নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাল'র সাথে থাকি। ভাল'র মাঝে বাঁচিতে চাই ফেসবুকে বন্ধু হতে চাইলে- www.facebook.com/chiroter.rosh
আজ ১৬ই ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। বিজয়ের এই দিনে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই আমাদের সেইসব জাতীয় বীরদের যাদের অকৃত্তিম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা। হানাদার বাহিনীর বর্বরতার দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে বাংলার অকুতোভয় বীরযোদ্ধারা সেদিন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করেছিল। তাদের অসামান্য অবদানের ফলেই বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে আজ দাঁড়িয়ে আছে একটি স্বাধীন ভুখন্ড। আর আমরা পেয়েছি একটি লাল সবুজ পতাকা।
"এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
দুঃসহ এ বেদনার কণ্টক পথ বেয়ে
শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
যুগের নিষ্ঠুর বন্ধন হতে
মুক্তির এ বারতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
কৃষাণ-কৃষাণীর গানে গানে
পদ্মা-মেঘনার কলতানে
বাউলের একতারাতে
আনন্দ ঝংকারে
তোমাদের নাম ঝংকৃত হবে।
নতুন স্বদেশ গড়ার পথে
তোমরা চিরদিন দিশারী রবে।
আমরা তোমাদের ভুলব না।।"
বাংলার এসব সূর্যসন্তানদের অবদান আমরা কোন দিনও ভুলতে পারবো না। তাদের অসামান্য অবদানের কথা প্রতিটি বাঙালির অন্তরের অন্তস্থলে চিরকাল স্বর্ণক্ষরে লিখা থাকবে। আজ ৪৩তম বিজয় দিবসে আমরা আমাদের সেসব জাতীয় বীরদের সকল বাঙালির পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা। আজকের এইক্ষণে আমরা আবারও জেনে নিবো আমাদের জাতীয় বীরদের নাম, তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের কথা।
"এক নদী রক্ত পেড়িয়ে
বংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা
তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না.........
মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে
সাত কোটি মানুষের জীবনের সন্ধান আনলে যারা
সে গানের মহিমা কোন দিন ম্লান হবে না..........."
• সাত জন বীরশেষ্ঠ •
নূর মোহাম্মদ শেখ (ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৩৬- সেপ্টেম্বর ৫, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে নূর মোহাম্মদ শেখ জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আমানত শেখ, মাতা জেন্নাতুন্নেসা। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানকার লেখাপড়া শেষ না করে ১৯৫৯-এর ১৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস-এ যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে নূর মোহাম্মদকে দিনাজপুর থেকে যশোরে বদলি করা হয়। বদলি স্থানে যোগ দানের আগেই স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।
যেভাবে শহীদ হলেন/মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ
১৯৭১- এর ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষার সামনে গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ পাকিস্থানি সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষন করতে থাকে। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা থেকে পাল্টা গুলিবর্ষন করা হয়। তবু পেট্রোলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এক সময়ে সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মদ নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এল.এম.জি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তাঁর ডান কাঁধে।
ধরাশয়ী হওয়া মাত্র আহত নান্নু মিয়াকে বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। হাতের এল.এম.জি সিপাহী মোস্তফাকে দিয়ে নান্নু মিয়াকে নিয়ে যেতে বললেন এবং মোস্তফার রাইফেল চেয়ে নিলেন যতক্ষণ না তাঁরা নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে সক্ষম হন ততক্ষণে ঐ রাইফেল দিয়ে শত্রুসৈন্য ঠেকিয়ে রাখবেন এবং শত্রুর মনোযোগ তাঁর দিকেই কেন্দ্রীভুত করে রাখবেন। অন্য সঙ্গীরা তাদের সাথে অনুরোধ করলেন যাওয়ার জন্যে। কিন্তু তাঁকে বহন করে নিয়ে যেতে গেলে সবাই মারা পড়বে এই আশঙ্কায় তিনি রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। বাকিদের অধিনায়োকোচিত আদেশ দিলেন তাঁকে রেখে চলে যেতে। তাঁকে রেখে সন্তর্পণে সরে যেতে পারলেন বাকিরা। এদিকে সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন রক্তাক্ত নূর মোহাম্মদ। একদিকে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী, সঙ্গে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র, অন্যদিকে মাত্র অর্ধমৃত সৈনিক (ই.পি.আর.) সম্বল একটি রাইফেল ও সীমিত গুলি। এই অসম অবিশ্বাস্য যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের এমন ক্ষতিসাধন করেন যে তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী যোদ্ধাকে বেয়নেট দিয়ে বিকৃত করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে। পরে প্রতিরক্ষার সৈনিকরা এসে পাশের একটি ঝাড় থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে।
মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (ডিসেম্বর ১৬, ১৯৪৭- এপ্রিল ১৭, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাবিবুর রহমান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার ছিলেন। শৈশব থেকেই দুঃসাহসী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারেননি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর উচচ বিদ্যালয়ে দু-এক বছর অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৭-র ১৬ ডিসেম্বর বাড়ী থেকে পালিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি গ্রহন করেন। তিনি ছিলেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক। ১৯৭১-এর প্রথম দিকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলে এন্ডারসন খালের পাঁড়ে। আখাউড়ায় অবস্থিত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট দক্ষিন দিক থেকে নিরাপত্তার জন্য দরুইন গ্রামের দুই নম্বর প্লাটুনকে নির্দেশ দেয়। সিপাহী মোস্তফা কামাল ছিলেন দুই নম্বর প্লাটুনে। কর্মতৎপরতার জন্য যুদ্ধের সময় মৌখিকভাবে তাঁকে ল্যান্স নায়েকের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়।
যেভাবে শহীদ হলেন/মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ
১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উত্তর দিকে এগুতে থাকে। ১৭ই এপ্রিল পরদিন ভোরবেলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী দরুইন গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর মর্টার ও আর্টিলারীর গোলাবর্ষণ শুরু করলে মেজর শাফায়াত জামিল ১১ নম্বর প্লাটুনকে দরুইন গ্রামে আগের প্লাটুনের সাথে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। ১১ নম্বর প্লাটুন নিয়ে হাবিলদার মুনির দরুইনে পৌছেন। সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল তার নিকট থেকে গুলি নিয়ে নিজ পরিখায় অবস্থান গ্রহন করেন। বেলা ১১ টার দিকে শুরু হয় শত্রুর গোলাবর্ষণ। সেই সময়ে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। সাড়ে ১১টার দিকে মোগরা বাজার ও গঙ্গা সাগরের শত্রু অবস্থান থেকে গুলি বর্ষিত হয়।
১২ টার দিকে আসে পশ্চিম দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ। প্রতিরক্ষার সৈন্যরা আক্রমণের তীব্রতায় বিহ্বল হয়ে পড়ে। কয়েক জন শহীদ হন। মোস্তফা কামাল মরিয়া হয়ে পাল্টা গুলি চালাতে থাকেন। তাঁর পূর্ব দিকের সৈন্যরা পেছনে সরে নতুন অবস্থানে সরে যেতে থাকে এবং মোস্তফাকে যাবার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু তাদের সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগের জন্য মোস্তফা পূর্ণোদ্যমে এল.এম.জি থেকে গুলি চালাতে থাকেন। তাঁর ৭০ গজের মধ্যে শত্রুপক্ষ চলে এলেও তিনি থামেননি। এতে করে শত্রু রা তাঁর সঙ্গীদের পিছু ধাওয়া করতে সাহস পায়নি। এক সময় গুলি শেষ হয়ে গেলে, শত্রুর আঘাতে তিনিও লুটিয়ে পড়েন।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান (২৯শে অক্টোবর, ১৯৪১—২০শে আগস্ট, ১৯৭১) একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত হন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে সর্বোচ্চ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান তাদের মধ্যে অন্যতম।
জীবনীঃ
মতিউর ১৯৪১ সালের ২৯শে অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯ আগা সাদেক রোডের পৈত্রিক বাড়ি "মোবারক লজ"-এ জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে মতিউর ৬ষ্ঠ। তাঁর বাবা মৌলভী আবদুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেনী পাস করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ডিস্টিংকসহ মেট্রিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন।
