নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেই কাজ তো খই ভাজ

বসে আছি পথ চেয়ে....

চিররঞ্জন সরকার

চিররঞ্জন সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও থামতে জানা

৩০ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৪

না, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছুতেই থামছেন না। তিনি একই বক্তৃতা একই স্বরে একই সুরে বিরামহীন চালিয়ে যাচ্ছেন। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মতো, একই কথা বিভিন্ন তালে, বিভিন্ন লয়ে, বিভিন্ন আলাপে চলছে তো চলছেই। সঙ্গীতে যার অসীম দখল, সেও কিন্তু বারবার ঘুরেফিরে একই গান শোনান না; অন্যসব গানের ফাঁকে ফাঁকে প্রিয় গানটি শোনান। আর সঙ্গীতের প্রতি যার সীমাহীন অনুরাগ সেও কিন্তু একই গান বার বার শোনেন না। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের অতিশয় চঞ্চলমতি ‘মিনি’র মতো আমাদের প্রধানমন্ত্রীও একই বক্তৃতা শুনিয়ে শুনিয়ে ক্লান্ত করে ফেলেছেন। পদ্মা সেতু ইস্যুতে সেই একই কথা, সেই একই সাফাই, নিজেদের মহিমা-কীর্ত্তন, প্রতিপক্ষের প্রতি বিষোদগারÑচলছে তো চলছেই। তিনি দেশের বাইরে গেলে যেভাবে, যে ভাষায় যা বলেন, দেশে থাকলেও ঠিক তেমনটাই বলেন; সেই একই বাণী, চড়া এবং কড়া সুরে বলেন।

এসব একঘেয়ে ঘ্যান ঘ্যান করে তিনি কেন শক্তিক্ষয় করছেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তাও কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মনে রাখা দরকার যে, সুন্দর মুখের সুন্দর কথাও যদি বৈচিত্র্যময় না হয়, একই কথা বারবার বলা হয়, তাহলে তা চরম বিরক্তির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নি¤œমানের কথা বলার জন্য তো দলের মুখপাত্ররা রয়েছেনই। বাজে বকার কাজটি তো তাদের দিয়েই করানো যেতে পারে।

আমরা যে পরনিন্দা-পরচর্চা পছন্দ করি নাÑতা কিন্তু নয়। আমরা এগুলো খুবই পছন্দ করি। গালাগাল, বিষোদগার-খিস্তি-খেউরকে আমরা ‘বস্তি-কালচার’ বলে হেয় করে দেখলেও বস্তিবাসীর ঝগড়া কিন্তু ঠিকই উপভোগ করি। যদিও কেউ তা স্বীকার করি না। সেটা আমাদের জাতিগত এবং মজ্জাগত ভণ্ডামি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেও এসব বচন শুনে আনন্দিত হতাম যদি তিনি কালে-ভদ্রে বলতেন। যখন গালি আর বুলি এক হয়ে যায় এবং তা অনবরত বের হতে থাকে কখন তা খারাপ লাগবেই। মূল কথা হচ্ছে থামতে জানা। পরিমিতি বোধ। ওটা না থাকলে অতি রসিকও বেরসিক বনে যাবেন, এবং বিরক্তিকর চরিত্রে পরিণত হবেন।

সাধারণভাবে পরনিন্দা, পরের কেচ্ছা বা গীবৎ, যদি আবার তার সঙ্গে একটু নারী প্রসঙ্গ যুক্ত থাকে, তাহলে লোকের কাছে তা খুব উপাদেয় ও শ্রুতিমধুর লাগে, কিন্তু তারও পরিমাণ ঠিক না থাকলে মারপিট পর্যন্ত বেধে যায়। এ ব্যাপারে ছোটবেলায় একটা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করা যেতে পারে।

