নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প : 'চক্ষুলজ্জা ' :P

১৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৮

চক্ষুলজ্জা



সূর্য তখন অনেকটাই পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। সূর্যের তেজস্ক্রীয়তা তেমন একটা নেই বললেই চলে। অদূরেই প্রধান সড়ক। সড়কের ওপাশেই শাওনের বাসা। বাসাটি অবশ্য তাদের নিজের নয়। মাস কয়েক হল তারা এ বাসা ভাড়া নিয়েছে। বেশ জাকজমকপূর্ণ। বাসার কারুকার্য দেখে মালিককে নিঃসন্দেহে সৌখিন বলে যে কারও প্রতিয়মান হবে। বাস ট্রাকের যান্ত্রিক শব্দে তার প্রথম প্রথম ভাল ঘুম হত না,পড়াশোনাতেও তেমন একটা মনোযোগ দিতে পারত না। অবশ্য এখন তার কাছে এসব কর্কশ শব্দ ডাল-ভাতের মতই সয়ে গেছে। সেদিন হঠাৎ তার কক্ষে চয়ন এসে প্রবেশ করে অনুচ্চ স্বরে বলে-চল শিশিরের মেছে যাই। - আজ না কাল যাব। ঠিক সকাল ৯টার দিকে। ছোট ভাইটা আজ বাড়ি থেকে আসবে কি না তাই!

- আচ্ছা, কাজ যখন পড়েই গেছে তখন কি আর করা! তবে দেখিস ৯টার গাড়ি যেন ১০টায় না ছাড়ে!

- ওকে।

কথাটি বলেই চয়ন কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেল। দুজনেই শহরে থাকে, শাওন পরিবারের সাথে আর চয়ন মেছ করে। বামদল বাসদের দুজনেই নিবেদিত প্রাণ। পড়াশুনাতেও দুজনে ভাল। শাওন নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র আর চয়ন পড়ে এম সি কলেজে। দলীয় কর্মকান্ডের সুবাদেই দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুতের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

পরদিন সকাল বেলা। কুয়াশা তখনো পুরোপুরি কেটে ওঠে নি। সূর্য বাবু যেন নিরস আলো ছড়াচ্ছে! কুয়াশায় সবুজ ঘাসগুলো আরও সবুজ ও সতেজ হয়ে উঠেছে। কোথাও পাখ-পাখালির কিচির-মিচির শব্দের লেশও নেই। রাসত্মায় যান চলাচল ক্রমেই বাড়ছে। শাওন, চয়ন ও তাদের দলের কলেজ সভাপতি হিমেল একত্রে শিশিরের মেছের উদ্দেশ্যে বের হল। শাওন অবশ্য আগে কখনই শিশিরের মেছে যায় নি। তবে শাওনের জানা ছিল শিশিরের বাসা নূরপুরে। শহর থেকে কিছুটা দূরে। পল্লীর নিসত্মরঙ্গ পরিবেশ,সবুজ শ্যমলিমা নূরপুরের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বাসা নং ৫ না ৬ তা তার সঠিক মনে পড়ল না,তবে এটা মনে ছিল যে, সে দু’তলা একটি বাসায় থাকে। অবশ্য তাকে খুঁজে বের করা মোটেও কঠিন বিষয় নয়। নূরপুরের সেই ৫/৬ নম্বর বাসার কাছে এসে শাওন কিছুটা আশ্চর্য হয়ে গেল। আশে পাশের প্রায় সবগুলোই দু’তলা বাসা। ঠিক করলো প্রথম ৫ নং বাসাতেই যাবে। যেমন কথা তেমন কাজ। ভুল বাসায় ঢুকলে অবশ্য চয়ন ও হিমেলের কাছে সে কিছুটা বিব্রতবোধ করবে। এজন্য সে বুদ্ধি করে চয়ন ও হিমেলকে নিচে রেখে সে একাই হুরহুর করে উপরে উঠে গেল। ৫ নং বাসার দ্বিতীয় তলাতে। বাসার কলিং বেল টিপতেই এক যুবতী বেরিয়ে এল। ভারি মিস্টি। মনে হল কোন পার্ল্ার থেকে এইমাত্র এসেছে। আধুনিকতা আমাদের যতটুকু না খাঁটি করে তুলছে তার চেয়ে বেশি কৃত্রিমতার প্রতি আকৃষ্ট করে তুলছে। কৃত্রিমতাই ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে আসল! সানগ্লাস কপাল থেকে খুলতে খুলতে বলল - কাকে চাই?

শাওন কিছুক্ষণ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল। তার পর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল - এখানে কি মেছ আছে?