১৯৬৩ সালের জুন মাসে রিসালপুর পি,এ,এফ কলেজ থেকে কমিশন লাভ করেন এবং জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসাবে নিযুক্ত হন। এরপর করাচির মৌরীপুরে জেট কনভার্সন কোর্স সমাপ্তি করে পেশোয়ারে গিয়ে জেটপাইলট হন। ১৯৬৫তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ফ্লাইং অফিসার অবস্থায় কর্মরত ছিলেন। এরপর মিগ কনভার্সন কোর্সের জন্য পুনরায় সারগোদায় যান। সেখানে ১৯৬৭ সালের ২১ জুলাই তারিখে একটি মিগ-১৯ বিমান চালানোর সময় আকাশে সেটা হঠাৎ বিকল হয়ে গেলে দক্ষতার সাথে প্যারাসুট যোগে মাটিতে অবতরণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ইরানের রানী ফারাহ দিবার সম্মানে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত বিমান মহড়ায় তিনি ছিলেন একমাত্র বাঙালি পাইলট। রিসালপুরে দু'বছর ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসাবে কাজ করার পর ১৯৭০ এ বদলি হয়ে আসেন জেট ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হয়ে।১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারী মাসে ঢাকায় ছুটিতে আসেন।
যেভাবে শহীদ হলেন/মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ
২৫ মার্চের ঘটনায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন। পরে তিনি দৌলতকান্দিতে জনসভা করেন এবং বিরাট মিছিল নিয়ে ভৈরব বাজারে যান। পাক-সৈন্যরা ভৈরব আক্রমণ করলে বেঙ্গল রেজিমেন্টে ই,পি,আর-এর সঙ্গে থেকে প্রতিরোধ বুহ্য তৈরি করেন। এর পরই কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে জঙ্গি বিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। ২০ই আগস্ট সকালে করাচির মৌরিপুর বিমান ঘাঁটিতে তারই এক ছাত্র রশীদ মিনহাজের কাছ থেকে একটি জঙ্গি বিমান ছিনতাই করেন। কিন্তু রাশেদ এ ঘটনা কন্ট্রোল টাওয়ারে জানিয়ে দিলে, অপর চারটি জঙ্গি বিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে। এ সময় রশিদের সাথে মতিউরের ধ্বস্তাধস্তি চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রশিদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর বিমান থেকে ছিটকে পরেন এবং বিমান উড্ডয়নের উচ্চতা কম থাকায় রাশেদ সহ বিমানটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মতিউরের সাথে প্যারাসুট না থাকাতে তিনি নিহত হন। তাঁর মৃতদেহ ঘটনাস্থল হতে প্রায় আধ মাইল দূরে পাওয়া যায়। রশিদ মিনহাজকে পাকিস্তান সরকার সম্মানসূচক খেতাব দান করে এবং মতিউরকে করাচির মাসর"র বেসের চতুর্থ শ্রেনীর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, ফ্লাইট ল্যাফটেনেন্ট মতিউর রহমান শহীদ হবার সময় পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। পাকিস্তানিরা তাঁকে এক অন্ধকার কক্ষে তাঁর শিশু বাচ্চা ও কাজের পরিচারিকাসহ দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখে ও অত্যাচার করে। মুক্তি পাবার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
২০০৬ সালের ২৩ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাঁকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫শে জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়।
মোহাম্মদ হামিদুর রহমান (ফেব্রুয়ারি ২, ১৯৫৩- অক্টোবর ২৮, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। মাত্র ১৮ বছর বয়সে শহীদ হওয়া হামিদুর রহমান সাত জন বীর শ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
মোহাম্মদ হামিদুর রহমান ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যশোরের মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা আব্বাস আলী মন্ডল, মাতা মোসাম্মাৎ কায়সুন্নেসা। খালিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে স্থানীয় নাইট স্কুলে সামান্য লেখাপড়া করেন। ১৯৭১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। যোগদানের পরই চট্টগ্রামের সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে প্রশিক্ষণের জন্য যান। ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমনের মুখে চাকরীস্থল থেকে নিজ গ্রামে চলে আসেন। বাড়ীতে একদিন থেকে পরদিনই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য চলে যান সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল থানার ধলই চা বাগানের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধলই বর্ডার আউটপোস্টে।
যেভাবে শহীদ হলেন/মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ
