নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকাশিত কবিতার বই: জনারণ্যে শুনিনি সহিসের ডাক (কামরুল বসির)। অপরাহ্ণে বিষাদী অভিপ্রায় (কামরুল বসির)।

সোনালী ডানার চিল

বোদলেয়ারের আশ্চর্য্য মেঘমালা দেখে থমকে দাঁড়ানো জীবনানন্দের সোনালী ডানার চিল...

সোনালী ডানার চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন কিনু কবিরাজ এবং শৈশবের মায়াজাল

২১ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৫:২০

আমি তখন ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়ি। গরমের শুরু, তখন বিদ্যুৎ আসেনি পাথরঘাটায়। সন্ধ্যে বেলায় অধিকাংশ ঘরের হেতনিতে ( বারান্দায়) জ্বলে উঠতো টেমি( কেরোসিনের কূপি) আর হেরিকেন। আমাদের পাড়াটা অন্যান্য পাড়ার চেয়ে একটু বেশি ঘণবসতিপূর্ণ ছিল। আমাদের বাড়ীর পাশে খয়রাত আলী (খাইরুল বাসার) ভাইয়ের কাঁচা মুদির টং। মাটির বাড়ীর বারান্দায় আলাদা করে দোকান খুদা। বাইরে বাশের উচু চাটাই দিয়ে বেন্চ করা। সন্ধ্যায় হেরিকেনের আলোয় ক’জন বসে গল্প করা যেত। ঐ টং এর সামনে একটা মাকাল ফলের বিরাট গাছ। একটু পাশেই বিশাল তেতুলের জমজমাট প্রাচীন বৃক্ষ। রাস্তার অপর পাশে রাজ্জাক দাদার একটা খোলা জমি। আমরা ওখানে খেলা করতাম। তো সেদিন সন্ধ্যায় আমার সাপে কাটলো। যদিও সাপটি আমি দেখতে পাইনি। কিন্তু দাগ এবং অন্যান্য লক্ষণ স্পষ্ট। বাড়ী ফিরে আমার পায়ের হাটুতে গামছা দিয়ে গিরে দেওয়া হলো, দুটো; আর ডাকা হলো কিনু কবিরাজকে।

আমাদের গ্রামের সাপে কাটা এবং অন্যান্য বিবিধ চিকিৎসার একমাত্র আধ্যাত্বিক সাধক আমিনুদ্দীন সরদার, সবাই যাকে কিনু কবিরাজ নামে একডাকে চেনে। উনি এসে প্রথমে হাত চালান দিলেন, তারপর নিমের পাতা দিয়ে ঝাড়ফুক করা হলো। বিষ উঠেছিল কোমর অব্দি। ঝাড়ানোর ফাকে তিনি আমাকে একটি গাছের ছাল বাটা খাওয়ালেন। মাঝরাত পর্যন্ত এই চিকিৎসা চললো এবং অতঃপর উনি চলে গেলেন।

কিনু কবিরাজ জ্বীন হাসিল করতেন। পাগলের চিকিৎসা করতেন। আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি একদিন বন্ধুরা মিলে উনার বাড়ী গিয়েছিলাম পাগল দেখতে। একজন পাগলকে শেকল দিয়ে উনার বাড়ীতে বাধা দেখলাম। তাকে পুকুরে গোছল করানো হলো, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সুস্থ করার চেষ্টা চলছে।

কিনু কবিরাজের যে চেহারাটা আমার স্মৃতিতে আছে তা হলো, বেশ দীর্ঘকায় সুস্বাস্থের অধিকারী একজন মধ্য বয়স্ক মানুষ, মুখে হালকা বসন্তের দাগ। গম্ভীর স্বরে বিড়বিড় করে মন্ত্র উচ্চারিত করছেন। বিভিন্ন চুরির ঘটনায় তাকে বাটি চালান করতেও সম্ভবত আমি দেখেছি। আমাদের বাড়ীর পূর্বপাশের অর্জুন গাছের ছাল নিতে তিনি মাঝেমাঝে আসতেন।

যতদূর আমি শুনেছি উনার চাচা ছিলেন ময়জুদ্দীন কবিরাজ। তিনি অনেক নামী কবিরাজ ছিলেন। তিনি স্বপ্নে একটি ঔষধ পান এবং এই ঔষধ দিয়ে সবরকম চিকিৎসা করতেন। পরবর্তীতে কিনু কবিরাজ তার চাচার কাছ থেকে এই ঔষধ এবং অন্যান্য পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হন।

