![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমকালীন ভাবনা ও প্রমথ চৌধুরী
তিনি ৭ আগস্ট, ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে পাবনা জেলার চাটমোহর থানার হরিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দুর্গাদাস চৌধুরী। কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স,প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেনিতে বি. এ. পাস,ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে এম.এ পাশ করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড গমন করেন এবং তিনি সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথেই ব্যারিস্টারি পাশ করেন। প্রথম জীবনে কিছুদিন আইন ব্যবসা করেন এবং পরবর্তীতে আইন মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেন। অবশ্য সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই। সুতরাং সে হিসেবে রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী-জামাতা ছিলেন প্রমথ চৌধুরী।
বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম প্রমথ চৌধুরী। তিনি বাংলা সাহিত্যে বীরবল নামেই সমধিক পরিচিত। পরবর্তীতে তিনি বিখ্যাত ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং কৃতিত্বের সাথে পালন করেন। বাংলা সাহিত্যকে তিনি নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন সমালোচক। বর্তমানে সমালোচনার নামে যদিও অনেকে নিন্দা করে,ব্যক্তিকে খাটো করে,তার সৃষ্ট কর্মকে তুলোধুনো করে ব্যক্তি আক্রোশে। প্রমথ চৌধুরী ছিলেন তার উল্টো স্রোতের যাত্রী। ব্যক্তি আক্রোশ তাঁর সমালোচনায় ছিল না বললেই চলে। তিনি সাহিত্যের গঠনমূলক সমালোচনা করতেন। যা এখনো তাঁকে প্রথম শ্রেণির সমালোচকের আসনেই অপরিবর্তিত রেখেছে।
তার ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার মাধ্যমে তিনি নব্য লেখকদের একটি শক্তিশালী সংঘ তৈরি করেছিলেন। তাঁর রচনা ছিল বহুমুখী ধরনের। ব্যঙ্গাত্বক রচনাতেও তাঁর জুড়ি নেই। তাঁর কবিতাগুলো ছিল খুবই বাস্তববাদী এবং রূঢ়। তাঁর কবিতগুলো আকস্মিক ছিল নিঃসন্দেহে,বৈচিত্র্যপূর্ণও কিন্তু কবিতার প্রাণ যেন তাতে অনেকটাই অপূর্ণই থেকে যেত।
তার ছোটগল্পগুলো ছিল অসাধারণ। এসব ছোটগল্পের ক্ষেত্রে তিনি বিষয়,সূক্ষ ধারণা,ভাষার সৃষ্টিশীল ব্যবহার,নিটোল বাস্তবতার রূঢ়তা ছবির মত করে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই ধাঁচটি পরবর্তীতে আমরা তাঁর প্রবন্ধগুলোতেও দেখতে পাই।
তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। সুতরাং সে কারণেই তিনি ইউরোপীয় শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। যার প্রভাব পড়েছিল পরবর্তী সাহিত্যে। অনেকেই মত পোষণ করেন যে, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবের কারণেই তাঁর প্রবন্ধগুলোতে অনেক উদ্ভট বিষয় স্থান পেয়েছে।
নিঃসন্দেহে তাঁর লেখার ধাঁচ বাংলা সাহিত্যের জন্য মাইলফলক। তিনি ছিলেন মননশীল ও প্রচন্ড যুক্তিবাদী।
কোন কোন সমালোচক মনে করেন,প্রমথ চৌধুরীর লেখা ‘প্যারাডকসে আক্রান্ত’অর্থাৎ যে উক্তি আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হলেও সত্যবর্জিত নয়। কিন্তু সত্য হল তাঁর লেখার ধরণ খুবই বুদ্ধিবৃত্তিক,যুক্তিনিষ্ঠ।