১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষভাগে হামিদুর রহমান ১ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন। ভোর চারটায় মুক্তিবাহিনী লক্ষ্যস্থলের কাছে পৌছে অবস্থান নেয়। সামনে দু প্লাটুন ও পেছনে এক প্লাটুন সৈন্য অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে শত্রু অভিমুখে। শত্রু অবস্থানের কাছাকাছি এলে একটি মাইন বিস্ফোরিত হয়। মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ফাঁড়ির খুব কাছে পৌছে গেলেও ফাঁড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত হতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিবর্ষণের জন্য আর অগ্রসর হতে পারছিলো না। অক্টোবরের ২৮ তারিখে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রেনেড ছোড়ার দায়িত্ব দেয়া হয় হামিদুর রহমানকে। তিনি পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুটি গ্রেনেড সফল ভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। সে অবস্থাতেই তিনি মেশিনগান পোস্টে গিয়ে সেখানকার দুই জন পাকিস্তানী সৈন্যের সাথে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু করেন। এভাবে আক্রণের মাধ্যমে হামিদুর রহমান এক সময় মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন। এই সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল উদ্যমে এগিয়ে যান, এবং শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন। কিন্তু হামিদুর রহমান বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেননি, ফাঁড়ি দখলের পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হামিদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে।
হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয় ভূখন্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। নীচু স্থানে অবস্থিত কবরটি এক সময় পানির তলায় তলিয়ে যায়।
২০০৭ সালের ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহন করে, এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে শহীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১১ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
মোহাম্মদ রুহুল আমিন (১৯৩৫ - ডিসেম্বর ১০, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার বাঘচাপড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আজহার পাটোয়ারী, মাতা জোলখা খাতুন। রুহুল আমিন বাঘচাপড়া প্রাইমারী স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে আমিষাপাড়া হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৩-তে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে যোগদান করেন। আরব সাগরে অবস্থিত মানোরা দ্বীপে পি.এন.এস বাহাদুর-এ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর পি.এন.এস. কারসাজে যোগদান করেন। ১৯৫৮-তে পেশাগত প্রশিক্ষণ শেষ করেন। ১৯৬৫ -তে মেকানিসিয়ান কোর্সের জন্য নির্বাচিত হন। পি.এন.এস. কারসাজে কোর্স সমাপ্ত করার পর আর্টিফিসার পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ -তে চট্টগ্রাম পি.এন.এস. বখতিয়ার নৌ-ঘাটিঁতে বদলি হয়ে যান। ১৯৭১-এর এপ্রিলে ঘাটিঁ থেকে পালিয়ে যান। ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত অতিক্রম করে ২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে থেকে বিভিন্ন স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। বাংলাদেশ নৌ বাহিনী গঠিত হলে কলকাতায় চলে আসেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী কে দুটি গানবোট উপহার দেয়। গানবোটের নামকরণ করা হয় 'পদ্মা' ও 'পলাশ'। রুহুল আমিন পলাশের প্রধান ইঞ্জিনরুমে আর্টিফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
যেভাবে শহীদ হলেন/মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ
৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলের পর 'পদ্মা', 'পলাশ' এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি গানবোট 'পানভেল' খুলনার মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌ-ঘাটিঁ পি.এন.এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ-এ প্রবেশ করে। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে গানবোটগুলো খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে এলে অনেক উচুঁতে তিনটি জঙ্গি বিমানকে উড়তে দেখা যায়। শত্রুর বিমান অনুধাবন করে পদ্মা ও পলাশ থেকে গুলি করার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু অভিযানের সর্বাধিনায়ক ক্যাপ্টেন মনেন্দ্রনাথ ভারতীয় বিমান মনে করে গুলিবর্ষণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পরে বিমানগুলো অপ্রত্যাশিত ভাবে নিচে নেমে আসে এবং আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। গোলা সরাসরি 'পদ্মা' এর ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে ইঞ্জিন বিধ্বস্ত করে। হতাহত হয় অনেক নাবিক। 'পদ্মা'-র পরিণতিতে পলাশের অধিনায়ক লে. কমান্ডার রায় চৌধুরী নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন। রুহুল আমিন এই আদেশে ক্ষিপ্ত হন। তিনি উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান করেন। কামানের ক্রুদের বিমানের দিকে গুলি ছুড়ঁতে বলে ইঞ্জিন রুমে ফিরে আসেন। কিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে বিমানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। বিমানগুলো উপূর্যপুরি বোমাবর্ষণ করে পলাশের ইঞ্জিনরুম ধ্বংস করে দেয়। শহীদ হন রুহুল আমিন। রূপসা নদীর পারে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
