নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকাশিত কবিতার বই: জনারণ্যে শুনিনি সহিসের ডাক (কামরুল বসির)। অপরাহ্ণে বিষাদী অভিপ্রায় (কামরুল বসির)।

সোনালী ডানার চিল

বোদলেয়ারের আশ্চর্য্য মেঘমালা দেখে থমকে দাঁড়ানো জীবনানন্দের সোনালী ডানার চিল...

সোনালী ডানার চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ছেলেবেলা ২

২০ শে মে, ২০২৩ রাত ১২:১৭

পাথরঘাটা প্রাইমারী স্কুল তখন লম্বা টানা দালানে ছিল, যার দুপাশে দুটো করে চারটি শ্রেণীকক্ষ, আর মাঝখান থেকে একটু ভেতরে অফিসকক্ষ এবং ক্লাস ফাইভের অপেক্ষাকৃত ছোট রুমটি। অফিসের সামনের জায়গাটিতে গেটফুলের মাচা, স্যারদের সাইকেল রাখার জায়গা। স্কুলের সামনে খোলা আঙিনা, অনতিদূরে ঝাকড়া আমগাছ, দুটো তালগাছ আর বাঁদিকে বলফিল্ড।
তখন স্কুলের সামনে টিফিনের সময় আইসক্রিম, কটকটি আর চিট বিক্রি হতো। আইসক্রিমের দাম ছিল চারআনা করে, দুধমালাই আটআনা। কটকটি অনেকটা চানাচুরের মতো স্বাদ, গোলাকার কয়েলের মতো। আর চিট হলো বেশ বড় গোলাকার কেকের মতো শক্ত একরকম মিঠাই, যা কেটে কেটে বিক্রি করা হতো।
আমরা বাঘমার্কা চারআনা বা লাউ কুমড়ো মার্কা আটআনা পেতাম বাড়ী থেকে। টিফিনের সময় তাই প্রায়শ চিট খাওয়া হতো।
আমাদের স্কুলের কোন ড্রেস ছিল না। নিতান্তই গরীব ছিল অধিকাংশ গ্রামের মানুষ। অনেক ছাত্ররা লুঙ্গি পরে ক্লাসে আসতো। ছেলেমেয়ে একসাথের ক্লাস। এখন মনে হয় মেয়েরা যেন কেমন পরিণত ছিল আমাদের থেকেও, হয়ত গ্রামীন পরিবেশ, বাড়ীতে মা-চাচীদের তাগিদ আর পরামর্শ তাদের বয়সের চেয়েও বড় করে তুলেছিল। এমন হলো যে আমাদের ক্লাসের অধিকাংশ মেয়ে আর হাইস্কুলে গেল না, তাদের ফাইভে থাকতেই বিয়ে হয়ে গেল!
ছেলেদের মধ্যে অনেকেই হাইস্কুলে ভর্তি হলো না। তাদের কেউ কেউ নামে মাত্র ঝাউডাংগা হাইস্কুলে ভর্তি হলো , তবে ঐ সিক্স সেভেন পর্যন্ত।
তবে, প্রাইমারীর দিনগুলো যতটা মনে পড়ে খুব মুখর আর আনন্দের সময় ছিল। একটা লোহার ঘন্টা ছিল অফিসের সামনে টানানো। একদিন আমি তখন মনে হয় ক্লাস থ্রিতে পড়ি, আমাকে পরীক্ষার সময় স্যার একটা ঘন্টা বাজাতে বলে আমি ভুল করে তো ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে দেই! আহা, কি সব স্মৃতি!
রকিব স্যার ছিল খুব রাগী। চোখে সানগ্লাস পরে আসতেন। সমাজপাঠ পড়াতেন। একটু ভুল হলেই বেতের ব্যবহার করতেন। সে বড় সাংঘাতিক শাসন। ঘরচালা স্যার কানের গোড়ায় চড় মারতেন, উনি বাংলা ক্লাস নিতেন। হাতের লেখা খাতায় একটি টিকচিহ্ন ছিল উনার সাইন। উনার সাইকেলটি ছিল একেবার বেল ব্রেকহীন।
মালেক স্যারের কথা মনে পড়ে। প্যান্ট শার্ট পরে আসতেন, একটু ভারী শরীরের। আর পান্জাবী পরা লাষ্ট স্যার, আমি খুব বেশি দিন উনাকে পাইনি। আকবর স্যারের কথা আগেও বলেছি। গফুর স্যার, হেডস্যার আব্দুল বারী। তার আগের রাজেন্দ্র হেডস্যার। আর একজন ছিলো বুড়ো স্যার। উনি ছিলেন মনে হয় হিন্দু ব্রাক্ষণ সম্প্রদায়ের। একটি চাদর গায়ে দিয়ে আসতেন। একদম সিনেমার পন্ডিত মশাইদের আদলে।
মাঝে মাঝে স্কুলের সেই অবায়ব মনে পড়ে। মাচা জুড়ে গেটফুলের সমাহার। গরমের ঝিরঝির বাতাসের ভেতর টিফিনে ছুটছি চিটওলার দিকে, গামছা দিয়ে চিট ঢাকা।চারআনার চিট দাঁত দিয়ে কামড়াতে কামড়তে কোমরের হাফপ্যান্টের হুক ঢিলা করা।
সেই সময় আসবে না।
(চিট আর কটকটির ছবিগুলো অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা।)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০২৩ ভোর ৫:৫২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



