নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের সংশোধনীসমূহ

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৪

ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে বিগত দিন গুলিতে সংবাদপত্রের দিস্তা দিস্তা কাগজক্ষয় দেখে মনে হলো ব্যাপারটা না জেনে বসে থাকাটা আর বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। হৈমন্তীর শ্বশুর মহাশয়ের মত দেখিলাম, ষোড়শ সংশোধনীর ব্যাপারে জানিতে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট দেরী হইয়া গেছে, কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবে।

আমার বাবা লাইভ খেলার চ্যানেল পালটে রেকর্ড করা টিভি সংবাদ দেখায় বিশ্বাসী। তার মতে এখনকার লাইভ খেলাইতো খানিকবাদের সংবাদ হয়ে যায়। তাই নিয়ম করে সংবাদ দেখলেই আধ-ঘন্টার সংবাদেই সব কিছুর সারসংক্ষেপ পাওয়া যায়। ষোড়শ সংশোধনীর সাম্প্রতিক উত্তেজনায় “পিতার নীতি” অনুসরণ করছিলাম--লাইভ খেলা শেষ হলে আধ-ঘন্টায় সারসংক্ষেপ দেখে নেব। কিন্তু এই ‘সার’-এর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমার নাগরিক জীবন অসার হবার জোগার।
কোন বিষয় জানার শ্রেষ্ঠ উপায় নাকি ওই বিষয়ে বই লেখা। তাই ভাবলাম, ইটস নাও, অর নেভার।

তথ্যগত ক্রেডিট বা ডেবিট, সবই উইকিপিডিয়ার এবং তার ভাই-বেরাদারের (তালিকা নিচে দেয়া আছে)। অনুবাদ জনিত কোন বিভ্রাটের বিষয়ে একটা কথাই বলা যায়, ওটা আমার ইংরেজি জ্ঞানের বাহুল্যমাত্র।

১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর প্রণীত ও ১৬ই ডিসেম্বর গৃহীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এখন পর্যন্ত ১৬ বার সংশোধীত হয়েছে। গোল বাধা এই ষোড়শ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাশ হয় ২০১৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর। এই সংশোধনীর মাধ্যমে অযোগ্যতা বা অসদাচরণের প্রমাণ সাপেক্ষে বিচারপতি অভিসংসনের ক্ষমতা দেয়া হয় জাতীয় সংসদকে।

এমন একটা সংশোধনী বিচারপতিদের জন্য মনবেদনার কারন হয়ে দাঁড়ায় এবং ২০১৬ সালের ৫ই মে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই সংশোধনীকে অবৈধ এবং সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সরকারের আপিল খারিজ করে সর্বসম্মতিক্রমে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের পূর্বের রায় বহাল রাখেন। শুরু হয়ে যায় একটা জমজমাট ক্রিকেট ম্যাচ বা একটা রুদ্ধশ্বাস সিনেমার মতো টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি।

এক নজরে অন্যান্য সংশোধনীসমূহ:
প্রথম সংশোধনী

১৯৭৩ সালের ১৭ জুলাই পাশ হওয়া প্রথম সংশোধনী ছিল 47 নাম্বার ধারাতে। 47 (3) নামে যুক্ত অতিরিক্ত ধারাতে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সাজার অনুমোদন দেওয়া হয়। যুক্ত 47A ধারাতে আরও বলা হয় ওইসব ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু মৌলিক অধিকারও প্রযোজ্য হবে না।

দ্বিতীয় সংশোধনী

একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর পাশ হওয়া দ্বিতীয় সংশোধনীতে জরুরী অবস্থায় নাগরিকদের কিছু মৌলিক অধিকার রহিত করা হয়।
একইসাথে নিম্ন পরিবর্তনগুলোও সাধিত হয়:
ধারা 26, 63, 72 এবং 142। ধারা 33 পরিবর্তিত হয়, যুক্ত হয় নতুন অংশ IXA.

তৃতীয় সংশোধনী
তৃতীয় সংশোধনী পাশ হয় ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর। ধারা 2 এর পরিবর্তনের মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় এবং সীমানারেখা নির্ধারণের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুমোদিত হয়।

চতুর্থ সংশোধনী
কারও কারও মতে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী পাশ হওয়া চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ধ্বংস করা হয় সংবিধানের মূল ভিত্তি।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়, জাতীয় সংসদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়, বহুদলীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে প্রবর্তিত হয় একদলীয় ব্যবস্থা।

পঞ্চম সংশোধনী

১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল পাশ হওয়া পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৯ এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত প্রথম স্বৈরশাসনের সকল কার্যক্রমকে বৈধতাদান করা হয়। খন্দকার মুস্তাক, বিচারপতি আবু সাদাত, জিয়াউর রহমান সবার রাষ্ট্রপতিত্ব বৈধ ঘোষণা করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় শেখ পরিবারের হত্যাকারীদের (ইনডেমনিটি বিল)। বহুদলীয় রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়, সুযোগ দেয়া হয় ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির। ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র বাদ দেয়া হয় সংবিধান থেকে।

