![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কী ঘন কুয়াশা...আধহাত দূরের জিনিসও ঠাওর করতে কষ্ট হয়...সকাল আটটা বাজে কিন্তু সূর্যের দেখা নেই..লঞ্চের যাত্রীরা অনেকে বলাবলি করছে আজ লঞ্চ ছাড়বে না...কেবিনে চোখ বন্ধ করে মটকা মেরে পড়ে আছি.. যাত্রীদের টুকটাক কথা কানে ভেসে আসছে...এসব কথার মাঝেই লঞ্চটা হালকা দুলে উঠলাে...লঞ্চের হুইসেলে কেঁপেে উঠলো চারপাশ...কেবিনে শুয়েও টের পাই লঞ্চের বারান্দায় মানুষের ছুটোছুটি...লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে....পর্দা সরিয়ে লঞ্চের বাইরের জমাট বাঁধা কুয়াশা দেখি...কঠিন ভাষায় যারা বাংলা লেখেন তারা এখানে ‘কুজঝটিকা’ শব্দটি অনায়াসে লিখে দিতে পারতেন...
আধা ঘন্টার মতো হয়েছে শক্ত কিছুতে বাড়ি লাগার মতো শব্দ হয়..খানিকটা কেঁপে ওঠে থেমে গেলো লঞ্চ...বারান্দায় ডেকে হুটোপুটির শব্দ...কি হয়েছে জানতে কেবিন ছেড়ে বেরুবার আগেই আবারো খানিকটা কেঁপে একপাশে সামান্য কাত হয়ে গেলো লঞ্চ...
কেবিন ছেড়ে বেরুতেই ছোট ভাই Rakibul Hasan খানিকটা আতঙ্কিত চোখে জানায় চড়ায় আটকে গেছে...বারান্দায় সব মানুষ ভিড় করেছে...লাইনের নিয়মিত যাত্রীরা নির্বিকার ভঙ্গিতে ঘোরাফেরা করছে আর আমাদের মতন মৌসুমি যাত্রীরা একটু আতঙ্কিত হয়ে রেলিংয়ে ঝুঁকে নদীর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ঘটনাটা কী?
আবারো লঞ্চের ইঞ্জিন গোঁ গোঁ শব্দ করতে করতে গর্জে উঠলো...লঞ্চটা এবারে একটু পিছিয়ে অারেকটু কাত হয়ে গেলো আর লঞ্চের প্রপেলারের ধাক্কায় পানির নীচের কাদামাটি উঠে আসতে লাগলো....এবারে নির্বিকার ভঙ্গিতে ঘোরাফেরা করা মানুসগুলোও বেশ চিন্তিত মুখে রেলিংয়ে ঝুঁকে ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো...
আমার পাশ থেকে একজন বলে উঠলো লঞ্চ চরে আটকালো কেমনে? সারেং ব্যাটা জিপিএস দেইখ্যা চালায় না...এবারে তার পাশেরজন উত্তর দিলেন এই লঞ্চটায় জিপিএস নেই...আবার ছোটভাই এবার তাকে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ভাই এটা কোন জায়গা আন্দাজ করতে পারেন? লোকটা চোখ খুব ছোট করে চারদিকে দেখার চেষ্টা করলো যদি আন্দাজ করার মতো কিছু পাওয়া যায়...লোকটা কিছু বলার আগেই ও আমাকে বললো, এ্যাই ভাইয়া তোমার ফোনে দেখো তো...আমি জিপিএসটা অন করলাম...সঙ্গে সঙ্গে লোকটা প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাে আপনার মোবাইলে জিপিএস অছে...তাড়াতাড়ি মাষ্টার রুমে যান...আমি একটু ইতস্তত করছি দেখে তিনি নিজেই আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন...
মাষ্টার রুমে গিয়ে দেখি সেখানকার পরিস্থিতি যাত্রীদের চেয়ে আরো খারাপ...সারেং ঠিক বুঝতে পারছেন না এটা কোন জায়গা আর তার দুই সহকারী চালক দুজনে একে অপরকে দোষ দিয়ে ক্রমাগত ঝগড়া করছে...আমি ভেবেেছিলাম আমাকে দেখে বোধহয় সারেং ঝাড়ি দেবেন...কারন উৎসুক জনতার অনেকেই মাষ্টার কেবিনের দরজার ভিড় করেছে আসল ঘটনাটা জানার জন্য আর সেই সঙ্গে উপদেশ বৃষ্টিতো সমানতালে ঝরছে...
আমি কিছু বলার আগেই ওই ভদ্রলোক আমার মোবাইল দেখিয়ে বললেন, জিপিএস আছে...সারেং আমার দিকে বেশ আগ্রহভরে তাকিয়ে বললেন, ঠিক কোথায় আটকাইছে আমাকে দেখান তো???আমি তাকে দেখালাম...একটু চিন্তা করে বললেন ম্যাপটা ছোট করেন...এবারে আমাকে ঢাকা যাওয়ার রুটটা দেখান....আমি তাকে পুরো রুটটা দেখালাম...কয়েক মিনিট মনোযোগ দিয়ে দেখলেন...
এরপর চিৎকার দিয়ে বললেন ওই দড়ি ফালা, পানি মাপ...আর তার সহকারী চালকের দিকে তাকিয়ে বললেন, কোর্স ঠিক কর...লঞ্চটা একটু দুলে উঠলো...একপাশে একটু কাত হয়ে ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলো...
দুইঘন্টার মতো হয়েছে লঞ্চটা কুয়াশা কেটে চলছে...এখনো কুযাশা সরে যায়নি...তাই মাষ্টার একটু পরপর ভেঁপু বাজাচ্ছেন সামনে বড়ো কোন নৌযান নোঙ্গর করা থাকলে যেনো শব্দের প্রতিধ্বনিতে তা বুঝতে পারেন...আর একটু পর পর আমার হাতে ধরে থাকা মোবাইলের স্ক্রীনে চিন্তিতমুখে লঞ্চের গতিপথ দেখছেন...
তবে লঞ্চ চলা শুরু করা মাত্রই যাত্রীরা সব নির্বিকার তা ওই মাষ্টার কেবিনে বসেও খুব বুঝতে পারছিলাম...গজারিয়ার কাছাকাছি আসতেই হুট করে কুয়াশা কেটে রোদ উঠলো...রোদ উঠার সঙ্গে সঙ্গেই সারেংয়ের সহকারী দুটি কথা বললেন...প্রথমটি আলহামদুলিল্লাহ...দ্বিতীয়টি ভাই অনেক কষ্ট করলেন...একটু চা খান...
চা খেতে খেতে আমি নিজেও দুটি কথা ভাবছিলাম...প্রথমটি.... একটু আগেও ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম এই ভেবে, লঞ্চটা না কোন নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা খায়। কারন কুয়াশায় একরকম অন্ধের মতই পথ চলতে হয়েছে...দ্বিতীয়টি...থাক এটা না জানলেও চলবে...সব কথা জানতে নেই...
©somewhere in net ltd.