![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ মিনিটে তৃতীয় সিগারেট টা ধরালো শাহেদ। চোখ লাল, হাত কাঁপছে। প্রায় তিন রাত হয়ে গেছে ঘুমায় না সে। বাইরে থেকে হাল্কা বৃষ্টির ঝাপ্টা মুখে লাগছে তার।
"জানালার কাঁচ উঠিয়ে দে। বৃষ্টি বাড়ছে", বলল আরিফ।
তার চোখ সোজা রাস্তায়। গাড়ি চালানোর সময় সে কখনো অন্যদিকে তাকায় না। অনেক মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালায়। আশুলিয়া পার হয়ে গেছে তারা ইতিমধ্যে। গাড়ির স্টেরিও প্লেয়ার থেকে জ্যাক জনসন এর অদ্ভুত সুন্দর গলার গান ভেসে আসছে।
জানালার কাঁচ না উঠিয়েই জিজ্ঞেস করল শাহেদ, "আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?"
"জানিনা", উত্তর দিল আরিফ।
সে আসলেও জানেনা কোথায় যাচ্ছে তারা। নেক্সট স্টেপটা কি হয়া উচিৎ সেটাই ভাবছে।
"গাড়ি থামা, বমি করব", কাশতে কাশতে বলল শাহেদ।
কোন কথা না বলেই রাস্তার পাশে আরিফ গাড়ি সাইড করল। শাহেদ দোউড়ে বের হয়ে রাস্তার পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালো। সে বমি করছে না। শূন্য দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সামনে বিশাল ধানক্ষেত। দিগন্ত ছুঁয়ে গেছে সবুজ। আকাশ অনেক মেঘলা। অনেক দূরে দুই প্রান্তে সবুজের মাঝে দুটো বড় বড় গাছ। অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য! আরিফ শাহেদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
"আমি এখন কি করব রে আরিফ? আমারতো সব শেষ!"
আরিফও একটা সিগারেট ধরালো। টিপটিপ বৃষ্টিতে দুজনেই ভিজছে।
"সব শেষ হয়নি শাহেদ। আমরা আছি না? চল, গাড়িতে উঠি। ইউ নিড রেস্ট। ইউ হ্যাভ টু স্লিপ আ লিটল। নাহলে মারা যাবি।"
শাহেদ কোন উত্তর দিল না। সে নড়ছে না। শূন্য দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে।
"আমরা কেন একসাথে থাকতে পারলাম না আরিফ? সবই তো ঠিক ছিল? হঠাৎ কি হল?"
"আমরা জীবনে সবকিছু পাই না। মাঝে মাঝে যা চাই না সেটা হয়ে যায়। তুই অনেক ম্যাচিয়রড। তুই তো সবই জানিস।"
"সারাহ'র কি দোষ ছিল? তার কেন চলে যেতে হল?"
"আমাদের অনেকেরই মাঝে মাঝে সময়ের আগে চলে যেতে হয়। আমরা চাইলেও লাইফে সবকিছু ধরে রাখতে পারিনা।"
শাহেদ কোন কথা বলল না। এখনো তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।
"দূরের গাছ দুটো দেখছিস?"
"হু", উত্তর দিল শাহেদ।
"দৃশ্যটা অদ্ভুত সুন্দর না?"
"হু।"
"ক্যামেরা বের করবি? ছবি তুলবি?"
"না। লেন্স নষ্ট।"
"তাহলে মনে মনে তোল।"
"সেটাই করছি।"
"আচ্ছা শাহেদ বলতো, এই দৃশ্যটার সবচেয়ে সুন্দর জিনিস কোনটা?"
"ঐ গাছ দুটো। ওগুলো না থাকলে দৃশ্যটা এত সুন্দর হত না।"
"গাছ দুটো যদি পাশাপাশি থাকতো, তাহলে কেমন হতো?"
"তাহলেও তেমন ইন্টারেস্টিং হত না। দুটো গাছ দূরে দূরে না থাকলে ভাল লাগতো না।"
"রাইট! আমারো তাই ধারনা। গাছ দুটোই কিন্তু বেশ নিঃসঙ্গ।"
"হু, নিঃসঙ্গতার কারনেই তারা সুন্দর। লুক অ্যাট দ্যা বিগার পিকচার।" বলল শাহেদ
"ঠিক! মাঝে মাঝে বেশ সুন্দর কিছু হবার জন্য কিছু স্যাক্রিফাইস লাগে। যেমন এই গাছ দুটোর স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছে। তারা সারাজীবন একা। তাদের আশেপাশে কেউ নেই। দুজনই দুজনকে দেখছে জন্মের পর থেকে, কিন্তু এক হতে পারছে না। পারবেও না। কিন্তু আমরা তাদের এই একাকিত্ত্বের সৌন্দর্যটাই উপভোগ করব।"
"হু"... তিন দিন পড় অবশেষে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে শুরু করল শাহেদের। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর নিঃশব্দে কাঁদছে। আরিফ কিছুই বলল না। সেও চায় শাহেদ একটু কাঁদুক। তাহলে হয়ত একটু বেটার ফিল করবে। তিন দিন হয়ে গেছে সারাহ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। ক্যান্সার! শাহেদ টু শব্দটিও করেনি। তার কাঁদা উচিৎ। কিছুক্ষন পড় শাহেদ এর কান্না থেমে গেল। সে আরেকটা সিগারেট ধরালো। আরিফও ধরাল তার সাথে সাথে। দুজনই মূর্তির মত দাড়িয়ে অনেক দূরের গাছ দুটো কে দেখছে।
হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভাঙল শাহেদ, "আমিতো তাও সারাহ কে সাত বছর পেয়েছি। বেচারা গাছ দুটো একে অপরকে একদিনের জন্যেও পায় নি। তাদের জন্য আমার মায়াই লাগছে। দুজন দুজন কে দেখছে। কিন্তু কাছে যেতে পারছে না।"
"আমিও সেটাই ভাবছিলাম।"
বৃষ্টি বেড়ে গেছে। তারা কেউ নড়ল না। বৃষ্টি তে সিগারেট খেতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। দুজনেরই জামাকাপড় ভিজে গেছে, কিন্তু তারা নড়ছে না। স্রষঠার অভুতপূর্ব এক সৃষ্টি দেখছে তারা। এই সৌন্দর্য ছেড়ে এখন কোথাও যাবার প্রশ্নই ওঠে না। কে যেন একবার বলেছিল তাদের, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সবুজ দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকলে নাকি মন ভাল হয়ে যায়। মনে করতে পারছেনা আরিফ।
"বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সবুজ দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকলে মন ভাল হয়ে যায়" হঠাৎ বলে উঠল শাহেদ।
কথাটা শুনেই চমকে উঠল আরিফ। তার মনে পরে গেল। কথাটি সারাহ'র। দুজনেই হঠাৎ চোখ বুলানো শুরু করল পুরনো স্মৃতির পাতায়। কেউ নড়ছে না। শাহেদ হঠাৎ গুনগুন করে গান ধরল। জ্যাক জনসনের গান...
I want to turn the whole thing upside down
I'll find the things they say just can't be found
I'll share this love I find with everyone
We'll sing and dance to Mother Nature's songs
This world keeps spinning and there's no time to waste
Well it all keeps spinning spinning round and round.
©somewhere in net ltd.