নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যগল্প ------- 'বিড়ম্বিত যাত্রা' :-B =p~

২২ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১৫

সচরাচর মানুষ যেমন মশাকে খুঁজতে যায় না, মশাই যেমন পাগলপাড়া হয়ে মানুষকে খুঁজে তেমনি আমার মামা রুবজ এ রহমানও আমাকে খুঁজেন। সকাল ১১টা বাজে কিন্তু তখনও আমি ঘুমে। মামা হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখলেন আমি পিটিপিটি করে তার দিকে তাকাচ্ছি। তিনি বেশ মুরব্বীয়ানা ভাব নিয়ে বললেন, সারারাত তো ঘুমালি, আরও ঘুম দরকার?

- না মামা

- তবে উঠছিস না কেন?

- একটু রেস্ট নিচ্ছি।

- রেস্ট?

- হ্যাঁ, সারারাত কষ্ট করে ঘুমিয়েছি না, তাই...

আমার রসিকতা শুনে মামা হো হো করে হেসে ওঠলেন। সেই সাথে এগিয়ে এসে আমার ডান কান ধরে আস্তে করে মলা দিয়ে বললেন- মামার সাথে বাদরামো করা হচ্ছে বুঝি! ওঠ, আজ তোকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি যাব। উল্লেখ্য যে, আমরা প্রয়োজনবোধে শুদ্ধ এবং সিলেটী ভাষা উভয়ই বলে থাকি। কথা শুনামাত্র আমি লাফিয়ে ওঠলাম। কারণ, মামার শ্বশুরবাড়ির পাশেই আমার ইয়ের বাড়ি। আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বললাম- কখন যাবেন?

-তুই উঠে ফ্রেস হ্। এর পরেই রওয়ানা দেব।

কথাটি বলেই মামা রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। ওনার শ্বশুর বাড়ি শহরের একেবারে শেষ মাথায়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগে। আমি খুব দ্রুতই উঠে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলাম। মামার বাইকটা নষ্ট থাকায় বাসেই যেতে হল। বাসে কোনরকমে একটি সিট পাওয়া গেল। সে সিটে মামিকে বসিয়ে দুজনে দাঁড়িয়ে থাকলাম। গাড়ি চলছে। এত ভিড় ছিল যে, শ্বাস ফেলতেও কষ্ট হচ্ছিল। এই সুযোগে এক লোক মামার প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে কাজ সেরে ফেললেন। আমি চেয়ে চেয়ে শুধু দেখলাম, কিছু বললাম না। কারণও আছে, গত রাতে মামা আমাকে শাসিয়ে বলেছিল- আমার ব্যক্তিগত কোন ব্যাপারে তুই নাক গালাবি না। আমি কিছু করতে যাওয়ার সময় ঐ কথাটি মনে পড়ায় অভিমান করে আর অগ্রসর হলাম না।

ততক্ষণে আকাশে কালোমেঘেরা খুব চিৎকার করছে। একটু পরে দেখলাম কেঁদেই ফেললো! অর্থাৎ মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। আমি বেশ অন্যমনস্ক হয়ে জানালার বাহিরে প্রকৃতির পানে তাকিয়ে কেবলি ভাবছিলাম আমার ইয়ের কথা। কত দিন পর দেখা হতে যাচ্ছে!

