নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফিরিয়া আসিলাম

ফ্রাঙ্কেস্টাইন

কে জানে কী আছে কপালে

ফ্রাঙ্কেস্টাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ ভাবেও ফিরে আসা যায়...

১২ ই জুন, ২০২১ ভোর ৪:৪৫

ব্লগে লিখিছিলাম শেষ বার জুলাই মাসের ৩ তারিখ ২০২০ সালে। এর পর অনেক জল গড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে ব্লগে ফিরে আসবো তা আর ভাবি নি। কারণ ২০১৭ এর পর থেকে প্রতিদিন ই কথা দিচ্ছি ফিরে আসবো। কিন্তু কেউ কথা রাখেনির মতো আমিও আমার কথা রাখিনি।

"এই পালটানো সময়ে তারা ফিরবে কি ফিরবে না জানা নেই"

প্রেক্ষাপট ২০১৩ সাল। একটি রাজনৈতিক মাস্টার স্ট্রোক কিংবা একটি বিশাল রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। যাঁদের ফিল্ড পলিটিক্স সম্পর্কে বিন্দু মাত্র আইডিয়া নেই সেই সকল মানুষেরা নেমে এলেন একটা দাবিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য "রাজাকারের ফাঁসি চাই"। এই দাবি যেমন আমাদের প্রাণের দাবি তেমনি প্রশ্ন আসে সরকারী দলের অবস্থান নিয়ে। কারণ বিচার বিভাগ কাগজে স্বাধীন হলেও নির্বাহী বিভাগের প্রভাব যে বিচার বিভাবের উপর খুব সূক্ষ্ম ভাবে এবং সঠিক জায়গায় আঘাত করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আধা সামন্ত্রতান্ত্রিক কিংবা এক ছদ্ম একনায়ক নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রে এমন টাই হয়। সুতরাং গণ প্রতিরোধ থেকে নিজের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সরকার যখন রায় পাল্টানোর জন্য আপিল বিভাগে যায় এবং এ্যামেন্ডেন্টের মাধ্যমে আইন পরিবর্তন করে তখনই প্রশ্ন জাগে। সরকার কি চেয়েছিলো এই আন্দোলন হোক যাতে পরের বছর সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে আবার মাখনের মতো কোমল ভাবে ক্ষমতায় আসা যায়? শুধুমাত্র রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে এবং ফিল্ডের বাস্তবতা অনুধাবন করতে না পারার জন্যই আমাদের ব্লগারেরা এমন কি আমিও মাটি কামড়ে পরে রইলাম রাজপথে। ফলাফল, কিছু মানুষের রাজনৈরিক ফয়দা লোটার বলি হলো ব্লগারেরা। কিছু মানুষের জীবনে খুলে গেলো ইউরোপের অবারিত দ্বার। এর পরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা। একের পর এক ব্লগার খুন হলেন। কেউ গেলেন জেলে। আর সাধারণ শিক্ষাহীন মানুষের সামনে ব্লগাররা প্রতিয়মান হলেন ধর্ম বিদ্বেষী মানুষ হিসেবে। অনেকটা মধ্যযুগের উইচ হান্টিং এর মতো অবস্থা। সুতরাং সেই পালটানো সময়ে ব্লগাররা ফিরবে কি ফিরবে না জানা নেই। আসলেই আমাদের কাছে কোন জানা পথ ছিলো না।



"কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও। জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন, চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন"