পাড়ার চায়ের দোকানে কানা বক্কর আর ট্যারা সিদ্দিক নামে দুজন ভদ্রলোক সকাল-সন্ধ্যা বসে আড্ডা জমাতেন। দুজনের মধ্যে প্রচণ্ড ভাব, যাকে বলে হরিহর আত্মা। বয়স উভয়েরই পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে। তবুও এ বয়সে দুজনের মধ্যে প্রীতির টাগ অফ ওয়ার চলতো। কানা বক্কর সাহেবের শরীর খারাপ হলে ট্যারা সিদ্দিক সাহেবের শরীর ম্যাজম্যাজ করতো, আবার ট্যারা সাহেবের সর্দিতে গলা খুসখুস করলে কানা সাহেবের কাশি বেড়ে যেতো। এক জন কোনোদিন আসতে দেরি করলে, অপরজন সিগারেটে সুখটান দিয়ে অপরের শরীর-গতিকের খবর নিতে হনহন করে তার বাড়িতে ছুটে যেতেন। এই বন্ধুদের মধ্যেও একদিন শুধু এক ব্যাপারের পুনরাবৃত্তির ফলে ছাতা পেটাপেটি হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো এবং সর্বশেষ মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেলো। অথচ যে জিনিসটি উপলক্ষ করে ব্যাপারটা ঘটলো, তা উভয়ের কারোরই স্বার্থবিরোধী ছিলো না- শুধু একঘেয়ে ব্যাপারের পুনরাবৃত্তি পরস্পরের মধ্যে পুরানো সম্পর্কের ফাটল ধরিয়ে দিলো।

ব্যাপারটা সংক্ষেপে বলি। কানা বক্কর সাহেবের পাড়ায় নাকি এক ভদ্রলোক চটে গেলেই তার স্ত্রীকে ঠ্যাঙাতেন- এই সংবাদটি কানা বক্কর সেদিন বেশ রসিয়ে রসিয়ে ট্যারা সিদ্দিক সাহেবকে বললেন, সেদিন তিনি সেটি বেশ উপভোগ করেছিলেন। ঠ্যাঙানো, ঠ্যাঙানোর কারণ, স্ত্রী চরিত্র, স্বামী চরিত্র ইত্যাদি সবকিছু সংবাদ নিয়ে রীতিমতো খুশিও হয়েছিলেন।

কিন্তু প্রতিদিন এই কাহিনি শুনতে শুনতে ট্যারা বক্কর সাহেব ক্রমশ অন্যমনস্ক হয়ে যেতে লাগলেন। অন্য প্রসঙ্গের অবতারণা করার চেষ্টা করতেও ত্রুটি করলেন না। তাকে দূর থেকে আসতে দেখলেই বেশ গম্ভীর ভাবে খবরের কাগজ পাঠে মনোসংযোগ করতে লাগলেন। কানা বক্কর সাহেব কিন্তু খুঁটি ছাড়েন না- ওই নারী পুরুষের নব নব কেচ্ছা শুনিয়ে চলছেন। ট্যারা বক্কর সাহেব একদিন লজ্জার মাথা খেয়ে বলেও ফেললেন: দুর ভাই, ওসব কথা ছাড়ো তো, অন্য কথা পাড়ো।

তাতেও কানা বক্কর সাহেবের কোনো অপ্রস্তুত ভাব লক্ষ করা গেলো না। পরিশেষে বন্ধুকে দূর থেকে আসতে দেখলে ট্যারা সিদ্দিক সাহেব পালাতে শুরু করলেন; কিন্তু এক পাড়ায় থেকে কদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকবেন? দেথা হতে লাগলো আর কেচ্ছা শুরু হলো- বুঝেছো কি-না . . . . .

