নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

টু আয়রনমেন

১০ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:১৮

'আয়রনম্যান' খ্যাত আরাফাতের দু'দুটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় কোয়ালিফাই করেও কর্মস্থল থেকে অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিলো তাই ফলো করছি গত দিন দুয়েক যাবৎ।

কিছু মানুষ থাকে, যারা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। কোনো একটি কাজ করবে বলে একবার মনস্থির করে ফেললে কোনো কিছুই আর তাদেরকে সে পথ থেকে সরাতে পারবে না।

সেই মানুষগুলোও আবার দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমভাগে আছে আরাফাতের মতন কিছু মানুষ। যারা নিজের জন্যেই হোক, সমজের জন্যে বা দেশের জন্যেই হোক, ভালো কিছু একটা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আর দ্বিতীয় দলে আছে, আরাফাতের অনাপত্তিপত্র যার হাতে আছে, তাদের মতন কিছু মানুষ। এদের নিজের জন্য কিংবা সমাজ বা দেশের জন্য তাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা, অন্যের চাওয়া-পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো! তারাও এতটাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সরকারি আদেশও তাদেরকে টলাতে পারছিলো না!

***
জীবনে আমারও একদা অভিজ্ঞতা হয়েছিলো সংকল্পবদ্ধ
এই দ্বিতীয় দলের একজনকে খুব কাছ থেকে দেখার।

আমার প্রথম চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা। মাস তিন-চারেক হলো চাকরিতে যোগদান করেছি।

সময়ের প্রয়োজনে বিবিএ শেষ করে এমবিএ চলাকালীনই চাকরিতে ঢুকে পড়তে হয়েছিলো। যখন চাকরি শুরু করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন শেষ সেমিস্টার সবে শুরু হয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলার এমবিএ। হাজার দশেক টাকা, আর মাস ছয়েক কষ্ট করতে পারলেই ছেলের হাতের মোয়ার মতন ডিগ্রিটা নিয়ে নেয়া যাবে। নচেৎ লাখ খানেক টাকা, দেড়-দু বছরের পরিশ্রম অবধারিত। অতএব, চাকরি করেও চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ক্লাস মিস করতে হয়, যে স্যারের কাছে ক্লাসে উপস্থিতিই মুখ্য, তার হাত থেকে উপস্থিতির মার্কস ছুটে যায়। আগে থেকে জানতে পারলে কোনো মিড টার্ম ধরতে পারি, যেই স্যার সারপ্রাইজ কুইজ নেন, তার মার্কস এর আশা বাদ দিতে হয়। প্রেজেন্টেশনের নাম্বারের আশা বাদ দিতে হয়। এক স্যারের এসাইনমেন্ট জমাদানের দিন সময়মত উপস্থিত হতে পারলাম না, স্যার নাকি বাকিদের বলেছিলেন, "আমি একজন প্রফেসর হয়ে এসাইনমেন্ট জমা নেবার জন্য আসতে পেরেছি, আর 'উনি' চাকরি করছেন বলে আসতে পারবেন না? ঠিক আছে।"
সেই 'ঠিক আছে' আসলে কতখানি 'ঠিক ছিলো' তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না…

যাই হোক, এভাবেই একদিন সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত শেষ সেমিস্টারও শেষ হয়ে গেলো। এবার শুধু ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারলেই মোটামুটি শিক্ষাজীবনের সমাপ্তী ঘোষণা করে সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে পারা যায়।

এদিকে চাকরিতে যোগদানের মাস চারেক পার হলো। হাতে-কলমের কিছু জ্ঞান নেবার পর এবার আমাকে এক মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে পাঠানো হলো। ঠিক তখনই ভার্সিটিতে এমবিএ ফাইনাল পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারিত হলো।

ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের প্রধান এই লাইনের একজন ভেটারান ব্যক্তি। তার বয়সকালে আমার প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বড় বড় একাধিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। চাকরির স্বাভাবিক বয়স শেষে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদান করে দায়িত্ব নিয়েছিলেন আমাদের মতন অকর্মণ্যকে ঘষে-মেজে একজন আদর্শ পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলার।

তো পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষিত হবার পর একদিন ট্রেনিংয়ের দুই ক্লাসের মাঝের বিরতিতে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে গিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলাম। সাথে এটাও বললাম, যেহেতু বেলা ২টা থেকে পরীক্ষা, আমাকে শুধু পরীক্ষার দিনগুলিতে বেলা একটা থেকে ছুটি দিলেই চলবে।

প্রিন্সিপাল স্যার সবকিছু মনযোগ দিয়ে শুনে আমাদের এই আলোচ্য আয়রনম্যান আরাফাতের NOC-র দায়ীত্বে থাকা লোকটির মতন আমাকে জানিয়ে দিলেন, "এই ছুটি তোমাকে আমি দিতে পারবো না!"

