নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Chinmoy Sarker

chinmoy

আমাকে এনে দাও মিনিপ্যাক ট্রু,মিনিপ্যাক সেলফিশনেস।অথবা এক দ্বীপ আল্বাট্রোস।

chinmoy › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুরে এলাম সনেট-রাজ্যে

০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:০১

OOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOOO


ভিডিওঃ https://www.youtube.com/watch?v=qU1Ql6HJ3b

স্থানীয় সময় বেলা ১১:৪০ এ শেষবারের মত কয়েকটা হুশ হুশ শব্দ করে ট্রেনটা থামল “ভার্সাই শঁতিয়ে” স্টেশনে। আমি আর কবির ভাই স্টেশন থেকে বেরিয়েই হকচকিয়ে গেলাম। অদ্ভুত একটা রং এখানে দিনটায়, অনেকটা সোডিয়াম বাতির নিচে যেমন দেখায়। ফকফকে জোছনার রোমাঞ্চে নয়, বরং দিনের এই গাল্পিক মায়াময় আলোতে আমরা খুঁজতে বেরিয়েছি মধুসূদনের সে’ বিরল। যে বিরলে বসে তিনি লিখিছিলেন,

“সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে।
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;”

১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলা প্রেসিডেন্সির যশোরের (বর্তমান যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার) সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে মধুসূদন দত্তের জন্ম হয়। তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও তাঁর প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। প্রতাপশীল রাজনারায়ণ দত্ত পেশায় ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা উকিল। মধুসূদনের প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর মা জাহ্নবী দেবীর কাছে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতির মাধ্যমে। তারপর পাশের গ্রাম শেখপুরার মসজিদের ইমাম মুফতি লুৎফুল হক তার শিক্ষা শুরু হন। বিদ্বান ইমামের কাছে তিনি বাংলা, ফারসি ও আরবি পড়েছেন। পরবর্তীতে তিনি ইংরেজি ছাড়াও ল্যাটিন, গ্রিক, ফারসি, হিব্রু, তেলেগু, তামিল ইত্যাদি ভাষায় অনায়াসে কথা বলতে পারতেন। এমনকি ফারসি ও ইটালিয়ান ভাষায় তিনি কবিতাও লিখেছেন কিছু। মাতৃভাষা ছাড়াও তিনি আরো বারোটি ভাষা জানতেন। তাঁর সময়ে একসঙ্গে এত বেশি ভাষা আর কেউ জানতেন না। তিনি জীবনের বিভিন্ন সময়ে দোভাষীর কাজও করেছেন।

সাগরদাঁড়িতেই মধুসূদনের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। তেরো বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় আসেন এবং স্থানীয় একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর তদনীন্তন হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। সেখানে পড়া অবস্থায় ১৮৪৩ সালে মাত্র উনিশ বছর বয়সে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর এই ধর্মান্তর সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। রাজনারায়ণ দত্ত তাঁর বিধর্মী পুত্রকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। [এছাড়াও পরবর্তীতে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসনটির বিষয়বস্তু তথাকথিত ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যায় বলে নব্য ও সনাতনপন্থী উভয় সমাজকেই বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। এতে মাইকেল খুবই হতাশ হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে প্রহসন রচনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন।] অন্যদিকে, হিন্দু কলেজে খ্রিস্টানদের অধ্যয়ন নিষিদ্ধ থাকায় মধুসূদনকে হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে হয়। ১৮৪৪ সালে তিনি শিবপুরের বিশপস কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৪৭ পর্যন্ত এখানে তিনি গ্রিক, লাতিন, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষা শিক্ষা করেন। কথিত আছে, সেখান থেকে অজ্ঞাতসারে নিজের পাঠ্যপুস্তক বিক্রি করে সেই টাকায় মাদ্রাজ চলে যান তিনি ভাগ্যান্বেষণে।

