নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বুনোগান

বুনোগান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আস নগ্ন হই

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:১২

আমি আমার অনুভূতির সন্ধান করছি। নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রণা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। আমি নিজেকে নগ্ন করতে চাই, নিজেকে প্রকাশ করতে চাই, এই আমি, এই আমার আসল চেহারা, আসল মন, আসল অনুভূতি!

নগ্নতা আমার ভীষণ প্রিয়। সকল কদর্যতা ছাপিয়ে নগ্নতার এক অপরূপ সৌন্দর্য রয়েছে, সে হোক দেহের, সে হোক মনের। দেহের নগ্নতা তবু মানুষ দু'একজনের কাছে প্রকাশ করে কিন্তু মনের নগ্নতা সে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে। দেহের আবরণ হোল বসন, আর মনের আবরণ মিথ্যা পরিচয়! দেহের নগ্নতা সুন্দর ও প্রাকৃতিক কিন্তু মনের আবরণ বেশীর ভাগই কুৎসিত, বীভৎস, ভয়ংকর।

মনে প্রাণে সৎ থাকার প্রচেষ্টার মধ্যে এক ভীষণ মানসিক যন্ত্রণা লুকিয়ে থাকে। কারণ সকলের সামনে মিথ্যার আভরণ পরে ঘুরে বেড়ানো তার কাছে অসততা মনে হয়। কিন্তু সমাজ তাকে মিথ্যা আভরণেই দেখতে চায়। নগ্নতাকে সমাজ কিছুতেই গ্রহণ করতে রাজী নয়!

প্রকৃতি সুন্দর তার নগ্নতার জন্যই। আদম ও ইভ নগ্ন অবস্থাতেই স্বর্গের বাগানে ঘুরে বেড়াতেন। লজ্জার সামাজিক অনুভূতি তাদের তখনো গ্রাস করেনি। প্রথম পাপবোধ তাদের বসন আবরণে আবৃত করতে বাধ্য করল। আভরণের আড়ালে চাপা পরে রইল তাদের যত পাপ। সেই পাপ থেকেই জন্ম নিলো মনুষ্য জাতি। জন্ম নিলো পাপকে ঢেকে রাখার অসততা। পাপ করা কোন অন্যায় নয়, অন্যায় প্রকাশ্যে পাপ করা, অন্যায় পাপ প্রকাশ করা! ক্রমে সামাজিক আভরণের আড়ালে অসংখ্য প্রকার পাপ ঢেকে রইল, মানুষ গড়ে তুলল অসততার সমাজ।

একদিন সৈকত সরলতাকে তার এইসব অনুভূতির কথাই বলছিল। সরলতা নিজের জীবনের সাথে সৈকতের কথাগুলো মিলিয়ে দেখল, কথাগুলো মিথ্যে নয়।

সরলতার ভাবনার জগতে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। সারা জীবনের ঘটনাবলী একে একে তার মানস পটে ভেসে উঠল। তার অনেক কিছুই একান্তই তার নিজের। যার অনেকগুলোই এমন কি তার স্বামীর কাছেও প্রকাশ করতে পারেনি। এই প্রকাশ করতে না পারাটা তাকে অপরাধী করে তুলেছে। নিজেকে মনে হয়েছে একাকী, নিঃসঙ্গ।

মেয়ে হয়ে জন্মানোতে তাকে অনেক কিছুই চাপা দিয়ে রাখতে হয়েছে। সমাজই তাকে শিখিয়েছে, এসব চেপে রাখতে হয়। তার ভাল লাগা, মন্দ লাগা তার হাতে নেই, আছে সমাজের হাতে। এমন কি তার উপর পুরুষদের চাপিয়ে দেয়া হস্তক্ষেপও তাকে চেপে রাখতে হয়েছে। মেয়ে হয়ে সে ধীরে ধীরে জানতে পেরেছে কৌশলই মেয়েদের টিকে থাকার অস্ত্র। ছেলেদের অস্ত্র হোল দৈহিক শক্তি, তাদের কৌশলী বুদ্ধি নেই। বোকা পুরুষদের দৈহিক শক্তিকে মেয়েরা বুদ্ধি দিয়ে বশে আনতে পারে, এমন কি পুরুষদের দৈহিক শক্তি কাজে লাগিয়ে তারা অন্য অবাঞ্ছিত পুরুষদের প্রতিহতও করতে পারে। বোকা পুরুষেরা ভাবে অন্য পুরুষদের কু-নজর থেকে তারা তাদের নারীদের রক্ষা করছে কিন্তু নারীরা জানে কু-নজরকারী পুরুষদেরই বশে আনাটা খুব সহজ এবং এটা তারা উপভোগই করে!

--- তো, এই যে তুমি আমার পাশে বসে আছ..... এই তুমি কি আসল তুমি নও?
সরলতা হাসতে হাসতে সৈকতের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল।

সৈকতের সাথে মাস খানেক হোল তার পরিচয়। খুব ভোর বেলায় আফতাব নগরের এই অংশের নিরিবিলি অনেকটা গ্রামীণ রাস্তায় অনেক প্রাতঃ ভ্রমণকারীরাই হাঁটতে আসে। তারা দু'জনাই এই প্রাতঃ ভ্রমণকারী দলের সদস্য। ভ্রমণ শেষে টং দোকানে চা খেতে খেতে তাদের পরিচয়। সব সময় অন্যমনস্ক সৈকতের চোখের ভাবালুতা সরলতাকে আকর্ষণ করে। তারপর থেকে দুজনই দুজনার ভ্রমণ সঙ্গী। হাঁটতে হাঁটতে টুক টাক কথাবার্তা দুজনকে কাছাকাছি নিয়ে আসে।

সৈকতের অদ্ভুতুড়ে ভাবনা গুলোয় সরলতা মজা পায়, তাকে ভাবিয়েও তোলে। কখনো কখনো পাশাপাশি নিঃশব্দ হেটে চলাও ভাল লাগে। নিঃশব্দতার ইথারে কি এক অনুভূতি সরলতার মনে সঞ্চারিত হতে থাকে। সেই অনুভূতির ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না, সৈকতকে চিনেও চেনা যায় না। হাঁটতে হাঁটতে হঠাত কখনো কখনো সৈকত সরলতার হাত ধরে এগুতে থাকে। নিঃস্পৃহ সেই স্পর্শের অনুভূতি সরলতাকে গ্রাস করে ফেলে, সে হাত সরাতে পারে না! আবার কখনো ঘাম চুয়ে পড়া চুলের সুতো চোখের উপর থেকে আলতো স্পর্শে সরিয়ে দেয়, যার ভাষা বুঝা খুবই কঠিন। সৈকতের কাছে যেন সম্পর্কের কোন অর্থ নেই। কিন্তু প্রতিটি স্পর্শ সরলতাকে আপনত্মের গভীর থেকে গভীরতায় নিয়ে যায়।

পুরুষের স্পর্শের ভাষা বুঝতে পারা সরলতার পক্ষে খুবই সহজ। প্রতিটি নারীই তা পারে। মেয়েবেলা থেকেই এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। খালু ফুফা জাতীয় পুরুষদের কোলে নিয়ে স্নেহের স্পর্শের ভাষা তাদের অজানা নয়। এই স্পর্শ যে তাদের খারাপ লাগে তা নয়, অনেক সময় উপভোগও করে। অনেক সময় নিজেরাই স্ব প্রণোদিত হয়ে সম্পর্কিত বড় ভাইদের কোলে চড়ে বসে! এইসব অযাচিত স্পর্শ বাল্যকালে যে যৌনতার অনুভূতি জাগায় সেটাই বড় কালের পাথেয়। এর বিপরীতে বাবা মায়ের অতিরিক্ত শাসন এবং পাপবোধ বাল্যকালে যৌনতা সম্পর্কে এক ভীতিকর ধারণা দেয়, যা পরবর্তীতে বিবাহিত জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই অসুখকর সম্পর্কের জন্য দায়ী। সরলতা তার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই এসব দেখেছে। কিন্তু সৈকতের স্পর্শের ভাষা সরলতা বুঝতে পারে না।

সরলতার প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনেকটা স্বদোক্তির মতো সৈকত বলতে থাকে--- তোমার কাছে আমি আমার সম্পূর্ণটুকু নই। ইনফ্যাক্ট, মানুষের কাছে মানুষের শুধু খণ্ডিত অংশই প্রকাশ পায়। তোমার কাছে আমার পরিচয় একজন বিবাহিত ভদ্রলোক হিসেবে। অবশ্য বন্ধু হিসেবে তুমি পরিচয়ের আর একটু ভিতরে প্রবেশ করেছ।