পারিবারিক সূত্রে রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী-জামাতা এবং বয়োকনিষ্ঠ্য হয়েও গদ্য রচনারীতিতে তাঁকে প্রভাবিত করেছিলেন প্রমথ চৌধুরী। তার গল্প, সনেট,বাংলা সাহিত্যে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি,কিন্তু প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধ এবং ভাষাভঙ্গি আর ভাবনার ধারা পরবর্তী একটি গোষ্ঠীর উপর বিশেষ ক্রিয়াশীল হয়েছে। তাই রবীন্দ্র যুগের লেখক হয়েও বাংলা গদ্যের একটা স্বতন্ত্র ধারা প্রতিষ্ঠার দাবিদার হিসেবে প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিশেষ খ্যাত। বাংলায় কথ্যরীতি তাঁরই হাতে সাহিত্যিক স্বীকৃতি লাভ করে । রবীন্দ্রনাথের জোর সমর্থন এবং ব্যক্তিগত চেষ্টায় সে রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। বস্ত্তত, প্রমথ চেীধুরীর ‘সবুজপত্র’ (১৯১৪)পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই এই দুজনের প্রচেষ্টাতে এই কথ্যরীতির পূর্ণতম প্রাণপ্রতিষ্ঠা ঘটে।
প্রমথ চৌধুরী বাংলাভাষীকে বোঝাতে পেরেছিলেন,‘‘ভাষা মানুষের মুখ থেকে কলমের মুখে আসে,কলমের মুখ থেকে মানুষের মুখে নয়।’’ উল্টোটা চেষ্টা করতে গেলেই মুখে শুধু কালি পড়ে।’’ ‘সবুজপত্র’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে প্রমথ চৌধুরী বাংলা গদ্যে নবরীতি প্রবর্তন করেন এবং তাঁর প্রবন্ধাবলিতে প্রমাণ করেন যে, চলিতভাষায় লঘুগুরু সকল প্রকার ভাবভাবনার প্রকাশ সম্ভব। নাগরিক বৈদগ্ধ,মননের তীক্ষ্ণ চমক, রোমান্টিক ভাবালুতার বিরুদ্ধতা, বুদ্ধির অতিচর্চা এবং ক্বচিৎ ব্যঙ্গ,ক্বচিৎ রঙ্গ-ব্যঙ্গের হাসি প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধের ভাষায় বিধৃত। উইট এপিগ্রামের সুপ্রচুর ব্যবহারে তাঁর প্রবন্ধ-পাঠক সদা-উচ্চকিত।
দর্শন,রাষ্ট্রনীতি,ভাষা,সাহিত্য,ইতিহাস ইত্যাদি নানা বিষয়ে তিনি যেসব প্রবন্ধ লিখেছেন সেগুলোর সর্বত্রই তাঁর রচনায় তীক্ষ্ণ মৌলিকতার চিহ্ন রয়েছে। বিষয়ের অভ্যন্তরে বিতর্কের ভঙ্গিতে প্রবেশ করে তার প্রাণকেন্দ্রটিকে আলোকপাত করতে প্রমথ চৌধুরীর জুড়ি নেই। সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও তিনি সেইভাবে খ্যাত। তাঁকে এককথায় সৃষ্টিশীল এবং রূপবাদী আখ্যা দেওয়া যেতে পারে।
বাংলা ভাষার একজন আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানী ও বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক মহাম্মদ দানীউল হক প্রমথ চৌধুরীকে ‘রূপবাদী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।’,
পান্ডিত্যপূর্ণ বিষয়বস্ত্তর আলোচনায় নীরস প্রসঙ্গে বলার ভঙ্গিতে প্রমথ চৌধুরী প্রাণসঞ্চার করতে পারতেন। তাই তিনি নাম ধারণ করেন ‘বীরবল’(সম্রাট আকবরের সভার অন্যতম ‘নবরত্ন’)। ‘বীরবলের হালখাতা’,‘নানাকথা’,‘রায়তের কথা’ প্রভৃতি বইয়ে প্রমথ চৌধুরীর বাগ্-ভঙ্গির চটুলতা অপরূপভাবে ধরা পড়েছে। বলার ভঙ্গি বলার বিষয়কে ছাপিয়ে উঠেছে। ঋজু,কঠিন ও তীক্ষ্ণ ভঙ্গিতে তিনি যা বলেছেন তার প্রধান কথা হচ্ছে:মন ও সাহিত্যের মুক্তির কথা।