আমার ছোটবেলায় কিনু কবিরাজ সম্পর্কে আর একটি ঘটনা মনে পড়ে, উনার একটি মেয়ে ছিল, তখন অনেক ছোট। একদিন সন্ধ্যায় কেরোসিনের কূপি বা টেমির আগুনে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। মুখ এবং শরীরের একটা অংশ ঝলসে যায়। সে বড় মর্মান্তিক, বড় কষ্টের। খুব অস্পষ্ট মনে আছে গ্রামের লোক বলাবলি করতো, কিনু কবিরাজ জ্বীন হাসিল করতে সেদিন অন্য গ্রামে গিয়েছিলেন কিন্তু ভুলবশত তার বাড়ী মন্ত্র পড়ে বন্ধ করতে ভুলে যান আর তাই জ্বীনেরা এই প্রতিশোধ নিয়েছে।

কিনু কবিরাজ চাচার এখন অনেক বয়স হয়েছে। উনি সম্ভবত পায়ের অসুখে ভুগছেন। তার একমাত্র ছেলে শফি আমাদের কাছাকাছি বয়সের। একসময় কিনু কবিরাজ তার মেধা, দক্ষতা এবং শ্রম দিয়ে গ্রামের মানুষের জন্য অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন, আজ আমাদের উচিত উনার অন্তত খোজ খবর টুকু নেওয়া। আমি তার চিকিৎসা পদ্ধতি কিংবা তার কাজের ক্ষেত্র নিয়ে এখানে লিখতে বসিনি। আমি আমার শৈশবের সেই আলোচিত কিনু কবিরাজকে আজকের প্রজন্মের কাছে পরিচয় এবং বয়স্কদের স্মৃতিতে একটু উসকে দিতে এই লেখা লিখলাম। তবে আমার ইচ্ছে আছে ইনশাআল্লাহ উনার ডিটেলস একটা ইন্টারভিউ করার, যেখানে তিনি তার জীবনের বিভিন্ন লোমহর্ষক কাহিনী এবং অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য বর্ণনা করবেন! তাহলে কিন্তু মন্দ হবে না!

( পুনশ্চঃ আমি পরবর্তিতে যখন হুমায়ুন আহমদের বিভিন্ন আধিভৌতিক গল্প বা তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের তারানাথ তান্ত্রিক পড়ি তখন কিন্তু কিনু কবিরাজের মুখটি আমার মনের পর্দায় ভেসে উঠেছিল। আশা করি পাঠক আমার আবেগের জায়গাটা স্পর্শ করতে পেরেছেন।)

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৫:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: এখন কি আপনাদের গ্রামে কবিরাজ আছে?
লোকজন কি অসুস্থ হলে কবিরাজের কছে যায়?

২১ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৫

সোনালী ডানার চিল বলেছেন: তিনি এখনও বেঁচে আছেন, কিন্তু কবিরাজী পেশায় আছেন কিনা জানা নেই। ধন্যবাদ ভাই।

২| ২১ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫

শেরজা তপন বলেছেন: তাঁর যেই মেয়েটা আগুনে দগ্ধ হয়েছিল তাঁর সন্মন্ধে কিছু জানেন?
আপনার ম্যাসেজতা বেশ পরিস্কার। অপেক্ষায় আছি। ব্লগের পাতায় আসলে পড়ার ইচ্ছে রইল।

২২ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫

সোনালী ডানার চিল বলেছেন: যতদূর জানি পরে মেয়েটির বিয়ে হয়। কিনু কবিরাজ মেয়ে জামাইকে নিজের বাড়ীতে রেখে দেন। আর কিছু জানা হয়ে উঠেনি। শুভেচ্ছা রইল।

৩| ২১ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:০৬

টারজান০০০০৭ বলেছেন: বেশি সংক্ষেপ হয়ে গেলো ! আরেকটু ডিটেলস লিখতেন !
গ্রামের কবিরাজি নিয়ে অনেক স্মৃতি , অনেক গল্প আছে !

২২ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৮

সোনালী ডানার চিল বলেছেন: খুব ছোটবেলার স্মৃতি। আর কিনু কবিরাজকে দেখিনি বহুদিন। স্মৃতি হাতড়ে এর চেয়ে কিছু স্পষ্ট মনে পড়ছে না। এবার দেশে গেলে উনার সাথে সাক্ষাতের আশা করছি ইনশাআল্লাহ।

৪| ২১ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:১৬

শায়মা বলেছেন: তারপর কি হলো?
কিনু কবিরাজের কথা জানতে চাই।

৫| ২১ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:২৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: জীন নিয়ে যারা কাজ করে তারা অনেক ঝুকির মধ্যে থাকে।

৬| ২১ শে মে, ২০২৩ রাত ৯:০৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কবি কামরুল বসির ভাই, গত কয়েকদিন ধরে আপনাকে ব্লগে দেখা যাচ্ছে। ব্লগের জন্য খুব ভালো লক্ষণ।

আমাকে ছোটোবেলায় ডোরা সাপে কামড় দিয়েছিল। পানিতে ছোটাছুটি করার সময়। আমার কোনো কিছু হয় নাই, কিন্তু আমার মা-বাবা অস্থির হইয়া গেছিল। তবে, কোনো ওষুধ, ঝাড়পুক, ওঝার দরকার পড়ে নাই।

