![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক কাপ চা হাতে বারান্দায় এসে দাড়াতেই মনটা জুড়িয়ে গেল। ঠান্ডা বাতাস আর সেই বাতাসে ভেজা মাটির গন্ধ। বুক ভরে ঠান্ডা বাতাস গ্রহন করলাম। দূরে দিগন্তের কাছে থেকে থেকে বিদ্যুত চমকাতে লাগল। আর সেই সাথে হাল্কা ঝড়ো হাওয়াতো আছেই। সারাদিনের ক্লান্তির কিছুটা যেন সেই দমকা বাতাসের সাথে ঊড়ে গেল।
"ভাইজান, রাতের জন্যে কি রান্না করব?" প্রশ্ন শুনে ঘুরে তাকালাম। সবুর মিয়া গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বাংলো তে বাবুর্চির কাজ করছে। বেশ ভালো হাত। তার হাতে রান্না করা শুধুমাত্র ভাত দিয়ে ডাল খেলেই মনে হবে জেন অমৃত।
সবুর মিয়া উত্তরের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে। বাইরে তাকিয়ে বললাম "তোমার যা ইচ্ছে রান্না করো", শুনে সে তার পান খাওয়া দাত বের করে হেসে বলল " আসমানের অবস্থা বেশী ভালা না, জোর তুফান আইতে পারে। রাতের লাইগা খিচুড়ী রান্দি তাইলে, কি কন?" আমি তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম, " ঠিক আছে, খিচুড়ীই হোক"।
সবুর মিয়া চলে গেলো খিচুড়ীর আয়োজন করতে। আমি আরো কিছুখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাক্লাম।টুপ্টাপ করে ফোটায় ফোটায় বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাতাস। বৃষ্টি ভেজা বাতাস এবার যেন ঠান্ডার পরিমানটা বাড়িয়ে সরাসরি শরীরে আঘাত করতে লাগল।
আমি বারান্দার শেষ প্রান্তে চেয়ার নিয়ে বসলাম। এই জায়গাটায় বসার একটা সুবিধা হোল এখানে বাতাস ভালো আসে কিন্তু বৃষ্টি জোরে পড়লেও গায়ে পানি পড়ে না।আমি আয়েশ করে বসলাম। বৃষ্টি তখন মাঝারী আকার ধারন করেছে।
রাতে খাবার সময় কেমন যেন আলসেমী লাগছিল। চেয়ার ছেড়ে উঠতেই মন চাই ছিলনা। এর পরেও সবুর মিয়ার কচ কচানিতে উথলাম। বৃষ্টি তখনো আগের মতই ঝড়ে চলেছে। পাহাড়ী অঞ্চলে বৃষ্টির সময় হড়কা বান সৃষ্টি হয়।দেখে মনেহয় যেন ছোটখাটো নায়াগ্রা জলপ্রপাত। কি তার গর্জন। আমার বাংলোর পাশ দিয়েই হড়কা বান বয়ে চলার পথ রয়েছে। বৃটিশ আমলের এই বাংলো এখন সরকারের দখলে। সরকারি চাকুরিরত যারা এই অঞ্চলে পোস্টিং পায়, তারা এই বাংলোর সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। বর্তমানে আমি আছি এর সুযোগ সুবিধা গ্রহনে ব্যাস্ত।
বিছানায় শোয়ার একটু পরেই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি। টিনের চালে বৃষ্টির একটানা শব্দে আমার দু চোখের পাতা লেগে আসি আসি করেও আসে না। যেন এক অন্যরকম আলস্যে আমার শরীর জড়িয়ে আছে। এমন এক আলস্য যেটা ঘুমিয়ে পড়লেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে ঘুমানো যায় না।
না, আমি ঘুমুতে চাই না। আজ রাতের বৃষ্টি আমি উপভোগ করতে চাই।
বৃষ্টির তীব্রতার সাথে সাথে বাজ পড়ার আধিক্যও বেড়ে গেছে। থেকে থেকে অন্ধকার কক্ষ আলোকিত করে বজ্রপাত হতে লাগল।
মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে অজস্র কল্পনা, গান, কবিতা। কিন্তু আমি কোন কিছুই করি না। শুধু বৃষ্টির গান শুনতে থাকি। আবার গিয়ে বসি বারান্দায়। সেই জায়গায়, যেখানে শুধু বাতাস শরীর ছূয়ে যায়, বৃষ্টির জল শরীর স্পর্শ করে না।
আমার অস্বস্তি লাগে। ইচ্ছে করে এই অর্ধভেজা বারান্দায় কাথা বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ি। না, তা সম্ভব না। আমি চেয়ার টেনে বসি সেখানে, যেখানে বাতস ও বৃষ্টি দুইই আমাকে স্পর্শ করতে পারে।
নিজের শরীরের বাকী ক্লান্তি গুলোও যেন ধুয়ে মুছে যায় আমার। হড়কা বানের ডাক শোনা যাচ্ছে। আমি আমার আলস্য শরীর কে টেনে নিয়ে যাই বিছানার দিকে। বৃষ্টির উদ্যাম নৃত্য আমার দুচোখের পাতা কে আরো বেশী ভারী করে তোলে। আমি নিজেকে বৃষ্টির হাতে তুলে দেই। আমার দেহ,মন সব কিছু বৃশটি নিজের করে নেয়। শরীরের প্রতিটি স্নায়ু যেন সেই অনুভূতির কাছে নতি স্বীকার করে। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি না।
নিজেকে তুলে দেই সেই রাতের বৃষ্টিকে ।।।
©somewhere in net ltd.