নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বারবারিয়ান কিং

বাল

বারবারিয়ান কিং › বিস্তারিত পোস্টঃ

হয়তো আরেকদিন

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:০০

এত সাবধানে থেকেও কেয়ার নজর এড়াতে পারে না সাকিব ।
‘অ্যাই তোর হাত ব্যাগের ভেতরে যাচ্ছে কেন?’
‘কই ? বাইরেই তো !’ তাড়াহুড়ো করে হাত বের করে বলে সাকিব ।
‘আমার ভ্যানিটি ব্যাগ দে !’
‘না না ! তুই ড্রেস চয়েজ কর শান্তিমত । আমার হাতেই থাকুক ।’ মানবসেবায় নিবেদিতপ্রাণের মত বলে সাকিব ।
‘না ! তোকে বিশ্বাস নাই । তুই আমার চকলেট খেয়ে ফেলবি ।’
বেজার মুখে কেয়ার হাতে ব্যাগ হস্তান্তর করে সাকিব ।
টানা দুই ঘন্টা দোকানে দোকানে ঘুরেও একটা জামা পছন্দ হয় না কেয়ার । ওভারটাইমের পারিশ্রমিক হিসেবে কেয়ার ব্যাগে সবসময় দেখতে পাওয়া চকলেটগুলোর একটা নিতে গিয়েও ধরা পড়ে গেল বেচারা ।
মেয়েদের সাথে শপিং-এ আসতে হয় না – এই কথা কেন আজ ইউনিভার্সাল ট্রুথ – সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বেচারা । নতুন একটা ড্রেস কেনার জন্য কেয়ার এতই উৎসাহ বেয়ে বেয়ে পড়ছিল যে সাকিবকে ডাকায় আর ‘না’ করতে পারেনি সাকিব । কন্ঠশিল্পী হায়দারের বিখ্যাত গান “আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়...” এর প্রথম দুই লাইন আউড়ায় বেচারা -– তবে মনে মনেই । কেয়ার কানে গেলে খবর আছে !
অবশেষে একটা ড্রেস মনে ধরে কেয়ার । দাম পরিশোধ করে বাইরে একটা রিকশা নেয় ওরা ।
‘তুই এখন আমার বাসায় আসবি । পরশুর অ্যাসাইনমেন্টের কিছুই করি নাই ।’ অনুরোধের ধারেকাছেও যায় না মেয়েটা, স্রেফ ঘোষণা করে ।
‘তোকে না বলে দিলাম কিভাবে করবি?’ অন্যদিকে তাকায় সাকিব ।
‘তাতে কি ? তুই এখন আমার সাথে যাবি । তোকে কিছু বলা লাগবে না । বসে থাকবি সামনে ।’
‘কিছু বলা না লাগলে গিয়ে কি করব ?’
‘কি ব্যাপার?’ হেসে ফেলে কেয়া । ‘তুই আমার ওপর রেগে আছিস ?’
‘তোর মাথা ।’
‘চকলেট খা । রাগ কমবে ।’ ব্যাগ খুলে চকলেট বের করে দেয় কেয়া ।
‘না । খাব না । ইচ্ছা করছে না ।’
‘চকলেট খেতে আবার ইচ্ছা না করে ক্যামনে ?’ ভ্রু কুঁচকায় কেয়া । ‘হা কর !’
‘করতে পারব না হা ।’
‘অ্যাই ! হা করতে বলেছি না?’ কনুই দিয়ে সাকিবের পেটে যুতসই একটা খোঁচা দিতেই বেচারার মুখ এমনিতেই হা হয়ে যায় । এই সুযোগে চকলেট ভেঙ্গে সাকিবের মুখে চালান করে দেয় কেয়া ।
‘তুই অষ্টম স্কেলের পাগলি সেটা কি জানিস ?’ গিলে ফেলে কেয়াকে বলে সাকিব ।
‘ইশ... এত জেনে কাজ নাই আমার । বাসায় আয় না ! এমন করবি আমার সাথে ?’ আহ্লাদি গলায় বলে কেয়া ।
‘আচ্ছা – যাচ্ছি তোর বাসায় ! কিন্তু এরপর যদি চকলেট চুরি করতে গেলে দেখেছিস – আর আসব না ।’
‘ঠিক আছে বাবা – দেখব না ।’ হেসে ফেলে কেয়া । ‘তুই এত্তগুলো ভালো–’
‘মেহজাবিনকে কপি মারবি না – খবরদার । আমার অসহ্য লাগে কয়বার বলেছি ...’
‘সরি ...সরি...’
রিকশা এগিয়ে যায় ।

