নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিড়ালভাগ্য

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:২১


অফিসের এক কলিগ শেষ বিকেলে একটা মিউ মিউ বিড়াল ছানা নিয়ে হাজির হলো। কলিগটি মাস ছয়েক হলো বিয়ে করেছে। জিজ্ঞেস করব না করব না করেও শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেই ফেললাম--বিড়াল মারা এখনও বাকি আছে কিনা। সে সহাস্যে নিশ্চিত করল, অন্তত ওই বিড়ালটি আর জীবিত নেই।

বিড়ালছানার চেহারা তত সুদর্শন বলা যাবে না। হাড় জিরজিরে শরীর, উস্কখুষ্ক লোম আর পথের ধুলায় আসল রং হারানো চেহারা। পথ শিশুর সমস্ত বৈশিষ্ট বিদ্যমান এই পথ বিড়ালছানার মধ্যে। কিন্তু একজন প্রকৃত ট্যালেন্ট হান্টারের মতো এরই মাঝে প্রকৃত প্রতিভা খুজে পেল আমার কলিগ। পরম মমতায় দুহাতে জড়িয়ে বুকের কাছে করে ওকে অফিসে নিয়ে আসলো। সৌন্দর্য আসলেই বস্তুর চেয়ে মানুষের চোখেই বেশী।

তবে এও সত্য, একটু তেল-সাবান আর দানা-পানি পেলে এর চেহারা ফিরতে সময় লাগবে না। রিয়েলিটি শো'তে দেখা যায় এই রূপান্তর। অডিশন পর্বে যাদের দিকে তাকানো যায় না, ক্যামেরায় যাদের ধরতে শ্যুটিংএর লাইট খরচ বেড়ে যায়, শো যত ফাইনালের দিকে গড়ায় সেই তাদের দিকেই একবার তাকালে আর চোখ ফেরানো যায় না।

বেড়াল ছানা হয়তো ব্যাংকার হবার স্বপ্ন নিয়ে মতিঝিল এলাকায় এসেছিল। কিন্তু আমার কলিগের চোখে পড়ায় এক নিমিষেই তার জীবনের গতিপথ পাল্টে গেল। কলিগের বাইকে চড়ে সে চিরতরে চলে গেল তার জন্মভূমি ছেড়ে। মতিঝিলের উদ্বাস্তু বেড়ালছানা থেকে মুহুর্তেই সে হয়ে গেল মিরপুরের এক গর্বিত ফ্ল্যাট মালিকের পরিবারের সদস্য।

পরের দিন অফিসে 'বেড়ালের বাবা'কে জিজ্ঞেস করেছিলাম তার ’সন্তানের’ প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা। বাসায় নিয়েই তাকে বিদেশী শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়েছে, আলাদা টাওয়েল দিয়ে গা মুছিয়ে দিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে গা শুকিয়ে দেয়া হলো। অতপর ডিনারে দেশী মুরগীর মাংস-ভাত, রাতে ঘুমাতে যাবার আগে এক বাটি দুধ। সুখের জীবন আ আ, সুখের জীবন।

এক বড়ভাই মাঝে মাঝেই বলে--লুঙ্গির গিট খুলতে তাও কিছু সময় লাগে কিন্তু ভাগ্য খুলতে সময় লাগে না। ব্রাড পিট-এ্যাঞ্জেলিনারা আফ্রিকা থেকে সন্তান দত্তক নিয়ে আসে, তারপর সেই সন্তানেরা হয়ে যায় আমেরিকান। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন ও জীবন প্রত্যাশা সব মিলিয়েই তারা হয়ে যায় প্রথম বিশ্বের অংশ।

মুক্তিযুদ্ধের পরপরই আমাদের অনেক যুদ্ধশিশুকে দত্তক নিয়ে গেল ইউরোপ-আমেরিকান দম্পতিরা। স্বাধীনতা দিবস-বিজয় দিবসের অনেক অনুষ্ঠানে অনেক সময় তাদের দু’একজনের খোঁজ করা হয়। উপলক্ষ্য পেয়ে তারাও হারানো দেশ নিয়ে আবেগে আপ্লুত হন, হারানো মা'কে নিয়ে অশ্র“ ঝরান। কোন এক একাকী সময় হয়তো কোন উপলক্ষ্য ছাড়াও তাদের মনটা হু হু করে ওঠে বাংলাদেশী সেই কৃষ্ণ, শীর্ণ, অসহায় মায়ের কথা ভেবে। কিন্তু শেষে পর্যন্ত বাস্তবতা হচ্ছে, সেই নতুন দেশই তাদের দেশ, সেই নতুন ভাষাই তাদের ভাষা, সেই নতুন দম্পতিই তাদের পিতা-মাতা, সেই উন্নত জীবনই তাদের জীবন। এবং সুযোগ দেয়া হলে তাদের বর্তমানের ওই উন্নত জীবনের সাথে যুদ্ধশিশুর বাংলাদেশী জীবন তারা কোনদিনই পাল্টাতে চাইবেন না।

দিন শেষে সেই কথাই সত্য--জন্ম হোক যথা তথা, ’ভাগ্য’ হোক ভালো।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৯

মানিজার বলেছেন: ভাবনায় গুলমাল আছে ।

২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৫

কামরুননাহার কলি বলেছেন: কেমন জানি একটু গোলমাল লাগলো গল্পটি।

৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: অসম্ভব ভাল লেগেছে পড়তে।

শুভ কামনা।

৪| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০৩

জুন বলেছেন: একবার পাঁচ দিনের জন্য সুন্দরবন বেড়াতে গিয়ে এমনি এক ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছিলাম আমাদের ট্যুর গ্রুপে।
সে প্রতিবছর আসে তার পিতা মাতার সন্ধানে । তবে মনে হয়না যদি সে প্রকৃত পিতা মাতার সন্ধান পেয়ে এদেশে থেকে যাবে । কারন উন্নত বিশ্বের সুযোগ সুবিধায় ততদিনে সে অভ্যস্ত। গরীব বাবা মার সন্ধান পেলে হয়তো বা সেই আবেগ কেটে যাবে অনিরুদ্ধ রহমান ।
+

৫| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০৬

বিজন রয় বলেছেন: বিদায় ২০১৭, স্বাগতম ২০১৮,......... নতুনের শুভেচ্ছা রইল।

৬| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৮

গরল বলেছেন: জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো। নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

৭| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল ভাষায় খুব ভালো লিখেছেন।

৮| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৭

জাহিদ অনিক বলেছেন:
বিড়ালটা সুন্দর

৯| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৭

কলাবাগান১ বলেছেন: যুদ্ধ শিশুদের নিয়ে যে কমেন্ট আপনি করলেন আর একজন প্রবাসী ব্লগার করলেন বড়ই দু:খ জনক। ওদের আবেগের দাম আপনারা কি বুঝবেন???
নিজে বিদেশে বসে কি পোস্ট কেন আমাদের চেয়ে তাদের সিস্টেম ভাল...রাজা কে মানুষ কত ভালবাসে??? আসলে আপনারা যে স্বাধীনতা কে কি চোখে দেখেন সেটার ই পরিচয় এই কমেন্টে...অপেক্ষা করেন আবার রাজাকার দের গাড়ীতে পতাকা উঠল বলে......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.