![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘মণিপুরী জীবনের চাল-চিত্র ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’
এম.এ. আলিম ।
কাল নিরবধি । চির চঞ্চল মহাকালের পালা বদলের প্রভাব পড়ে মানুষের ভাব-ভাবনা সংস্কার সংস্কৃতিতে, জীবন ও মূল্যবোধে । এভাব সভ্যতা এগোয় সোপানের পর সোপান ডিঙ্গিয়ে । পৃথিবীতে বহুবার সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে, আবার নতুন করে সভ্যতা জন্ম নিয়েছে । স্থান ও কালভদে সভ্যতার রূপরেখাও ভিন্ন হয় । এই সভ্যতা টিকিয়ে রেখেছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বুদ্ধিসম্পন্ন বিচিত্র প্রকৃতির মানষেরা । এসব মানুষদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকমের সংস্কার । কালের যুগপৎ রেখায় অবশ্য আধুনিকতার কিছুটা ছোঁয়া সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেই বেশ একটা প্রভাব ফেলেছে । বাংলাদেশ আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও এতে রয়েছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সুসংবদ্ধ বসবাস । দেশের স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে সৃষ্টিশীল অনেক ক্ষেত্রেই তাদরে দৃপ্ত পদচারণা । এ রকমই একটি জাতি হল ‘মণিপুরী’ । অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমরা অনেকেই তাদের জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ । তাদর বলা হয় উপজাতি; অথচ মণিপুরী একটি প্রাচীন জাতি । তাদরে আদি বাসস্থান ভারতের মণিপুরী রাজ্যে ।
‘মণিপুরী’ শব্দটি দু’ভাবে বিশ্লেষন করা যায় । যথা- ‘মণি+পুরী’ অর্থাৎ ‘মণি’ শব্দের অর্থ হল মূল্যবান বস্ত্ত এবং ‘পুরী’ শব্দের অর্থ হল আলয় । সুতরাং ‘মণিপুরী’ শব্দের অর্থ বলা যায় মূল্যবান আলয় বা মূল্যবান গৃহ । আবার অন্যভাবে বিশ্লেষন করলে আমরা পাই যারা ‘মণিপুরী’ রাজ্যের অধিবাসি তাদের বলা হয় ‘মণিপুরী’ । প্রকৃত পক্ষেই ভারতের ‘মণিপুরী’ রাজ্যের মানুষদের ‘মণিপুরী’ বলা হয় । প্রাচীন কালে ‘মণিপুরী’ রাজ্যের বিভিন্ন নাম ছিল । যেমন- কংলৈপাক, কংলৈপুং, কংলৈই, মে এবাক, মেখলি, মিতাই লেইপাক । বিভিন্ন দেশের লোকেরা মণিপুরীদের ডাকত বিভিন্ন নামে ডাকত । বার্মার লোকরা বলত ‘কাথে’ । আসামের লোকেরা- ‘মেখলি; কাছারের লোকেরা বলত মোগলী’ । কারো কাছেই ‘মণিপুরী’ জাতি আজকের মত ‘মণিপুরী’ নামে পরিচিত ছিল না । ‘মণিপুরী’ নাম হয় আজ থেকে তিনশ বছর আগে । রাজা পামহৈবার আমলে । তখন সিলেট থেকে এক বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারক মণিপুর যান । তার নাম শান্তি দাশ গোস্বামী তিনি মণিপুর মহাভারতের মণিপুর বলে প্রচার করেন । সেই থেকেই ঐ এলাকার নাম হয় মণিপুর আর ঐ দেশের অধিবাসীরা ‘মণিপুরী’ বলে পরিচিত ।