---- আর তোমার কাছে আমার পরিচয়? সরলতা পাল্টা প্রশ্ন করে।

--- আমার কাছে তোমার পরিচয় একজন বিবাহিতা লিবারেল ভদ্রমহিলা হিসেবে। অবশ্য 'বিবাহিতা', 'লিবারেল', 'ভদ্রমহিলা' এই সংজ্ঞাগুলো সমাজই দিয়েছে এবং আমাদের পরস্পরের প্রতি আচরণও এই সংজ্ঞায় নির্ধারিত রয়েছে। এভাবে সমাজ মানুষকে খণ্ড খণ্ড ভাবে উপস্থাপন করে।

--- তাহলে তোমার কাছে আমি শুধু একজন ভদ্র মহিলা মাত্র? সরলতার কণ্ঠে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ পেল যেন।

--- সমাজ এর বেশী কিছু স্বীকার করবে না। তবে আমার কাছে তুমি একজন ভাল বন্ধু।

--- বন্ধু? ঠিক বলেছ, আমিও তোমাকে বন্ধু মনে করি। তোমার কাছে যা প্রকাশ করতে পারি এমন কি আমার স্বামীর কাছেও সেটা পারিনা।

--- 'স্বামী' 'স্ত্রী' সংজ্ঞাটাও সমাজ প্রদত্ত। তোমরা দু'জন পরস্পরের সম্পত্তি। নির্ধারিত কর্তব্যের বাইরে তোমরা যেতে পার না। লাগামহীন বন্ধুত্ব তোমাদের সম্পত্তি সম্পর্ককে আঘাত করতে পারে। তাই এই সম্পর্কে অধিকাংশ দম্পতিই বন্ধু হতে পারে না। এমন কি বিবাহপূর্ব সকল বন্ধুত্বকেও খারিজ করে দিতে হয়।

--- বিবাহ একটি বন্ধন, একটি নিরাপত্তা। যার আশ্রয়ে আমার সন্তানেরা বেড়ে উঠে। সবার উপরে আমি একজন মা!

সৈকতের মুখে যেন একটা হাসির আভাষ ফুটে উঠল--- তাহলে তুমি কোথায়?

--- আমি?
সরলতা প্রশ্নটির এপিঠ ওপিঠ উলটে পালটে দেখার চেষ্টা করল। মেয়েবেলার কয়েকটি বছর ছাড়া আর কোথায়ও নিজেকে খুঁজে পেল না। তখনো পরিবার ও সমাজের অনুশাসন অনুধাবন করতে শিখেনি। তার শৈশবটা কেটেছে গ্রামে। শহরের বান্ধবীদের তুলনায় তার স্বাধীনতা একটু বেশিই ছিল। খেলার সাথিদের সাথে হৈ হুল্লুর করে বনে বাদারে ঘুরে বেড়ানোতে তাকে বিরত রাখা যায়নি। সে ছিল তার আপন জগতে, নিজের মতো করে। প্রাণবন্ত উচ্ছলতায় ভরপুর এক কিশোরী। সে ছিল তার দলের রানী। সেই রাজত্বের ভাষা ছিল ভিন্ন, আচার আচরণ আলাদা। সেই জীবন বড্ড বেশী বানর ঘেঁষা! কথাটা ভাবতেই সরলতার হাসি পেয়ে গেল। তার দাদী প্রায়শই তাদের বান্দরের দল বলে তাড়া করত।

সরলতা ভেবে দেখল, আসলেই তারা বাঁদর ছিল। বড় হতে শুরু করে তারা মানুষ হতে থাকে এবং নিজের ব্যক্তিসত্তা হাড়িয়ে ফেলে।

বিবাহের পর সে হোল স্ত্রী, বৌমা, তারপর মা এবং একজন পরিপূর্ণ গৃহিণী। তার জীবন আটকে গেল কিছু চরিত্রে, একটি সীমিত গণ্ডির সীমানায়। সেই থেকে একজন সার্থক অভিনেত্রীর মত একই সাথে বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করে যাচ্ছে। অভিনয় এই জন্য যে তার ভিতরের বাঁদর প্রকৃতি, তার আসল রূপ সে সবার কাছে আড়াল করে রেখেছে।

স্বামীর সাথে রাতের বিছানায় তার যে রূপ তাতে স্বামী সন্তুষ্ট। কিন্তু সম্ভোগের সময় সে যে কিশোরী বয়সের সাথী রনবিরের সাথে প্রণয়ের দৃশ্য কল্পনা করে শিহরিত হচ্ছে সে খবর তার স্বামী জানে না। সন্তানের কাছে সে স্নেহময়ী মা, দেবীতুল্য। সমস্ত ধরণের পঙ্কিলতার ঊর্ধ্বে। এই দেবীর রাতের অশ্লীল শীৎকারের চিত্র কল্পনায়ও আনা যায় না। সে যে প্রতিদিন প্রাতঃ ভ্রমণে এসে সৈকতের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে সে খবর স্বামী বা সন্তান কেহই জানে না। সে একই সাথে বিভিন্ন চরিত্রে বিভিন্ন ভাবে অভিনয় করে যাচ্ছে। তার ভিতরের বাঁদর চরিত্রের খবর কেউ জানছে না, সেও জানতে দিচ্ছে না। সেখানে সে একা নিঃসঙ্গ।

সরলতা সৈকতের প্রশ্নের জবাব পেয়ে যায়। কিছুটা লজ্জাতুর কণ্ঠে জবাব দেয়--- আমার আমি আছি লুকিয়ে, আমার বানর প্রকৃতির মাঝে!

সৈকত পরিপূর্ণ চোখে সরলতাকে তাকিয়ে দেখল। ধরা পরে যাওয়া রক্তিম মুখ নিয়ে সরলতা আঁচলের কোণা কাটছে।

--- শুধু তুমি নও। সকলেই তাদের বাঁদর প্রকৃতিকে অর্থাৎ নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে সমাজ প্রদত্ত মুখোশের আড়ালে।

নিগুড় সত্যকে আবিষ্কার করে দুজনেই চুপ হয়ে যায়। চুপ চাপ হাঁটতে হাঁটতে তারা একদম পূবের সীমানায় চলে এসেছে। সেখান থেকে উঁচু জমি অনেকটা ঢালু হয়ে দূর দূরান্তে নেমে গেছে। মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত ভোরের কুয়াশার আড়ালে অদৃশ্য। অদৃশ্য উদীয়মান সূর্যের আভায় ধূসর সোনালী ঊষা চৌক আলের জলে গলিত রুপা ঢেলে দিয়েছে। এখানে সেখানে দুই একটা ধ্যানমগ্ন ধবল বক এক পায়ে ঠায় বসে আছে। কিছুটা দূরে জল কাদা ছাপিয়ে গাছ গাছালী ঢাকা একটি উঁচু ঢিবি। আড়ালে একটি কুঁড়ে ঘরের চাল বেয়ে সাদাটে ধুয়া যেন নাইয়র ছেড়ে চলে যাওয়া নব বধূর বেদনা বিধুর ধীর পদক্ষেপ। এক পাশে একটি সাদা কালো গাভী হাম্বা হাম্বা রবে নীরবতার বুকে শব্দের জাবর কাটছে। এই সবকিছুর আড়ালে এক মানব মানবীর ঘরকন্নার কল্পনা করা যায়। নিকানো মেঝেতে এক উদোম মানব শিশু হামাগুড়ি দিচ্ছে, হাসছে, খেলছে। এখানে তাদের সামাজিক পরিচয়ের কোন প্রয়োজন নেই। যেমন বকগুলো জানে না কি তাদের সামাজিক পরিচয়। গাভী জানে না, জানেনা গাছ গাছালী। সময়ের রীল যদি পিছনের দিকে চালিয়ে দেই তাহলে স্বল্প বসনা এই মানব মানবীর এই বসন গুলোও ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাবে। সম্পূর্ণ উলঙ্গ মানব মানবী ও একটি শিশু জানেনা কি তাদের সম্পর্কের অর্থ। শুধু কি এক মায়ার বাঁধন তাদের বেঁধে রেখেছে, যা আদি ও অকৃত্রিম। যা শুধুই মানব মানবী ও শিশুর বন্ধন। যেমন চাঁদের বাঁধন পৃথিবীর সাথে, পৃথিবীর বাঁধন সূর্যের সাথে।

সৈকত ও সরলতা একদিকে শহরের সভ্যতা ও আর এক দিকে গ্রাম্যতার প্রান্ত সীমায় ঘাসের উপর বসে পরে। দীর্ঘ নীরবতার পর সৈকত বলে ---- মানুষের সাথে মানুষের বাঁধন একমাত্র স্পর্শের মাধ্যমে সম্ভব হয়ে উঠে।