ট্যারা সিদ্দিকে খেপে উঠে ছাতাটা বাগিয়ে ধরে হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠলেন- বেশ করেছে, ও তার বউকে ঠ্যাঙিয়েছে, তাতে তোর বাবার কী? তোর বউ থাকলে তুই ঠ্যাঙাগে যা। খবরদার কানা ফের যদি ওই কথা তুলেছিস, তাহলে এই ছাতার বাঁট দিয়ে তোর মাথার ঘিলু আমি বের করে দেবো হ্যাঁ।

ব্যাস! সেই থেকে কানা ও ট্যারা সাহেবের মধ্যে জন্মের মতো ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলো। আসলে যথা সময়ে থামতে না জানলে অপরের কেচ্ছা শোনাও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। মোট কথা, ঠিক সময় থামতে না জানলে বিপদ ঘটবেই।

কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ ঘ্যানঘ্যানানিতে বড় বেশি পারদর্শী। স্ত্রী, প্রতিবেশী, বন্ধু-প্রেমিকা থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী, ক্যানভাসার, ফেরিওয়ালা, রাজনীতিবিদ, টিভি চ্যানেল, পত্রিকার সাংবাদিক, এমন কি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সবাই এই একই দোষে দুষ্ট। চতুর্দিকে আমাদের এতো বিপদ, এত যে সংকট ঘনিয়ে আসছে, কারণ কী? কেনো? কারণ আমরা থামতে জানি না। নাচ, গান, শোকসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, মহাপুরুষদের শ্রাদ্ধ, গালমন্দ কিছুতেই বাদ পড়ছে নাÑঅবাধ, নিরঙ্কুশ, স্বাধীন ও আশ্রান্তভাবে আমরা একটা বিষয় নিয়েই অবিরাম মচ্ছব চারিয়ে যাচ্ছি- থামবার কোনো নাম নেই।

কিন্তু থামা দরকার। রসিক মাত্রই কোথায় থামতে হয়, ঠিক জানেন। ঈশ্বরকে বলা হয় রসের আধার, প্রকৃত রসিক। তার প্রমাণ, যথা সময়ে তিনি আমাদের নাচন-কোঁদন ও অস্ফালনকে একেবারে জন্মের মতো থামিয়ে দেন। তা না হলে আমাদের অবিরাম ঘ্যানঘ্যানানি ও অবিরাম মুখ ভ্যাঙানি দেখতে দেখতে সবাই বুঝি পাগল হয়ে যেতো। এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের প্রধানমন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, টেলিভিশন টকশোর ভাড়া করা বুদ্ধিজীবী, বউ-বাচ্চা, প্রতিবেশি-এরা সকলে কবে থামবেন? নাকি রসিক কানা বক্করের মতো চালিয়েই যাবেন? জোর করে থামিয়ে না দিলে থামবেনই না?

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৩

ব্লাক উড বলেছেন: :(( :((

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৮:০০

মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: আমরা যে পরনিন্দা-পরচর্চা পছন্দ করি নাÑতা কিন্তু নয়। আমরা এগুলো খুবই পছন্দ করি। গালাগাল, বিষোদগার-খিস্তি-খেউরকে আমরা ‘বস্তি-কালচার’ বলে হেয় করে দেখলেও বস্তিবাসীর ঝগড়া কিন্তু ঠিকই উপভোগ করি। যদিও কেউ তা স্বীকার করি না। সেটা আমাদের জাতিগত এবং মজ্জাগত ভণ্ডামি।

আমি এই কথাগুলোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জাতিগত ভাবে মোটেই আমরা এগুলো উপভোগ করি না। নতুন নবীনরা অনেকখানি নিজেদের বদলে নিয়েছে, আপনি হয়তো টের পাননি। আপনার গল্পের ভেতরেও কিন্তু এই কথাই প্রতিফলিত হয়েছে।

০২ রা আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৬

চিররঞ্জন সরকার বলেছেন: ভাই আপনি অনেক ভালো মানুষ।আপনি যাদের চেনেন তারাও খুব ভালো। কিন্তু আমার সীমাবদ্ধতা হলো আপনার মতো বদলে যাওয়া তরুণদের আমি দেখি নাই, চিনি না। আমিতো জনম ধরে পোড়া দুই চোখ দিয়ে ভণ্ড-বজ্জাতদের দেখে এসেছি।আমি নিজে তেমন বলেই হয়তো।
ক্ষমা করে দিয়েন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.