আসলে বর্তমান মণিপুর মহাভারতের মণিপুর নয় । মহাভারতের মণিপুর ভারতের উড়িষ্যার কাছাকাছি একটি জায়গা ছিল । আর বর্তমান মনিপুর ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে । বার্মার কাছাকাছি । লিখিত ভাবে ‘মণিপুর’ শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় বৃটিশ যুগে । তখন মণিপুরের রাজা ছিলেন ভাগ্য চন্দ্র (১৭৬৪-১৭৯৮) । ঐ সময় মণিপুরে অনেক জাতি ও উপজাতির বসবাস ছিল । রাজ্যের নাম পরিবর্তনে সবাই হয়ে যায় ‘মণিপুরী’ ।
বাংলাদেশে মণিপুরীরা বসবাস করছেন প্রায় আড়াইশ বছর ধরে । বর্তমানে সবাই সিলেট বিভাগের অধিবাসী । তবে সবাই একই সময়ে এদেশে আসেননি । মণিপুরীদের বাংলাদেশে আসার সময় কালকে মোটামোটি তিন ভাগে ভাগ করা যায় । ১৭৬৪/৬৫ সালে মোয়রাংথেম নামে এক গোত্র প্রধান তার দলবল নিয়ে প্রথম সিলেটের শ্রীমঙ্গল থানার সাতগাঁও এ বসবাস শুরু করেন । আবার, অনেকের মতে বাংলাদেশে মণিপুরীরা বাস করছেন আরও আগে থেকে । ১৭০৯ থেকে ১৭৪৮ সালের রাজা পামহৈবা এর আমলে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার বিশগাঁও এলাকায় আসেন প্রথম মণিপুরীরা । অবশ্য আগে থেকেই সিলেটের সাথে মণিপুরীদের যোগাযোগ ছিল । মণিপুরীরা ছিল বৈষ্ণব আর বৈষ্ণব ধর্মের গুরু শ্রী চৈতন্যদেবের জন্মস্থান সিলেটের ঢাকা দক্ষিণে । দ্বিতীয় পর্যায়ে মণিপুরীরা বাংলাদেশে আসেন ১৭৯৮ সালে ।সর্বশেষ ১৮২৫ সালে বার্মার অত্যাচারে অনেকেই দেশের বাইরে পালিয়ে যান । যাদের অনেকেই পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন- সিলেট, ঢাকা, ও নেত্রকোনায় বসতি স্থাপন করেন । কিন্তু বর্তমানে সিলেট বিভাগ ছাড়া আর কোথাও মণিপুরী বসতি নেই । মণিপরীদের স্বাক্ষরতার হার অনেক বেশী । ১৯৭৯ বাংলাদেশের মণিপুরী সাহিত্যের এক জরিপে জানা যায় যে, এসময়ের স্বাক্ষরতার হার ছিল ৬১% । ১৯৯৭ সালে এ স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৭০% । আর বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৮০% এ দাঁড়িয়েছে । কিন্তু দুঃখের বিষয় হল মণিপুরীদের উচ্চ শিক্ষার হার কম । প্রায় প্রতিটি মণিপুরী শিশুই স্কুলে যায় । গ্রামে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ না থাকায় দরিদ্ররা উচ্চ শিক্ষা নিবে পারেনা । তবে সুযোগ থাকায় উচ্চ শিক্ষার হার বেশী । অনেকে মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন । তবে তা তাদের মোট জনসংখ্যার তুলনায় খুবই নগন্ন । ১৯৯৭ সালে মণিপুরীদের মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় চল্লিশ হাজার । আর বর্তবানে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজারে পৌঁছেছে । মণিপুরীদের স্বাক্ষরতার হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, পুরুষদের তুলনায় নারী