![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
শরীফের বৌ’য়ের ডেলিভারীর ডেট দিয়েছে। সতেরই ডিসেম্বর। প্রথম আল্ট্রা সনোগ্রামের রিপোর্ট অনুযায়ী ডেলিভারি ষোলই ডিসেম্বর হবার কথা ছিল।রিপোর্ট দেখার পর ‘প্রথম সন্তান ষোলই ডিসেম্বরে জন্মাবে’ এই আনন্দে শরীফ সারারাত ঘুমাতে পারেনি। বৌ মিলি কে একটু পর পর খালি বলে- আমাদের বাচ্চার মেট্টিকের সার্টিফিকেটে লেখা থাকবে জন্মতারিখ,ষোলই ডিসেম্বর! খবরদার স্কুলে তুমি আবার বয়স কমাবা না, খবরদার!
শরীফ দের বংশধারায় ছেলেপুলে কম। শরীফ মোটে একজন। বাপের দিকে একমাত্র চাচা “বাংলাদেশ না হইয়া পাকিস্তান থাকলে ভাল হইত” এসব উল্টাপুল্টা কথা বলার কারনে শরীফ দের সাথে তার উঠক বৈঠক নাই।
শরীফের একমাত্র মামা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা মামা মুক্তিযুদ্ধেই শহীদ হবার কারনে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ আর তাঁকে দেখতে হয়নি।
ছোট বেলা থেকে লেদা বাচ্চা না দেখার কারনে শরীফের জানা ছিল না যে প্রথম রিপোর্টে বাচ্চা জন্মানোর যে ডেট দেয় সেটা এক আধদিন এদিক ওদিক হতে পারে। তাই হঠাৎ করে ষোল’র জায়গায় সতের শোনে শরীফ পুরাই মুষড়ে পড়েছে। শরীফের মনে হচ্ছে, তার শুধুই একটা বাচ্চা হচ্ছে। আর কিছু নয়!
ষোলই ডিসেম্বর সকাল এগারটা। মিলি টিভি তে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে আগামীকাল ক্লিনিকে যাবার জন্য স্যুটকেস গোছাচ্ছে। শরীফ চায়ে বেলা বিস্কুট ভিজিয়ে খাচ্ছে।
মিলি, আজকে একবার ক্লিনিকে গেলে কেমন হয়?, শরীফ মিনমিনে গলায় মিলি কে বলল।
ডেলিভারি’র ডেট দিছে আগামী কাল! এই ভারী শরীর নিয়ে আমি আজকে ক্লিনিকে দৌড়াব, না! পিকনিক পাইছ?, মিলি ঝামটে উঠল!
আহা রাগ কর না মিলি! আমার এক বন্ধুর বাচ্চা যেদিন ডেট ছিল তার আগের দিন পেটের ভেতর পায়খানা করে দিছিল! পায়খানা খেয়ে বাচ্চার অবস্থা ত কাহিল! এজন্য বলছিলাম কি!
মিলি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে শরীফের দিকে তাকাচ্ছে। মিলির মনে হচ্ছে সে পুরাই মিথ্যা কথা বলছে। সেকথা তাকে অবশ্য বলে লাভ নাই। তখন আরেকটা মিথ্যা কথা বলবে। সেই মিথ্যা হবে আরো বিচিত্র!
মমতা মাতৃ সদন। মিলি ভেতরে গেছে। শরীফ গাইনি’র রুমের বাইরে বসে আছে। গাইনি শব্দ টা শরীফের খুব উল্টাপুল্টা লাগে। গাই শব্দটা স্ত্রী বাচক। গাইনী ডাক্তার রা বেশির ভাগ ই লেডিস। তাহলে গাই নি বলার দরকার কি? কথা অন্য দিকেও আছে। ইংরাজী তে আবার গাই মানে ব্যাটা ছেলে! সেই হিসাবে লেডিস ডাক্তার কে গাইনি অবশ্য বলা যায়। সবচেয়ে ভাল হত একেবারে ভিন্ন কোন শব্দ থাকলে। যেটা শুনলে এরকম কোন কনফিউশন তৈরী হত না।
ঠুং করে কলবেল বাজায় বাইরে বেঞ্চিতে বসে থাকা ‘খালা’ গাইনি’র রুমের ভেতরে ঢুকেছিল। একটু পরেই রুমের পর্দা সরিয়ে শরীফ কে ডাকল- মেডাম আফনেরে ডাআকে! খালার উচ্চারন খাস মমিন্সিঙ্গা! বেটি মমিন্সিং থেকে ‘খালাগিরি’ করার জন্য চট্টগ্রামে চলে এসেছে!
শরীফ ভেতরে ঢুকল।
গাইনি’র চেহারা ভারী আছে। দেখে ভরসা পাওয়া যায়। গাইনি শরীফ কে বসার পার্মিশন দিয়ে বললেন,
আপনি কি করেন?
মেডাম আমি বেবসা করি। গারমেন্টসে মাল সাপ্লাই দিই। নিট, অভেন সব!
আপনার স্ত্রী’র ডেলিভারী ত আগামী কাল কে হবার কথা ছিল। কিন্তু ছোট্ট একটা সমস্যা হয়েছে! সমস্যাটা একটু সূক্ষ্ম। আপনাকে বুঝিয়ে বললেও হয় ত বুঝবেন না। যাইহোক, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাচ্চা আজকে সিজার করে নিয়ে ফেলব। আপনার আপত্তি নাই ত?
শরীফের সারা গায়ে কাঁটা দিচ্ছে! তার সন্তান বিজয় দিবসের দিনে জন্মাবে! তার সব সার্টিফিকেটে জন্মতারিখ লেখা থাকবে ষোলই ডিসেম্বর! স্কুলে ভর্তি করানোর সময় সে নিজেই থাকবে। নইলে দেখা যাবে মিলি বয়স কমাতে গিয়ে ডেটে গন্ডগোল করে ফেলেছে। এই রিস্ক কিছুতেই নেয়া যাবে না!
মেডাম, আমি আপনাদের ডাক্তারী সমস্যার কি বুঝব! আমাদের গারমেন্টসের কিছু হলে বুঝতাম। আপনি যদি মনে করেন বাচ্চা সিজার করে নিয়ে নেবেন ত নিয়া নেন!
ডঃ সুমাইয়া শাহনূর বিস্মিত দৃষ্টিতে সামনে বসা সুদর্শন যুবকের দিকে তাকিয়ে আছেন। যুবকের চোখ দিয়ে অশ্রুর বড় বড় ফোঁটা পড়েই যাচ্ছে। পড়েই যাচ্ছে। গাল বেয়ে বেয়ে অশ্রু’ র ফোঁটা পড়ে শার্টের বুক পুরা ভিজে গেছে। সে মাথা নিচু করে চেয়ারে বসেই আছে। তার কোন দিকে কোন খেয়াল নেই!
©somewhere in net ltd.