এর পর সময়টা ২০১৫ থেকে ২০২১ এই দীর্ঘ সময়ে একের পর এক ঘটেছে আমাদের নৈতিক স্খলন। যে জায়গাটি ছিলো আমাদের প্রাণের সেখানে আশ্রয় নিলো বেনিয়ারা। বইমেলা এমন একটা জায়গা ছিলো যেখানে আমরা যেতাম একটু অক্সিজেন গ্রহণের জন্য। সাহিত্য চর্চা আমাদের দেশে কখনো উচ্চমার্গীয় মানের হয়নি। এটা মেনে নিয়েও নতুন বন্ধু ব্লগারদের বই এ খুজে নিতাম একটা পরিবর্তনের চেষ্টা। কিন্তু সেই পালটানো সময়ের প্রভাবে ব্লগ যেহেতু পুরোপুরি ব্যাকফুটে চলে গেল সেই সাথে আত্মপরিচয় ভুলে ব্লগাররা চলে এলেন ফেসবুকে। এখানে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়াটা খুব সহজ। কেউ যদি বলে দেয় "কিছু হীনতায় ভুগছি" সেই সময়ের ক্রেজ সময়ের পথ প্রদর্শক। কারণ টা কি জানেন? ব্লগে সুন্দরী নারীদের ক্লিভেজ আর সাহিত্য বা এই চর্চাটা এক সাথে যায় না। এখানে চর্চাটা একেবারে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। আপনার রাজনৈতিক মতাদর্শ লুকোতে হলে এখানে আপনাকে জানতে হবে শব্দের মারপেচ। লেখায় থাকতে হবে মুন্সিয়ানা। কিন্তু ফেসবুকে সে সবের বালাই নেই। ব্লগে হিরো আলমরা আসে না, এখানে সেফুদাদের জায়গাটাও বেশ কম। কারণ হলো; আপনি যেই হোন না কেন, একটা ব্লগ প্ল্যাটফরমে লিখতে গেলে নূন্যতম কিছুটা রুচিবোধ থাকতে হয়। যিনি পড়তে আসছেন সম্ভবত তিনি আমার বাড়ির সামনে ফুচকা বেঁচেন না। এখানে আমি কোন ভাবেই নিন্মবিত্তদের অপমান করছি না। বরং ক্লাস কনফ্লিক্টটাকেই আবার দেখিয়ে দিচ্ছি। হ্যাঁ ব্লগার হতে গেলে বা এ ধরণের প্ল্যাটফরমে কিছু লিখতে গেলে আপনাকে মননে অন্তত কিছুটা হলেও অভিজাত হতে হবে। যারা ব্লগে গালিগালাজ করেন তাঁদের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্য। কারণ এখানে আপনি মিলিয়ন মিলিয়ন লাইক শেয়ার আশা করতে পারেন না। আপনার পাঠক সীমিত আপনার লেখার জায়গাতাও সীমিত। তাই লিখতে গেলে একটু মান সম্মতই লিখতে হবে। আর আজকের এই সস্তা জনপ্রিয়তার অত্যাচারে সাহিত্যের জায়গা টা দখল করে নিচ্ছে ইংরেজী শিক্ষার বই, ফ্রি ল্যান্সিং শিক্ষার বই, মোটিভেশনার স্পিকারের ফেসবুক স্ট্যাটাস সমগ্র এবং সর্বোপরি কিছু সস্তা দরের লেখকের হুমায়নীয় কপি এবং পেস্ট। তাই বলছি হে ব্লগার, হে পুরোনো বন্ধু "কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও। জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন, চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন"

"এবার ফিরাও মোরে"

এই পরিস্থিতি চলছে, এর বিস্তৃতি আরো বাড়বে। কিন্তু এর জন্য চাই সম্মিলিত প্রতিবাদ প্রতিরোধ। আর প্রতিরোধের জন্য দরকার প্রচুর আন্দোলন। অবশ্যই রাজপথে নয়। কারণ আমরা রাজপথের সৈনিক নই। ঐ মাঠের পাকা খেলোয়াড়ের সাথে লড়তে গেলে যে বাহুবল আমাদের দরকার তার শিকিভাগ ও আমাদের নেই। আমাদের হাতে যা আছে তা হলো কলম কিবোর্ড। ২০০৯ সালে যে ব্লগারেরা কিবোর্ডের যুদ্ধে প্রশ্ন করেছিলো বিডিআর বিদ্রোহের নেপথ্যের গল্প জানার জন্য, তারা কি মরে গেছেন? তারা কি প্রশ্ন তুলতে পারেন না এই গণতন্ত্রের হত্যার বিরুদ্ধে? এই সাহিত্যের নামে চলা ফটকাবাজির বিরুদ্ধে! এই কর্পোরেট দুনিয়ার সবকিছু শুষে নেবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে?