প্রমথ চৌধুরীর মতে,সাহিত্যের উপাদান হচ্ছে মানবজীবন ও প্রকৃতি। মানব জীবনের সাথে যার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ নেই তা সাহিত্য নয়। তবে সাহিত্য মানব জীবনের বস্ত্তগত রূপ নয়,আবার প্রকৃতির হুবহু অনুকরণও নয়।মানবীবন ও প্রকৃতি থেকে গ্রহণ বর্জনের মাধ্যমে উপযুক্ত উপাদান নির্বাচন করে শিল্পী মনের রূপ-রস,সুখ-দুখ,আশা-আকাঙ্ক্ষা মিলিয়েই সৃষ্টি হয় প্রকৃত সাহিত্য। আমরা তাঁর রচনার প্রত্যেক পরতে পরতে দেখতে পাই মানবজীবন ও প্রকৃতির উপাদানের নির্যাসের পরিপূর্ণ অবয়বের চিত্র। মূলত সাহিত্যের দুটি দিক রয়েছে। যথা-বিষয় ও সৌন্দর্য। প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যে বিষয় ও সৌন্দর্যকে সমমূল্যে বিচার করেছেন।
প্রমথ চৌধুরী জীবনে একটি উপন্যাসও লেখেন নি। বৃহদাকৃতি রচনার প্রতি তাঁর কিছুমাত্র আকর্ষণ ছিল না,মেজাজ ছিল তাঁর ছোট লেখার অনুকূল। বাংলা সাহিত্যে বিদগ্ধ,যুক্তিনিষ্ঠ সুপ্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী বাংলায় ফারসি ছোটগল্পের আঙ্গিকরীতিকে তিনিই প্রথম পরিচিত করিয়েছিলেন। রূপসিদ্ধতা,ও আঙ্গিক গঠনের দুর্লভ নিপুণতার পরিচয় ও ভাষায় তীক্ষ্ণ মননশীলতা,বাকচাতুর্যের চমৎকারিত্ব এবং বুদ্ধির অসিচালনা তাঁকে দিয়েছে এক বিশিষ্ট ‘স্টাইল’-ফরাসি সংজ্ঞায় যা প্রমথ চৌধুরী স্বয়ং।
তিনি বাংলা সাহিত্যে ইতালীয় সনেটের প্রবর্তক হিসেবে খ্যাত। বাংলা সাহিত্যে নিজস্ব ধারায় সনেট রচনা করেছেন। তাঁর রচনাসম্ভার নিম্নে উল্লেখ করা হল:
কাব্যগ্রন্থ: সনেট পঞ্চাশৎ (১৯১৯),পদচারণ (১৯২০)।
গল্পগ্রন্থ: চার ইয়ারি কথা (১৯১৬), আহুতি (১৯১৯) ঘোষালের ত্রিকথা (১৯৩৭),নীল লোহিত (১৯৩৯),অনুকথা সপ্তক (১৯৩৯) সেকালের গল্প (১৯৩৯),ট্রাজেডির সূত্রপাত (১৯৪০),গল্পসংগ্রহ (১৯৪১), নীল লোহিতের আদি প্রেম (১৯৪৪)দুই বা এক (১৯৪০) ।
প্রবন্ধগ্রন্থ: তেল-নুন-লাকড়ি (১৯০৬), নানাকথা (১৯১১), বীরবলের হালখাতা (১৯১৭), আমাদের শিক্ষা (১৯২০), দুই ইয়ারির কথা (১৯২১), বীরবলের টিপ্পনী (১৯২৪), রায়তের কথা (১৯২৬), নানাচর্চা (১৯৩২), ঘরে বাইরে (১৯৩৬), প্রাচীন হিন্দুস্থান (১৯৪০), বঙ্গ সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় (১৯৪০), প্রবন্ধ সংগ্রহ (১ম ও ২য় খন্ড) [১৯৫২-১৯৫৩]
ইংরেজি গ্রন্থ: Tales of Four Friends(1944)
বাংলা সাহিত্যে ‘চুটকি’ সাহিত্যের প্রচার,প্রসার,বাকবৈদগ্ধতা ও সুনিপুন বিন্যাসে, চুটকির নতুনত্বে প্রমথ চৌধুরীর ভূমিকা অন্বষীকার্য।
ছদ্মনাম: বীরবল,নীললোহিত।
সাহিত্যে সত্য অন্বেষণ ও চর্চা ছিল যেন তাঁর জীবনের ব্রত। শ্রীযুক্ত হরিন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয় অবশ্য বলেছেন,‘আমরা না পাই সত্যের সাক্ষাৎ,না করি সত্যাসত্যের বিচার। আমারা সত্যের স্রষ্টাও নই,দ্রষ্টাও নই . . . কাজেই সাহিত্যে আমাদের দর্শনচর্চা রিয়ালও নয়,ক্রিটিকালও নয়।’ অবশ্য তিনি নিজেই ‘সবুজপত্র’ বলেছেন,‘‘ যিনি গুপ্ত জিনিস আবিষ্কার করতে ব্যস্ত ,ব্যক্ত জিনিস তাঁর চোখে পড়ে না।’’ কিন্তু তারপরও তার নিরন্তর প্রচেষ্টা সাহিত্যে নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
জীবন ঘনিষ্ঠ লেখাই তাঁকে কালের ম্রিয়মাণ রেখায় মূর্ত করে রেখেছে। ধ্রুব সত্য হল মানবজীবনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকলে ব্যক্তি ভাল মানের সাহিত্য রচনা করতে পারে না। যে জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ হতে সাহিত্য সৃষ্টি হয় তা দৈনিক জীবন নয়।কথায় চিড়ে না ভিজলেও যে কথার দ্বারা মন ভেজে তা অনস্বীকার্য। যে কথায় মন ভেজে সে কথা দিয়েই রচিত হয় সাহিত্য। কাক-কোকিল যে ভাষায় মানুষের ঘুম ভাঙায়,মানুষকে জাগিয়ে তোলে,সাহিত্যে সে জাগরণের ভাষা থাকা দরকার। আর এসব সকল দিক দিয়েই যেন তার রচনা ছিল সমৃদ্ধ । ভাব,ভাষা ও উচ্ছ্বাসে টইটম্বুর।
