নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যগল্প ‘আমার ইয়ে’ :P :P :P

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮

ইদানিং ইঁদুর ও তেলাপোকার উৎপাত খুবই বেড়ে গেছে। মামি বার বার মামাকে বলেও ইদুর মারার ঔষধ আনাতে পারেন নি। এ নিয়ে অবশ্য মামা রুবজ এ রহমানের সাথে ওনার কয়েক দফা বাক্ বিতণ্ডাও হয়ে গেছে। ইঁদুরের উৎপাতে আমিও কম অতিষ্ট হয়ে নই। মাঝে মাঝে মনে হত- ইস! যদি হ্যামেলিওয়নের বাঁশিওয়ালা হতে পারতাম! অথবা ‘সিন্দাবাদ সিরিজের’ জাদুকরদের মত এমন একটা জাদু জানতাম যে সব তেলাপোকা, ইঁদুরকে ফু দিয়ে গুম করে ফেলতে পারতাম!



যাই হোক, মামা মামির জন্য শহরের সেরা মাকের্ট থেকে হালনাগাদের সেরা ফ্যাশনেবল ঈদের পাখি শাড়ি, ব্লাউজ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রাদি কিনেছেন। অবশ্য আমার কথা ওনার মনে ছিল না। থাকলে হয়ত…। যা ভুলো মনা মানুষ, তাও কেবল আমার বেলায়! একটু মনক্ষুণ্ণ হলেও তা প্রকাশ করি নি। নিজেকে এই বলেই সান্ত্বনা দিলাম যে, এই ঈদে অনেকেই তো নতুন কিছু কিনতে পারবে না, আমি না হয় এবার তাদের দলেই থাকলাম! হতভাগার সান্ত্বনা আর কি!



মামি অন্যান্য কাজের ঝামেলায় শাড়ি, ব্লাউজ ওয়ার্ডড্রফের ভিতরে রাখতে ভুলে গেলেন। রাতের বেলা মামা মামিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যাও তো শাড়ি, ব্লাউজ পড়ে আসো; একখান ছবি তুলব। মামি তো মহা খুশি। এদেশের মন্ত্রীদের মত ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে মামি কোন অংশেই পিছিয়ে নেই! মামা আমাকেও সেনাবাহিনীর প্রধানদের মত আদেশ করলেন –যা তোর ক্যামেরাটা রেডি কর।

- কী হবে?

- তোর মামির ছবি তুলব, সাথে আমিও।

- এই রাতের বেলা?

- তুই বেশি কথা বলিস! যা তো…

- জি, আচ্ছা

বলেই আমি মামার রুম থেকে বের হয়ে এলাম। মামিও সাজগোজের কাজটা আগে সেরে নিচ্ছিল। সে কী আর শেষ হয়! কত জাতের উঠ পালিশ, ঠোঁট পালিশ, গাল পালিশ, নাকপালিশ, নেইল পালিশ আরও কত কী! অবস্থা দেখে মনে হবে যেন উনি সিনেমায় পোজ দেয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলেন!



পুঁজিবাদীদের এই সাম্রাজ্যবাদী পণ্যের শৈল্পিক আগ্রাসনে শুধু মামি নয়, সমস্ত পৃথিবীই যেন আজ আক্রান্ত। এ থেকে মুক্তির পথ বড়ই কঠিন। যাইহোক, সাজার পর্ব শেষ হতেই বিদ্যুৎ চলে গেল। কিন্তু তাতে কী! মামি অন্ধকারেই শাড়ি ব্লাউজ পড়তে লাগলো চিরপরিচিত অভ্যাসের আলোকে। আমি প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে অপেক্ষা করছি, কিন্তু মামির তো আর সাজগোজ শেষ হয় না! বিরক্তি ক্রমেই আমার বাড়তে লাগলো। মনে মনে হাজার বার গালিগালাজ করতে লাগলাম,কিন্তু তা প্রকাশ করলাম না, প্রকাশ করা উচিত নয় বলে। কিন্তু চোখে মুখে একটু বিরক্তির ছাপ এনে বললাম-মামা আর কত দেরী?

-এই তো।

আমাকে কথাটি বলেই তিনি মামিকে উদ্দেশ্য করে বললেন- কই গো, তুমার হল?

-এই তো আসছি।



মামি ওনার সব কাজ নিজের মত করে শেষ করেই আসলেন। মামি রুমে প্রবেশ করতেই কাকতালীয় ভাবে বিদ্যুৎও চলে আসলো। মামি এমনিতেই সুন্দরী, সাজগোজ করলে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ওসব হলিউড, বলিউডের নায়িকাদের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়! কিন্তু বিষয় অন্য জায়গায়। মামির চোখ মুখের দিকে আমাদের তখন দৃষ্টি নেই। আমাদের দৃষ্টি ছিল ওনার নতুন হালনাগাদের সেরা ফ্যাশন ‘পাখি শাড়ি ও ব্লাউজের’ উপর । ওমা, একি কাণ্ড! ব্লাউজ এবং শাড়ি উভয়ই যে ইঁদুরে খেয়ে ঝাঝরা করে ফেলেছে! মামির সব কিছুই যেন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! এই অবস্থায়

ভাগিনা হয়ে মামির দিকে আর তাকানো যায় না। ফলে আমি আর মামির দিকে তাকাতে পারলাম না, প্রচণ্ড লজ্জায় মা কালির মত জিহ্বা কামড় দিয়ে দ্রুত রুম থেকে আমি প্রস্থান করলাম। মামাও ভীষণ লজ্জিত হল। আর মামির তো কথাই নেই। মামার কেবলই রাগ হতে লাগলো সর্বনাশা ইঁদুরের উপর। ধরতে পারলে কত কী যে করবে, কীভাবে যে তাকে মারবে তার আর ইয়ত্বা নেই! মনে মনে এ সম্পর্কীয় বড় রকমের পরিকল্পনা করে রাখলেন। এরই মাঝে হঠাৎ কাকাতালীয়ভাবে একটা ইঁদুরের দেখাও পেয়ে গেলেন। মামি বললেন- ঐ যে বদমাশ ইন্দুর! ধরো…



