নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মপক্ষ সমর্থন

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:২১


বিশ্ববিদ্যালয়ের একদম প্রথম দিকের ঘটনা। একদিন নীলক্ষেতে গেলাম বই কিনতে। ফেরার পথে ক্লাসের সুস্মিতার সাথে দেখা। ক্লাসের সবার সাথে পরিচয়পর্ব তখনও শেষ হয়ে ওঠেনি। যাই হোক, স্বল্প পরিচয়ের এক মেয়েকে তো আর রিকশা অফার করা যায়না। অতএব দুজন হেটেই ফিরছিলাম। ভাড়াটাও বাঁচলো, সময়ও একটু বেশী পাওয়া যাবে, বলা যাবে আরও কিছু কথা।

ফিরতি পথে কি মনে করে যেন ভাবলাম ল্যাবোরেটরি স্কুলের সামনে ওজন মাপাই। হয়তো আরেকটু সময় পাওয়া যাবে ভেবেই। কিন্তু জীবনে একটা ভুল করে ফেললাম। ওয়েটমেশিন বললো, আমার ওজন ৪৮ কেজি, আর সুস্মিতার ৪৯! এই একটি দূর্ঘটনা পরবর্তী পাঁচ বছরের কান্না হয়ে ছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে।

তখন এসএমসি’র ওরস্যালাইনের একটা জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন চলত--”ফরিদ ভাই, তোমার দোকানে কি খাবার স্যালাইন আছে?...সিগগিরি দুই প্যাকেট দাও।”

এই বিজ্ঞাপনে অনুপ্রাণিত হয়ে সুস্মিতা ক্লাসে আমার নাম প্রচার করে দিল ‘ফরিদ ভাই’। তার ধারনা, আমার ওজনহীনতার মূল কারন ওই ওরস্যালাইনের ঘাটতি। নামকরনের সার্থকতা যাইহোক না কেন পিতৃপ্রদত্ত নামের পাশে আরও এক সঙ্গী জুটলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে।

ওই ঘটনাকে অবশ্য খুব একটা আকস্মিক ঘটনা বলা যাবে না। স্মৃতির ঊষালগ্ন থেকে দেখে এসেছি আমার ‘জিরো ফিগার’। সেই জিরো ফিগার এতদিনেও কখনো ‘ওয়ান ফিগার’ হয়ে উঠতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই অশক্ত হওয়াতে গায়ের জোরের ব্যাপারগুলো থেকে আমি একটু দূরে দূরেই থাকি।

গায়ের জোরের ব্যাপার থেকেই দূরে থাকি। ইনডোর খেলায় তাও কিছুটা চলে কিন্তু গায়ের জোরের খেলা-ধূলাতে একেবারেই অপটু। পাড়ার ক্রিকেট খেলায় আমার মূল দায়িত্ব থাকতো স্কোরারের অথবা দল-নির্বিশেষ আম্পায়ারের। ফুটবলজাতীয় খেলা পারতপক্ষে নিজেই এড়িয়ে চলতাম। এমনকি টিভিতেও কুস্তি, বক্সিং বা রাগবির মতো খেলা দেখা টানে না। দূরে থাকি গায়ের জোরের কাজ থেকে। দূরে থাকি গায়ের জোরের কথা থেকে--কোন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়না, বিদেশে কোন টাকা পাচার হয়না, আইনশৃঙখলা রক্ষাকারীরা সবাই নিষ্কলুশ ইত্যাদি ইত্যাদি।
এমনকি গায়ের জোরের অন্যান্য বিনোদনও গায়ে সহে না। একশনধর্মী সিনেমা দেখা হয়না। শোনা হয়না শক্তিশালী গানও। বাদ্যের জোরালো আওয়াজ ছাপিয়ে শ্রোতাকে গানের কলি শোনাতে গায়ক যেখানে নিজের কন্ঠনালী ছিড়ে ফেলার উপক্রম হয় কিংবা যে গানে কথা বা সুরের চেয়ে বাদ্যযন্ত্রের জোর বেশী তা আমার কাছে যন্ত্রনার মত।