শিক্ষার হারই বেশি । বর্তমানে নারী শিক্ষার হার ৪৬% । অবশ্য সময়ের সাথে পাল্লা করে তাদের উচ্চ শিক্ষার হারও অনেকটা বেড়েছে । বর্তমানে তা প্রায় ২৮% এ উত্তীর্ণ হয়েছে । তবুও মোট স্বাক্ষরতার তুলনায় খুবই কম । মণিপরী জাতি যোদ্ধা জাতি । মণিপুরীদের ইতিহাস যুদ্ধের ইতিহাস । তবে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যতা রক্ষার জন্য সরকারী কোন জাদুঘর নেই । অবশ্য বেসরকারী ভাবে দুটি সংরক্ষণাগার বা জাদুঘর তৈরী করা হয়েছে । তবে সেগুলো যেমন প্রয়োজনের তুলনায় বৃহৎ নয়, তেমনি নান্দনিকও নয় । সরকারের একটু পৃষ্টপোষকতার এসব জাদুঘরের প্রভূত উৎকর্ষ সাধিত হতে পারে । মণিপুরীরা খুবই পরিশ্রমী জাতি । কৃষির পরই মণিপুরীদের প্রধান পেশা তাঁত শিল্প । মূলত মেয়েরাই তাতেঁর কাজ করেন । পুরুষরা কৃষি কাজ ছাড়াও ব্যবসার সাথে যুক্ত আছেন । তবে মজার ব্যাপার হল মণিপুরীদের ভিক্ষুক নেই । সমাজে গরীবদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য অন্যরা সব সময় সহয়তা করে । মণিপুরী তাঁত শিল্প যতটা নিখুঁত ও উন্নত ততটা কিন্তু তার প্রচার, প্রসার ব্যাপকতা পায়নি । সরকারের একট শুভ দৃষ্টির মাধ্যমেই সম্ভব তাদের তাঁত শিল্পের প্রচার, প্রসার ঘটানো । সম্ভব তাদের উৎপন্ন বস্ত্র বিদেশে রপ্তানীর মাধ্যমে তাদের সৃষ্টিশৈলীতার যথার্থ মূল্যায়ণ প্রদান করা । তাদেরকে স্বাবলম্বী ও শৈল্পিক কাজে উৎসাহ প্রদানে সরকারের শুভ দৃষ্টির বিকল্প নেই ।
মণিপুরীরা গোষ্ঠীগতভাবে বাস করেন । প্রতিটি মণিপুরী পাড়াতেই থাকে একটি দেব মন্দির এবং মন্ডপ । মন্দির ও মন্ডপ সকল ধর্মীয় ও সামাজিক কাজের কেন্দ্র । প্রতিটি পাড়ায় ‘শিংলুপ’ নামে একটি সংগঠন থাকে । পাড়ার সব পরিবার ‘শিংলুপ’ এর সদস্য । পাড়ার সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হন ‘শিংলুপ’ এর প্রধান । আবার, কাছাকাছি কয়েকটি পাড়া মিলে হয় ‘‘লৈপাক পন্চায়’’ বা সমাজ । মণিপুরী সমাজের সবাই বিনাতর্কে লৈপাক পন্চায়ের বিচার মেনে চলেন; যা গনতন্ত্রের বা স্বাধীনতার পরিপন্থি বলে অনেকেই অভিযোগ তোলেন ।
বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাসকারী মণিপুরীদের মধ্যে আছে তিনটি সম্প্রদায় । যথা- ক. মৈতৈ, খ.বিষ্ণুপ্রিয়া ও গ. মৈতৈ পাঙান । মৈতৈ পাঙানরা মুসলমান । মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়ারা বৈষ্ণব ধর্ম পালন করেন । তবে মৈতৈদের মধ্যে প্রাচীন ধর্মের অনুসারী ও আছেন । প্রাচীন ধর্মের নাম ‘আপোক্পা’ । মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়াদের মধ্যে বেশ মতবিরোধ রয়েছে । একদল অন্যদল কে মণিপুরী বলে স্বীকার করতে চান না । বর্তমানে তাদের এই মতভেদ অন্তঃর্দ্বন্দে পরিনত হয়েছে ।