ছেলার মজাদার কাইনীর চিত্র সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে ।
কটকটির প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ছোটকালে ভাঙ্গা কাচের টুকরা আর শিশিবোতল , পুরানো লোহালক্কর
দিয়ে ফেরিওয়ালা;এর নিকট হতে পয়সার পরিবর্তে কটকটি পাওয়া যেতো । কটকটি খাওয়ার লোভে
ফেরিওয়ালার পছন্দের সামগ্রী যতন করে সংগ্রহ করে রাখতাম ।
খাবারটির নাম কেন যে কটকটি রাখা হলো এর ইতিহাস জানা যায়নি। তবে খাওয়ার সময়
কটকট শব্দ হওয়ার কারণেই সম্ভবত এই খাবার কটকটি নামেই পরিচিতি পেয়ে যায়।
পণ্যটি মূলত গ্রামীণ শিশুদের লক্ষ্য করে বানানো হতো। বিক্রেতা মূলত স্থানীয় হকারেরা।
আধুনিকায়নের পথে গ্রামীণ সমাজের যাত্রার ফলে এবং অন্যান্য শিশুতোষ খাদ্যপণ্যের
সহজলভ্যতা ও সহজপ্রাপ্যতার কারণে কটকটির প্রতি আগ্রহ এখন কমে এসেছে।
শৈশব স্মৃতিতে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই কটকটির কথা উঠে আসায় ভাল লাগল।

শুভেচ্ছা রইল

২১ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৬

সোনালী ডানার চিল বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। আসলে স্মৃতির মাঝেই তো জীবনের বসবাস। ভালো থাকুন সবসময়!

২| ২০ শে মে, ২০২৩ ভোর ৫:৫৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: উপরের মন্তব্যে প্রথম লাইনটি হবে
ছেলেবেলার মঝাদার কাহিনীর চিত্র সুন্দরভাবে ফোটে উঠেছে ।
ঘুম কাতর চোখে লেখায় প্রথমে ভুল ধরতে পারিনি ।

৩| ২০ শে মে, ২০২৩ সকাল ৯:০৪

সোহানী বলেছেন: সবার এতো এতো সুন্দর ছেলেবেলার কাহিনী পড়ে নিজেরটা লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে।

সেই কটকটি, সমপ্রাপড়ি.............. আর ঠেলাওয়ালা থেকে আইসক্রিম!! আমার বাচ্চারা কখনই বুঝবে না এর ভালোবাসা।

২১ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৮

সোনালী ডানার চিল বলেছেন: লিখে ফেলুন হাওয়া মিঠাইয়ের মতো মিষ্টি এবং মৃদ্যু স্বপ্নিল কৈশোরের স্মৃতি। আমরা পড়তে যাবো

৪| ২০ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১২:১১

নীল-দর্পণ বলেছেন: যেটাকে চিট বললেন ওটাকেই তো আমরা কটকটি বলে চিনতাম! ভাংগ বোতল, স্পঞ্জের স্যাংডেল, প্লাস্টিক ,টিনের টুকরা দিয়ে কটকটি, শনপাপড়ি খাওয়ার মজা বোঝার প্রজন্ম মনে হয় আমরাই শেষ। এখনার বাচ্চারা এসবে মজা পায় না, চিনবেই না এসব!

৫| ২০ শে মে, ২০২৩ দুপুর ২:২২

রাজীব নুর বলেছেন: আহ ছোটবেলা। বড় বিষন্ন করে দেয়।

৬| ২০ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪১

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আপনার অনেক কথাই আমার সাথে মিলে গেছে।

৭| ২১ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৫:২৪

শাওন আহমাদ বলেছেন: পরের অংশের অপেক্ষায় ছিলাম; কিন্তু পড়া শুরু করার আগেই শেষ হয়ে গেলো।

৮| ০৯ ই জুলাই, ২০২৪ ভোর ৬:৫৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: সে সময়েও পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ শেষ করার পূর্বেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত? আপনার ছবি দেখে এবং বাঘ মার্কা সিকি আর লাউ-কুমড়ো মার্কা আধুলি'র কথা পড়ে তো সে রকমের বয়স বলে মনে হয় না। আপনি কোন সময়টার কথা বলছেন?

কটকটি আমাদের সময়েও ছিল। চিনেবাদাম বসানো গুলোর দাম একটু বেশি থাকতো; এক আনা। বাদামবিহীন প্লেনগুলোর দাম ছিল মাত্র দুই পয়সা বা তিন পাই ( 'পাই' হচ্ছে এখনকার 'পয়সা'। এখন একশ পয়সায় একটাকা, এই পদ্ধতি আইয়ুব খান চালু করেছিলেন বোধকরি ১৯৬২ সালে। আমার প্রাইমারী স্কুল জীবন শুরু হয় ক্লাস থ্রী থেকে, ১৯৬৪ সালে। তার আগে ছিল চার পয়সায় এক আনা, ষোল আনায় বা চৌষট্টি পয়সায় এক টাকা। সত্তর সাল পর্যন্ত দুটো পদ্ধতিই যুগপৎ চালু ছিল)। আমার টিফিনের জন্য সাধারণতঃ বরাদ্দ ছিল দৈনিক এক আনা। মা আমার প্রতি সুপ্রসন্ন থাকলে কালেভদ্রে দুই আনাও পেতাম। ওটা দিয়ে মালাই আইসক্রীম পাওয়া যেত। আর কোন কারণে মা রাগান্বিত থাকলে কোন পয়সাই দিতেন না। আমি এতে খুব একটা বিচলিত হ'তাম না, কারণ আমার স্কুলটা একটা ভালো স্কুল ছিল এবং চতুর্থ পিরিয়ডের পর স্কুল থেকেই ভালো টিফিন দিত।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.