মুন্সি আব্দুর রউফ (১৯৪৩ - এপ্রিল ৮, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের মে মাসে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার (পূর্বে বোয়ালমারী উপজেলার অন্তরগত) সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি মেহেদী হোসেন এবং মাতার নাম মকিদুন্নেসা। কিশোর বয়সে রউফ-এর পিতা মারা যান। ফলে তিনি উচচশিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তিনি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৩-র ৮ মে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ ভর্তি হন। তাঁর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১৩১৮৭। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামে ১১ নম্বর উইং এ কর্মরত ছিলেন। সে সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।
যেভাবে শহীদ হলেন/মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ
মুন্সি আবদুর রউফ ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পনীর সাথে বুড়িঘাটে অবস্থান নেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি জলপথ প্রতিরোধ করার জন্য ৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানী সৈন্য, সাতটি স্পীড বোট এবং দুটি লঞ্চে করে বুড়িঘাট দখলের জন্য অগ্রসর হয়। তারা প্রতিরক্ষি বূহ্যের সামনে এসে ৩" মর্টার এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র দিয়ে হঠাৎ অবিরাম গোলা বর্ষন শুরু করে। গোলাবৃষ্টির তীব্রতায় প্রতিরক্ষার সৈন্যরা পেছনে সরে বাধ্য হয়। কিন্তু ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ পেছনে হটতে অস্বীকৃতি জানান। নিজ পরিখা থেকে মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করেন। মেশিনগানের এই পাল্টা আক্রমনের ফলে শত্রুদের স্পীড বোট গুলো ডুবে যায়।
হতাহত হয় এর আরোহীরা। পেছনের দুটো লঞ্চ দ্রুত পেছনে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে শুরু করে দুরপাল্লার ভারী গোলাবর্ষণ। মর্টারের ভারী গোলা এসে পরে আব্দুর রউফের উপর। লুটিয়ে পড়েন তিনি, নীরব হয়ে যায় তাঁর মেশিনগান। ততক্ষণে নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে সক্ষম হন তাঁর সহযোদ্ধারা।
শহীদ ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ার চড়ে। তাঁর অপরিসীম বীরত্ব,সাহসীকতা ও দেশপ্রেমের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্ব্বোচ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে।
মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর (১৯৪৮- ডিসেম্বর ১৪, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ১৯৪৮ সালে বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল মোতালেব হাওলাদার। জাহাঙ্গীর ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এবং ১৯৬৬ তে আই.এস.সি পাশ করার পর বিমান বাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখের অসুবিধা থাকায় ব্যর্থ হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮-র ২ জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় তিনি পাকিস্তানে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটেলিয়ানে কর্তব্যরত ছিলেন। মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য তিনি ছুটে এসেছিলেন পাকিস্তানের দুর্গম এলাকা অতিক্রম করে, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে। ৩ জুলাই পাকিস্তানে আটকে পড়া আরো তিনজন অফিসারসহ তিনি পালিয়ে যান ও পরে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার মেহেদীপুরে মুক্তিবাহিনীর ৭নং সেক্টরে সাব সেক্টর কমান্ডার হিসাবে যোগ দেন। বিভিন্ন রণাঙ্গনে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখানোর কারণে তাঁকে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে বিজয় সুনিশ্চিত করেই তিনি শহীদ হয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরকে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ আঙিনায় সমাহিত করা হয়।
