নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফিরিয়া আসিলাম

ফ্রাঙ্কেস্টাইন

কে জানে কী আছে কপালে

ফ্রাঙ্কেস্টাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং নিকিতার একান্ত কিছু কথা।

২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৪

নামঃ নিকিতার একান্ত কিছু কথা।

মূলঃ ফিওদার রিফাতিন হাসানিস্কভ

অনুবাদঃ রিফাত চে হাসান।



২৫ ডিসেম্বার ১৯৯১,



নিকিতা দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজের উপর। সামনে বিরাট কুয়াশার চাদর। সে দিকেই এগিয়ে চলছে জাহাজ। কিরভ ৩০১ পেট্রোল। নিকিতা ভাবছে, একটু পরে শেষ বাঁশি বাজবে, নেমে যাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতাকা। নিকিতা জানে, আর সামান্য পরেই তারা প্রবেশ করবে স্বাধীন ইউক্রেনে। কাগজপত্রে ইউক্রেন এখনো স্বাধীন না হলেও, কাল থেকেই তারা স্বাধীন হয়ে যাবে। নতুন পতাকা উঠবে, কিয়েভের টাউন হলের মাথায়। নীপারের দুই পারে পোল্যান্ড আর ইউক্রেন আর ভাই ভাই দেশ থাকবে না। সব কিছু বদলে যাবে। কারণ কিছুক্ষন আগেই জাহাজের রেডিয়োতে শোনানো হয়েছে সেই কথা গুলো, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেছে। আজ থেকে লেলিন গোর্কীর সোভিয়েত রাশিয়া নেই। আজ প্রত্যেক টা দেশ স্বতন্ত্র।

নিকিতা জানে, কদিন পর থেকেই, তার ছোট্ট শহর কিয়েভে আসতে হবে আলাদা পাসপোর্ট নিয়ে। তার প্রেমিকা ভনিয়া এই কিয়েভের ই মেয়ে। কাল থেকে সেই ভনিয়াও হয়ে যাবে পরদেশী। লাল পতাকার অসাড়তা অনেক আগেই স্বীকার করে নিয়েছিলো নিকিতা, তবে তার শৈশবের স্বদেশ এভাবে আলাদা হয়ে যাবে ভাবতেও পারে নি সে। একটা মুহুর্তে সব শেষ। স্নায়ু যুদ্ধ শেষ, সোভিয়েত ইউনিয়ন শেষ, ১৯২১ এর বিপ্লব, যৌথ খামার আর এই কিরভ ৩০১ ও শেষ।



সামান্য পর নিকিতা খেয়াল করলো তার পাশে এশে দাড়িয়েছেন এ্যডমিরাল উশকাভ। বদমেজাজী এবং অহংকারী এই লোক টা সব সময় তার ইউনিফর্মের ব্যপারে সচেতন, এবং তার ব্যচ ও র্যং ক ব্যাচের ব্যপারে আরো বেশি সচেতন। তাঁর মাথায় ক্যাপ্টেনের ক্যাপ টা নেই, হাতে একটা লাটভিয়ান সিগার, জ্যাকেটের বোতাম টাও খোলা, ওভার কোট টা ও চেম্বারে ফেলে এসেছেন। নিকিতা তার দিকে চেইয়ে রইলো, ওখানে এ্যডমিরাল নয় একটা দেব শিশু যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। আগের কঠিন মানুষ টা সেখানে নেই, সেখানে দাঁড়িয়ে এক বিদ্ধস্ত জাহাজী।



নিকিতা জানে, কাল থেকে রাশিয়ার ও নতুন পতাকা হবে, তার মায়ের বাড়ী লাটভিয়া আর বাবার বাড়ি স্ট্যালিনগ্রেড সাজবে নতুন রূপে। এক হিসাবে আজ নিকিতা তার দেশ হারাচ্ছে। হারাচ্ছে তার সমসায়মিক সময় কে। রুবলের দাম যে হারে পড়েছে, কমিউনিস্ট সরকারের হাতে কিছু করার ছিলো না, সোভিয়েত ভেঙ্গে যেতোই, তবে কষ্ট হলো একটা স্বপ্নের সমাধি ঘটলো। মিখাইল গর্ভাচেভ ঘোষনা দিয়েছেন পদত্যাগের। সমরিক প্রধান দের প্রত্যাহার করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে ভেঙ্গে দেয়া হবে কে জি বি।



নিকিতা জানে, তার চাকরিটা যাবে। খুজে নিতে হবে নতুন কাজ, একজন জাহাজীর আদর্শ কাজ। ১৯১৭ এর বিপ্লবে নিকিতার দাদা ভ্লাদিমির মিখাইলোভিচ ছিলেন লিওন ট্রটস্কির ঘনিষ্ঠ। ১৯২২ এ তিনি ক্রিমিয়ায় একটা সেনা দলের রাজনৈতিক কমিশার হন। লেনিলের মৃত্যুর পর স্ট্রটস্কাইট অপবাদ দিয়ে পাঠানো হয় সাইবেরিয়া। ফিরে আসেন ১৯৩৭ এ ভাঙ্গা শরীর নিয়ে। এর পর এক উঠে দাড়ান নি। নিকিতার বাবা ভ্লাদিমির চমস্কি, একজন ঘোড়া সাওয়ার সৈনিক ছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে একটা হাত আর চোখ হারান ১৯৪৪ এ মাত্র ১৭ বছর বয়সে। এর পর আজ পর্যন্ত তার ছেড়া কোর্তায় শোভা পায় দুটো লাল পট্টি, ওয়ার্ডার অফ দ্যা রেড ব্যনার। নিকিতা জানে আজ ঐ ব্যনারের কোন মূল্য নেই। আজ সব ই অর্থহীন। এই রাষ্ট্রের প্রতি ভালোবাসা না থাকলেও , দেশ তো মায়ের ই মতো...।



নিকিতা ভাবছে! আর জাহাজ চলছে নতুন দেশের সন্ধানে...। নিকিতার চোখ থেকে ঝড়ে যাওয়া দু ফোটা নোনা জলের কি কোন দাম আছে সমুদ্রের কাছে...?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০৫

মামুন রশিদ বলেছেন: ফিওদার রিফাতিন হাসানিস্কভ !!

বাহ, চমৎকার অনুবাদ :D :D

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫

ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: হু ভাই, ধন্যবাদ। আমি আপনার শুবেচ্ছা ও শুভাশীষ মূল লেখকের কাছে পৌছে দিচ্ছি :D :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.