিল দুই দুষ্ট বন্ধু--এক দুষ্ট জ্বর আর এক দুষ্ট মশা। একদিন দুষ্ট জ্বর বললো, মশা বন্ধু, মশা বন্ধু, আমার বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে।
মশা বললো কিভাবে বেড়াতে যাবে?
জ্বর বললো, কেন তোমার পিঠে চড়ে বেড়াতে যাবো, তুমি উড়ে উড়ে আমাকে নিয়ে যাবে।
মশা বন্ধু বললো, তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু কোথায় বেড়াতে যাবে? কেও তো আমাদের পছন্দ করে না। আমাদের দেখলেই তাড়িয়ে দেয়, মারতে চায়। বাসায় কয়েল জ্বালিয়ে রাখে, মশার ওষুধ দিয়ে রাখে, মশারি টাঙিয়ে রাখে। তোমাকে তো কেও দেখতে পায়না, যত রাগ ঝারে আমার উপর।
জ্বর বললো, তাহলে ভালো করে চিন্তা করে দেখি কোন বাসাটা ভাল। আমাদের সেই বাসায় যেতে হবে। যেখানে আমরা খাবার পাবো, কেউ আমাদের মারবে না, সেই বাসায়।

অনেক চিন্তা ভাবনা করে তারা দেখলো, তুরানের বাসাটাই জ্বর আর মশার জন্য সবচেয়ে ভাল। কারন রাতে ঘুমাতে যাবার সময় তুরান মশারি টাঙাতে দেয়না, ওর নাকি গরম লাগে। কয়েল জ্বালাতে দেয় না, ওর ধোয়া লাগে, স্প্রে দিতে দেয় না, ওর গন্ধ লাগে।

সব দেখে মশা আর জ্বর খুশি হয়ে গেল। রাতে যখন সবাই ঘুমাচ্ছিলো, তখন মশা আর জ্বর যেয়ে ঢুকলো তুরানের বাসায়। বাসায় যেয়ে তুরানের গায়ে বসে মজা করে রক্ত খেয়ে নিল মশা। আর সেই সুযোগে জ্বরটাও তুরানের শরীরে ঢুকে গেল।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই তুরান দেখলো, কিরে এমন লাগছে কেন? শরীর অনেক গরম। বিছানা থেকে নামতে গিয়ে দেখলো শরীর অনেক দুর্বল।
বাবাকে বললো, বাবা আমার এমন লাগছে কেন।
বাবা কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।

বাবা তুরানকে বললো, তোমারতো জ্বর এসেছে বাবা। ওষুধ খেতে হবে।
ওষুধের কথা শুনেই তুরানের ওয়াক ওয়াক লাগলো। বাবাকে বললো, বাবা, আমি ওষুধ খেতে পারবো না। ওষুধ অনেক তেতো।
বাবা বললেন, তেতো ওষুধ খেলেইতো জ্বর ভয়ে পালিয়ে যাবে।
কিন্তু, তুরানের ওয়াক ওয়াক আরো বেড়ে গেল।

বাবা চিন্তায় পড়ে গেলেন। তাহলে এই জ্বর সারবে কিভাবে? এভাবে একদিন গেল। দুইদিন গেল। কিন্তু জ্বর ভালো হবার কোন লক্ষণই নেই।

বাবা জ্বরকে বললেন, জ্বর তুমি চলে যাও। তুরান অনেক কষ্ট পাচ্ছে।
জ্বর বললো, আমারতো ভালোই লাগছে তুরানের সাথে থাকতে। আমি যাবো না।
বাবা বললেন, তাহলে তুরানের শরীর থেকে আমার শরীরে আসো।
জ্বর বললো, তোমার শরীরে গেলেতো তুমি ওষুধ খেয়ে আমাকে তাড়িয়ে দেবে। তুরানের কাছে থাকাই ভাল। তুরান ওষুধও খায়না, আমার যেতেও হয় না।

