![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজস্ব বিপ্লব টা আবার কি। এই প্রশ্ন তা প্রায়সই শুনতে হয় আমাকে। নিজস্ব বিপ্লবের ধারণাটা প্রায় পুরোটাই ভাববাদের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও এর মাঝে মৌলিক বস্তুবাদী উপাদান গুলো বিদ্যমান। একজন মানুষের জীবনে যা কিছু করে তা তার ১৪ থেকে ১৬ বছরের জীবনাচারনের উপর নির্ভর করে। কারণ এ সময় মানুষ শেখে। এর পর বাকী জীবন সেই শিক্ষার আলোকে আর অভিজ্ঞতার আলোকে কাজ করে। নিজস্ব বিপ্লবের ধারণাটা এখান থেকেই আসে।
প্রত্যেক টা মানুষের চেহারা যেমন মোটামুটি আলাদা, তার আর্থ সামাজিক পরিমন্ডল ও আলাদা। সে জন্য হিউম্যান সাইকোলজি ও আলাদা হয়ে থাকে ভিন্ন ভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায়। যেহেতু প্রাচ্যীয় ল্যতিন ও আফ্রিকান সমাজ ব্যবস্থা জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে সব সময় দায় বদ্ধ থাকে না। তেমনি সামাজিক ধর্ম ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল ও সে ভাবে প্রস্তুত থাকে না নতুন কে গ্রহণ করার জন্য।
একজন মানুষ যখন জন্মায়, সে পরিবার যা কিনা সমাজের মৌলিক একক, তার থেকে পায় তার একটি নাম, একটি পারিবারিক উপাধি এবং অপ্রাপ্ত বয়স পর্যন্ত মৌলিক অধিকার গুলোর নিশ্চয়তা। এ সময় তার শিক্ষা , সমাজিক আচার ব্যবহার যা সে দেখে তার প্রভাব থেকে যায় তার বাকী জীবনে। সেটা ভালো বা মন্দ দুটোই হতে পারে।
একজন বিপ্লবীর জীবনে নিজস্ব বিপ্লবের অসাধারন গুরুত্ব আছে। আজ আমরা যাদের স্তুতি গাই তাদের প্রত্যেকের জীবনে বিপ্লব এসেছে। যে কার্ল মার্ক্সের থিওরি কপচাই আমরা, সব সময়, সে কার্ল মার্ক্সের জীবনালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো সেই বিপ্লবের বহুবিধ ছায়া, পারিবারিক ভাবে ধর্মান্তর, তার যুদ্ধে অংশ গ্রহন, জার্মানি ফ্রান্স থেকে তার বহিস্কার অনেক কিছুই নির্ভর করেছে তাকে কার্ল মার্ক্স বানাতে। হয়তো আমরা সেই জিনিষ গুলোকে এড়িয়ে যাই। একজন কুখ্যাত এ্যডলফ হিটলার কিন্তু এক দিন এই তৈরী হয় নি। তার অস্টড়িয়ান জীবন, সামরিক জীবন এমন কি তার আঁকিয়ে হবার ব্যর্থ স্বপ্ন এবং প্রেমের ব্যর্থতা তাকে একজন হিটলার বানিয়েছে।
আমি যার উপরে সামান্য পড়াশুনো করেছি তার জীবন দিয়েই দেখি নিজস্ব বিপ্লব কি করে ঘটে।
কমান্ডার চে গেবারা, মহান কিউবান বিপ্লবের কবি, একজন রাজনৈতিক তাত্ত্বিক এবং একজন নন- কনভেনশনাল ওয়ারফেয়ার স্পেশালিস্ট। তার জন্ম ১৯২৬ এর ১৪ জুন। তার রক্তে এক ই সাথে হিস্পানিক এবং ন্যটিভ রক্ত বিদ্যমান ছিলো। এর্নেস্তো গেবারা এবং সেলিয়া ডি লা সারানার স্বন্তান এই চে গেবারা।
ছোট বেলাতেই হাপানির দ্বারা আক্রান্ত হন, যার ভুক্তভোগী তাকে শেষ দিন পর্যন্ত হতে হয়েছিলো। তাই ছোট বেলা থেকে বেঁচে থাকার তাগিদে তার মাঝে আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার ঘটে। একজন ভালো ফুটবলার এবং একজন প্রথম শ্রেনির ভালো ছাত্র হিসাবে নিজেকে উপ্সথাপন করেন মানুষের সামনে। পারিবারিক বাম বলয় থেকে তিনি মৌলিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি যে একজন বিপ্লবী হবেন তার প্রমাণ তার আগের লেখা গুলোতে খুব একটা পাওয়া যায় না। কিন্তু মা বাবার বিচ্ছেদের পর তিনি যে কবিতাটি লিখেন
তাতে বুঝা যায় তাঁর পথ কোন দিকে যাচ্ছে,
“যদি মৃত্যু আসে, তবে ডুবে মরা নয়,