-আরে কই যাইতেছি আমরা? কবির ভাইয়ের কথায় হঠাৎ খেয়াল করলাম হাঁটতে হাঁটতে আমরা কোথায় যেন হারিয়ে গেছি।
-সামনে তো মেলা হচ্ছে দেখি ভাই!
-আরে না, মাকশি (এক ধরনের অস্থায়ী মার্কেট)।

তারপর মাকশিতে গিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরলাম। স্থানীয় দ্রব্য সামগ্রী সব। ইতিমধ্যে মোবাইল ফোন নোটিফাই করল, কাছে পিঠেই নাকি একটা রাজপ্রাসাদ আছে? ঠিক হল কাছে যেহেতু চলেই এসছি, তাহলে আগে এটাই দেখে যাই। গহীন জঙ্গলের গভীরে ছোট্ট একটি শিকার কুঠি কিভাবে ধীরে ধীরে একটি রাজবাড়ী ও বিশাল রাজ্যরূপে আবির্ভূত হয়েছিল সে কাহিনী অন্য আরেকদিন।

আমরা গুগল ম্যাপে ডেসটিনেশন The Palace of Versailles বা Château de Versailles সেট করে আমরা মধুসূদন দত্তের ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করতে করতে ম্যাপ অনুযায়ী ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলাম।

তো, কবি যখন মাদ্রাজে গেলেন তার ছয় মাসের মাথায় তিনি বিয়ে করেন রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ যুবতীকে। তাদের দুই পুত্র ও দুই কন্যা। মধুসূদন দত্ত তাঁর সাহিত্য জীবনে বিশেষ করে ইংরেজ কবি লর্ড বায়রনের সাহিত্য কর্ম এবং তাঁর জীবন দ্বারা অত্যন্ত বেশি অনুপ্রাণিত হয়ে ছিলেন। ইতিমধ্যে ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি ছোটবেলা থেকেই তার দুর্নিবার আকর্ষণ লেখালেখি হয়ে ফুটতে শুরু করে এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছদ্মনামে তার বিভিন্ন লেখা প্রকাশিতও হতে থাকে। পঁচিশ বছর বয়সে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যেই তিনি দ্য ক্যাপটিভ লেডি, তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন। তখন কবি ও দক্ষ ইংরেজি লেখক হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এই বই পড়ার পর গৌরদাস বসাক, জে.ই.ডি বেথুন ও অন্যান্য সাহিত্যবোদ্ধাদের অনুরোধে ১৮৫৬ সালে মধুসূদন যখন সাহিত্যে মনোনিবেশের উদ্দেশ্যে কলকাতায় ফিরে আসেন তখন তাদের আট বছরের দাম্পত্যজীবনের অবসান ঘটে। রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার অল্পকাল পরে মধুসূদন এমিলিয়া আঁরিয়েতা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ করেন। আঁরিয়েতা মধুসূদনের সারাজীবনের সঙ্গী ছিলেন। তাদের নেপোলিয়ান নামক এক ছেলে এবং শর্মিষ্ঠা নাম এক মেয়ে। তাঁর বংশধরদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় লিয়েন্ডার পেজ।

