নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডেটিং

২০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:০৩

রম্যগল্প

ডেটিং

..........................

সময় পেলেই খুব নিবিড়ভাবে বই পড়ার মত বাজে অভ্যেস আছে আমার। ঐ সময় সচরাচর কেউ ডাকলেও সাধারাণত সাড়া দেই না। কেবল আমার মামা রুবজ এ রহমান ছাড়া। বলতে দ্বিধা নেই, হরিণ যেমন বাঘকে ভয় পায় আমিও তেমনি আমার মামাকে ভয় পাই। অবশ্য সচরাচর ওনি রাগ করেন না, কিন্তু যখন করেন তখন বিশ্বভূমণ্ডলে ভূমিকম্প শুরু হয় কি না জানি না, তবে আমার মনের মধ্যে যে রিকটার স্কেলের ৭.৫০ ছাড়িয়ে যায় তাতে কোন সন্দেহ নেই।

সেদিন দুপুর বেলা হঠাৎ করেই মামা আমার পড়ার ঘরে এসে হাজির। আমি কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে বলল- ভাগনা চল বিকেলে এক পার্টিতে যাব।

– পার্টি?

– আরে হ্যা, না মানে আমি তোকে খাওয়াতে পারি না?

– হ্যাঁ পারেন কিন্তু...

কোন কিন্তু নাই, জিন্দাবাজার ভোজনবাড়ির দো’তলায়। ঠিক ৫ টার সময়। মনে থাকবে তো?

আমি বিষ্ময়ের ঘোরে কী বলব ভেবেই পাচ্ছিলাম না। একবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে চেষ্টা করলাম। দেখতে চেষ্টা করলাম সূর্য আজ পূর্ব দিক থেকে উঠেছে না পশ্চিম দিক থেকে উঠেছে! আকাশে ধূমকেতু যেমন দীর্ঘ ৭৬ বছর পর পর দেখা যায় অর্থাৎ এটি যেমন মহাকাশের জন্য এক মহা বিষ্ময় তেমনি আমার মামার হঠাৎ এমন প্রস্তাব কালেভদ্রে মিলে বলে এটাও আমার কাছে মহা বিষ্ময়! ম্যান্ডেলিফের জটিল পর্যায় সারণী বুঝি, পিথাগোরাসের কঠিন উপপাদ্যও বুঝি, কেবল বুঝে উঠতে পারি না আমার মামা রুবজ এ রহমান কে।

অবশ্য এ দিক থেকে আমার মামি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মাঝে মাঝে মনে হয় মামিই যেন আমার পৃথিবীতে সেরা আপনজন। ওনার আন্তরিকতায় আমি শুভ বিবাহের কথাও ভুলে যাই!

যাইহোক, যেই কথা সেই কাজ। মামা সুট-কোট-টাই পড়ে বের হল। মামাকে এমন স্মার্ট লাগছিল যেন এ কালের বাংলা সিনেমার নায়ক অনন্ত জলিল তার ধারে কাছেও নেই! ১০১ একবার তাকে পুনঃপুন বিয়ে করানো যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মামা, বেশ প্রফুল্ল হেসে আমাকে বলল, পাঞ্জাবি পড়। যদিও পাঞ্জাবি পড়তে আমার খুবই অনিহা কিন্তু সেদিন কেন যেন তা আর মন আপত্তি করল না। রিক্সাযোগে চড়ে বের হলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যেই আমরা ভোজননবাড়ি রেস্টুরেন্টের ৩য় তলায় পৌঁছে গেলাম। এই তলার বাড়তি সৌন্দর্য হল এর একদিকে হলরুম আছে অন্যদিকে আছে খোলা আকাশ। আমরা খোলা আকাশের অংশটিই বেছে নিলাম। মামা গিয়ে বসে পড়ল এক সুন্দরী তরুণীর পাশে। অবস্থা দেখে মনে হল সে মেয়েটি যেন আমাদের জন্যই বহুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে। বাইরের সাইটে বসার আয়োজনও বেশ সুন্দর। কিছু ফুলের টবও লাগানো হয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য। প্রথমে দূর থেকে মেয়েটিকে চিনি নাই। কাছে এসে বসতেই তাকে খুব চেনা চেনা মনে হল। বোকাদের মত চোখ কচলিয়ে ভাল করে তাকিয়ে বললাম আপনি সেই রাঙামাটির ... ম্যাডাম না? ঐ যে ফেসবুকে পরিচয়... উলুপাড়া আর পিঁপড়াপাড়া... !



রাঙামাটির ম্যাডাম ঈষ্যৎ লজ্জায় যেন রাঙা হয়ে ওঠলেন! হায়রে ফেসবুক! মুচকি-মুচকি হাসতেছিল। হাসার সময় ওর চোখ পিঁপড়ার চোখের মত ছোট হয়ে আসে। বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হয় পিঁপড়াদের সাথে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ওর কত মিল! একটু আড়চোখা দৃষ্টিতে মুচকি হেসে বলল- হ্যাঁ। আপনার তো দেখা যায় মানুষ চিনার ক্ষমতা খুবই বেশি।

আমি ঈষ্যৎ লজ্জা পেয়ে বললাম- না মানে, ইয়ে...