সরলতা জিজ্ঞাসু চোখে তাকালে সৈকত বলে যায়--- তুমি আমার কাছ থেকে দুই হাত দূরে বসে আছ। তোমার অবয়ব থেকে আলোর প্রতিফলন আমার চোখে আসতে সময়ের কয়েকটা মুহূর্ত পার হয়ে যায়। তাই আমার কাছে তুমি কয়েক মুহূর্তের অতীত! তোমার আর আমার স্থান ও কাল এক নয়। আমি তোমার অতীত প্রেতাত্মার সাথে কথা বলছি। তুমিও তাই। কিন্তু তুমি যদি আমাকে স্পর্শ কর তাহলে স্পর্শের স্থানটুকুতেই কেবলমাত্র স্থান ও কাল এক হয়ে বাঁধন সম্ভব হয়।

সরলতা যেন একটু ভয় পেয়ে যায়। কুয়াশা ঘেরা এই প্রান্তরে যতদূর চোখ যায় অন্য কোন মানুষ দেখা যাচ্ছে না। সৈকতের দিকে আড় চোখে চেয়ে বুঝার চেষ্টা করল, সত্যিই কি সে একটা প্রেতাত্মার সাথে বসে আছে?

সৈকত বলে যাচ্ছে---- এই যে তুমি আর আমি পাশাপাশি বসে আছি এর মধ্যে একটা দৈব ব্যাপারও রয়েছে।

--- কি রকম?

--- তোমার আমার এই সন্ধিক্ষণের পূর্বেও অনন্তকাল আর পরেও অনন্তকাল। অনন্তকালের একটি অতি ক্ষুদ্র সময়ের জন্য কত মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছে, আছে, আসবে, আবার কালের গর্ভে হাড়িয়ে যাবে। এই ক্ষুদ্র সময় ও স্থানের বাইরে কারো সাথে কারোর কখনো দেখা হবে না। এই পৃথিবীতে একটা অতি ক্ষুদ্র সময়ের জন্য আমরা এসেছি। অর্থাৎ এই পৃথিবীটা বেঁচে থাকা মানুষদের একটা মিলন স্থল। তোমার আর আমার এই মিলন সম্ভব হয়েছে কারণ দৈবক্রমে উভয়েরই স্থান ও কাল কাছাকাছি রয়েছে।

সরলতা চারিদিকে তাকিয়ে দেখে কুয়াশা আবৃত দৃষ্টি গোচরিভুক্ত এই স্বল্প পরিসরের স্থানটি যেন স্থান ও কালকে সংকুচিত করে শুধু তাদের দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। একই স্থান-কালের সন্ধিক্ষণ দুজনের মিলনকে সম্ভব করে তুলেছে।

--- কিন্তু এই মিলনের মর্মবাণী মানুষ অনুধাবন করতে পারে না..... সৈকত হতাশা জড়িত কণ্ঠে বলে চলে

--- এই পৃথিবীকে আমরা হিংসার কুরুক্ষেত্র বানিয়ে ছেড়েছি! মানুষের সাথে মানুষের ভালোবাসার চেয়ে হিংসা, বিদ্বেষ, প্রতিযোগিতাই মুখ্য হয়ে উঠেছে।

--- কেন এমন হোল?
সরলতার কণ্ঠেও যেন হতাশার সুর সঞ্চারিত হয়েছে।

--- কারণ সমাজ মানুষকে হাজারো খণ্ডে খণ্ডিত করে ফেলেছে। সব কিছুর এক একটা বিমূর্ত সংজ্ঞা দাঁড় করে মানুষকে বিভাজিত করেছে। নারী, পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী, জাতি, গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, অঞ্চল, দেশ ইত্যাদি হাজারো খণ্ডে মানুষ বিভক্ত। এই বিভাজনের গণ্ডী পেরিয়ে মানুষের মিলন আর সম্ভব হয়ে উঠে না।

সৈকতের সহজ উত্তর। সবকিছু সহজভাবে ভাবার সহজাত স্বভাব সৈকতের রয়েছে। যদিও তার সংস্পর্শের সঙ্গী সাথীরা তার ভাবনার থই খুঁজে পেত না। সরলতার মত তারও বাল্যকাল বাঁদর স্বভাবের ছিল। সমাজের বিধি বিধান অমান্য করাই সেই বাঁদরদের কাজ। তার ভাষায়,

প্রতিদিন মসজিদে কায়দা পড়তে গিয়ে আমার বাল্য সাথীরা সুর করে পড়ত
-- আলিফ, বে, তেরছা
হুজুরের দাঁড়ি ধরে হেড়ছা !!

অথবা শুক্রবারে নামাজের শেষে প্রায়ই মিলাদ থাকত আর মিলাদের শেষে জিলাপির প্যাকেট পাওয়া যেত। দীর্ঘ মিলাদে বিরক্ত হয়ে ছেলের দল সুর করে পড়ত

-- ইয়া নবী ছালার ভিতর কি?
গরম গরম রসগোল্লা আর জিলাপি
ইয়া হুজুর কখঅঅন বিলাবি !!
রসগোল্লা আর গরম জিলাপি......।।

আমাদের দলের ধেড়ে বাঁদর ছিল শৈবাল।

শৈবাল বলতো---- চল ছোঁয়া ছুঁয়ি খেলি!
আমরা সবাই তৎক্ষণাৎ সায় দিয়ে হৈ হৈ করে উঠতাম। গোরা থেকে অনেক ডালপালা ছড়ানো একটি বয়স্ক আম গাছ ছিল আমাদের ছোঁয়া ছুঁয়ি খেলার মাঠ। সেখানে বাঁদরদের মত এক ডাল থেকে আর এক ডাল, এক শাখা থেকে আর এক শাখায় লাফিয়ে, ঝুলে, নাগর দোলা দুলে শৈবালকে ছুঁতে চেষ্টা করতাম।

রীতা বলতো--- চল দাঁতই গোটার ভর্তা খাব।
তখনি হৈ হৈ করে আমরা জঙ্গলের দিকে ছুটে যেতাম। সারা জঙ্গল চষে বেড়িয়ে আমরা পাকা দাঁতই গোটা সংগ্রহ করে নিয়ে আসতাম। রীতা ভর্তা বানিয়ে দিলে আমাদের আনন্দ আর দেখে কে?

বড়দের অনুকরণ করাও আমাদের খেলার অংশ ছিল। বড়দের নির্বাচনী মিছিল ছিল আমাদের খুবই প্রিয় একটা খেলা। হাতে ডাল পালার ব্যানার নিয়ে মিছিল করে পাড়ায় চক্কর দিয়ে বেড়াতাম--- মা বোনেদের বলে যাই
বাঁদর মার্কায় ভোট চাই।।

আর ছিল রান্না বান্না খেলা। শৈবাল বাঁজার করে আনত আর গৃহিণী হত রীতা। আমরা বাচ্চা কাচ্চারা রীতার কোলে শুয়ে দুদু খেতাম। রীতা জামার হাতাটা একটু নামিয়ে দিয়ে মা হয়ে উঠত।

আমাদের যৌন শিক্ষা হয়েছে বাঁদরদের গ্রুমিং-এর অনুকরণে। এই খেলার নাম ছিল চিদ্দি চিদ্দি খেলা। এর বর্ণনায় আর নাই বা গেলাম! তবে আর একটি খেলার নাম ছিল পলান্তি পলান্তি। শৈবাল আর রীতা লুকিয়ে পড়ত পাট ক্ষেতে। উঁচু উঁচু পাট ক্ষেতের জঙ্গলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যেত না। আমরাও জোড়ায় জোড়ায় খুঁজতে বেড়িয়ে প্রায়ই একে অপরকে জড়িয়ে ধরতাম। তাতে ঠিকই একটা শিহরণ বয়ে যেত।

এই পলান্তি খেলতে গিয়ে রীতা একদিন সবাইকে লুকিয়ে আমাকে বৈঠকখানা ঘরে নিয়ে এলো। সেখান থেকে একটা বই নিয়ে প্রায় অন্ধকার দোতালায় উঠে এলো।
সে ফিস ফিস করে বলল---- শুন এটা নামাজ শিক্ষা বই। কিন্তু তার আগে তোকে সঠিকভাবে অজু করতে হবে।

আমি---- আমি অজু করা জানি।

--- চুপ গাধা! কি করলে অজু ভেঙে যায় জানিস?

আমি ফিক করে হেসে ফেললাম--- পাদ দিলে!