আমি জানি না। আমার জানা নেই। সত্যিই আমার জানা নেই। কিন্তু এটা জানি আমাদের ব্লগ নামের জংধরা অস্ত্রাগারে এখনো দুই একটি শান দেয়া তীর রয়েছে। আমরা এখনো আবার লিখতে পারি। সাহিত্য ও রাজনীতি বৃত্তিক সাহিত্যের হাত ধরে প্রতিবাদ করতে পারি চলমান পরিস্থিতির। বলতে পারি হে মহাবিশ্ব 'এবার ফিরাও মোরে' এই ধ্বংসের দ্বার প্রান্ত থেকে। ভবিষ্যত কি হবে জানি না। কে পড়বেন জানি না। তবে আবার লিখতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে বেনিয়াদের বিরুদ্ধে।

আসুন আবার ফিরিয়ে আনি ব্লগ আন্দোলন। আওয়াজ তুলি। ছোট মাছের ঝাঁক আওয়াজ তুলুক। আবার ঝড় আসুক। গণতন্ত্র, সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা হোক

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০২১ ভোর ৬:১৯

কামাল১৮ বলেছেন: আন্দোলনটি ছিল জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন একটি আন্দোলন এবং জনগনের কোন স্বার্থ এখানে ছিল না যার জন্য জনগনের অংশ গ্রহন ছিল না।দাবি দাওয়া ভিত্তিক আন্দোলন ছিল।
ব্লগাররা মারা পরেছে,তারা শত্রুকে ছোট করে দেখেছে,কৌশলে ভুল ছিল।
ঐ সময়কার ব্লগাররাই বর্তমানে লাইভে এসে ওর থেকে হাজার গুন বেশি বলছে।বাংলাদেশে থেকেও এই সকল লাইভে এসে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সত্যের পক্ষে বলছে।যাই হউক ভুল থেকেই মানুষ শিখে।

১২ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:২৬

ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: জনবিচ্ছিন্ন আন্দোলন এটা মানতে পারছি না। তবে হ্যা ফিল্ড পলিটিক্স এর অভিজ্ঞতা না থাকায় আন্দোলনটাকে জনগণের আন্দোলন না বলে ব্লগারদের আন্দোলন বানিয়ে ফেলা হয়েছিলো। টিক মার্ক করা হয়েছিলো সমাজের একটা বুদ্ধিজীবী শ্রেনীকে। যার ফলাফল হলো আজকের এই অবস্থা। অর্থাৎ আমাদের পাঞ্জাবি ওয়ালারা জনগণ থেকেই আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। নিজেদের হাতেই কেটে দিয়েছিলেন আন্দোলনের লাইফ লাইন।

আর শত্রুকে ছোট করে দেখা নয়। ব্যাপার টা হলো শত্রু চিনতে ভুল করা। যে কোন মতাদর্শের জন্য উগ্র আচরণ ই মৌলবাদ। এক হিসাবে নক্সালাইট রাও মৌলবাদী। হুমায়ুন আজাদ ও মৌলবাদী। তথাকথিত মুক্ত মনারাও মৌলবাদী। আমাদের লড়াই ছিলো ধর্মীয় মৌলবাদ ও মেরুকরণের বিরুদ্ধে। সেই যুদ্ধে আপাত দৃষ্টিতে আমরা পরাজিত। তবে খেলা এখানেই শেষ নয়। সামনে এই চেনা শত্রুদের বিরুদ্ধে আরো যুদ্ধ করতে হবে। আরেক ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হবে গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে।

২| ১২ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:২৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: ফ্রাঙ্কেস্টাইন,





একবছর বাদে ফিরলেন। প্রথমেই ফিরে আসার জন্যে ধন্যবাদএবং স্বাগতম।
তবে ব্লগের জন্যে "ফ্রাঙ্কেস্টাইন" না হয়ে "ফ্রাঙ্কেস্টাইন" হোন যে নৈতিক স্খলনের কথা বলেছেন তার বিরূদ্ধে।

লেখাটি সুন্দর এবং অনুভব করার মতো। আপনার কামনা " এবার ফিরাও মোরে" সত্যিই যেন আমাদের ফেরাতে পারে আবার............

১২ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:১৭

ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: ফেরার জন্যই এসেছি। ফেরা দরকার

৩| ১২ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:২৪

অপু তানভীর বলেছেন: ফিরে এসেছেন দেখে ভাল লাগলো ।
থাকুন এখানে লিখুন....

