নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছিলাম ভাগ্যবান। তোমায় পেয়ে হয়ে গেছি নিকৃষ্ট হতভাগা।

চিন্ময় আবিদ

ছিলাম ভাগ্যবান। তোমায় পেয়ে হয়ে গেছি আমি নিকৃষ্ট এক হতভাগা।

চিন্ময় আবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুষ্টু মিষ্টি বন্ধুত্ব

১৯ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৯


★ক্লাস ওয়ানের ছোট্ট বন্ধুটা সবসময় তার পাশে বসার জন্য জায়গা রেখে দিত। ক্লাসে দেরিতে ঢুকতাম দেখে জায়গা পাব না বলে।
★আরেকটা ছোট্ট বন্ধু জোর করে তার নিজের বেঞ্চ থেকে ঠেলে সরিয়ে দিত। গায়ের জোরে কিংবা হিংসার জোরে, কে জানে!!!
.
★পরীক্ষার অসহায়তম এক মুহুর্তে সামনের ছোট্ট বন্ধুটা তার খাতার লুজটা ছিড়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়, পাশ করব বলে। সে পাশ করার আনন্দে মহানন্দে দৌড় দিবে, আর আমি ফেল করে অশ্রু ঝরাবো, এটা ওর কল্পনারও বাইরে।
★পেছনের বন্ধুটা সবকটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে হাঁফ ছেড়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকে। বিপদে পড়ে একটু দেখানোর রিকুয়েস্ট করলে বলে "আমি কিছুই পারি না রে"। কি জানি!! হয়ত সেই হিংসার জোরে!!!!
.
★বড়লোকের ছেলেটা এক বিরাট টিফিন ক্যারিতে করে নুডলস এনে হাজির হয়েছে। টিফিন টাইমে সব্বাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে। পাশের যেই ছেলেটা আজ টিফিন আনতে ভুলে গেছে, তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গপাগপ করে নুডলস মুখে দিতে থাকে। মুখে তার শোভা পায় সেই হিংসার ছাপ।
★ছোট্ট ছেলেটা টিফিন এনেছে তার ছোট্ট বাটিতে। প্রথম চামচটা মুখে তোলার আগেই দেখতে পায় দুর থেকে তার আরেক বন্ধু তাকিয়ে আছে তার নুডলসের পানে। হয়ত আজ সে টিফিন আনে নি। হাতের ইশারায় তাকে কাছে ডেকে আনে ছোট্ট ছেলেটা। নুডলসের প্রথম চামচটা পুরে দেয় তার মুখে। মুখভরা নিষ্পাপ হাসিতে বলতে থাকে, "নে আজ দেখব, তুই কতটা পেটুক"!!!
.
★কলম হারিয়ে চুপচাপ বসে আছে ক্লাসের দুষ্টু ছেলেটা। তার পাশের ছেলেটা এক ডজন কলমে ব্যাগটা ভরে এনেছে। দুষ্টু ছেলেটা চাইতে গেলে সে বলে, "কলম খেলব, কালি ফুরিয়ে গেলে কলম হালকা হয়ে যাবে, যা ভাগ"।
★লিখতে লিখতে ফুরিয়ে গেল কলমটা। পেছন থেকে কিভাবে যেন টের পেয়ে যায় বন্ধুটা। তার একমাত্র কলমটা পেছন থেকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে "জলদি লিখিস কিন্তু, আমাকেও তোর পরে লিখতে হবে"!!
.
★প্রচন্ড পানির তেষ্টায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে পাশের ছেলেটার। মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। ও পানি চাইতে পারে কল্পনা করেই ব্যাগ থেকে তৎক্ষনাৎ বোতলটা বের করে ঢকঢক করে সবটুকু পানি খেয়ে ফেলল বোতলের মালিক, যাতে ছেলেটা পানি না চাইতে পারে।
★মুখ ফুটে পানি পান করার ইচ্ছে টা জানালো ছেলেটা। সামনে থেকে জবাব দিল হাস্যোজ্জ্বল এক বন্ধু "দোস্ত আমার বোতল খালি তো কি হয়েছে?? তুই এক মিনিট বস না, আমি টিওবওয়েল থেকে পানি ভরে নিয়ে আসছি।"
.
★খোয়া বিছানো পথে হাটতে গিয়ে পা মচকে ফেলল সবচেয়ে অসতর্ক ছেলেটা। অবস্থা বুঝে জলদি সটকে পড়ল এক বন্ধু। আর সবচেয়ে দুর্বল হাড় জিরজিরে বন্ধুটা ওর চেয়ে দ্বিগুণ ওজনের বন্ধুটাকে অবলীলায় তুলে নিল নিজ কাঁধে। পা মচকে যাওয়া ছেলেটাকে যে বাড়ি পৌছে দিতে হবে!!!
.
★হোস্টেলে থাকা ছেলেটার কাছে ফোন এসেছে, তার মা ভীষণ অসুস্থ্য। শুনে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়ে মা-পাগল খোকাটা। এদিকে পকেটের অবস্থাও যে সঙ্গিন। বড়লোক বন্ধুটা দুর থেকেই জানিয়ে দেয় আজ তার ডেটিং আছে কোটিপতির মেয়ের সাথে। তাই সে এক টাকাও ধার দিতে পারবে না।