তখন বাবা চিন্তা করলেন কী করা যায়। চিন্তা করে বাবা একটা বুদ্ধি বের করলেন। জ্বর তেতো ওষুধকেও ভয় পায় আবার পানিকেও ভয় পায়। বাবা ভাবলেন, পানিতে ভিজিয়ে জ্বরকে ভয় দেখাতে হবে।

যেই ভাবা সেই কাজ। তুরানকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাবা নিয়ে গেলেন গোসলখানায়। তারপর শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে দিলেন তুরানকে দাড় করিয়ে। কিছুক্ষণ পানিতে ভিজে জ্বর দুর্বল হয়ে গেলো। তুরানেরও একটু ভালো লাগলো।
কিন্তু একটু রেস্ট নিয়ে জ্বরের আবার শক্তি ফিরে এলো। আবার তুরানের গা গরম গয়ে জ্বর বেড়ে গেল। তখন বাবা আবার তুরানকে নিয়ে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দিলেন। পানিতে ভিজে ভিজে জ্বর আবার দুর্বল হয়ে গেল।

এভাবে বারবার পানিতে ভিজে ভিজে জ্বর ভাবলো, নাহ, এভাবে বারবার পানিতে ভিজলে আমারই অসুখ হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি পালাই, পালাই। রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে ছিল, জ্বর চুপি চুপি তুরানকে ছেড়ে পালিয়ে গেল।

সকালে তুরান ঘুম থেকে উঠে দেখলো, তার শরীর ভালো লাগছে, কোন জ্বর নেই। তুরান বুঝলো, দুষ্ট জ্বর নিশ্চই পালিয়ে গেছে। দুষ্ট জ্বর আর দুষ্ট মশা যাতে আর ফিরে আসতে না পারে সেজন্য তুরান এখন থেকে মশারি টাঙিয়েই ঘুমায়।

***

তুরানের বয়স হলো সাড়ে তিন।

সারাদিন যেমন-তেমন, কিন্তু রাতে ঘুমাতে গিয়ে সে বাবার ঘুম হারাম করে ছাড়ে--বাবা, গল্প শোনাও, গল্প শোনাও, গল্প শোনাও। এবং কোন রেডিমেড গল্প হলে চলবে না, কাস্টম মেড হতে হবে। কারণ গল্পের পাত্র-পাত্রী এবং বিষয়বস্তু সে নিজে নির্বাচন করে দেবে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সেই পাত্র-পাত্রীর সাথে দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার বা উপেন্দ্র কিশোর রায়ের পাত্র-পাত্রীর কোন মিল নেই। যদি কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় তবে তা একান্তই কাকতাল মাত্র। কোনদিন তার পাত্র-পাত্রী হলো একটা মা সিএনজি আর একটা বেবি সিএনজি, কোনদিন বাবা ফ্যান আর বেবী ফ্যান, কোনদিন স্পাইডারম্যান আর ব্যাটম্যান।

গল্পগুলি জমিয়ে রাখছি তুরানের ত্রিশ বছর বয়সের জন্য, কোনদিন যদি তার পুত্রও ঘুমাতে গিয়ে শুনতে চায় একটা মা সাইকেল আর একটা বেবি সাইকেল কিংবা একটা মা টেম্পু আর একটা বেবি টেম্পুর গল্প।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ২:২২

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: খুব ভাল লাগলো গল্পটা।। একটু হলেও নিয়ে গিয়েছিলো ছোটবেলায়, তুরানের সময়ে।।।
ভাল থাকুক আপনার তুরান।।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১৫

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: দোয়া করবেন তুরানের জন্য।

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:০৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: গল্পগুলি জমিয়ে রাখছি তুরানের ত্রিশ বছর বয়সের জন্য, কোনদিন যদি তার পুত্রও ঘুমাতে গিয়ে শুনতে চায় একটা মা সাইকেল আর একটা বেবি সাইকেল কিংবা একটা মা টেম্পু আর একটা বেবি টেম্পুর গল্প।

হা হাহা

ভালু ভালু । অতি উত্তম । :)

+++

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১৬

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: অতি, অতি ধন্যবাদ।

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১৭

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: পিতারা তো তুরানদের জন্যই।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.