১২ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৫

ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: আরে অফু ভাই যে

৪| ১২ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:১১

শেরজা তপন বলেছেন: আমারা এভাবেই সবার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকি...
আবার জমবে মেলা- ওয়েলকাম ব্যাক

১৩ ই জুন, ২০২১ রাত ১:০৭

ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: মেলা না জমোলেও জমাতে হবে, নিজেদের সভ্যতার খাতিরে

৫| ১২ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:৪১

খায়রুল আহসান বলেছেন: পুনঃপ্রত্যাবর্তনে সুস্বাগতম!

"ছোট মাছের ঝাঁক আওয়াজ তুলুক" - আমরা আওয়াজ তুলতে ভুলে গেছি, অথবা ভয় পাই!

১৩ ই জুন, ২০২১ রাত ১:০৯

ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: গেরিলারা ছোট মাছের ঝাঁকে মিশে থাকে। স্ফুলিংঙ্গের জন্য একটু আগুন ই চলবে

৬| ১২ ই জুন, ২০২১ রাত ৯:০০

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: তুমি!! কয় দিনের লাইগা?

চে, শাহবাগের ঐ সব দিন যারা সেখানে ছিলো না, তারা কখনই বুঝবে না। প্রথম কিছুদিন এটা ছিলো জনগনের প্রাণের দাবি। কিন্তু ঐ যে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিলো না। ফলে সব শেষ!

১৩ ই জুন, ২০২১ রাত ১:১২

ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: দেখি কয়দিন থাকতে দেন আপনারা। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব ই এখন আমাদের অভিজ্ঞতা। তবে দেখা যাক ভালো কিছু হপে

৭| ১৩ ই জুন, ২০২১ রাত ১:৪১

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ব্লগিং করো, কিছুটা আগের ফ্লেভার আনো।

১৩ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:১৮

ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: হুম সেই নিয়তেই এসেছি। এখন পরিস্থিতি বাকিটা বলবে

৮| ১৩ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:৩০

খায়রুল আহসান বলেছেন: "স্ফুলিংঙ্গের জন্য একটু আগুন ই চলবে" - কথাটা বোধকরি হবে 'আগুনের জন্য একটা স্ফূলিঙ্গ হলেই চলবে'।
জ্বী অবশ্যই, একটা স্ফূলিঙ্গই দাবানল সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট।

৯| ১৩ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১২:০৪

ঈশ্বরকণা বলেছেন: এখন দুঃসময়। নিজের, দেশের, গণতন্রের সংক্ষেপে জীবনেরই। এই বিপন্ন সময় আরো কত দীর্ঘ হবে জানিনা । কিন্তু মনে হচ্ছে এই দুঃসময়টা দেশের অনেক বড় একটা অমঙ্গল প্রহরের ছায়া হিসেবেই শুরু হয়েছে। আরো অনেক অনেক দীর্ঘ সময় এই দুঃসময়ের মধ্যেই আমাদের থাকতে হবে।এই সময়ে খুব বেশি বলতে ইচ্ছে করে না । তাও আপনার লেখাটা পড়ে মনে হলো কিছু বলি।