–থাক, আর ইয়ে ইয়ে করতে হবে না।

–মামা একগাল প্রসন্ন হাসি হেসে বললেন কী খাবেন –বলেন?

–আপনার যেটা ভাললাগে সেটাই। আমার কোন ভিন্নতা নেই।

মামা বললেন–বেশ, তাহলে রসমালাই চলুক।

ম্যাডাম হালকা ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন। শুধু মুখের ভাষাই ভাষা নয়, দেহেরও কিছু ভাষা আছে যা কেবল অনুভূতি দিয়ে বুঝে নিতে হয়। মিনিট দুয়েক পড়ে রসমালাই এল। তিনজনের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে। রসমালাইটা কেন যেন আমারও ভাললাগে। খাওয়ার আগে মামা, কানে কানে বললেন ভাগনা, ভাল করে দেখে নে। শেষে কিন্তু আর পাল্টাতে পারবি না। মাল ফেরত নেওয়া হয় না! মামার কথা শুনামাত্র রাঙামাটির সব লজ্জা যেন আমার উপর ভর করল!

বিকেলের আকাশ ও আবহাওয়া উভয়ই ছিল রোমান্সের জন্য শুভ। আশেপাশে তেমন একটা কোলাহল নেই বললেই চলে কেবল কিছু দাঁড়কাকই অজ্ঞাত কোন খাবারের লোভে এলোপাথারি ওড়ছে। আমি মাথা নিচু করাতে মামা আমাকে একটু খোঁচা দিয়ে বলল- ওরে আমার রাঙামাটির হুব জামাই রে! সলম! সলম!! সলম!!! এই বলেই উনি হু হু করে হাসতে লাগলেন।

আমি ওনাকে এর আগে কখনো এত অট্টহাসি হাসতে দেখি নি। আকাশের দিকে মুখ করে মামা যেন হা হা করে হাসতেই থাকে। বড় অদ্ভূত সুন্দর সে হাসি! সে হাসি বিধাতা সবাইকে দেন নি। মামি বোধকরি ঐ হাসি দেখেই পাগল হয়েছিলেন! কিন্তু হঠাৎ করে উপর থেকে মামার মুখের ভেতর যেন কী পড়ল। মামা জিহ্বা দিয়ে খানিকটা আউলিয়ে বললেন- কাউয়ার গু! ওয়াক থু!!! থুথুটা আর ডানে-বামে ফেলার কথা বুঝি খেয়াল ছিল না। তাল হারা হলে যা হয় আর কি! থুথুটা গিয়ে পড়ল সেই ... ম্যাডামের মুখে।

ম্যাডামের সারামুখ যেন থুত ও কাউয়ার বিষ্ঠায় ভরে গেল। মুহূর্তেই মনে হল ওর সারা শরীরে যেন জলবসন্ত ওঠেছে। আমার সেই আগের ঘটনা মনে হতে লাগলো। আমার সারা শরীরে কাঁপুনি শুরু হল। ভেতরে যেন রিক্টার স্কেল সাতের উপরে মারছে! মামার চোখ দেখলাম ক্রমশই লাল হয়ে ওঠছে। আমি মাথা নিচু করে পকেটে টিস্যু খুঁজছিলাম। এমন সময় জোরে এক চর মারার শব্দ শুনলাম। কে কাকে মারলো বুঝতে পারলাম না। আমার এক হাত বের করে আমার গাল হাতাতে লাগলাম। না আমার গালে পড়ে নি! তবে? মামার দেখি বাম গাল ইংরেজদের মত লাল হয়ে গেছে। উভয়ের অবস্থা দেখে লজ্জায়, ভয়ে আমার প্যান্টের অবস্থা দেখলাম খারাপ হওয়ার পথে! আমি উঠে দিলাম ভূদৌড়!

অনেক পিছনে এক নারী কণ্ঠের আওয়াজ ভেসে এল– দাঁড়াও কথা আছে । দাঁড়াও ... দাঁড়াও..

..................................

২০.০৭.২০১৪

বোরহানবাগ আ/এ, টিলাগড়, সিলেট

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:১০

ফা হ মি বলেছেন: হা হা....।
মজা পেলাম অনেক।
আর ভোজনবাড়ির সাথে পূর্ব পরিচয় থাকায় আরো ভাল লাগলো :) :)

২০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন:
আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আপনার ভাললেগেছে জেনে সত্যিই ভাল লাগলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।

আজকের পৃথিবীতে ফোটা সকল ফুলের সুবাস ছুঁয়ে যাক আপনার সৃষ্টিশীল হৃদয়ের গোপন দহলিজ।
নিরন্তর শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.