যেন মৃত্যু আসে গুলির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে,
বেয়নেটের আঘাতে, ছিন্ন ভিন্ন হয়ে।”
২১ বছর বয়সের এই কবিতাটিই বুঝিয়ে দিচ্ছে তার নিয়তি। এর পর আসে সেই নিজস্ব বিপ্লবের চূড়ান্ত পর্যায়। এক বন্ধুর সাথে বেরিয়ে পড়ের ল্যাতিন আমেরিকা দেখতে। একটি ২২০ সিসির মোটর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি তার ম্যডিকেল পড়া শুনার শেষে। এখানে বলে রাখা ভালো, মেডিকেল ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে সবচেয়ে ভালো রেজাল্টের রেকর্ডটি এখনো চে গেবারার ই দখলে আছে। সে যাই হোক। এই ভ্রমনে তিনি দেখেন দারিদ্র শোষণ আর ক্ষয়ে যাওয়া ইনকা সভ্যতার শেষ আশ্রয় স্থল মাচু পিচু। টিটিকাকা হ্রদের ধারে কয়লা খনিতে শ্রমিকদের দূর্দশা দেখেন। এর পর তিনি তার ডায়েরীতে লিখেন,
“এই ভ্রমণে আমি দেখেছি দারিদ্র ক্ষুধা আর পুষ্টিহীন শিশুদের, যাদের পুষ্টি হীনতা দূর করার কোন উপায় নেই।”
এর পর চে উঠেন বলিভিয়ার এক কুষ্ট পূনর্বাসন কেন্দ্রে। সেখানকার মানুষ আজ ও বলে, দুজন মানুষ এসেছিলেন আমাদের মাঝে, যারা দস্তানা ছাড়া আমাদের সাথে হাত মেলান, আমাদের সাথে ফুটবল খেলেন। এর পর চে আর কখনো ফিরে যান নি আর্জেন্টিনায়। সেখানেই সম্পন্ন হয় তার নিজস্ব বিপ্লব, তাঁর ব্যক্তিগত বিপ্লব। সেখান থেকেই নতুন জীবনের সূচনায় মেক্সিকোতে। সেখানে বিয়ে করেন হিলিয়া ডি ক্রুজ কে। এর পর আসে মহান কিউবান বিপ্লব আর বাকিটা ইতিহাস। চে ফিরে এসেছিলেন তার স্বপ্নের বলিভিয়ায়। কিন্তু সেখানেই ঘাতকের বুলেটে জীবনাবসান হয় এই মহান বিপ্লবীর।
তেমনি লেলিনের বিপ্লব শুরু হয় তার ভাই এর মৃত্যুর পর। এভাবেই প্র্যতেক মানুষের জীবনে আসে নিজস্ব বিপ্লব। যা তাঁদের নিয়ে যায় বিপ্লবের চূড়ান্ত শিখরে। এখনো যারা নিজস্ব বিপ্লবের ধারণাটা অবিশ্বাস করেন তাদের বলতে চাই আসুন যুক্তিতে আসুন।
১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:২৮
ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: সহজ নয়, তাই বিপ্লবীরা ও তো আর গাছে ধরে না...
২| ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:২৮
আদার ব্যাপারি বলেছেন: একজন মানুষের জীবনে যা কিছু করে তা তার ১৪ থেকে ১৬ বছরের জীবনাচারনের উপর নির্ভর করে।
কথাটা মনে হয় সত্যি।
১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৬
ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: সাইকো লজিস্ট রা তো তাই বলেন
৩| ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৪২
আহমেদ জী এস বলেছেন: ফ্রাঙ্কেস্টাইন,
চেতনা যে নিজের ভেতর থেকেই আসে এটা নতুন কোনও কথা নয় । আর চেতনা না হলে বিপ্লবের ধারনা আসবে কোত্থেকে ?
তেমন একটি বীর্য্যবান বীজ থেকে যেমন ফলবান একটি গাছের জন্ম হয় , তেমনি একটি সুস্থ্য চিন্তাশীল মন থেকেই কেবল সমাজের কল্যানের ধারনার পথগুলো শেকড় ছড়াতে থাকে ।
আর তেমন একটি মন গড়ে ওঠে তার পারিপার্শ্বিকতা, তার চিন্তার স্বচ্ছতা, আবেগপ্রবনতা, নিজেকে ভালোবাসা, তার লব্ধ জ্ঞান থেকে সত্য আহরনের ধীমানতা ইত্যাদি হাযারো অনুঘটকগুলোর উপর ভিত্তি করে ।
ঐ যে বললেন শেখার কথা , মানুষকে তা শিখতে হবে । শেখারও তো রকমফের আছে । একই ঘটনা থেকে আমি যা শিখি আর একজন হয়তো তার বিপরীতটাই শেখেন । এমোনটা হয়না ? এই "শেখা" শব্দটির সঙ্গা নির্দ্ধারন করবেন কে ?