১৮৬২ সালের ৯জুন মধুসূদন ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে বিলেত যান এবং গ্রেজ-ইন-এ যোগদান করেন। কিন্তু সেখানের আবহাওয়া এবং বর্ণবাদিতার কারণে তিনি বেশি দিন সেখানে থাকেন নি। ১৮৬৩ সালে তিনি প্যারিস হয়ে ভার্সাই নগরীতে আসেন।
উরিব্বাপ্স!! বিশাল বাগান ও রাজপ্রাসাদের সিকিভাগও শেষ করতে পারলাম না ৩ ঘণ্টা ঘুরেও। এখান থেকে ফাইনালি কবির বাড়ীর খোঁজে নেমে পরলাম আমরা। পথে বেশ কিছু ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশি, পাঞ্জাবী রেস্টুরেন্ট এবং বাংলাদেশী আলিমেন্তাসু [অফ লাইসেন্স] চোখে পড়লো। ম্যাপ থাকা স্বত্বেও আমাদের অনেক বেগ পেতে হল রু ডু শঁতিয়ের ১২ নাম্বার বাড়ীটা খুঁজে পেতে। প্রায় আধা ঘণ্টা এলোমেলো ঘুরার পর উইকিতে পাওয়া বাড়ীটির একটি ছবির মধ্যে থাকা সাইনবোর্ড মিলিয়ে অবশেষে আমরা এসে দাঁড়ালাম বাংলায় সনেট উৎপত্তিস্থলে। সাগরদাঁড়ি-কপোতাক্ষ কাব্যের কিংবদন্তী এই বাড়ীটিতে প্রায় দুবছর অবস্থান করেন। আমরা যে পথে দাঁড়িয়ে আছি এই পথে কবি চলাচল করতেন, ভাবতেই আমার শরীর মৃদু কাঁপুনি দিল যেন। যদিও বাড়ী দেখেই শান্ত থাকতে হল, কেননা কবির কোন স্মৃতিচিহ্ন পেলাম না। হয়তো আমরা বেশি বেশি ঘুরতে গেলে কোন একদিন ফ্রেঞ্চ সরকার আমাদের কবিকে যথাযথ সম্মান দিবেন, আপাতত এই আশা ছাড়া আর কী করতে পারি!

ভার্সাইতে অবস্থানকালে তাঁর জীবনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। এখানে বসেই তিনি ইতালীয় কবি পেত্রার্কের অনুকরণে বাংলায় সনেট লিখতে শুরু করেন। বাংলা ভাষায় এটি এক বিস্ময়কর নতুন সৃষ্টি। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো ভার্সাই নগরীতে থেকেই তিনি প্রথমবারের মত মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে একান্ত আপনভাবে দেখতে ও বুঝতে পারেন, যার চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর ‘বঙ্গভাষা’, ‘কপোতাক্ষ নদ’ ইত্যাদি সনেটে। এইখানে লেখা তাঁর এই সনেটগুলি ১৮৬৬ সালে চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এখানে দুবছর থাকার পর মধুসূদন ১৮৬৫ সালে পুনরায় ইংল্যান্ড যান এবং ১৮৬৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আর্থিক সহায়তায় তিনি গ্রেজ-ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে ১৮৬৭ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগ দেন। কিন্তু ও পর্যন্তই, তিনি কখনোই তাঁর এই বিদ্যাটাকে উপার্জনের কাজে লাগান নি।

মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। তাছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন (অর্থাভাবে) অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হয়তো নিজের মৃত্যু সন্নিকটে বুঝতে পেরেই নিজের এপিটাফটি নিজেই লিখে রেখে যান মহাকবি জীবনের শেষ দিনগুলোতে। আজও তাঁর সমাধির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বেজে ওঠে তার সেই এপিটাফের লেখাগুলি:

“ দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব
বঙ্গে!
তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধি স্থলে … “


ফ্রান্সের ভারসাই তে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ী যেতে -
রুট নং - ১ঃ গার ডু নরড (আরইআর-বি) -- সেইন্ট মিশেল নটরড্যাম (আরইআর-সি) -- গার ডু ভারসাই শঁতিয়ে -- ২ মিনিট হাঁটা
রুট নং - ২ঃ মনপারনেস (টি ই আর) -- গার ডু ভারসাই শঁতিয়ে -- ২ মিনিট হাঁটা --12 Rue Des Chantiers.

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:



12 Rue Des Chantiers, বাড়ীতে এখন কেহ থাকে?

২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৫২

chinmoy বলেছেন: হ্যাঁ, থাকে। ১০/১২ জনের দেখেছিলাম কলিং বেলের বোর্ডে। সবাই ভিনদেশী।

৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:০৩

chinmoy বলেছেন: হ্যাঁ, থাকে। ১০/১২ জনের নাম দেখেছিলাম কলিং বেলের বোর্ডে। সবাই ভিনদেশী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.