--- এক থাপ্পড় দিব ফাজলামি করলে। শোন এটা দিয়ে ওটা ঠেকালে অজু ভাঙ্গবে না।
আমি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালাম।

--- বুঝলি না? তোরটা খোল!
বলে সে নিজেই আমারটা খুলে তারটাও খুলল।
---- দেখ, তোরটা আমার এখানে শুধু লাগালে অজু ভাঙ্গবে না।

আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম---- কখন ভাঙ্গবে তাহলে?

তখন সে ঘষতে ঘষতে বলল---- এরপর এটা দিয়ে যদি মনি বের হয় তবেই অজু ভাঙ্গবে।

আমি--- মনি কি?

সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে-- ধেৎ গাধা। তোকে দিয়ে হবে না!

খেলাটা আমার ভালই লেগেছিল। তারপর আমি নিজেই বৈঠকখানা থেকে ওই ধরণের বই পড়ে অনেক কিছু জেনেছিলাম। আর তখন থেকেই বড়দের গোপন জগত সম্পর্কে আমার একটা ধারণা হয়েছিল। বড়দের দুটি জগত রয়েছে, প্রকাশ্য জগত আর গোপন জগত। বাঁদর স্বভাবটা থাকে গোপন, তাই বাইরের আচরণ দিয়ে তাদের চেনা যায় না।

কথায় কথায় সৈকত সরলতার কাছে অনেক কিছুই প্রকাশ করেছিল। নিজের মনকে এভাবে উলঙ্গ করে দেখাতে গিয়ে যেন কালিমার বোঝা হালকা হয়ে যাচ্ছিল। নিজের অনুভূতিগুলো এভাবে উলঙ্গ করে দেখানোর আকাঙ্ক্ষা ইউরোপে অভিব্যক্তিবাদী দর্শনের জন্ম দিয়েছিল। নিটচসে ছিলেন তাদের একজন।

--- মানুষের সামাজিক মুখোশগুলো একে একে সরিয়ে ফেললে থাকে শুধু খাওয়া, ঘুমানো ও যৌনতা। খাদ্য সংগ্রহের তাগিদ থেকে মানুষ অনুসন্ধানী হয়ে উঠে। যৌন আকাঙ্ক্ষা ও যৌন হিংসা থেকে জন্ম নেয় পরিবার, সমাজ, যুদ্ধ, আধিপত্য বিস্তারের ক্রূরতা।

সরলতা মনে মনে সৈকতের দার্শনিক কথাবার্তাগুলো অনুধাবনের চেষ্টা করল। চেষ্টা করল নিজেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার। তার পরিচয়, তার ভাষা, সমাজ থেকে প্রাপ্ত সবকিছু গায়ের অলংকারের মত একে একে খুলে নিলো। সে কল্পনায় নিজেকে দেখতে পেল কুঁড়ে ঘরের সেই উলঙ্গ নারীর মাঝে। পরম মমতায় শিশুটিকে তার নগ্ন বুকে তুলে নিলে শিশুটির স্তন পান তার দেহ মনে শিশুটির সাথে একটা তীব্র একাত্মবোধ জাগ্রত করে। পুরুষটি যখন তার পাশে এসে বসে তখন মেঝের পাশে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের উষ্ণতায় সমগ্র কুটীরটিকেই একাত্মতা জড়িয়ে রাখে। এই একাত্মবোধ যে পরিবারের জন্ম দিয়েছে সেই সচেতনতা তাদের নেই। কোন মন্ত্র নেই, কোন ধর্ম নেই, নেই কোন পাপ পুণ্যের হিসেব নিকেশ, এই একাত্মবোধে আছে শুধু মানবতা!

গ্রামীণ এই প্রান্তরে কুয়াশা যেন আরও জেঁকে বসেছে। আশে পাশের ঘাসের ডগা রুপালী আভায় চিক চিক, ক্রমশ দূরে দিগন্তের সাদা চাদরে মিশে গেছে। পাশের ক্ষেতে মিষ্টি কুমড়ার জাংলায় বড় বড় সবুজ পাতায় শিরা উপশিরার সাদা নকশা আঁকা। একটি দুটি গেরুয়া রঙের ফুল এখানে সেখানে ফুটে আছে। কিছু দূরে খড়ের গাঁদার উপরে বাঁশের কঞ্চীর আগায় একটি কালো ফিঙ্গে উড়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। তারও নীচে আউশ ক্ষেতে ধান কাটার পর রয়ে যাওয়া নাড়ায় আগুন দেয়ার পর পুরো ক্ষেতটি কালো ছাইয়ে কলঙ্কিত। স্থানে স্থানে নাড়ার স্তূপ থেকে এখনও সাদা ধুঁয়া উঠছে। সাথে একটা পোড়া উষ্ণ গন্ধ চারিদিকের কুয়াশা ঢাকা জন মানবহীন বদ্ধ পরিসরকে আদিম উত্তেজনায় নেশাগ্রস্থ করে তুলেছে। সৈকত আলতোভাবে তার হাতে সরলতার হাত তুলে নিলো। সরলতা জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকাতে সৈকতের চোখে নেশাগ্রস্থ মোহাচ্ছন্নতা দেখতে পেল। ফিস ফিস করে বলল--- আস নগ্ন হই!

সৈকত উঠে দাঁড়িয়ে সরলতাকে এখনও উষ্ণ আউশ ক্ষেতের পাশে নিয়ে এলো। খড়ের গাঁদায় গা এলিয়ে দুজন মানব মানবী পরস্পরকে জড়িয়ে ধরল। আশ্চর্য ভাবে দুটি দেহের প্রতিটি খাঁজ মিলে মিশে একাকার। দুটি দেহ ও মনের মাঝে স্থান ও কালের কোন দূরত্বই আর রইলো না! একটি পরা বাস্তব দৃশ্যের মধ্যে দুজনে হারিয়ে গেল। নিটচসের ভাষায় মানব জন্মের পিছনে কোন উদ্দেশ্য নাই। মানুষই তার নিজের উদ্দেশ্য নিজেই নির্মাণ করে।

মন্তব্য ৩৮ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (৩৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৩৪

জাহিদ অনিক বলেছেন: প্রথম কয়েকটা স্তবক পড়েছি। গল্প শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।
বাকীটা পড়ে পড়ব।

ভালো লেগেছে যেটুকু পড়েছি। নগ্ন হওয়ার জন্য ঐহিক ও পারত্রিক নিমগ্নতা দরকার। তবে এরকম নগ্নত দরকার.।।
সারাক্ষণ আবৃতবীজ উদ্ভিদের তো আর থাকা যায় না!

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪

নতুন বলেছেন: দুজন মানুষ তাদের মনের মাঝে কাছাকাছি থাকতে পারাতে দুনিয়া সুখকর করে তোলে...

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০৭

বিজন রয় বলেছেন: আপনার ভিতরে অনেক লেখা বাস করে। সেগুলি এভাবে আমাদের দিলে খুশি হবো।
লেখাটি অনেক ভাবনার। কিন্তু সময়ের অভাবে অনেক কথা বলা হয়ে ওঠে না।

আপনার লেখগুলো সময় নিয়ে আরো পড়বো, নিরিবিলি সময়ে।

মানুষেরা নিজের কাছে আসলেই নগ্ন!

৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৩৯

শাহ আজিজ বলেছেন: আল্লা কি ফাজিল !! খারাও তুমার আব্বুরে কইতাছি :-B :-B

৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: চমৎকার লেখা। পড়ে ভালো লাগলো...