যেভাবে শহীদ হলেন/মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ
১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর, লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়াল ও ৫০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়া এলাকায় অবস্থান গ্রহন করেন। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে মাত্র ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বারঘরিয়া এলাকা থেকে ৩/৪ টি দেশী নৌকায় করে রেহাইচর এলাকা থেকে মহানন্দা নদী অতিক্রম করেন। নদী অতিক্রম করার পর উত্তর দিক থেকে একটি একটি করে প্রত্যেকটি শত্রু অবস্থানের দখল নিয়ে দক্ষিণে এগোতে থাকেন।
তিনি এমনভাবে আক্রমণ পরিকল্পনা করেছিলেন যেন উত্তর দিক থেকে শত্রু নিপাত করার সময় দক্ষিণ দিক থেকে শত্রু কোনকিছু আঁচ করতে না পারে। এভাবে এগুতে থাকার সময় জয় যখন প্রায় সুনিশ্চিত তখন ঘটে বিপর্যয়। হঠাৎ বাঁধের উপর থেকে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের ৮/১০ জন সৈনিক দৌড়ে চর এলাকায় এসে যোগ দেয়। এরপরই শুরু হয় পাকিস্তান বাহিনীর অবিরাম ধারায় গুলিবর্ষন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর জীবনের পরোয়া না করে সামনে এগিয়ে যান। ঠিক সেই সময়ে শত্রুর একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় জাহাঙ্গীরের কপালে। শহীদ হন তিনি।
অন্যান্য জাতীয় বীরগণ
বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত জাতীয় বীরগণঃ
১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৩ ৬৮ জনকে এবং পরবর্তীতে ১জন সহ মোট ৬৯জনকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। এদের মধ্যে ২১ জনকে মরণোত্তর পদক দেওয়া হয়। বীর উত্তম ২য় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক।
বীর উত্তম পদকপ্রাপ্ত জাতীয় বীরদের তালিকা
বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত জাতীয় বীরগণঃ
১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৩ ৮২জনকে মরণোত্তরসহ মোট ১৭৫জনকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। বীর বিক্রম ৩য় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক।
বীর বিক্রম পদকপ্রাপ্ত জাতীয় বীরদের তালিকা
বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় বীরগণঃ
সর্বমোট ৮২৬জন বীরকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বীরপ্রতীক পদকে ভূষিত করা হয়।
বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় বীরগণের তালিকা
যাদের হাতে সূচিত হয়েছিল একটি স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নঃ
এ.কে.ফজলুল হক
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী
শেখ মুজিবুর রহমান
জিয়াউর রহমান
জেনারেল এম এ জি ওসমানী
হানাদার বাহিনীর আত্মসমার্পনের সেই ঐতিহাসিক মুহুর্ত-
পাকিস্তানীবাহিনীর আত্মসমার্পনের চুক্তিপত্রঃ
তৎকালীন সময়ের খন্ড খন্ড কিছু স্থিরচিত্র-
বিজয়ের উল্লাসে মাতোয়ারা মুক্তিযোদ্ধাগণ-
বিজয়ীর বেশে বাড়িফেরা-
সিলেট বিজয়ের পর অন্যান্য সহযোদ্ধাদের সাথে জিয়াউর রহমান-
স্বাধীনদেশে/স্বাধীন বাতাসে ফিরে আসার উল্লাস-
পরিশেষে, সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। আমাদের মনে রাখতে হবে দেশের স্বাধীনতা কারো একক অবদানে আসেনি। সবকলের সম্মিলিত আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। কারো অবদানই ক্ষুদ্র বিচার করা চলবে না। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, ডাক্তার, শিক্ষক, ছাত্র, নেতা সবাই তার দেশকে ভালবেসে, দেশমাতৃকাকে বাঁচাতেই সেদিন অস্ত্র হাতে নিয়েছিল। কারো ত্যাগই হেও করার কোন সুযোগ নেই। তাই আমাদের কোন জাতীয় বীরদের আমরা যেন কোন অবস্থাতেই অবমাননা না করি, তাদের হেও প্রতিপন্ন না করি, সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের একান্ত কর্তব্য। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের অনেক জাতীয় বীরদের হাতে বেশ কিছু রাজনৈতিক ধারা এদেশে সৃষ্টি হয়েছিল সত্যি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছিল। তখন ছিলনা কোন ভেদাভেদ। সবাই ছিল একই বাংলা মায়ের সন্তান। সুতরাং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য কোন অবস্থাতেই আমাদের কোন জাতীয় বীরদেরই অসম্মান করা উচিত বলে আমি মনে করিনা। তাদের সম্মান করতে না পারি, তাদের যেন আমরা অসম্মান না করি। তাহলে তো আমাদের নিজেদের জাতীয়তা আর অস্তিত্বেই একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায় !!!!