ড্রইং ল্যাবের অ্যাসাইনমেন্টের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে যায় সাকিব ।
সেভাবেই কাজ করে কেয়া ।
কেয়ার চোখ এড়িয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নেয় সাকিব । কেয়ার শরীর থেকে মাতাল করা একটা গন্ধ আসছে ।
সেই ক্লাস সেভেন থেকে ওদের বন্ধুত্ব – তবে কলেজে ফার্স্ট ইয়ারেই নিজের কাছে ধরা পড়ে যায় সাকিব ।
কেয়াকে টীজ করার অপরাধে ক্লাসমেটের নাকের গঠন পালটে দেওয়ার পর থেকেই উপলব্ধি করে কেয়াকে শুধু বন্ধু হিসেবে চায় না ও । কখন যেন একটা ভারী পাথরের মত ডুবে গেছে কেয়ার প্রেমে !
আরও তিনটি বছর পেরিয়ে গেছে । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দ্বিতীয় বর্ষে এসেও কেয়াকে বুঝতে দেয় নি ওর অনুভূতির কথা ।
নিজেকে কোনভাবেই কেয়ার যোগ্য ভাবতে পারে না সাকিব ।
এত্ত সুন্দর মেয়েটা ! অভিনয় আর গানে প্রথম শ্রেণীর শিল্পী – তারওপর অসাধারণ কবিতা লেখে ও - একসাথে এতগুণের অধিকারীণি কেয়াকে কোন মুখে ওর মত একটা সাধারণ ছেলে ওকে সারাজীবন পাশে থাকার প্রস্তাব দেয় ? এতদিনের বন্ধুত্বের পর ওকে ‘না’ করতে মেয়েটার নিশ্চয় অনেক খারাপ লাগবে । সেই কষ্টটা কেন বেঁচে থাকতে তাকে পেতে দেবে সাকিব ?
বন্ধুত্ব – হ্যাঁ – সেটা ঠিক আছে । বন্ধু হিসেবে থাকাটাই সাজে সাকিবের । যে কোন পরিস্থিতে পাশে থাকা বিশ্বস্ত কেউ – যে কোন ঝামেলায় নির্ভরযোগ্য একজোড়া কাঁধ – এটাই বা কম কিসে ?
টি-স্কেল সামলাতে গিয়ে হাঁসফাঁস খাচ্ছে কেয়া । এক হাতে ওটাকে স্থির করে দেয় সাকিব ।
কৃতজ্ঞতার একটা হাসি দেয় কেয়া । আবার ঝুঁকে পড়ে ড্রইং পেপারের ওপর । স্থির দৃষ্টিতে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে সাকিব । কেয়ার চুলের মিষ্টি গন্ধ সাকিবের দ্বিতীয় সত্তাকে প্রতিবাদী করে তোলে ।
ওর সুযোগটুকু ও কেন নেবে না ? কেয়ার প্রতি ওর অনুভূতির কথা কেন গোপন রাখতে হবে ওকে ? অন্তত ওকে বলার অধিকার কি নেই যে সাকিবের সমগ্র সত্ত্বা কতটা গভীরভাবে ভালোবাসে কেয়াকে ?
প্রথম সাবধানী অংশটুকু ওকে থামিয়ে দেয় । কেয়া কোনদিনই তার জীবনসংগী হিসেবে তার মত সাধারণ একটা ছেলেকে চায় নি নিশ্চয়ই !
যেই অংশটার দৃঢ়তার জন্যই তিনটি বছর ধরে বন্ধুত্বের অভিনয় করে যাচ্ছে ও কেয়ার সাথে ।
চোখ থেকে কামনার আগুন সরে গিয়ে স্থান নেয় শুধুই বন্ধুত্ব ।
‘সময় হলে বলা যাবে ওকে । আজকে না ।’ – দ্বিতীয় সত্তাকে শাসন করে সাকিব ।

দীর্ঘ বক্তৃতার পর থামেন আফরোজা বেগম ।
অসহায়ের মত মায়ের দিকে তাকায় কেয়া ।
‘মা ! আমি তোমাকে কয়বার বলেছি আমি এখন বিয়ে করব না ? তুমি তারপরও আমার জন্য ছেলে দেখ কোন যুক্তিতে ?’
‘পড়াশোনা তো বিয়ের পরও করতে পারবি, মা । ছেলেটার মধ্যে অপছন্দের কি কিছু ছিল ? তোর বাবার বন্ধুর ছেলে । তোকে এত করে ওদের পছন্দ -’
‘স্টপ ইট, মা । আমি একবার বলেছি – আমি এখন বিয়ে করছি না । তুমি তোমার ফাইলপত্র নিয়ে যাও তো !’
মা চলে গেলে বাথরুমের দরজা আটকায় কেয়া । এটা ওর কান্নাকাটি জোন ।
মুক্তমনে কাঁদতে পারে এখানে ও ।
মা বোঝে না বিয়েতে কেন ওর এত আপত্তি ! এই পৃথিবীতে স্বামীর জায়গাটা এরই মধ্যে কাওকে দিয়ে দিয়েছে কেয়া ।
সেই জায়গাটা আর কাওকে দেওয়া ওর পক্ষে সম্ভব না ।
সাকিবটা যে কবে বুঝবে !
আরও বেশি করে কান্না পায় কেয়ার !
ওর প্রতিটা কাজে কেয়া কেন সাকিবকে জড়ায় সেটা কেন ও বোঝে না ?
সাকিবকে ছাড়া কেয়ার পৃথিবী অন্ধকার সে ব্যাপারে সাকিবটার কোন ধারণাই নাই ।
কিন্তু ওকে যে ছেলেটা বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু কোনদিনও ভাবে নি !
যতবার ও সাকিবের চোখের দিকে তাকায় ততবারই শুধু বন্ধুত্ব প্রতিফলিত হতে দেখে কেয়া ।
মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে ও ।
হাতে মোবাইল ফোনটা তুলে নেয় ।
‘তোর কাছে থাকলে চারপাশটা নির্জন হয়ে যায় । আমার জগতে শুধুমাত্র তোকেই বারবার আবিষ্কার করি আমি । কেন জানিস ? তোকে জানটা দিয়ে ভালোবাসি আমি, বোকা ছেলে ! একটা বার কি ঠিকভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়েছিস?’
সাকিবকে ফোন দিয়ে কথাগুলো কি বলবে কেয়া ?
আলতো করে আবার নামিয়ে রাখে ফোনটা ।
থাকুক ।
‘সময় হলে বলা যাবে ওকে । আজকে না্‌,... হয়তো আরেকদিন।’ – নিজেকে বোঝায় মেয়েটা ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.