৬| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:১১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: মনকে নগ্ন করে প্রশ্ন করা সবাই পারেনা।

৭| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২

মিরোরডডল বলেছেন:




শাহ আজিজ বলেছেন: আল্লা কি ফাজিল !! খারাও তুমার আব্বুরে কইতাছি :-B :-B

মজার :)



৮| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৭

মিরোরডডল বলেছেন:




দীর্ঘ নীরবতার পর সৈকত বলে ---- মানুষের সাথে মানুষের বাঁধন একমাত্র স্পর্শের মাধ্যমে সম্ভব হয়ে উঠে।

এটা ছিলো সৈকতের পিক আপ লাইন :)

বুনোর লেখা মানেই অন্যরকম ভাবনার জগতে নিয়ে যায়, এক কথায় অনবদ্য।

৯| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:০১

রাজীব নুর বলেছেন: শুধু মনে প্রানে সৎ থাকলে হবে না। বাস্তব জীবনে সৎ থাকতে হবে।

১০| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪

মিরোরডডল বলেছেন:




নগ্নতার এক অপরূপ সৌন্দর্য রয়েছে, সে হোক দেহের, সে হোক মনের।

I agree.
কিন্তু আমার কাছে আংশিক নগ্নতা আরও আকর্ষণীয়।
একটা সুন্দর নারীদেহ পুরো ন্যূড যতটা সুন্দর, স্বল্প বসনে তাকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় লাগে।

একইভাবে মনের নগ্নতায়, পুরো ওপেন বুক হয়ে গেলে একসময় আকর্ষণ হারায়।
কিছু অজানা হলে জানার স্পৃহা থাকে, যা সম্পর্কে সুইটনেস আনে।

আকাশে পূর্ণ পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে কিন্তু সামান্য মেঘে ঢাকা চাঁদের উঁকিঝুকি দেখতে বেশি ভালো লাগে।
এটা একান্তই আমার অভিমত।

১১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯

নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম

১২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫

ক্রেটোস বলেছেন: বুনোগান আপনার দেখছি কেবল যৌনতা নিয়ে প্রখর আগ্রহ! আপনি আপনার লিখাতে একটি মানুষের পরিচয়টা যে কী তা নিয়ে খুব কম আলোচনা করেন আর চট করে আপনি মানুষের পরিচয় নিয়ে বেশি আলোচনা না করে সেটাকে যৌনতার দিকে নিয়ে যান। প্রকৃতিবাদীদের মত আপনার সব আলোচনা। পরকীয়াকে একটি অনন্য শৈল্পিক চিত্রের দিকে চিত্রায়ন করাই আপনার উদ্দেশ্য। আপনি ঠিক জায়গায় লিখছেন বুনোগান। এবং আপনি সফল হবেন একদম নিশ্চিত!


এই যেমন দেখুন মি. বিজন রয়-কে, উনি সেদিন রিয়াদ নামের এক ব্লগারকে বললেন যে ঐ ধাঁচের (সেদিন যে শৈলীতে গল্প লিখেছিল সেই শৈলীতে) গল্প না লিখতে। অমন গল্প নাকি উনি পড়তে পড়তে হয়রান। অথচ ইনি এখন আর হয়রান হচ্ছেন না আপনার লিখা পড়ে, এই ধরনের লিখা তো সমরেশ বসু, শীর্ষেন্দু, সুনীল, মুস্তফা সিরাজী অঢেল লিখে গেছেন। সেই একই কচকচানি আপনার এখানেও আছে । কিন্তু তিনি হয়রান হচ্ছেন না এখানে মশলা ভালো পাচ্ছেন কিনা। আপনি চালিয়ে যান বুনোগান, বিজনের মত এমন পাঠকের আপনার কমতি পড়বে না। আপনার কমেন্ট সেকশন নিশ্চয়ই সেই আশ্বাস দিচ্ছে।

অভিনন্দন বুনোগান চালিয়ে যান আপনার নৈতিকতাকে ডিঙিয়ে প্রকৃতিবাদী-উদারতাবাদ প্রচারের কার্যক্রম।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:০২

বুনোগান বলেছেন: তুমি আমার অন্তর্স্থলের খবর জানো
ভাবতে প্রভু আমি লাজে মরি
আমি দশের চোখে ধূলো দিয়ে
কিইনা ভাবি আর কিইনা করি।।

সেসব কথা বলি যদি
আমায় ঘৃণা করে লোকে
বুঝতে দেয় না এক বিছানায়
বলে ত্যাগ করিলাম তোকে।।

তাই পাপ করে হাত ধুয়ে ফেলে
আমি সাধুর পোশাক পরি
আর সবাই বলে লোকটা ভাল
ওর মুখে সদাই হরি।।
-----রজনীকান্ত

১৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৪৯

শেরজা তপন বলেছেন: মিরোরডডলের ১০ নং মন্তব্যের সাথে একমত। তির্যক চাহনী, স্মিতহাস্য আর অবিন্যস্ত বসনে নারীদের সৌন্দর্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায় বলে আমার ধারনা। কেননা সবখানেই অর্ধেক থাকে।
পুরোটা হলেই গেল!!! :)
সবখানেই পুরুষের চোখে যতটা ধোঁকা দেয়া যায় -তাদের বেঁধে রাখার নাম্বার ওয়ান ফর্মুলা; কিছু দেখাও কিছু লুকিয়ে রাখ।

১৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৫৯

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: চমৎকার লেখনি, আপনার ভাষাশৈলীর তারিফ না করে পারছি না, আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।

আমারও ইচ্ছে আছে একদিন নগ্ন হয়ে একটা পোজ দেওয়ার, ঠিক এইভাবে শুধু টেপ রেকর্ডারটা থাকবে না। B-)


১৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৩৮

কামাল১৮ বলেছেন: নগ্নতা হলো আধিমতা।পোশাক হলো আধুনিকতা।

১৬| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:১১

ক্রেটোস বলেছেন: কাব্যের এই হেঁয়ালিপনা দিয়ে কী প্রমাণ করবেন বুনোগান?

রজনীকান্তের এই কবিতা তো সেইসব হিপোক্রেটদের জন্য তাই নয়কি? রজনীকান্ত তো সেইসব হিপোক্রেটদের নিন্দা করেছেন কিন্তু আপনি করছেন ওদের তোষামোদ। আপনি আপনার লিখাতে বারবার এই ব্যাপারটাকে একটি নান্দনিকতার পোশাকে উপস্থাপন করতে চাইছেন। অনেকটা আপনি নিজেও কবিতার ঐ হিপোক্রেটদের মতো। যেটা অন্যায় সেটাকে ন্যায় করবার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন "নীরবে বহুল চর্চিত" এই বাহানা দিয়ে।

অযথা ন্যাকামি করে এইসব হেঁয়ালি কাব্য দেবার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ আপনি যেসব কবিতা দেবেন তা আসলে এক প্রকার খেদোক্তি সমাজের মুখোশ পরিহিত মানুষের প্রতি। আর আপনার লিখা হলো মুখোশ পরিহিতদের সকল কুকর্মকান্ডের প্রতি সাফাই গাওয়া এবং এই অপকর্মগুলোকে বাস্তবায়ন করা। দুটো এক নয় বুনোগান।

শুভকামনা রইল আপনার প্রতি!

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

বুনোগান বলেছেন: ধন্যবাদ মুখোশের আড়ালে আমার আমিকে চিনে ফেলার জন্য! আমি প্রকৃতপক্ষে এটাই চাইছিলাম। আমাকে মন্দ বলুন, আমার উলঙ্গ রূপ দেখে আমাকে ঘৃণা করুন, আমাকে মানুষের অযোগ্য ভাবুন! কারণ সমাজের বানানো আদর্শ চরিত্রগুলোতে অভিনয় করে করে আমি ক্লান্ত। আমি এই ভালোত্বের মুখোশ চাই না। আমি চিৎকার করে বলতে চাই আমি ভাল না। মানুষের আড়ালে আমি আসলে একটি পশু। ছোট বেলা থেকে এই পশু চরিত্র নিয়েই আমি বড় হয়েছি। তখন এই পশু চরিত্রটি আমার মধ্যে কে রোপন করে দিয়েছিল? সমাজ তখনো আমাকে বাঁধতে পারেনি। আমি বড় হয়ে মানুষের মুখোশ পরেছি কিন্তু ভিতরের পশুটি তো রয়েই গেছে। সেই রুপটিকেই আমি প্রকাশ করতে চাইছি যেন আমার মন্দ রুপটিও সবাই দেখতে পায়। আপনারা ভাল মানুষেরা যত আমাকে মন্দ বলবেন ততই আমি গ্লানি মুক্ত হব! যতই ঢেকে রাখুন না কেন জগত প্রভু সবাইকে উলঙ্গ ভাবেই দেখেন! আমি কার কাছে কি লুকাবো?

১৭| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: কারো মন্তব্যের উত্তর দিচ্ছেন না কেন?

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২৫

বুনোগান বলেছেন: আমি সাধারণত ঘন্টা তিনেক নেটে থাকি, তাই সাথে সাথে উত্তর দিতে পারি না। যাদের সাথে একমত তাদের লাইক দেই। আর যারা প্রশ্ন করেন তাদের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি। ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

১৮| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: গল্পের মোড়কে আরো গভীর কোন বিষয়ে পাঠককে চিন্তামগ্ন করার মতো লেখা। চিন্তার স্রোতের তোড়ে পক্ষে বিপক্ষের নানান মত উঠে আসতে পারে।

১৯| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯

ক্রেটোস বলেছেন: হাহাহাহা, বুনোগান এই ন্যাকা কান্নার কোন প্রয়োজন ছিল না। আপনাকে ডিহিউম্যানাইজড করবার কোন প্রক্রিয়া বা প্রচেষ্টা এখানে আমি চালাইনি। তাই চট করে ডিহিউম্যানাইজড ও নিজেকে প্রলেতারিয়েত প্রমাণ করবার প্লিজ বৃথা চেষ্টা করবেন না। এটা হয়তো আপনার মতো প্রকৃতিবাদী যারা তাদের কাছে আপনাকে একজন প্রোটাগনিস্ট হিসেবে গড়ে তুলবে কিন্তু আমার কাছে নয় !