অবশ্য অপ্রিয় হলেও সত্য যে,প্রমথ চৌধুরীরর ভাষাদর্শের সাথে সাহিত্যাদর্শের দ্বন্দ্ব ছিল। ভাষাদর্শে তিনি বিপ্লবী ও অগ্রবর্তী। কিন্তু সাহিত্যাদর্শে তিনি অতীতচারী-গ্রিক,রোমান ও সংস্কৃত সাহিত্যাদর্শের উত্তরাধিকারী। তবে সাহিত্যাদর্শে তিনি প্রাণের,তারুণ্যের,যৌবনের উপাসক,ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপের উপাসক,সামাজিক মিথ্যার শত্রু,সৌন্দর্যের ভক্ত,সাহিত্যে স্বতন্ত্র মর্যাদার সমর্থক এবং সবধরনের নীতি শাস্ত্রের বিরোধী। বস্ত্তত বাংলা সাহিত্যে তিনি মানসিক যৌবনের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যে প্রাণের প্রতিষ্ঠা হোক,যে প্রাণ সকল বাসনা মুক্ত,যে প্রাণ নিজের পথ সৃষ্টি করে নেয়।
বর্তমানে আমরা পোশাক পরিচ্ছদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে যা করি তা হল- আরামের চেয়ে ফ্যাশনের খাতিরেই পোশাক নির্বাচন করি ও পরিধান করে থাকি। কিন্তু হওয়া উচিত তার উল্টোটা। ঠিক তেমনি সাহিত্য রচনা ক্ষেত্রেও বর্তমানে যা করা হচ্ছে- তা হল কেবল বিষয়ের বৈচিত্র্যতা আনয়ন। কিন্তু হওয়া উচিত ভাষার সৃষ্টিশীল
নান্দনিক উপস্থাপন।
আগেই বলা হয়েছে প্রমথ চৌধুরীর প্রতিটি প্রবন্ধে তাঁর প্রকাশভঙ্গি স্বাতন্ত্রে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ভাষার বুননীতে,শব্দ নির্বাচনে,অলংকার সৃষ্টিতে এবং উপস্থাপন কৌশলে তাঁর মুন্সিয়ানা সুস্পষ্ট। ঢিলেঢালা মেজামে নানা প্রসঙ্গের অবতারণা,প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে ছুটে চলার বিলাস,কথাকে ঘুরিয়ে শ্লেষের সৃষ্টি করা,তীক্ষ্ণাগ্র ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য প্রভৃতিতে তাঁর প্রবন্ধ বীরবলী স্টাইলের দোসর হয়ে উঠেছে। তিনি ছিলেন ভাষা শিল্পিও। ভাষাকে
সাহিত্য সাধনা তাঁর কাছে জীবন সাধনার নামান্তর। তিনি মনে করেন-মানব মনে দুটি আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান। একটি জীবন ধারনের আকাঙ্ক্ষা,অন্যটি আত্মধারনের(আত্মবিস্মৃতির)। এ দুটির সমন্বয়েই সৃষ্টিশীল সাহিত্য সৃষ্টি হয়। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন যে- মানবজীবনে যৌবনই সৃজনশীল। ব্যক্তিগত জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও জাতির সমষ্টিগত জীবনপ্রবাহে নিজেকে সংযুক্ত রাখতে পারলে মানসিক জীবন বিনাসের আশঙ্কা থাকে না। তিনি তাঁর জীবনব্যপিই তার সাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি তাঁর প্রায় রচনাতেই উল্লেখ করতেন-‘আমাদের প্রধান চেষ্টার বিষয় হওয়া উচিৎ কথায় ও কাজে ঐক্য রক্ষা করা,ঐক্য নষ্ট করা নয়।’ তাঁর সবগুলো রচনা সূক্ষাতিসূক্ষ বিশ্লেষণ করলে আমরা তাঁর কথা ও কর্মের সঙ্গতি স্পষ্ট দেখতে পাই।
বাংলা সাহিত্যের এই বিখ্যাত দিকপাল,মননশীল,যুক্তিবাদী,সৃষ্টিশীল ভাষাবিদ,কবি,সুপ্রাবন্ধিক,গল্পাকার ২সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
©somewhere in net ltd.