ষষ্ঠ সংশোধনী
১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডের পর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি করতে গেলে দেখা যায় সাংবিধানিক বাধা। উপরাষ্ট্রপতির রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীতার পথ খুলে দিতেই এই সংশোধনী। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরাসরি কোন রাজনৈতিক সুবিধার নেয়ার চেয়ে বাস্তব সমস্যা সমাধানই মুখ্য ছিল।

সপ্তম সংশোধনী
২৪ মার্চ ১৯৮২ এক রক্তপাতহীন অভ্যত্থানের মাধ্যমে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্তে পালাবদল ঘটে ক্ষমতার। সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে ২৪ মার্চ ১৯৮২ থেকে ১১ নভেম্বর ১৯৮৬ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্বৈরশাসনের সকল কার্যকলাপের বৈধতা নিশ্চিত করা হয়।

অষ্টম সংশোধনী

৭ জুন ১৯৮৮ পাশ হয় সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয় এই সংশোধনীতে। বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। Bengal কে Bangla বা Dacca কে Dhakaর মত পরিবর্তন সাধিত হয়।

নবম সংশোধনী
১৯৮৯ এর জুলাইতে পাশ হওয়া নবম সংশোধনীতে সরাসরি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন, একই সাথে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পাঁচ বছর নির্ধারণ, দুই মেয়াদের বেশী রাষ্ট্রপতিত্বের সুযোগ রহিতকরণের মত উদ্যোগ দেখা যায় এই সংশোধনীতে।

দশম সংশোধনী

এই সংশোধনী পাশ হয় ১৯৯০ সালের ১২ জুন। এই সংশোধনী মূলত ৬৫ ধারার সংরক্ষিত মহিলা আসন সম্পর্কিত। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ৩০ টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেয়াদ আরও দশ বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়।

একাদশ সংশোধনী
১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট মাসে পাশ হয় দুটি সংশোধনী--একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী। একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের নিয়োগ, শপথ বৈধ ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস দায়িত্বগ্রহণের আগ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবেও সাহাবুদ্দিন আহমেদের সকল কার্যক্রমের বৈধতাদান করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে উপ্রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে তার পুরনো পদে ফিরে যাবারও পথ করে দেয়া হয়।

দ্বাদশ সংশোধনী

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সংশোধন পাশ হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা পুঃনপ্রবর্তন করা হয়। রাষ্ট্রপতিকে দেশের সাংবিধানিক প্রধান আর প্রধানমন্ত্রীকে করা হয় নির্বাহী প্রধান। উপরাষ্ট্রপতির পদ বাদ দেয়া হয়। জাতীয় সংশদের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্তাধীন মন্ত্রীসভা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন জাতীয় সংসদ কর্তৃক।

ত্রয়োদশ সংশোধনী

১৯৯৬ সালের বিএনপি সরকারের ১২ দিনের বিতর্কিত সংসদে পাশ হয় এই ত্রয়োদশ সংশোধনী। এর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়।

চতুর্দশ সংশোধনী
এই সংশোধনীর মাধ্যমে বেশ কিছু ধারা সংশোধিত ও সংযোজিত হয়। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ধারা অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সংরক্ষিত মহিলা আসনের ধারা পরিবর্তন করা হয়। বৃদ্ধি করা হয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, মহানিরীক্ষক, চেয়ারম্যান ও সরকারী কর্মকমিশনের অন্যন্য সদস্যের অবসরের বয়স।
এই সংশোধী পাশ হয় ২০০৪ সালের ১৬ মে।

পঞ্চদশ সংশোধনী

২০১১ সালের ৩০ জুন পাশ হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনীতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়। এর মাধ্যমে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে চলতি সরকারের অধীনেই নির্বাচনের বিধান রাখা হয়। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৪৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা পুঃনপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। সংবিধান বহির্ভূত শক্তির ক্ষমতাদখল রোধে সংবিধানের ৭নং ধারার সাথে ৭ (A) এবং ৭ (B) যুক্ত করা হয়।
রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে বেছে নেয়া হয়। শেখ মুজিবর রহমানকে স্বীকৃতি দেয়া হয় জাতির পিতা হিসেবে।


বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসতে পারেন:

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Amendments_to_the_Constitution_of_Bangladesh

http://en.banglapedia.org/index.php?title=Constitutional_Amendments

http://www.assignmentpoint.com/business/organizational-behavior/amendments-bangladesh-constitution.html

http://studiesbangladesh.blogspot.com/2011/06/constitutional-amendments-constitution.html?m=1

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.