স্বভাবতই সেই আমি চেস্টার বেনিংটনের নাম প্রথম জানলাম তার মৃত্যু দিবসে। লিংকিন পার্কের সাথে পরিচয় ছিল কেবলই তরুণ প্রজন্মের টি-শার্টের মাধ্যমে।

ছোট বেলা থেকেই এই আমি স্বাস্থ্যে যেমন খাটো, বুদ্ধিতেও তেমনি। ফস করে বলে ফেললাম মনের কথাটা--চেস্টার বেনিংটনের নাম জানতাম না । ব্যাস, রাতারাতি তারকা বনে গেলাম। “আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন”, “ঘরে ঘরে গিয়ে মশারি টানানো সম্ভব নয়”, “আপনারা কম খান” বা “চার হাজার কোটি টাকা বড় অঙ্কের অর্থ নয়”-এর মতন তারকা।

শুরু হয়ে গেল ধিক্কার। তিরস্কার। সমালোচনা। আলোচনা। অনেকে বললেন, ভক্তদের এই দু:খের দিনে এরকম ‘উস্কানি মূলক’ কথাবার্তা থেকে দূরে থাকতে। কেউ বললেন, একজন মৃত মানুষকে নিয়ে ভালো কিছু না বলতে পারেন,অন্তত খারাপ কিছু বলা থেকে দূরে থাকুন।

আগেই বলেছি, আমার বুদ্ধি আমার স্বাস্থ্যের মতই হীন, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরও ধরতে পারলাম না উস্কানিমূলক খারাপ কথার যায়গাটা। কেউ কেউ অবশ্য কিছু গান শোনার পরামর্শ দিল। চার-পাঁচটা শুনে দেখলাম। Numb গানটা বেশ ভালো লাগলো, যন্ত্রের যন্ত্রনার চেয়ে গানের ভাষা এবং ভাবই মুখ্য।

চেস্টার বেনিংটন-এর নাম জানতাম না, বলার পর থেকে এই সমাজে আমি উপহাস আর অনুকম্পার পাত্র। এই সমাজ আমাকে মেনে নেবে কিনা, জানতে চাওয়ার পর সমাজ উত্তর দিল, মেনে নেওয়া উচিত না।

আমি আরও অস্তিত্ব সংকটে পরে গেলাম-- "আমি এখন কী করবো?" ধরনের সংকট। সমাজের কাছে আমার আবার আরতি, "হে বঙ্গ...।"

সমাজ এবার সান্তনা দিলেন। স্বপ্নে তার কুললক্ষ্মী কয়ে দিলেন পরে--যে ব্যাক্তি জীবনানন্দের দশটা কবিতার নাম শোনেনি, প্রভাতকুমারের পাঁচটা ছোটগল্প পড়েনি কিংবা পাঠ্যহিসেবে পদ্মানদীর মাঝি ব্যাতীত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় কোন উপন্যাস ছুঁয়ে দেখেনি তাকে যেহেতু সমাজ মেনে নিয়েছে, তোকেও মেনে নেবে।

তারপর থেকে অস্তিত্ব সংকট কেটেছে। কিছুটা ভালো ঠেকছে।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখার উদ্দেশ্য, আদর্শ?

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১১

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: তেমন বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নেই। সময় কাটানো। লেখালেখি খেলা।

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৫

কূকরা বলেছেন: লেখা অত্যন্ত ভাল হইছে।
প্লাস ++++

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১২

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ কূকরা।

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৫৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কারো বই তো দুরের কথা, নামই যদি না শুনে থাকি, আমি অস্পৃশ্য!!
সমাজ না শুনতে হয় মনের কথা।।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১৪

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: মনের কথাইতো শোনার চেষ্টা করি। সবসময় পেরে উঠিনা--পাছে লোকে কিছু বলে...সংশয়ে সংকল্প টলে।

৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:২২

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমার রাজত্বে আমিই রাজা।। কে কি ভাবলো, দিল্লী দুর অস্তেঃর মত ঠেলে দিন সব কিছু।।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:২৭

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: আমি একজন দুর্বল মানুষ। তবে চেষ্টা আছে।

৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:২০

প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ভাল লেগেছে সাবলীল লেখার জন্য। ধন্যবাদ আর শুভকামনা।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.