আসলটা হলো , নিজেকে জানা । বর্তমান যুগ যন্ত্রনায় বা সমাজ ব্যবস্থাতেই বলুন ; ব্যক্তিগত স্বার্থের চিন্তাটি এতোটাই গেড়ে বসেছে ব্যক্তি জীবনে যে, সুন্দর চেতনা সেখানে দমবন্ধ হয়ে আসবেই । এ গেরো থেকে বেরুনো মোটেও সহজ নয়.......
তাই মানুষকে যুক্তিতে আনা সহজ কাজ নয় । স্বার্থের সংঘাত দেখলেই "যুক্তি" ফুঁৎকারে উধাও ।
১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:২২
ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: এটা হলো আমার নিজস্ব চিন্তা ধারার বহিঃ প্রকাশ। হ্যা চিন্তার সুত্রধর হলো পরিবার। একজন মানুষ কি পড়বে তা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় পরিবার নির্ধারণ করে দেয়।
আর ব্যক্তি স্বার্থ পুজির বিকাশের সাথেই এসেছে। এটা টিকে থাকবেই। আমরা কেউ ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধে নই। এটার জন্য চাই শিক্ষা। আর চাই নিজস্ব বিপ্লব। আমাদের স্কুল গুলো কি পড়ায় তার উপর নির্ভর করবে আমাদের স্বন্তানেরা কোন দিকে যাবে। পারিবারিক পরিমন্ডলে পাঠ্যাবাস না বাড়ালে মুক্তি অসম্ভব। যুক্তি তো পরের হিসাব।
৪| ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৪৩
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
এই পৃথিবীতে চে একজনই। তাকে অনুসরন বা অনুকরন করার চেয়ে আদর্শ গুলো নিয়ে জীবন ধারন করতে পারাটাই সার্থকতা।
২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:১২
ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: এখানে চে এর অনুকরণের কথা বলা হয় নি স্যার। তার ব্যক্তি জীবনের বিপ্লবের ধারাটার কথা বলা হচ্ছে। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব বিপ্লবের থিওরিটার ইলাবোরেট ভার্শন এটা
৫| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:৩৪
আহমেদ জী এস বলেছেন: ফ্রাঙ্কেস্টাইন,
আপনার প্রতিউত্তরের জন্যে ধন্যবাদ ।
কিন্তু কথা হলো, আপনার বক্তব্যের মূল উপাদান ছিলো -
"......এভাবেই প্র্যতেক মানুষের জীবনে আসে নিজস্ব বিপ্লব। যা তাঁদের নিয়ে যায় বিপ্লবের চূড়ান্ত শিখরে। এখনো যারা নিজস্ব বিপ্লবের ধারণাটা অবিশ্বাস করেন তাদের বলতে চাই আসুন যুক্তিতে আসুন। "
অথচ আমাকে উত্তর দিয়েছেন এই বলে- "...যুক্তি তো পরের হিসাব। "
সেল্ফ কন্ট্রাডিকশান হয়ে গেলোনা ?
মানুষ যখোন সৎ যুক্তি থেকে সরে গেছে বলেই এখোন সামাজিক, রাজনৈতিক , বৈশ্বিক আঙ্গিকে বর্তমানের অস্থির অবস্থাটাই বিরাজ করছে । আমেরিকা অযৌক্তিক ভাবে একটার পর একটা দেশে হামলা চালাচ্ছে । আমাদের দেশে সব কটি রাজনৈতিক দল কোন যুক্তির ধার ধারছে ? অয়ৌক্তিক ভাবেই এবং পথেই আমাদের অর্থনীতি চলছে । না কি চলছে না ?
অবশ্য "সু-যুক্তি" কি তা বোঝার মতো জ্ঞানও থাকতে হবে ! মানুষ এটা বুঝবেনা, কারন বুঝলে এই সমাজের প্রতিযোগিতায় তার টিকে থাকা দায় হবে । তাই সে যুক্তির ধার ধারবেনা নিজের স্বার্থে ।
তাই আপনার আকাঙ্খিত নিজস্ব বিপ্লবের ধারনাটিই মানুষ বুঝতেই চাইবেনা ।
আর আপনি নিজে নিজেই তো জানেন , এটি একটি কঠিন কাজ ।
২০ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:১০
ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: এই লিখাটা তাদের জন্য নয়, যারা যুক্তিতে আসতে চান না, বা বিপ্লবে বিশ্বাস করেন না। আমার টার্গেট অডিয়েন্স অন্যরা। আর আমি জানি আমি নেতা হিসেবে জঘন্য, সুতরাং একজন সত্যিকারের নেতা যদি এটা পড়ে তা হলে কিছু হলেও হতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৫৫
তোমোদাচি বলেছেন: নিজস্ব বিপ্লব এর চমৎকার উপস্থাপন করেছেন।
সমাজে বিপ্লব আনতে হলে আসলেই নিজের ভিতর বিপ্লব ঘটাতে হবে প্রথমে।
কিন্তু হাজারো সামাজিক বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে চিন্তা ধারার বাস্তবায়ন করতে নিজস্ব বিপ্লব ঘটানো এতটা সহজ নয়।