আপনি নিজেকে পশুরূপেই প্রমাণ করতে চান তো করুন। কোন আপত্তি নেই কিন্তু আপনার সেই আদিপশুতেই ফিরে যাওয়াটাকে কেন নৈতিকতা দিয়ে প্রমাণ করতে যাচ্ছেন? কেন তাকে মানবিক ও মানবতার ঝাণ্ডা বলে চালাতে চাইছেন ? আপনি তো নিজেকে পশু বলে প্রচার করে আমাকে ঘৃণা করতে নয় বরং আমি যাতে আপনাকেই এক মহামানব বলে ভাবি তা প্রচার করছেন। তাই “আমি পশু” নামক ন্যাকামোটা না করলেও চলতো!!


আপনি এই যে পশুত্বের প্রচার করছেন মানে এই যে নিজেকে পশু বলে যে অহমিকা প্রদর্শন করছেন তা সরাসরি করুন । এই ব্লগ এইসবের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আপনার মতও অনেককে পাবেন। আপনার সাথে গলা মেলাবে এই নিয়ে । কিন্তু দয়া করে এই পশুত্বকে মানবতা বলে মুনাফেকীটা করবেন না।

আপনি যেহেতু জগদীশ্বরের কথা বললেন তো বলি উনি যে আমাদের উলঙ্গ করে দেখেন তা কোথায় পেলেন? তিনি কী প্রত্যাদেশ দিয়ে আপনাকে জানিয়েছেন? আমি যদি এখন আপনাকে বলি ইশ্বর কোথাও বলেননি এইসব এবং আপনাকে যদি ধর্মগ্রন্থ টেনে দেখাই আপনি অস্বীকার করবেন সবকিছুকে মানুষের সৃষ্ট বলে। তাই আপনাকেও বলছি কোথায় পেলেন এই কথাটা? সেই দ্রয়িতদের বুলি ঝাড়বেন এই তো? এটাও কিন্তু মানুষের তৈরী! আপনার মতো কিছু প্রকৃতিবাদীদের তৈরী!

ইশ্বর আমাদের পশু হতে বলেননি। ভালো মন্দ দুটোকেই আমাদের মাঝে দিয়েছেন। হ্যাঁ আপনি যেকোন একটি পথ বেছে নিতে পারেন কিন্তু তাই বলে মন্দকে ভালো বলে চালাবেন এটা কোন ধরনের স্পষ্টবাদীতা হলো?

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬

বুনোগান বলেছেন: হাহাহাহা @ক্রেটোস! আমি একটা গল্প বলেছি মাত্র। সমাজতত্ত্বের কোন থিয়োরি প্রমাণ করতে আসিনি। হ্যাঁ গল্পের পিছনে একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে। সেটা অনেকের মতের সাথে নাও মিলতে পারে এবং এটাই স্বাভাবিক।
"এই ব্লগ এইসবের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।"---- এই কথা বলে কি আপনি নিজে "অহমিকা প্রদর্শন" করছেন না?
"ইশ্বর আমাদের পশু হতে বলেননি। ভালো মন্দ দুটোকেই আমাদের মাঝে দিয়েছেন।" --- অর্থাৎ ঈশ্বর আমাদের মধ্যে ভালো ও মন্দ দুটোই দিয়েছেন অর্থাৎ আমাদের যে মন্দ করার ক্ষমতা বা পশুত্ব, সেটা ঈশ্বরই দিয়েছেন। এই পশুত্ব আড়াল করার জন্যই সমাজ ভালোত্বের বিভিন্ন সংজ্ঞা তৈরি করেছে। আমি এই গল্পে নায়কের পাপ স্বীকার করার আকুতিকেই তুলে ধরেছি মাত্র। আপনি যাকে ভাল বলেন সেটা আমার কাছে ভাল নাও হতে পারে।

২০| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৩৯

ক্রেটোস বলেছেন: হাহাহাহা @ক্রেটোস! আমি একটা গল্প বলেছি মাত্র। সমাজতত্ত্বের কোন থিয়োরি প্রমাণ করতে আসিনি। হ্যাঁ গল্পের পিছনে একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে। সেটা অনেকের মতের সাথে নাও মিলতে পারে এবং এটাই স্বাভাবিক।

সেটা আলোচনার এই পর্যায়ে আপনি বললেন বুনোগান? হ্যাঁ আপনি গল্প বলছেন তবে গল্পের ছলে ঐ যে বললাম চালিয়ে যাচ্ছেন একটি প্রচারণা। সেটা যে কী তা আগেই বলেছি আর বলছি না। মতের মিল অমিল সবক্ষেত্রেই আছে তবে আপনার ব্যাপারটি মতের মিল অমিল নিয়ে নয়। একদম নৈতিকতা কেন্দ্রিক। এই মন্তব্যের আগেও আপনার যে সুর ছিল এখন আর তা নেই। এটা অবশ্য আপনার নিয়ম আপনি আপনার বক্তব্যের ধারা ক্রমেই বদলান। এর আগে আপনি দৃপ্তবাক্যে জানিয়ে দিলেন আপনি নিজেকে পশু বলতে চান , সেই সুবাদেই আমার মন্তব্য। তবে এর প্রতি উত্তরে যে মন্তব্যের ধারা আসবার কথা তা বদলেছেন। সে যাক!


"এই ব্লগ এইসবের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।"---- এই কথা বলে কি আপনি নিজে "অহমিকা প্রদর্শন" করছেন না?

কেন? এখানে অহমিকার কী দেখলেন? এখানে আমিত্বের কী দেখালাম আমি? এটা ঠিক আমি খেদোক্তি করেছি। কিন্তু অহমিকা কোথায় প্রকাশ করলাম। আর আমার এই কথাকে অহমিকা বলে কী আপনার অযৌক্তিকতাকে রক্ষা করা যায় বুনোগান?


আপনি আসলে কথার জবাব দিচ্ছেন কী বুনোগান? আমি যে বললাম আপনি নিজেকে পশু বলতেই পারেন ও অহমিকা দেখাতেই পারেন কিন্তু তাকে নৈতিকতার ভিত্তি কিংবা নৈতিকতা বলে প্রচার করবার কোন মানে হয় কী? এটা তো সাংঘর্ষিক ও প্রবঞ্চণার নামান্তর! আপনি তাকে এড়িয়ে গেলেন সুনিপুনভাবে।



"ইশ্বর আমাদের পশু হতে বলেননি। ভালো মন্দ দুটোকেই আমাদের মাঝে দিয়েছেন।" --- অর্থাৎ ঈশ্বর আমাদের মধ্যে ভালো ও মন্দ দুটোই দিয়েছেন অর্থাৎ আমাদের যে মন্দ করার ক্ষমতা বা পশুত্ব, সেটা ঈশ্বরই দিয়েছেন। এই পশুত্ব আড়াল করার জন্যই সমাজ ভালোত্বের বিভিন্ন সংজ্ঞা তৈরি করেছে। আমি এই গল্পে নায়কের পাপ স্বীকার করার আকুতিকেই তুলে ধরেছি মাত্র। আপনি যাকে ভাল বলেন সেটা আমার কাছে ভাল নাও হতে পারে।

হ্যাঁ ইশ্বর দিয়েছেন কারণ আপনি মন্দকে ডিঙিয়ে ভালোকে আঁকড়ে ধরে কতটুকু নিজেকে প্রমাণ করলেন তার জন্য। ইশ্বর আপনাকে মন্দ করবার ক্ষমতা দিয়েছে তার মানে এই নয় মন্দত্ব আপনার একমাত্র দিক। সমাজ ভালোর সংজ্ঞা তৈরী করেনি এমনকি নতুন আমদানিও কিছু করেনি। ভালোর সংজ্ঞাটাও ইশ্বরের দিয়ে দেয়া। তাই নয়কি! সমাজ তার প্রতিফলন করে যাচ্ছে এই যা। হ্যাঁ এখানেও মোনাফেকী আছে এটা অস্বীকার করছি না তার মানে তো এই নয় মন্দই সর্বেসর্বা যেটা আপনি বলে বেরাচ্ছেন।

আপনি নীটশের কথা তুলেছেন। নিশ্চয়ই জানেন সে নিজেকে জরথ্রুষ্ট বলেছিল। যে জরথ্রুষ্ট নিজেই প্রচার করে গেছে ভালো মন্দের দ্বন্দ্ব নিয়ে। যেখানে বলা হয়েছিল ভালোর জয় হবেই। কিন্তু মন্দকে যদি নৈতিক বলে চালিয়ে দেয়া হয় সেটা কী হবে? এবং এই সুর কী নীটশের থেকে পান?