★এদিকে মা অসুস্থ্য জেনে পকেটের একমাত্র ৫০০ টাকার নোটটাও বন্ধুর হাতে তুলে দেয় গরীব ছেলেটা। বন্ধুর অবাক হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে কানে কানে হেসে বলে "আরে বোকা, তোর মা কি আমার মা নয়??? দেরি না করে তাড়াতাড়ি যা। টাকার চিন্তা পড়ে করিস। ফাকা মানিব্যাগেই আমার চলবে।" চোখের কোণে একফোটা আনন্দাশ্রু ঝিলিক দিয়ে ওঠে মা পাগল ছেলেটার।
.
★বাবার স্ট্রোকের খবরে মুহুর্তে হসপিটালে হাজির হয় পিতাভক্ত ছেলে। উপরন্তু মাথায় বাজ পড়ে যায় ঘন্টাখানেকের মধ্যে একব্যাগ "ও" পজিটিভ রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে শুনে। ফোন চেপে সে বের করে তার প্রিয় বন্ধুর নাম্বার, " দোস্ত তোর না "ও" পজিটিভ??? একটু আয় না, আমার বাবা খুব অসুস্থ্য, অবস্থা সিরিয়াস.........."
পার্টিতে ব্যস্ত থাকা বন্ধুটা ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর দেয়, "ইয়ে মানে.....শোন......আমি না কয়দিনের জন্য সেন্ট মার্টিন আসছি......."
কয়েক মুহুর্ত পরে হসপিটালে হাজির হয় মাত্র কয়েকদিন আগে পরিচয় হওয়া স্বল্প পরিচিত এক রোগা টিংটিঙে রক্তশূন্য বন্ধুটা। এসেই ডাক্তারকে জানিয়ে দেয় তার রক্তের গ্রুপ "ও" পজিটিভ। বাবা ভক্ত ছেলেটা অবাক হয়ে যায়, " আরে তোমাকে তো জানাই-ই নি!! তুমি কিভাবে.....?"
টিংটিঙে ছেলেটা লাজুক হেসে বলে, " চুপ করে থাকো। আঙ্কেলকে এভাবে আর যেই হোক, অন্তত আমি চলে যেতে দিব না"।
.
★সকাল থেকেই অস্থির হয়ে রুমে পায়চারি করছে কলেজ পেরনো এক কিশোর। তার প্রথম ডেটিং আজ। অথচ তার দুই রুম মেটের একজনেরও আজ দেখা নেই। একার সাহসে কুলাচ্ছে না ওর। বন্ধু সাহস না দিলে আর দিবে টা কে??
একটু পরেই হাজির হয় মোটু টা, "কিরে?? তোর জিএফ এর জন্য কিছু উপহার নিস নি?? "
হতচকিত হয়ে পড়ে কিশোর!!!! "আরে তাই তো!!! উত্তেজনায় গিফট কেনার কথাও তো মনে নেই!! পকেটের অবস্থাও তো তেমন ভালো না। আচ্ছা তোর কাছে কি দুটা ৫০০ টাকার............"
কথা শেষ হওয়ার আগেই রুম থেকে আবার চলে গেছে মোটু। ধ্যাৎ!!! হতাশ হয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল কিশোর। আজ আর সাক্ষাৎ হবে না। এই ফকির বেশে গেলে মান ইজ্জত যেটুকু আছে, সেটুকুও নির্ঘাত চম্পট দেবে।
দিনটা যখন মাটি হওয়ার কথা ভাবছে সে, তখনই বাজপাখির মতো ধেয়ে রুমে প্রবেশ করল চিকনা টা। "যাক বাবা বাচা গেল!! তুই এখনো যাস নি। তোর হাত টা বাড়াতো দেখি।"
অবাক হয়ে হাত দুটো বাড়িয়ে দেয় কিশোর। বিস্ফোরিত চোখে দেখতে পায় তার নিজ হাতে ঝলমল করছে সুদৃশ্য ঝলমলে এক মুক্তোর মালা। দাম লেখা জায়গাটা টেনে ছিড়ে ফেলেছে চিকনা, যেন ও দামটা দেখতে না পারে!!
কিশোরের হা হয়ে যাওয়া মুখের দিকে চেয়ে বিশ্বজয়ী হাসি দেয় চিকনা, " তুই কি ভেবেছিস?? তোর মানিব্যাগের খবর আমি রাখি না?? রাখি বলেই ভাবির জন্য এই সামান্য আয়োজন!!! তবে আমার নামটা ভুলেও উচ্চারণ করিস না যেন বোকা কোথাকার!!!! "
কিশোর অবাক থেকে এবার সবাক হয়, "এজন্যেই তুই সকাল থেকে উধাও!!! আমি... আমি ভাবলাম কিনা........."
চিকনা এবার দাঁত বের করে হাসে, " হিহি!! এবার দেরি না করে চলে যা ভাবির কাছে। আমার বোকা বন্ধুটা ভাবির কাছে যাবে, আর আমি এভাবে ওকে ফকিন্নি স্টাইলে পাঠাবো, এটা তুই ভাবলি ক্যামনে, হু???? "
কিশোর লক্ষ্য করে নি কোন মুহুর্তে চিকনা তার প্যান্টের পকেটে আস্তে করে ৫০০ টাকার একটা ময়লা নোট রেখে দিয়েছে।
কিশোর এবার টলটলে চোখটা আড়াল করে চিকনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আধা কেজি হাসি দিয়ে বলে, "" হুউউ!!! তুইও একদিন যাবি না ডেটিংয়ে?? তুই দেখে নিস, আমিও সেদিন প্রতিশোধ তুলব। মধুর প্রতিশোধ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.