আমার ছোটো ভাইকে দুইবার বিষাক্ত সাপে পায়ে কামড় দেয়। প্রথম বারের কামড়ে তার গগনবিদারী করুণ আর্তনাদে আমরা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই। তার হাঁটুর উপর রসি দিয়ে বেঁধে ওঝা ডাকা হয়। যে পায়ে কাম্পড় দিয়েছে, ঐ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে পাটের আঁশ বেঁধে গরুর দুধ দোহানোর মতো দু হাত দিয়ে সেই আঁশ টানতে হয়েছিল অনেকক্ষণ, আর ততক্ষণ ওঝা মন্ত্র পড়ছিলেন। আঁশ টানতে টানতে এক সময় বৃদ্ধাঙুলের মাথায় নিচের সাদা অংশে কালো রক্ত জমে কালো হয়ে গেল। তখন একটা সুচের মাথা দিয়ে ফুটো করে সেই গাঢ় কালো রক্ত বের করা হয়। ওটাই বিষ। বিষ বের হবার পর ছোটো ভাই সুস্থ হয়ে যায়।

ওঝার এ কাজগুলোর নাকি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই, বা এটা নাকি ভাওতাবাজি। কিন্তু আমার নিজের ভাইয়ের বিষ নামানোর এ পদ্ধতি দেখে আমার কাছে ভাওতাবাজি মনে হয় নি। তবে, একজন সুস্থ মানুষের বৃদ্ধাঙুলে পাটের আঁশ বেঁধে একইভাবে টানা হলে আঙুলের মাথায় কালো রক্ত জমে যায় কিনা জানি না।

যাই হোক, কিনু কবিরাজের প্রতি শ্রদ্ধা। যিনি জীবনভর মানুষের সেবায় নিযুক্ত ছিলেন, এখন তার বৃদ্ধ বয়সে তার জন্য কিছু করা একটা মানবিক দায়িত্ব ঐ অঞ্চলের মানুষের।

লেখা ভালো লেগেছে বসির ভাই। শুভেচ্ছা।

৭| ২১ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:২৯

শাওন আহমাদ বলেছেন: নির্বিষ সাপে কাটলে মানুষ এমনিই সুস্থ হয়ে যেতো কিন্তু ক্রেডিট পেতো ওঝারা; আর বিষধর সাপে কাটলে মানুষ অপচিকিৎসায় মারা যেতো তখন আর ওঝারা কিছুই করতে পারত না।
তার জন্য দুআ রইলো, আমরা তার ইন্টারভিউয়ের অপেক্ষায় রইলাম।

৮| ২১ শে মে, ২০২৩ রাত ১১:১৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: সোনালী ডানার চিল,




সন্দেহ নেই, গ্রামে-গঞ্জে একসময় এই কবিরাজরাই রোগেশোকে মানুষের আশা ভরসার স্থল ছিলেন। তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক হোক বা না হোক; মানুষ সে সময় মানসিক ভাবে স্বস্তি পেতেন। সেটাই তাদের সুস্থ্য করে তুলতে সাহায্য করতো।

লিখুন "কিনু" কবিরাজের সেকাল- একাল নিয়ে।

৯| ২২ শে মে, ২০২৩ রাত ১:০৮

সোহানী বলেছেন: তারপর সাপে কাটার পর কি হলো? আর মেয়েটারই বা কি হলো?? ..........

ইন্টারভিউ এর অপেক্ষায়।

১০| ২২ শে মে, ২০২৩ সকাল ১১:২৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কবিরাজি চিকিৎসার ওপর একসময় মানুষের অগাধ আস্থা ছিল। দিনে দিনে পরিষ্কার হচ্ছে ওসব ভাঁওতাবাজি ছিল।

১১| ২২ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১২:০২

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আমাদের গ্রামেও দেখেছি এসব কবিরাজদের। কিছু কবিরাজ দেখেছি প্যারালাইজড রোগীকে চিকিৎসা দিতে। ইয়া মাবুদ কত অশ্লীল কথা কয় এরা।

সাপের বিষ গিয়েছিল সেদিন

১২| ২২ শে মে, ২০২৩ দুপুর ২:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানার জন্য।

১৩| ২২ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৩:২৫

নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: বিস্তারিত জানবার অপেক্ষায় আছি .....................

নিশ্চয়ই আশাহত করবেন না !!

১৪| ২২ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৫:০৯

রানার ব্লগ বলেছেন: গ্রামে এখনো অনেক কবিরাজ বা ওঝা আছে । কিনু কবিরাজের চিকিৎসা দরকার । তার পায়ের চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করুন ।

১৫| ২২ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০০

আমি সাজিদ বলেছেন: আমিনুদ্দীন সরদার প্রকাশ কিনু কবিরাজ ও তাকে নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা জেনে বেশ ভালো লাগলো। উনার বর্তমান বয়স কতো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.