নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোমান্টিক রম্যগল্প 'অদ্ভুত প্রেম'

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:০৯



আমি ও মামা রুবজ এ রহমান দুপুরের দিকেই জাফলংয়ের বাস টার্মিনালে আসলাম। টার্মিনালের চারদিকে সুনসান নীরবতা। বৃক্ষগুল্মের সবুজ প্রকৃতিও চোখে পড়ার মত। জাফলং পর্যটন এলাকা হিসেবে সত্যিই নান্দনিক। এর সাথেই রয়েছে ভারতের মেঘালয়। সুবিশাল পাহাড়। দূর থেকে মনে হবে সবুজের ঘন অরণ্য। জাফলংয়ের অদূরে বিশ্বরোড সংলগ্ন আলুবাগান থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের নয়াগ্রা জলপ্রপাতের নয়াভিরাম দৃশ্যও অবলীলায় হৃদয় হরণ করে নেয়।



আমরা টার্মিনাল যেতেই গাড়ির হেন্ডিম্যান জিজ্ঞেস করল- কোয়ায় যাইবা?

মামা বললেন- সিলেট

আমি রসিকতা করে বললাম- আফনে খিতা এখন সিলেটের বাইরা নি? জাফলং খিতা out of Sylhet নি?

মামা চোখ বড় বড় করে মুচকি হেসে বললেন- ভাগনা, আজকে খিতা বিশ্ব কান মলা দিবস নি?



মামার খোঁচাত্মক কথা শুনে আমি আর কথা বাড়ালাম না। বুঝলাম পরবর্তী অবস্থা মোটেও ভাল হওয়ার নয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ততক্ষণে দেখলাম হেন্ডিম্যানও হো হো করে হেসে ওঠলেন। তার সাথে যোগ দিলেন মামাও।

‘আমরা সিলেট যাব’ কথাটি প্রায়ই আমরা ভুল ভাবে ব্যহার করি। সিলেটে থেকেই সিলেটে যাওয়া সত্যিই এক আহাম্মকি ব্যপার! যদিও কথাটি দ্বারা মূলত শহরে যাওয়াকেই সকলে বুঝিয়ে থাকেন। অবশ্য অনেক প্রচলিত ভুলও আজ বহুল প্রচলিত। যেমন- “আমরা পানি খাই”। “আমরা চা খাই”। কথাগুলো এখন এমনই সংক্রামক ব্যাধির মত হয়ে গেছে যে, সচেতন সুধীজনরাও এখন আর শুদ্ধ করে বলেন না কিংবা পরিস্থিতির যুপকাষ্ঠে পড়ে বলতে ইতস্তত করেন।

হেন্ডিম্যান বলল- বউক্যা গিয়া, ছামনে দি দুইটা ছিট খালি আছে। সিট পাওয়া এমনিতে দুষ্কর সে কারণে আমরা আর দেরি করলাম না। দখলি প্রমাণ স্বরূপ সিটে ব্যাগ রেখে দুজনে চা পান করার জন্য নিচে আসলাম। নামতে নামতে হেন্ডিম্যানকে জিজ্ঞেস করলাম- আর খত মিনিট বাখি আছে?

- ২০ মিনিট

- আমরা চা খাইয়্যা আইরাম।

- সময় মতন আইন যে,

- ওকে।

আমরা নিচে নামতে নামতেই দেখলাম একদল সুন্দরী তরুণী বাসের দিকে আসছে। সুন্দরী মেয়েদের আগমন দেখে মামা উনার চুলের স্টাইল ঠিক করার জন্য পুনঃপুন হাত বুলাতে লাগলেন। এটা অবশ্য অনেক উঠন্তি তরুণেরাই বেশি করে থাকেন। মেয়েরাই বা কম কিসে- ছেলেদের সামনে আসলেই তাদের বারবার ওড়না ঠিক করতে হয়! কেন ইয়াং ছেলেদের দেখলে মেয়েদের ওড়না পড়ে যায় আজকালকার ছেলেরাও কি তা আর বুঝে না!



যাইহোক, মেয়েরা সামনে আসতেই দেখলাম মামার স্যান্ডেলের একপাটি জুতো ছিড়ে গেল। মামা অনেকটা বোকার মত কিছু একটা হারিয়েছে ভাব করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলেন যতক্ষণ না মেয়েরা গাড়িতে ওঠলো। মামার এমন ঘটনা প্রায়ই হয়। সুন্দরী মেয়ে সামনে পড়লেই ওনার কোন না কোন একটা দুর্ঘনা ঘটে।

মামার সমস্যার সমস্যার সমাধান করতে করতে সেদিন আর চা পান করা হয়ে ওঠলো না। বাধ্য হয়েই সিটে গিয়ে বসলাম। ঐ সুন্দরীদের দলের একজন মাত্র তরুণী মহিলা সিটে বসেছে,আর বাকীরা বসেছে পিছনে।