মামা যারপর নাই ঝাঁপিয়ে পড়লেন ইঁদুরের উপর। কিন্তু ইঁদুর ধরা কি এতোই সোজা? চিতাবাঘকে যেমন দৌঁড়ে ধরা যায় না, তেমনি ইঁদুরকেও সহজে ধরা যায় না। ইঁদুর দিক-বিদিক ছুটতে ছুটতে আমার রুমের দিকে ছুটে আসল। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই নাকি রাত হয়! মামার তো আজ ইদুর না মেরে যেন নিস্তার নেই। কত টাকার দামি শাড়ি, ব্লাউজ! আর তা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু ভাগিনার সামনে এইভাবে উনার বউ উপস্থিত হবে উনি যেন তা ভেবেই পান না। কী লজ্জা! কী লজ্জা! আজ ইদুরের আর রক্ষে নেই! উনার একদিন কী ইঁদুরের একদিন!



মামা ইঁদুরের পিছে পিছে আমার রুমে প্রবেশ করলেন। মামিও যেন মামার পিছু অনুসরণ করল। আমি তখন খাটের নিচে চিৎ হয়ে তক্তার কাঠপোকা মারার চেষ্টা করতে ছিলাম। ইঁদুরটি মরতে মরতে আমার দিকেই আসল। কারণও আছে। আমি যেখানে খাটের নিচে চিৎ হয়ে শুয়েছি তার পাশেই ছিল বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাগ ও কাগজ-পত্রাদি। ইঁদুর তার জীবন বাঁচানোর জন্য ঢুকলো না নিজের পুরনো বাসা মনে করে ঢুকলো ঠিক বুঝলাম না। তবে খাটের নিচে প্রবেশ করার সময় একবার সে চিক্ করে উঠলো। আর ঐ চিক শব্দই যেন আমার জন্য কাল হয়ে ওঠল!



পিছন থেকে মামি বলল-ঐ যে... ব্যাগের পাশে। মামি কথাটি বলা মাত্রই মামা আবারও দ্বিগুণ বেগে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ইঁদুর ধরার জন্য।

কাকতালীয়ভাবে আবারও বিদ্যুৎ চলে গেল। কিন্তু ততক্ষণে মামা ব্যাগের পাশে হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে বললেন- এই তো ধরে ফেলেছি। খুশিতে মামা বাচ্চাদের মত শ্লোক কাটতে লাগলেন, ''বার বার উন্দুর তুমি কাইট্যা যাও শাড়ি, এইবার তোমারে পাঠাইমু পরপারের বাড়ি।'' মামিও মহাখুশি। ওনার ঈদের আনন্দ বিনষ্টকারী হাতে নাতে ধরা পড়েছে যে! আমি নিচ থেকে চিৎকার করে বললাম- মামা, ছেড়ে দেন;

-অবশ্যই না

- তবে আস্তে ধরেন।

-না, আজ আর আস্তে ধরার দিন না। বহুদিন পরে এটাকে ধরেছি . . .আজ আর এটার রক্ষা নেই। এই বলে মামা আরও শক্ত করে ধরে বের করার চেষ্টা করলেন। আমার তখন চোখে সরষে ফুল দেখার মত অবস্থা। প্রাণ যেন যায় যায়। মুমূর্ষু রোগীদের মত বেদনার্ত কণ্ঠে বললাম- ছাড়েন না মামা?

-আহ্! ভাগিনা, বুঝতে পারছো না, এই ইন্দুরকে কোনভাবেই ছাড়া যাবে না। কী ক্ষতিটাই না করেছে!!!



মামা তখন হ্যাচকা একটানে ব্যাগসহ ইঁদুর বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করলেন। এরই মধ্যে আবারও বিদ্যুৎ চলে আসল। বিদ্যুৎও যেন বর্ষাকালের আকাশের মত এই ভাল এই মন্দ! অবলীলায় লুকোচুরি খেলাই যেন তার নেশা হয়ে গেছে। মামি পিছন থেকে দৌঁড়ে আসলেন। আজ ইঁদুরকে উনি নিজ হাতেই মারবেন। কারণ, ইঁদুরটা উনারই বেশি ক্ষতি করেছে। পাখি শাড়ি বলে কথা!!!

আমি মামাকে এবার লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম- মামা, আপনি যা ধরেছেন ওটা ইঁদুর না, ওটা আমার ইয়ে!!!



মামাও তখন ভাল করে তাকিয়ে দেখলেন- অ্যা , তাই তো!!! ইঁদুর মনে করে ভাগনার ইয়ে... ধরে ফেলেছি... ছি ! ছি!! ছি!!! মামা লজ্জায় ইংরেজদের মত লাল হয়ে ওঠলেন। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদ্দুরে কার্যরত শ্রমিকদের মত ঘামতে শুরু করলেন। মামিও তখন লজ্জায় আচল দিয়ে মুখ ঢেকে এক দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। মামির পিছে পিছে মামাও গাধামি স্বভাবে মাথা চুলকাতে চুলকাতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। কেবল আমিই মেঝতে চিৎ হয়ে ইয়ের ব্যথায় কাতরাতে লাগলাম।

.........................................

২৪.০৭.২০১৪

শিবগঞ্জ, সিলেট



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.