বর্তমানে বাংলাদেশে মণিপুরীদের দুইটি ভাষা আছে । একটি মৈতৈ ভাষা এবং অপরটি বিষ্ণুপ্রিয়া । ভাষায় দই দলের মধ্যে কোন মিল নেই বললেই চলে । একদল আরেকদলের ভাষা বুঝেন না । মৈতৈদের ভাষা বাংলা ভাষা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । এ ভাষা তিববতী ও চীনা ভাষার কাছাকাছি । বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা মৈতৈ, আসাম, চাকমা ও বাংলা ভাষার সংমিশ্রণ । মৈতৈ ভাষার একটি বর্ণমালা আছে । প্রায় ২০০০ বছর আগে এ বর্ণমালার সৃষ্টি হয় । তখন বর্ণমালার সংখ্যা ছিল ১৮টি । পরে মহারাজা খাগেম্বার আমলে আরও ৯টি বর্ণমালা যোগ করা হয় । এখন মোট বর্ণসংখ্যা ২৭টি ।
মণিপুরী ভাষার প্রতিটি বর্ণের নাম মানুষের দেহের একেকটি অঙ্গের নাম । এক সময় এ বর্ণে সবকিছু লেখা হত । রাজা পামহৈবার আমলে মৈতৈ ধর্ম রাজ ধর্ম হয়ে যায় । বৈষ্ণব ধর্মের সবকিছুই বাংলা ভাষায় লেখা । তখন থেকে মণিপুরী ভাষাও বাংলা বর্ণমালায় লেখা শুরু হয় । বর্তমানে অনেকেই অবশ্য পুরনো বর্ণমালা চালু করার চেষ্টা করছে । দুঃখের বিষয় হল- তাদের নিজস্ব বর্ণমালা আছে ঠিকই কিন্তু তার যেমন লিখিত স্পষ্ট রূপ নেই তেমনি সরকার কর্তৃক স্বীকৃতিও নেই ।
বর্তমানে মণিপুরীদের বেশির ভাগই বৈষ্ণব ধর্ম পালন করেন । রাজা পামহৈবার আমলে ১৭০৯ থেকে ১৭৪৮ সালে বৈষ্ণব ধর্মের বিস্তার ঘটে । অপরদিকে মণিপুরে ইমলাম ধর্ম প্রবেশ করে প্রায় ৪০০ (চারশত) বছর আগে । মণিপুরীরা সবাই নামের সাথে সিংহ উপাধি লেখেন । অবশ্য এ উআধি নিয়ে মৈতৈ এবং বিষ্ণুপ্রিয়াদের মাঝে বিতর্ক আছে । এইসব বিতর্কের সুরাহা এখনো সম্ভব হয়নি ।
মণিপুরীদের বিয়ে বড়ই বিচিত্র প্রকৃতির । সম্পূর্ণ বিয়ে শেষ হতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে যায় । মণিপুরী ছাড়া অন্য কারো সাথে মণিপুরীদের বিয়ে নিষেধ । কেউ কোন অমণিপুরীকে বিয়ে করলে তাকে কুল ত্যাগী ঘোষনা করা হয় । মৃত ঘোষনা করে তার শ্রাদ্ধ করা হয় । বিভিন্ন প্রকার মন্ত্রের মাধ্যমে তাদের বিয়ের কাজ সমাপ্ত করা হয় । তবে উল্লেখ্য যে, মণিুরীদের মধ্যেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে থাকে । তাদের বিয়েতে রেজিষ্টারী প্রথা না থাকায় অনেকেই মামলা-মোকদ্দমা তথা ন্যায় বিচার পায় না । সরকার ও অবশ্য রেজিষ্টারী চালু না করার কারনে । মূল্যবান রাজস্ব হারাচ্ছে । রেজিষ্টারী ব্যবস্থা চালু করলে একদিকে যেমন মণিপুরীরা উপকৃত হবে তেমনি সরকারও এ থেকে কিছুটা রাজস্ব পেতে পারে । সুতরাং সরকারের এ দিকে দৃকপাত করা উচিত ।