গাড়ি চলতে লাগলো। মামা সিটের ভেতরে আর আমি বাইরের দিকে বসেছি। আমি ব্যাগ থেকে গাল্পিক প্রশান্ত মৃধার ‘গল্পের খোঁজে’ বইটি বের করে পড়তে লাগলাম। বইটি অবশ্য ২০১৪ সালে ‘কালিও কলম’ পুরস্কার পেয়েছে। মামাকে দেখলাম, ইয়ার ফোন বের করে গান শুনছে। কিন্তু এমন কৌণিক হয়ে গান শুনতে লাগলেন যাতে ঐ সুন্দরী তরুণীকে সরাসরি ফলো করা যায়। মামার এসব ঘটনা নতুন কিছু নয়। ওসব দেখতে দেখতে এখন আমার কাছে তা প্রাত্যহিক ডাল-ভাতের মতই মনে হয়।

আমি বইটিতে গভীর মনোযোগ দিতে থাকলাম। মামা মাঝে মাঝেই কাশ দেয়ার ছলে ঐ সুন্দরীকে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। আমি মামার দিকে না তাকালেও মামার ঐসব উদ্ভট সূত্র সম্পর্কে আমি আগে থেকেই অবগত আছি। এভাবে বহুক্ষণ বোধ করি তাদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময়ে দুর্বোধ্য কথাবার্তা চলতে লাগলো! দুটি গল্প শেষ করে তৃতীয় গল্পটি হাত দেয়ার সময় আমি মেয়েটির দিকে বইয়ের আড়ালে খানিকটা চোখ বের করে তাকালাম। ওমা, সেকি কাণ্ড! সুন্দরী যে পা চুলকানোর ভাব করে মামাকে জুতো দেখাচ্ছে!

মামার এ করুন অবস্থা দেখে আমার নিজেরই খুব লজ্জা করতে লাগলো। আমার কেন যেন মনে হল মামার লজ্জার বাতাস আমার গায়েও এসে পড়ছে। মামার উপর ভারি রাগ হতে লাগলো। বেচারা! কেন যে ওসব করতে চায়। ওসব বখাটেপনা না করলে কী আর চলে না!

আমি ও মেয়েটি প্রায় বিপ্রতীপ কোণের মত মুখোমুখি বসা। আমিও ফন্দি আটার চেষ্টা করতে লাগলাম-কীভাবে মেয়েটিকে উচিত শিক্ষা দেওয়া যায়! কিন্তু কোন কুবুদ্ধিও যেন তখন মাথায় আসছিল না।





মেঘমুক্ত আকাশ। রাস্তায় জ্যাম কম থাকার কারণে গাড়ির গতিও ছিল চোখে পড়ার মত। হঠাৎ করেই পার্শ্ব রাস্তা থেকে একটি গরু দৌঁড়ে এল। গরুকে বাঁচাতে ও সম্ভ্যাব্য অঘটনের হাত থেকে বাঁচতে গাড়িকে একটু কিনারের দিকে মোড় ঘুরিয়ে ড্রাইভার হার্ডব্রেক কষলেন। কিন্তু ততক্ষণে গাড়ি রাস্তার নিরাপত্তা বেস্টনীর কয়েকটি খাম ভেঙ্গে ফেলেছে। হার্ডব্রেক করার কারণে বামের অনেক অসচেতন যাত্রীই ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে ডানদিকে পড়ে গেল। কে কার উপর পড়লো সেটা আর খেয়াল করা হয়ে ওঠে নি। আমি দেখলাম মেয়েটা রকেটের বেগে আমার মুখের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। ওর ঠোঁটের সব লিপিস্টিক আমার মুখে এমনভাবে লেপ্টে গেল - যে কেউ দেখলে মনে করবে আমি যেন হুলি খেলেছি। মাথার পিছনে খুব আঘাত পেয়েছিলাম। নাকেও মনে হয় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলাম।

এরপর আর কিছু মনে নেই। যখন আমার জ্ঞান ফিরল –তখন দেখি আমি হাসপাতালের কেবিনে। সেই মেয়েটি ফুল নিয়ে তীর্থের কাকের মত বসে আছে। আমি কী তখনো স্বপ্ন দেখছিলাম? এ সবই কী স্বপ্ন ঘোরে হচ্ছে? মামা কোথায়? আমি এখানে কেন? কে আমাকে এখানে আনলো? শত প্রশ্ন আমার মনে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। শত প্রশ্নমাখা বিষ্ময়ী দৃষ্টি নিয়ে আমি তার দিকে তাকাতেই সে একহাতে আমার হাত চেপে ধরল আর অন্য হাত দিয়ে পাশে ফুলের তোড়া রাখলো। ওর নরম হাত আমার হাতে পড়তেই আমার সমস্ত শরীরে যেন বিদ্যুৎ চমকে গেল। মনের মধ্যে যেন দক্ষিণের হাওয়া দিতে লাগলো। রবি ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ গল্পের সেই বিখ্যাত লাইনটি বার বারই তখন আমার মনে পড়তে লাগলো-“আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম”।

......................................

২৭.০৭.২০১৪

মুনশি আলিম

টিলাগড়, সিলেট

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.