যাই হোক কন্ট্রাকর এসে ভাড়া চাইলো। মামা,প্যান্টের পকেটে হাত দিয়েই বুঝলেন অবস্থা খারাপ। তিনি মনে মনে ভাবলেন মানিব্যাগ কি আসার সময় নিয়ে এসেছেন, নাকি কোথাও হারিয়ে ফেলছেন? দ্বিধায় পড়ে গেলেন। এমন সময় গাড়ির সামনে কী একটা পড়ায় গাড়ি হার্ডব্রেক করল। সব মানুষ সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল। সবচাইতে বেশি ঝুঁকে পড়েছিল ঐ পকেটমার লোকটি, তাও আবার আমার দিকে। যদিও সে বারবার নামার চেষ্টা করতেছিল কিন্তু স্টপিস না থাকায় তাকে এ বিপাকে পড়তে হল। আমার উপর লোকটি হুমরি খেয়ে পড়ল। এমনিতেই তার পকেট মারার ব্যাপারটা আমার ভাল লাগে নি তার উপর সে আমাকেই পিছন থেকে গুতা মারায় আমি প্রচণ্ড খেপে গেলে। কারণও আছে। সে আমাকে সজোরে গুতা মারায় আমি সামনের হাতলের উপর মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন। ফলে আমার ঠোঁট সাথে সাথেই গুদরোগের রোগীর মত ফুলে গেল! আমি আর দেরি করলাম না। হাতির মত সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে লোকটির গালে এমন থাপ্পর মারলাম যে সাথে সাথেই লোকটির গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেল। শুধু মেরেই ক্ষান্ত হয় নি- প্রচণ্ড ধমকের স্বরে সিলেটী ভাষায় গালি দিয়ে বললাম- চোদাউরির ফোয়া, আরও ইতা খরতে নি?

আমি সাধারণত কোথাও মারামারি করি না। কিন্তু ঠোঁট ফুলে আমার এমন ব্যথা শুরু হল যে তা ভাষায় প্রকাশের মত নয়। তাছাড়া, খোটার জোরে যেমন পাঠা নাচে তেমনি আমিও মামা থাকার কারণে শক্তিও সাহস উভয়ই পেলাম।

আমার থাপ্পর খেয়ে এবং প্রচন্ড উচ্চস্বরে ধমকের জন্য লোকটি মারাত্মক ভয় পেয়ে বলল- এই নেউক্যা মানিব্যাগ! অউ কানো ধররাম। আর কোনদিন ইতা খরতাম নায়। যদিও আমি মানিব্যাগের জন্য তাকে মারি নি, আমাকে প্রচণ্ড ব্যথা দেয়ার জন্যই মেরেছিলাম। কিন্তু তখন এক ঠিলে যেন দুই পাখি মেরে ফেললাম! বীরোচিত গর্বে আমার শার্টের বোতাম যেন ছিড়ে যাবার উপক্রম! আমি মানিব্যাগ নিয়ে নিলাম। মামার চোখেও তখন প্রচণ্ড বিষ্ময়। কিন্তু মুহূর্তেই তিনি লোকটির কলার এমনভাবে চেপে ধরলেন যে তার শ্বাস নেওয়াও কষ্ট হচ্ছিল। মামা শাকিবখানের মত ভরাট গলায় বললেন, চুতমারানির ফোয়া,ফকেট মাররে নাই নি? তর বাফর নাম আইজ বুলাইলাইমু! বলেই তিনি সজোরে লোকটির গালে থাপ্পর বসিয়ে দিলেন আমি যে গালে দিয়েছিলাম ঠিক তার বিপরীত গালে। আমার তো মনে হল মামার থাপ্পরের কারণে লোকটির গাল আধা ইঞ্চি দেবেই গেছে!

এরপর আর আমাদের কিছুই করতে হয় নি, গাড়ির অন্যান্য লোকজনই যা করার করল। গাড়িরও যেন কী হল, আর স্ট্রাট নিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের নেমে যেতে হল। বৃষ্টি পড়ার কারণে রাস্তায় মোটামুটি পানিতে সয়লাভ। আমার কেন যেন এই গোদরোগের মত ফোলা ঠোঁট নিয়ে আর যেতই ইচ্ছে করল না। কিন্তু সহসা তা আর বলতে পারলাম। আমরা তিনজনেই হাঁটছি। প্রায় মিনিট বিশেক হাঁটলাম। কোন যানবাহন নাই। হায়রে! অভাগা যেদিকে যায় সাগরও শুকায়ে যায়!