...তথ্য ও ছবিঃ ইন্টারনেট
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৫
চিরতার রস বলেছেন: এক নদী রক্ত পেড়িয়ে
বংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা
তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না.........
ধন্যবাদ সাদা মনের মানুষ। বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা রইল।
২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৫
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: আপনাদের মনে রাখা, আর না রাখার মাঝে কোন পার্থক্য আছে।
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৬
চিরতার রস বলেছেন: আপনার বক্তব্য আমার বোধগম্য হয়নি। একটু ব্যাখ্যা করে বলুন দয়া করে।
৩| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪৫
তাহমিনা তুলি বলেছেন: সকল জাতীয় বীরদের স্যালুট। বিজয় দিবস সফল হোক।
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৭
চিরতার রস বলেছেন: ধন্যবাদ মতামতের জন্য। বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা রইল।
৪| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:০৫
অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন:
শ্রদ্ধা ও স্যালুট,
সকল জাতীয় বীরদের,
যাদের দেশপ্রেম , সাহসিকতা আর ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন।
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৯
চিরতার রস বলেছেন: ভোর বেলা ঘুম ভাঙলো দেশের গান শুনে শুনে। চারদিকে কেমন জানি একটা উল্লাস উল্লাস পরিবেশ।
বিজয়ের শুভেচ্ছা রইল প্রেইস।
৫| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৮
সুমন কর বলেছেন: বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৭
চিরতার রস বলেছেন: বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা সুমন কর ভাই।
৬| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৩
মামুন রশিদ বলেছেন: সেই অকুতুভয় বীরদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি স্বাধীন স্বদেশ ।
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা!
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৭
চিরতার রস বলেছেন: শ্রদ্ধা ও স্যালুট,
সকল জাতীয় বীরদের।
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা!
৭| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১০
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
ভাই প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম। সংগ্রহে রাখার মত একটি পোষ্ট।
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২০
চিরতার রস বলেছেন: থ্যাংকু কান্ডারি ভাই। বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা রইল (কাল দিতে ভুইলা গেছিলাম)
৮| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: আপনার পিক গূলা খুবই পরিস্কার । ভাল লাগল । প্রিয়তে । ভাল থাকুন ।
বিজয়ের শুভেচ্ছা ।
২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৪
চিরতার রস বলেছেন: বিজয়ের শুভেচ্ছা রইল মাহমুদ ভাই।
৯| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৪
উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম। এখনকার মানুষজন দেখলে মনে হয় না যে আমাদের দেশে এমন মহান পুরুষেরা জন্মাইছিলো বা দেশের জন্য মানুষ এভাবে যুদ্ধ করছিলো!
২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৫
চিরতার রস বলেছেন: এখনও ভাল মানুষ আছে রে ভাই। দেশের ক্লান্তিলগ্নে তাদেরকেই ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
১০| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: প্রিয়তে নিয়ে গেলাম,,,,,,,,,,,শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৮
চিরতার রস বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ।।।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৪১
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: "এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
দুঃসহ এ বেদনার কণ্টক পথ বেয়ে
শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
যুগের নিষ্ঠুর বন্ধন হতে
মুক্তির এ বারতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
কৃষাণ-কৃষাণীর গানে গানে
পদ্মা-মেঘনার কলতানে
বাউলের একতারাতে
আনন্দ ঝংকারে
তোমাদের নাম ঝংকৃত হবে।
নতুন স্বদেশ গড়ার পথে
তোমরা চিরদিন দিশারী রবে।
আমরা তোমাদের ভুলব না।।"