মণিপুরীরা নাচ প্রিয় জাতি । নাচ-গান মিশে আছে তাদের দর্মীয় জীবনের সাথে । নাচ মণিপুরীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র বিষয় । মণিপুরী নাচ বা নৃত্য দুই ভাহে বিভক্ত । লোক নৃত্য ও শাস্ত্রীয় নৃত্য । লইহারাওবা, খাম্বা-থোইবী, থাবল চোংবী, মাইবী জাগোই, লৈইশেম জাগোই হচ্ছে লোক নৃত্য । শাস্ত্রীয় নৃত্য হচ্ছে রাস, গোষ্ঠীলীলা, উদূখল, মৃদঙ্গ নৃত্য । মণিপুরী নৃত্যের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাস নৃত্য । রাস তাদের প্রধান দর্মীয় অনুষ্ঠান । এতে রাধা কৃষ্ণ ও গোপীনীদের অভিনয় দেখানো হয় । এই রাস নৃত্য আবার পাঁচ ধরনের । যথা- মহারাস, বসন্তরাস, কুঞ্জরাস, দিবারাস ও নিত্য রাস ।
মণিপুরী লোককথা বা গ্রামীণ গল্পকে বলা হয় ‘ফুঙ্গাওয়ারী’ । ফুঙ্গা হচ্ছে মণিপুরী ঘরের ঠিক মাঝখানে যে আগুন রাখা তার নাম । আর ‘ওয়ার’ মানে গল্প । শীতের রাতে দাদা-দাদীরা নাতি-নাতনীদের আগুনের চারপাশে বসিয়ে যে গল্প শোনাতেন তাই ফুঙ্গা ওয়ারী । এর আরেক নাম ‘চাকঙাই ওয়ারী’ । ‘চাকঙাই’ এর অর্থ ‘ভাতের অপেক্ষা’ । দিনের কাজ কর্ম সেরে মা যখন রান্না করতে যান, তখন মুরববীরা ছোট বাচ্চাদের একত্রে বসিয়ে ভাতের অপেক্ষা করতে করতে গল্প বলতেন । মণিপুরীদের এই লোক গাঁথা গুলো সরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাবে কালের গর্ভে প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে । সরকারের একটু শুভ ইচ্ছার মাধ্যমেই এর আশু সমাধান সম্ভব ।
সময় গতিশীল । এই সময়ের সাথে পাল্লা করে চারপাশের অনেক কিছুর বদল ঘটছে । আধুনিকতার ছোঁয়া কিংবা শহুরে সংস্কৃতির ও অনুপ্রবেশ ঘটছে গ্রামাঞ্চলে । কিন্তু দঃখের বিষয় হল- মণিপুরীদরে মধ্যে স্বক্ষরতার হার বেশি থাকলেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতনতা এতটুকুও পৌঁছেনি । তারা জন্মবিরতিকরণ বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে এখনো অনেকটাই অজ্ঞ। সরকার এসব ব্যাপার-স্যাপার একটু খতিয়ে দেখে তাদের জন্ম নিয়ন্ত্রনের আওতায় আনার জন্য ইতিবাচক প্রচার এবং প্রসারের মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে ।
মণিপুরীরা সামজ ও দেশ সম্পর্কে কিছূটা সচেতন থাকলেও প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে তেমন জড়িত নয় । তারা আজ আদিবাসী হিসেবে নয়, অধিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চায় । চাকরি ক্ষেত্রে যে কোটা পদ্ধতি রয়েছে তারও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চায় । বর্তমান সরকার দিনবদলের মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী আবার সমানাধিকার সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । আশা করছি মণিপুরী সম্প্রদায়রাও অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্মনীতি, সংস্কৃতি প্রতিটা ক্ষেত্রেই সবার মত সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে । আর এ ব্যাপারে সরকারের শুভ দৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন ।
©somewhere in net ltd.