আমার পার্সোনাল এসেসমেন্টটা হলো আপনার মতোই । কেন যেন মনে হয় অনেক দিন পরে যখন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটা সরল সুন্দর বর্ণনা যদি কেউ করে আর তখনও যদি বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পায় আর সেজন্য দেশও যদি অর্থনৈতিক টানাপোড়েনেই ডুবে থাকে তাহলে যে ফ্যাক্টরগুলোকে এর কারণ হিসেবে গণ্য কর হবে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হবে শাহবাগ আন্দোলন। এই আন্দোলনের অন্তঃসারশূন্যতা নিয়ে আপনি যা বলেছেন --যার জন্য এই আন্দোলনের কোনো সুফল দেশ পায়নি বরং একটা খুব ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থের কাছে সারা দেশ জিম্মি হয়ে গেছে এই আন্দোলনের ফল হিসেবে, তার সাথে আমি সম্পূর্ণই একমত। দেশের বাইরে থেকে এই আন্দোলনটা মনে হয় অনেক নিরপেক্ষভাবে দেখার আর ভাবার সুযোগ আমার হয়েছে। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে শাহবাগ আন্দোলনে আমরা মশা মারতে কামান দাগার আয়োজন করেছিলাম ইচ্ছে বা অনিচ্ছায় ।বুঝে বা না বুঝেই। যেই শক্তিটা (মানে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি) আমাদের ৩০০ আসনের সংসদে ৫/৬টার বেশি আসন পেতোনা বা ৫%-৬% ভাগের বেশি ভোট পেতোনা জাতীয় নির্বাচনে সেই দলটাকে ক্ষমতাহীন করার জন্য আমরা কি করলাম শাহবাগে? আমাদের বিচার বিভাগটা ধ্বংস করে দিলাম। যেই ব্যাপারটা দেশের আইন দিয়ে ফেস করা দরকার ছিল সেটা আমরা করতে চাইলাম শাহবাগ আন্দোলন করে গায়ের জোরে । এর নিট ফলাফল ১৯৯০ থেকে দেশে যেই একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল সেটা সমূলে ধ্বংস। কার তাতে লাভ হলো সেই বিতর্ক না করেও খুব সহজেই যা বলা যায় সেটা হলো দেশের কোনো লাভ হয়নি এই আন্দোলন থেকে বরং দেশের অল্প কিছু সঞ্চয় পুরোটাই শেষ হয়েছে এই আন্দোলন করে (ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে ইচ্ছে পোষণ করে নিজের জাস্টিজ ডিপার্টমেন্টকে দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের আইনগত হয়রানি করেছে । প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেন ইলেকশনে না জিততে পারেন সেজন্য বিদেশি শক্তির সাহায্য চেয়েছে (যা যার অডিও/ফোন রেকর্ডও আছে) । তার প্রতক্ষ্য উস্কানিতে ৬ই জানুয়ারিতে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলা হয়েছে যাতে ডেমোক্র্যাটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আর আরো কিছু ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যানের নাম ধরে হত্যা করার কথা বলেছে হামলাকারিরা (যার ভিডিও আছে) । এতো কিছুর পরেও কিন্তু বাইডেন আলাদা করে নিজের জাস্টিজ ডিপার্টমেন্টকে সে সব তদারক করার জন্য কিছু বলেননি গণতন্ত্রের স্বার্থেই । সেজন্য বরং ক্ষমতাসীন দলের রাইট উয়িং বাইডেনের এটর্নি জেনারেলের (আমাদের আইন মন্ত্রী বলা যেতে পার) বিরুদ্ধে রাতদিন কঠিন সমালোচনা করে যাচ্ছে ট্রাম্প ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে আরো কঠিন তদন্ত না করাতে ! এগুলো দেখে আমি আরো নিশ্চিত শাহবাগ আন্দোলন আমাদের গণতন্ত্রের জন্য খুব উপকার কিছু করতে পারেনি)। গণতন্ত্র আর সুশাসন ডগমা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা কঠিন ।

১৯৯০ এর আন্দোলনের সময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যে দিন এরশাদের পুলিশ বাহিনীর সহায়তা নিয়ে অভি, নিরুসহ আরো কিছু গুন্ডা ক্যাম্পাস দখলের জন্য একটা সাদা মাইক্রোবাসে করে এসেছে সেদিনের ছবিগুলো এখনো আমি মনে করতে পারি। সেই থেকে ছাত্রদের প্রতক্ষ্য এরশাদ পতন আন্দোলনের শুরু, গণজাগরণ, এরশাদের পতন, তার বিরুদ্ধে মামলা, তার বাসায় হিসেবহীন নগদ পাওয়া তিনকোটি টাকার দুর্নীতির হাতেনাতে প্রমান এসবই ইতিহাসের অংশ নিশ্চই । শাহাবুদ্দিন আহমেদ তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান থেকে প্রধান বিচারপতির আসনে ফিরে গেছেন । তিনি এরশাদের বিচারের সাথে সম্পর্কিত হতে চাইলেন না এরশাদের ক্ষমতা হারানোর পর তার সরকার প্রধান হওয়ার আইনগত ইস্যুতে। সেই বিচারপরিচালনা করবেন অন্যেরা । এর মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের সময় এলো । ক্ষমতার পালাবদল হলো । ছাত্রদের প্রভাব রাজনীতিতে তখন গভীর । কিন্তু ছাত্রদের পক্ষ থেকে কিন্তু কোনো দাবি দাওয়া বা এরশাদের আর তার অনুচরদের যাদের হাতে হাজার ছাত্রের রক্তমাখা তাদের কারুরই মৃত্যুদণ্ড বা আইনবহির্ভুত দণ্ড চেয়ে কোনো আন্দোলন বা দাবি জানানো হয়নি। অথচ সফল ছাত্র আন্দোলনের ফল হিসেবে আওয়ামীলীগের মোস্তফা মহসিন মন্টুর মতো পরিচিত ও পরীক্ষিত নেতা ঢাকার পাশেই কেরানীগঞ্জে আমানের মতো জাতীয় রাজনীতিতে আনকোড়া নভিস এক ছাত্র নেতার কাছে হেরে গেছেন।