আর এই গল্পে নায়ক পাপ স্বীকার করছে? নাকি পাপকে নৈতিকতা দিয়ে ডিফেন্ড করছে? আশ্চর্য বুনোগান। আপনার কী এই মনে হয় যে এইটুকু বোঝা যাচ্ছে না আপনার লিখা থেকে? আর আপনার শেষকথাটা দিয়ে আপনি আবার সেই আপনার দ্রয়িতদের কচকচানি টেনে আনলেন। ভালোর নিশ্চয়ই একটা সংজ্ঞা দাঁড় করানো আছে? আপনি নিজেকে মন্দ বলছেন নির্দ্বিধায় আবার বলছেন ভালোর সংজ্ঞা আলাদা হতে পারে আপনার কাছে, তার পেছনেও কী আপনার মন্দত্বই কারণ নয়? আপনি ক্রমেই আপনার জায়গা থেকে সরে যাচ্ছেন বুনোগান। এই ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন কী?

যাইহোক শুভকামনা রইল!

২১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:০৪

বুনোগান বলেছেন: প্রিয় ক্রেটোস, আপনি মনে হয় বিতর্ক করতে ভালবাসেন। এটা একটা ভাল গুণ। বিতর্ক মানুষকে সত্য উদঘাটনে সাহায্য করে। কিন্তু আপনি যদি ইশ্বরের বানীকে সত্য বলে বিশ্বাস করেন তাহলে বিতর্কের কোন অবকাশই থাকে না। আপনি বলছেন ভালোর সংজ্ঞা ইশ্বর দিয়েছেন আর আমি বলছি সমাজ দিয়েছে। কারণ সমাজই ইশ্বরকে অনুধাবন করেছে। সমাজ প্রতিষ্ঠিত ইশ্বরদের অনুধাবন করা শুরু করেছে মাত্র পাঁচ হাজার বছর পূর্ব থেকে। কিন্তু মানুষের আবির্ভাব লক্ষধিক বছর পূর্বে।
যাইহোক আমি প্রকৃতিবাদী হই বা সমাজের মানদন্ডে মন্দ হই না কেন আমি মানুষ। বিভিন্ন মতাদর্শ নিয়ে হানাহানি না করে এই মানুষকে ভালোবাসার কথাই আমি বলেছি মাত্র। মানুষ হিসেবে আমি আপনাকে ভালবাসি। এই পৃথিবীতে নিতান্ত স্বল্প সময়ের জন্য আপনার সাথে আমার পরিচিয় হয়েছে, অনন্ত কালের জন্য নয়। আমি যদি আপনার কোন ক্ষতি না করে থাকি তাহলে আমিও মানুষ হিসেবে আপনার ভালোবাসা প্রত্যাশা করি। প্রকৃতিবাদী হয়ে আমি তো কারো ক্ষতি করিনি। আমি আপনার মতকেও শ্রদ্ধা করি। বিভিন্ন মতামত নিয়েই সমাজ।

২২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ক্রেটোস বলেছেন: বুনোগান আপনাকে আমার প্রশংসা করতেই হচ্ছে আপনি বিতর্ককে ভালো হিসেবে দেখেন বলে। না আমি অতটা বিতার্কিক নই। তবুও জড়িয়ে যাই মাঝেসাঝে। সে যাক!

বুনোগান আমি ইশ্বরের প্রদত্ত ভালো সংজ্ঞা নিয়ে এগোতাম না যদি না আপনি " ইশ্বর আমাদের মন্দ গুণ ও ভালো গুণ দিয়েছেন" এই কথার ভিত্তিতে না এগোতেন তো! আপনি ইশ্বরের প্রদত্ত মন্দত্ব ব্যাপারটিকে তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করেছেন এখন ইশ্বরের প্রদত্ত ভালোত্ব তত্ত্বকে আমি উপস্থাপন করলে কেন বলার কিছু থাকবে না বুনোগান? এটা কিন্তু অনেকটাই বেইনসাফি হয়ে গেল তাই নয়কি?

এবার বলি, দেখুন বুনোগান মানব সভ্যতার পূর্বে কী ছিল না ছিল তার জীবনব্যবস্থা ও চিন্তা নিয়ে আমাদের জানাশোনা একেবারেই নেই। অন্তত অনুমান করবার জন্য যে টুকু প্রমাণ দরকার তা এখন নেই। যখন নেই তখন এই নিয়ে কথা বলা মানে " হতে পারে নাও হতে পারে"-কে নিয়ে দ্বন্দ্ব করা। এখানে কোন সমাধানে পৌঁছানো যায় না। ধর্মের অবস্থা মানব জগতে কবে থেকে উন্মেষ ঘটেছে তার কোন পোক্ত প্রমাণ নেই। আমরা মানবসভ্যতার থেকে যা পাচ্ছি তা দিয়ে প্রাগৈতিহাসকে আমরা অন্তত বৈজ্ঞানিকভাবে অনুমান করতে পারি না। এটা কিন্তু অস্বীকার্য নয়!‍

সমাজ নিজেই কিন্তু তৈরী করেছে যে কোনটা ক্ষতি কোনটা লাভ। প্রকৃতিতে টিকে থাকা ও নিজের গুরুত্ব দেয়াটার জন্য এমনিতেই বোঝা যায় যে সেখানে আপনার কথিত ক্ষতি করা বলে কিছু নেই। সেখানে স্বার্থই সব ! সেইদিক থেকে সমাজের কাছে এতটুকু কৃতজ্ঞ থাকা উচিত যে আপনি বলতে পারছেন যে " আপনি কারোও ক্ষতি করেননি বা করছেন না " সমাজ সৃষ্ট এই “ক্ষতি” বিষয়টির জন্য আপনি নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারছেন। যদি সমাজ সৃষ্ট নৈতিকতাকে বর্জন করেন তবে ক্ষতির সংজ্ঞাকে কেন গ্রহণ করছি আমরা বুনোগান? এখানে তো একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরী হয়!


পরস্ত্রীকে হরণ ও গোপনে তার সাথে প্রণয়ে কোন ভালোবাসা থাকে না বুনোগান। বরং বলতে হয় আপনি আরেকটি মানুষের বিশ্বাস ও তার একটি মানসিক ক্ষতির কারণ ও প্রধান একজন নিয়ামক হয়ে উঠছেন। এখানে কোন ধরনের ভালোবাসার প্রকাশ পাচ্ছে? না বুনোগান আপনি ভালোবাসার কথা বলছেন না আপনি নীরবে ঘাতক হয়ে উঠবার প্রেরণা দিচ্ছেন।


আমার ক্ষেত্রে ভালোবাসার মানদণ্ড ঐ নৈতিকতা! এর বাইরে আমি আর কিছুতেই ভালোবাসার ব্যবহারে সমর্থক নই। তাছাড়া আপনার আর আমার সাথে যখন স্বল্প সময়ের পরিচয় সেখানে ভালোবাসার কোন প্রেক্ষাপট থাকে না তাই ভালোবাসা নিয়ে কিছুই বলবো না আমি। তবে হ্যাঁ আমি আপনার শুভাকাঙ্খি! শুভ কামনা রইল আপনার প্রতি, বুনোগান!

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:২৪

বুনোগান বলেছেন: ক্রেটোস, আপনাকে কনভিন্স করার কোন অভিপ্রায় আমার নেই। আপনি আপনার ইশ্বর প্রদত্ত নৈতিকতার মানদণ্ডে আপনার ইশ্বর বিশ্বাসী সমাজের মানুষদের বিচার করতে পারেন। কিন্তু আপনার মানদণ্ডে অন্য সমাজের মানুষকে বিচার করা গ্রহনযোগ্য হবে না। তাই সার্বিক মানুষকে বিচার করার জন্য এমন একটি মানদন্ডের প্রয়োজন হবে যা সমাজের ক্ষুদ্র গণ্ডির উর্ধ্বে। যা কেবলমাত্র প্রকৃতির নিয়মের মধ্যেই আছে, যা সকল মানুষের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যায়।

২৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:১০

ক্রেটোস বলেছেন: হাহাহা বুনোগান আবার সেই একই বুলি। আপনি সেই প্রকৃতিবাদীদের মত কথা বলছেন!