মামা সামনে আমি তার পিছনে। তিনজনেই জোতা হাতে নিয়ে হাঁটছি। কারণ জুতা পায়ে দিয়ে হাঁটার মত অবস্থা ছিল না। রাস্তায় প্রায় হাটু পর্যন্ত পানি জমে গেছে। সিলেটে এই একটা খারাপ অবস্থা। একটু বৃষ্টি হলেই প্রচণ্ড জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেনেজ ব্যস্থাগুলো ভাল না থাকার কারণেই এমনটি হয়।

আমি আমার মোবাইলটা বের করার চেষ্টা করছিলাম। ততক্ষণে দেখলাম আকাশে বৃষ্টিও থেমে গেছে। মোবাইল বের করে আমার ইয়ের নতুন ছবিটা মামাকে দেখাতে গেলাম। আশ্চর্য মামাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। আমার মনের মধ্যে আশ্চর্য এক শঙ্কা মোচর দিয়ে ওঠল। মামা তো জাদুবিদ্যা জানে না তাহলে কোথায় গেলেন? তাহলে কি ভূতপ্রেতের কাজ! অবশ্য আমি ওসবেও বিশ্বাস করি না! কিন্তু আমার মনের মধ্যে অজানা এক ভয় কাজ করতে লাগলো। শুনেছিলাম এই উলুপাড়া থেকে নাকি মাঝে মাঝেই মানুষ হঠাৎ গুম হয়ে যায়। সেই কথাটাই যেন তখন আমার বেশি মনে পড়তে লাগরো। কখনো কোন বিপদে কোন দোওয়া বা ছুরা পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না। কিন্তু ঐদিনই প্রথম আমার ছুরা পড়তে ইচ্ছে হল। আমি পড়লাম_____ লা ইলাহা ইলা আন্তা .... মিনাজ জোয়ালিমিন! আমার সারা শরীরে যেন কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে। হাত পা থরথর করে কাপছিল। মামি হাঁটতে গিয়ে অনেক পিছনে পড়েছিলেন। মহিলারা আসলে সব সময় পুরুষদের সাথে পেরে ওঠে না। ফলে দুশ্চিন্তাটা আমারই বেশি। আমার মধ্যে প্রচণ্ড ভয় কাজ করতে লাগলো। তবুও আমি হুমায়ুন ফরিদীর মত মামাকে আমার পকেটগুলোতে খুঁজতে লাগলাম। দূর যাহ্! পকেটে আবার মামা থাকতে যাবে কেন? হাতির মত মস্ত বড় ব্যাটা!

মূহূর্তেই দেখলাম কে যেন আমার পা ধরে টানছে। আমি ভূত ভূত বলে ভয়ে জোরে চিৎকার দিলাম। ততক্ষণে মামিও এসে পড়েছে। মামি বলল- ভূত না, তোমার মামা ম্যানহোলের গর্তে পড়ে গেছে! তাড়াতাড়ি তোল। ম্যানহোলের ময়লাপানিতে ওনার মুখের অবস্থা দেখে চিনার উপায় ছিল না। একেবারেই কিম্ভূতকিমাকার! দুই জনে মিলে মামাকে টেনে তুললাম। সে কি ওজন! মনে হল মস্ত বড় এক হাতি তুলছি খাদ থেকে!

মামাকে তুলেই মামি জড়িয়ে ধরলেন তাকে। সোহাগী কণ্ঠে বললেন- তোমার কিছু হয় নি তো?

আমি তখন আকাশ দেখতেছিলাম আর মনে ভাবতেছিলাম আমার ইয়ের কথা। সাদামেঘকে প্রিয়া ভেবে বিরবির করে বললাম, আজ নাই বা দেখা হলো, তবে শিঘ্রই দেখা হচ্ছে।

...........................................

২২.০৭.২০১৪

টিলাগড়, সিলেট













মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১২

চির-বিস্ময় বলেছেন: " আমার মধ্যে প্রচণ্ড ভয় কাজ
করতে লাগলো। তবুও আমি হুমায়ুন ফরিদীর মত মামাকে আমার
পকেটগুলোতে খুঁজতে লাগলাম। দূর যাহ্! পকেটে আবার
মামা থাকতে যাবে কেন? হাতির মত মস্ত বড় ব্যাটা! "
হা হা হা হা হা .......... টেনশনে মানসিক বিকার বলতে যা বুঝায় আর কি !!!!

২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২২

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: ঠিকই বলেছেন।

;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :) ;) :P ;) :)

ভাল থাকুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.