সেবারের সফল নির্বাচনের পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বেই কিন্তু তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরো তিনবার কালিমাহীন নির্বাচন করা গেলো।দেশে বিদেশে যেই নির্বাচনগুলো মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেলো। দেশের বাইরে পড়তে এসে এ’নিয়ে কত ক্লাসে যে আমার কথা বলতে হলো । বুশ আল গোরের ইলেকশন ঝামেলায় এমন কথাও আমি ক্লাসের আলোচনাতেই আমেরিকান বুরোক্রাটদের মুখ থেকে শুনেছি যে বাংলাদেশের মতো কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট দিয়ে আমেরিকায় ইলেকশন করা যায় কি না ! সেলুকাস সেই বিচার বিভাগটাই বিদ্ধস্ত হয়ে গেলো শাহবাগ আন্দোলনে।রাজনীতিবিদরা কখনোই আমাদের দেশে সৎ ছিলেন না। যেই বিচার বিভাগটার ওপর ভরসা করা যেত সুশাসনের জন্য সেটাও আজ নেই। তার কুফল যে কি সেটাতো হাতে নাতেই দেখা যাচ্ছে গত এক যুগ ধরে । নব্বুই দশকে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ, লতিফুর রহমান, বিচারপতি মিজানুর রহমান শেলী,বিচারপতি কামালুদ্দিন, বিচারপতি মাহমুদুল হাসান আর এদের সহকর্মীদের নিয়ে সপ্তর্ষির উজ্জ্বলতায় আমাদের যেই বিচার বিভাগটা জ্বলজ্বল করতো সেই একই বিচার বিভাগেরই প্রধান বিচারপতির দলীয় সব ফুট ফরমাশ খাটার পরেও শুধু একটু আধটু বাকবাকুম বলাতে এখন দুর্নীতির দায়ে পালাতে হয় দেশের বাইরে ! এই দুঃখ কোথায় রাখি ! শাহবাগ আন্দোলনে দেশের ছাত্ররা বুঝেই হোক বা না বুঝেই হোক আসলে একটা সাইক্লোপ্সের মতো একচক্ষু দৈত্য তৈরী করেছে । তার হাত থেকে জনগণ গণতন্ত্র কারো নিস্তার নেই এখন। নিরাপদ ভবিষ্যৎ দিল্লি হনুজ দূরহস্তের মতো মনে হয় !

দেশের বাইরে থেকে এখনো যখন আমি নব্বুইয়ের ছাত্র আন্দোলনের সাথে শাহবাগ আন্দোলনের একটা তুলনা করতে চাই তখন মনে হয় আপাত দৃষ্টিতে দু'টোকেই সফল আন্দোলন বলা হলেও একটা আন্দোলনে দেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার একটা কুড়ি সুবাসিত ফুল হয়ে ফুটেছিলো ।আরেকটা আন্দোলনে সেই সুবাসিত ফুলটা ঝরে গেছে। যাক অনেক দুঃখের কথা বলা হলো । তবুও আরো একবার বলি, আপনার প্রথম অংশের সব কথার সাথেই আমার কথাও সব কেমন করে যেন এক হয়ে গেলো । আমার অল্প কয়েক বছরের ব্লগ অভিজ্ঞতা থেকে ব্লগ নিয়ে আপনার এসেমেন্টের সাথেও আমি অনেকটাই একমত। ব্লগে ফেসবুকের মতো লাইক না পেয়ে, কঠিন কমেন্ট পেয়ে দিনের পর দিন ব্লগিং করা কঠিন । যারা ব্লগ থেকে চলে গেছেন সেটা তাদের নিদারুন ব্যর্থতা লেখক হিসেবে। যাক আপনি ফিরে এসেছেন সেটা জেনে খুশি । এখন ব্লগিংয়ের পুরোনো নায়ে নতুন পাল তুলে অনেক অনেক ব্লগিং করুন । টেক কেয়ার ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.