কিন্তু আপনি এটি পরিষ্কার করছেন না যে প্রকৃতির মধ্যেই আছে নিজে বেঁচে থাকবার জন্য সব কিছু করবার তাড়না সেখানে অন্যের লাভ-ক্ষতি বিবেচ্যই নয় সেই প্রকৃতিতে কী করে নৈতিকতার মানদণ্ড থাকতে পারে? যে প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ এই সভ্যতা গঠন করেছে সেই প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে আবার সেই আদিমযুগেই ফিরে যাওয়া হবে! তো এখানে নৈতিকতার কোন ক্ষেত্র আমরা পাবো? আপনি সমাজের ক্ষুদ্র গণ্ডির উর্ধ্বে যদি উঠতে চান তবে আপনার নিজেকেও পুনরায় পুনঃসংজ্ঞায়ন করতে হবে তার কারণ আমার আগের মন্তব্যের মধ্যেই আছে।

প্রকৃতির মধ্যে কোন নৈতিকতার মানদণ্ড নেই যা আছে তা কেবল কিছু আচারণ এই আচরণের ভিত্তিতে একটি নৈতিকতার মানদণ্ড হতে পারে না। নৈতিকতা যেমন স্বকীয়স্বার্থকে দেখে আবার স্বকীয়তা বিরোধীও হয় আপনার কথিত সেই প্রকৃতিবাদে কেবল অন্যের ক্ষতিটাই গ্রাহ্য, যেটা এখন সমাজে চলছে মোনাফেকীর মুখোশে। আপনি কেবল তাকে একটি নৈতিকতার মুখোশ পরাতে চাইছেন।

আপনি কোন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন না বুনোগান এমনকি আপনার প্রকৃতিবাদকেও কোনভাবে ডিফেন্ড করতে পারছেন না। একবার ন্যাকামি করছেন আবার তর্কে ফিরছেন আবার রোমান্টিসিজম কিছু কথা টানছেন। আপনি বরাবর নিজের ট্র্যাক থেকে ছিটকে যাচ্ছেন বুনোগান। হাস্যকর!!

২৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩০

বুনোগান বলেছেন: দেখুন, ঈশ্বরবাদ ও প্রকৃতিবাদ দুটোই বহু পূরানো মতবাদ। এ নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। সুতরাং এখানে বিতর্ক করা মানে সময় নষ্ট করা। আমি আগেই বলেছি, আমি গল্প লিখেছি, কোন নতুন তত্ত্ব লিখিনি। এখানে গল্পের শৈলী নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, সাহিত্যমান নিয়ে আলোচনা করতে পারে্ন, গল্প ভাল না লাগলে বলতে পারেন কিন্তু অন্য বিষয় টেনে এনে খামোখা বিতর্ক করার কি প্রয়োজন?

২৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯

এল গ্যাস্ত্রিকো ডি প্রবলেমো বলেছেন: ক্রেটোস একটি বিড়াল।

২৬| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৬

ক্রেটোস বলেছেন: বুনোগান আমি কী নিয়ে আলোচনা করলাম?

আপনি কেবল গল্প লিখছেন না গল্পের ভেতরে তো একটি তত্ত্ব থাকছে তাই না? সাহিত্য মানের ভেতরে যে কী তত্ত্ব উপস্থাপন করা হচ্ছে সেটাও তো সমালোচনার একটা বিষয় তাই নয়কি? আমি তো সেই নিয়েই বললাম! এবং এখানেই বিতর্কটা ঘটে গেছে। আমি এখানে অন্য বিষয় টানিনি। প্রসঙ্গক্রমেই সবটা এসেছে। আমার সব মন্তব্যই একটার পর একটা প্রসঙ্গে এসেছে বুনোগান! অহেতুক এখানে কোন বিষয় নেই!

আপনার লিখার বিষয়বস্তুকে নিয়েই আমি সবটা বলেছি। আপনি এই নিয়ে বলতে পারেন। অথবা চাইলে নয় কিন্তু এটাকে অহেতুক বলে এড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। শুভ কামনা রইল বুনোগান!

২৭| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৮

ক্রেটোস বলেছেন: @এল গ্যাস্ত্রিকো ডি প্রবলেমো , আপনি যদি আমাকে নিয়ে মন্তব্য করতে চান কিংবা আমার মন্তব্য নিয়ে কিছু বলতে চান, তা যদি আমার বিরুদ্ধেও হয় তো সংযত ও মার্জিতভাবে বলুন। অমার্জিত মন্তব্য অন্তত আমার ক্ষেত্রে ব্যবহার না করলে খুশি হবো!

২৮| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:২১

মিরোরডডল বলেছেন:




বুনো, নতুন লেখা চাই।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

বুনোগান বলেছেন: আপনাদের অনুপ্রেরণায় লিখছি। তবে এটা আমার মূল সাব্জেক্ট নয়। আমি অন্য বিষয়ে গবেষণা করছি, তার ফাঁকে ফাঁকে একটু হাওয়া বদল আর কি। আপনাদের ভাল লাগছে বলে আমি গল্প লেখায় একটু সাহসী হয়ে উঠছি!

২৯| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৪২

জনারণ্যে একজন বলেছেন: যদি কখনো ঘুমের সমস্যা হয়, আপ্রাণ চেষ্টাতেও ঘুমোতে না পারি; আমি ক্রেটস এর এই পোস্টের মন্তব্যগুলি প্রথম থেকে পড়া শুরু করবো।

নিশ্চিত - ওনার করা চার অথবা সর্বোচ্চ পাঁচ নাম্বার মন্তব্যে পৌঁছেই ঘুমিয়ে যেতে পারবো।

অগ্রিম ধন্যবাদ রইলো, ক্রেটস।

৩০| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৫৪

এল গ্যাস্ত্রিকো ডি প্রবলেমো বলেছেন: দুঃখিত ক্রেটোস, আপনি আমার কথায় মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন জেনে আমি অনুতপ্ত বোধ করছি।

আমি আপনাকে আর কখনও বিড়াল বলবো না। তবে আপনিও ম্যাওম্যাও করা বন্ধ করবেন আশা করি।

বিনীত।

৩১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৫৮

শ্রাবণধারা বলেছেন: বরাবরের মত খুব ভালো লেখা বুনোগান।

শৈশবের যৌন চেতনার বর্ননাগুলো পড়তে অস্বস্তি লাগলেও বলবো লিখে বেশ করেছেন। সেই যে রবীন্দ্রনাথের "চতুরঙ্গ" উপন্যাসে শচীশের জ্যাঠামশায় বলতেন "বোলতার বাসা ভাঙিয়া দিলেই তবে বোলতা তাড়ানো যায়, তেমনি এ-সব কথায় লজ্জা করাটা ভাঙিয়া দিলেই লজ্জার কারণটাকে খেদানো হয়"। আমার কাছে মনে হলো এও তেমনি। আর আপনার বর্ণনার ধরনও অত্যন্ত শোভন।

আপনি হয়তো জেনে থাকবেন - যে ধরনের প্রাকৃতিক হয়ে ওঠার কথা বলেছেন, বাংলাদেশে তান্ত্রিক সাধকেরাও তাদের সাধনা পর্বে এই ধরনের কিছু প্রকৃতির কাছাকাছি যাবার একটা সাধনা করেন। রামক্বষ্ণ পরমহংসের সাধনা পর্বেও তার দুইজন গুরু জটাধারী এবং ভৈরবী তাকে এই ধরনের এক তন্ত্র সাধনার শিক্ষা দিয়েছিলেন।

শুধুমাত্র, মক্তবের জিলাপি ইত্যাদি স্থূল কথাগুলো পুরো লেখার টোনের সাথে কিছুটা সামঞ্জস্যহীন লেগেছে।

আর Nietzsche নামটি বাংলাভাষায় সাধারনত "নিৎসে" এভাবে লেখা হয়। আপনি "নিৎসে" বা "নিচে" এভাবে লিখতে পারেন বলে মনে করি।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৮

বুনোগান বলেছেন: ধন্যবাদ গল্পটি ভাল লেগেছে বলে। ভারতবর্ষের আদি দার্শনিকদের বস্তুবাদী চিন্তা আমাকে সব সময় চমৎকৃত করে। মন্তব্যের জিলাপি আমারও ভাল লাগেনি। নিজের লেখা গল্পের ব্যাখ্যা করতে যাওয়া গল্পেরই ব্যার্থতা।
Nietzsche নামটির বাংলা বানান নিয়ে আমি বিভ্রান্ত ছিলাম। ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.