এবং স্যার তার এই সিদ্ধান্তের সপক্ষে ২ টি যুক্তি পেশ করলেন আমার কাছে। পদাধিকার বলে তার মতন একজন সিনিয়র আমার মতন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত একজনের কাছে তার কোন সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য নন। তারপরও স্যার ব্যাখ্যা দিলেন। এবং তার যুক্তি দুটিকে আমি মনের খাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছি। মনের সেই খাতা ছিড়ে যেতে পারে বলে, ভালো করে বাধাইও করে রেখে দিয়েছি!

স্যারের প্রথম যুক্তি, "আমাদের প্রতিষ্ঠানের তো এমবিএ প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন থাকলে আমরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেই সেটা উল্লেখ করতাম। গ্রাজুয়েশনই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আমরা সেভাবেই লোক নিয়েছি!"

যুক্তি দুই, "আমি আপনাকে এমবিএ করার সুযোগ দেবো, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার কোয়ালিফিকেশন বাড়াবেন, এবং সেই অতিরিক্ত যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চলে যাবেন। তাই, আপনাকে এই সুযোগ করে দিয়ে বর্তমান প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমি ইনজাস্টিস করতে পারি না।"

এই দুই যুক্তির পরে আসলে আর যুক্তি-তর্ক, অনুনয়-বিনয় কিছুই চলে না। আমি ভগ্নহৃদয়ে ক্লাসে ফিরে গেলাম।

এদিকে পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসছে। শেষ সম্বল হিসেবে ভাবলাম, একবার মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান স্যারের সাথে দেখা করা যায় কিনা।

একদিন ট্রেনিং শেষে প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে স্যারের সাথে দেখা করলাম। আমাকে তার রুমে বসিয়ে এককাপ রঙ চা খেতে দিয়ে স্যার তার কাজ করতে লাগলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে স্যার আমার ঘটনা শুনতে লাগলেন।

পুরোটা শুনে স্যার বললেন, "এই ঘটনা! আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, ছুটিটা তোমার পাওয়া উচিৎ। তবে এটা আমার অফিসিয়াল অপিনিয়ন না।

তবে আমরা যদি তোমাকে ছুটি দিতে না পারি, তাহলে কী তুমি পরীক্ষা দেবে না?"

বললাম, "দেবো স্যার।"

"কিভাবে?"

"স্যার, সকালে একবার রোল কল করা হয়, সারা দিনে আর করা হয় না। লাঞ্চ ব্রেক-এ একবারে বের হয়ে চলে গেলে হয়তো আর ধরতে পারবে না!"

স্যার মুখে গাম্ভীর্য ধরে রেখে বললেন, আমি চেষ্টা করবো তোমাকে অফিসিয়ালি ওই কদিনের অর্ধদিবস ছুটি দিতে। যদি না পারি, তুমি নিজের জন্য যেটা ভালো মনে করো, সেটা কোরো।"

নিজের জন্য যেটা ভালো মনে করি সেটা করার প্রচ্ছন্ন একটা সায় পেয়ে কিছুটা হালকা মনে সেদিন বাসায় ফিরেছিলাম।

এইচআর স্যার তার কথা রেখেছিলেন। দুই দিন পর প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাস থেকে তার রুমে ডাকিয়ে নিলেন। রাগত স্বরে বললেন, "এগুলো ঠিক নয়, এক স্যার একটা বিষয় নাকচ করে দিলে সেটা নিয়ে আরেক স্যারের কাছে যাওয়া খুব খারাপ অভ্যাস। তোমরা নতুন জয়েন করেছো, এই অফিসিয়াল ডেকোরামগুলো তোমাদের শিখতে হবে…"

অফিসিয়াল ডেকোরাম কতটুকু শিখেছিলাম জানিনা, তবে এটুকু শিখেছিলাম, পৃথিবীতে কিছু একগুঁয়ে মানুষ আছে। এই একগুঁয়ে মানুষ গুলো আবার দুই প্রকার।

প্রথম প্রকার হচ্ছে আরাফাতরা, যত বাধাবিপত্তিই আসুক, তারা ভালো কিছুর চেষ্টা করেই যাবে।

আর দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে, আরাফাতদের NOC যাদের হাতে থাকে তারা; যত চাপই আসুক, নিজের কোন লাভ হোক বা না হোক, আরেকজনের ভালো হতে দেয়া চলবে না, চলবে না…

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:৩৮

রানার ব্লগ বলেছেন: নির্মম সত্য !!!

২| ১০ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:২৭

অক্পটে বলেছেন: নির্মম সত্য !!! রানার ব্লগের সাথে সহমত।

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৪:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: একদম বাস্তব।

৪| ১০ ই আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৪:৫১

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: প্রতি প্রতিষ্ঠানেই এমন কিছু লোক মনে হয় থাকে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.