যুবতী একটু মুচকি হাসলো। তারপর আসেত্ম করে বলল একটু অপেক্ষা করুন। খানিক পর সে একটি ভরা ম্যাচ নিয়ে এসে বলল - এই নিন। শাওন তো অবাক। ঈষৎ লজ্জায় তার চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল। লাজুক স্বরে বলল - আপু, আমি আসলে এই ম্যাচের কথা বলি নি।

যুবতী -তবে?

- এখানে ছাত্ররা মেছ করে থাকে কি না?

যুবতী - ও তাই বলুন। হ্যঁা থাকে। তবে ঐ পশ্চিমের বিল্ডিংয়ের পরেরটাতে।

শাওন - থ্যাংক ইউ।

নিচে নেমে কথাটি চয়ন কে বলতেই তারা হু হু করে হেসে উঠল। তারা মিনিট দুয়েকের মধ্যেই শিশিরের মেছে গিয়ে উঠল। কুশলাদি বিনিময়ের পর দীর্ঘক্ষণ চলল তাদের দলীয় কর্মকান্ডের দীর্ঘ বক্তৃতা। বক্তৃতায় যা বুঝা গেল তা হল - আগামিকাল তাদের কর্মী সম্মেলন। ঢাকা থেকে তাদের বড় নেতা আসবে। চাঁদা প্রয়োজন। শিশির তাদের দলের সদস্য না,ভাল শুভাকাঙ্খিও না,তবে শাওনের ভাল বন্ধু। আর সে কারণে চাঁদা চাওয়ার জন্য তারা শাওনকেই ব্যবহার করল। চাঁদা তোলার ক্ষেত্রে কাকে ব্যবহার করলে ইতিবাচক ফল মিলবে এ হিসেব তাদের ভাল করেই জানা আছে। শাওন চাঁদা চাইতেই শিশির প্রথমে একটু আমতা আমতা করছিল। তারপর পুনঃ যখন তাদের দলের বড় সভা যাদের সহযোগিতায় হচ্ছে তারা যে অনেক বড় মানের সে কথাটি ভাল করে বুঝিয়ে বলর হিমেল। এরপর শিশির আর না করতে পারলো না। ৫০ টাকার একটি নোট বের করে দিল। চাঁদা পেয়ে শাওন আর বেশিক্ষণ বসলো না। চায়ের পেয়ালায় শেষ চুমুক দিয়ে বলল - আমাদের আরও কয়েক জায়গায় যেতে হবে, এখন যাই পরে কথা হবে।

শিশিরের কাছে ঐ কয়টি টাকাই ছিল তার শেষ সম্বল। গায়ে প্রচন্ড জ্বর ,তবু সে তাদের কাছে মুখ খোলে নি। ঔষধটাও আনা প্রয়োজন। আনি আনি করেই আর আনা হয়ে ওঠে নি। গরিবের অসুখ এমনিতেই নাকি ভাল হয়। তাই অপেক্ষা! যখন কোন উপায় অমত্মর না থাকে তখনই কেবল তারা ডাক্তারের সরনাপন্ন হয়। শিশিরও এর ব্যতিক্রম নয়। কে তো ঔষধ নাই তাছাড়া বিকেলে তাকে আবার টিউশনিতেও যেতে হবে। শিশিরের মেসে সাগর ছাড়া বাকী সবাই যে যার যার বাড়িতে চলে গেছে। সাগর একটি স্কুলে চাকরি করে এবং রাতে টিউশনি করে। তিন চারটা টিউশনি করায়। সকাল নয়টায় বেরিয়ে গেলে কখনো রাত নয়টা বা দশটা হয় ফিরতে। শিশির নিজেও অবশ্য টিউশনি করে মেছের খরচ চালায়।

বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যে হল। টিউশনিতে যাওয়ার সময়ও ঘনিয়ে এল। কিন্তু তার হাতে একটি টাকাও অবশিষ্ট নেই। টিউিশনিতে যাওয়ার ভাড়াটাও পর্যমত্ম নেই। এদিকে সময় ক্রমেই বাড়তে লাগলো। ছাত্রীর বাসা থেকে তার মোবাইলে কল আসে- হ্যালো

- স্লামুআলাইকুম।

- স্যার, আইজকে আইলায় না ক্যানে? তাইর তো খাইল পরীক্ষা!

- একটু ঝামেলায় পড়ে গেছি, কাল তাড়াতাড়ি আসব।

ছাত্রীর মা রাগান্বিত স্বরে বলে - আফনে আর আওয়া লাগত নায়, বালাকবা। কথাটি শুনা মাত্রই শিশিরের প্রচন্ড শীতের মধ্যেও ঘামতে শুরু করে। তার জ্বরের মাত্র ক্রইে বাড়তে থাকে। হতাশায় পর্যবশিত হয়ে অজান্তেই তার মুখ থেকে বেরিযে গেল - ইস!

মেঘের আড়ালে একটুকরো বাঁকা চাঁদ। রাত ক্রমেই বেড়েই চলল।

( চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.