নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প 'হানিমুন'

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৪





অপরাহ্ন। পৃথিবীর গা জুড়ে খাঁ খাঁ রোদ্দুর। দূর আকাশের গায়ে সাদামেঘের ভেলাগুলো যেন ক্রমশই দূর থেকে দূরান্তরের দিকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মহাবিশ্বই যেন ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশের এক বিশেষ পর্যটন এলাকা জাফলংয়ের বল্লাঘাট। এখানে সার্বক্ষণিক কোলাহল থাকে। যেমনটি থাকে মানুষের তেমনটি থাকে ক্রাশার মিলগুলোর বিকট শব্দ। আমি সবে মাত্র বল্লাঘাটের খ্যাতনামা ‘বোম্বে’ রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা করে বের হয়েছি। রেস্টুরেন্টের সামনে পার্ক করা চকচকে এয়ারকন্ডিশন গাড়ি থেকে চশমা পরিহিত এক সুদর্শন যুবক বেরিয়ে এল। ওমা! সেকি কাণ্ড, এ যে আমার মামা রুবজ এ রহমান! কিন্তু উনি গাড়ি কোথায় পেলেন? তবে কী তা শ্বশুর মহাশয় উপঢৌকন হিসেবে দিয়েছেন? মুহূর্তেই এরকম অনেক প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঢেউ খেলে গেল। নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিয়ে ইতিবাচক চিন্তা শুরু করলাম।মামা বলে কথা! মামা গাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই নীল শাড়ি পড়া একজন অতি সুন্দরী ভদ্র মহিলাও গাড়ি থেকে নেমে এলেন। ভদ্র মহিলাকে বেশ চেনা চেনা লাগছে। মামির মত লাগছে। ও হ্যাঁ, মামিই তো! পার্লার থেকে মামি এমন সাজুগুজো করে এসেছে যে আজ ওনাকে সহসা চেনাই যাচ্ছে না। আসলকে নকল করে তৈরি করতে বিউটিপার্লারের বিউটিশিয়ানদের জুড়ি নেই! ভাল করে তাকাই...আমার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। সপ্তাহখানেক হবে মামা নতুন বিয়ে করেছে। বিয়ের পরের দিন এক নজর দেখেছিলাম। ব্যস্ততার কারণে বেশিক্ষণ সময় দিতে পারি নি। যাই হোক,মামা সম্ভবত হানিমুন করার জন্য জাফলং এসেছেন।



আমি মামাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তিনি আমাকে বললেন, ভাগনা, তুমি এখানে কি কর?

-অফিসের একটা কাজে এসেছি। একটা নিউজ রেডি করতে হবে।

ও আচ্ছা। বিশেষ নিউজ?

-জি মামা।

ক্রাইম রিপোর্ট?

-জি মামা

এরই মধ্যে মামিও কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। এরপর আমি আর ওনাদের সময় দিতে পারলাম না। আমার কর্ম সম্পাদনের জন্য আমিও বিদায় নিলাম। মামা বল্লাঘাটের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন। আসরের নামাজের সময় আমি মসজিদে গেলাম। গিয়ে দেখি মামা সামনের সারিতে। নামাজ শুরু হয়ে গেল। উপরের সিলিং ফ্যান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে পিছন দিক থেকে বড় টেবিল ফ্যান লাগানো ছিল। মসজিদে সেদিন মানুষজন তেমন একটা ছিল না বললেই চলে। টেবিল ফ্যানের শাঁ শাঁ করা বাতাসে কাপড় ঠিক রাখাই মুশকিল হল। তার উপর হঠাৎ করে দমকা বাতাস দেওয়ার কারণে বেশ একটা বিপর্যস্ত অবস্থার সম্মুখীন হতে হল। আমরা সিজদাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় ইমাম সাহেবের লুঙ্গি মাথার উপরে উঠে গেল। মামা কি মনে করে যেন ইমামের লুঙ্গি ঠিক করে দিতে গেলেন। অমনি ট্রাকের টায়ার ব্রাস্ট হওয়ার মত শব্দ করে ইমাম সাহেব বদবায়ু ছেড়ে দিলেন। মামা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। বদবায়ুর এমন দুর্গন্ধ শহরের সবচেয়ে খারাপ ড্রেনের পঁচা দুর্গন্ধকেও অনায়াসে হার মানাবে। এদিকে ইমাম সাহেবের লুঙ্গি ঠিক করতে গিয়ে ওনারও লুঙ্গিও উপরের দিকে উঠে অনেকটা দিগম্বর হয়ে গেলেন। ওনার ঠিক পিছনে যিনি ছিলেন উনিও মামার মত লুঙ্গি ঠিক করতে গেলেন। ওনারও একই অবস্থা হল। বাতাসের এমন তাণ্ডব এরপূর্বে আমি কখনো দেখি নি। আমি নামাজ বাদ দিয়ে পুনরায় অজু করার অজুহাতে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলাম। আমার পিছনে দেখি মামাও বেরিয়ে এলেন। তার পিছে স্বয়ং ইমাম সাহেব!

মামা, ঈষৎ লজ্জারাঙা কণ্ঠে বললেন, ভাগিনা, আজকের ঘটনা কাউকে বলিস না কিন্তু ! আমিও বেশ লজ্জা রাঙা হাসি দিয়ে বললাম, জি আইচ্ছা। এরপর আরও কিছু অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা শেষ হলে মামা আবাসিক হোটেলের দিকে চলে গেলেন, কিন্তু উনার গাড়ি রেখে গেলেন রাস্তার পাশেই। গাড়ি অবশ্য হোটেল থেকেও দেখা যায়। উনার গাড়ির সামনে ও পিছনে আরও দুটি প্রাইভেট কার রয়েছে। সবগুলোই নতুন, যেন সদ্য মার্কেট থেকে ক্রয় করা!



আমিও চলে গেলাম আমার সংবাদ অন্বেষণে। এর মিনিট বিশেক পরের ঘটনা। প্রায় শতাধিক মানুষ উত্তর দিত থেকে মিছিল করে মামার গাড়ির কাছে এসে থামল। তাদের শ্লোগান চলতে থাকে। সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও... ভরাট গলার শ্লোগানে মাটি কম্পিত হতে থাকে। আশে পাশের দোকানপাট দ্রুত বন্ধ করতে থাকে। এরই মধ্যে দু রাউন্ড ফাঁকা গুলির শব্দও শোনা গেল। গুলির শব্দের পরপরই মানুষ দিকবিদিক ছুটতে লাগলো। মিছিলের কেউ কেউ গাড়িগুলোর উপর পানির মত কি যেন ছিটাতে লাগলো। এরপর দেখলাম চতুর্দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।

মামা গুলির শব্দ উপেক্ষা করে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। ততক্ষণে মিছিলকারীরাও অন্যদিকে মিছিল করতে করতে চলে গেছে। চোখের সামনে নতুন গাড়ির ভস্মিভূত অবস্থা দেখে মামা নির্বাক হয়ে গেলেন। উনার পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মামি। মামিকে জড়িয়ে ধরে আর চোখের পানি রাখতে পারলেন না। হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। ধীরে ধীরে সাধারণ শ্রমিকেরাও ভীড় করতে লাগলো। কাকতালীয়ভাবে সন্ত্রাসীদের গাড়ির পাশে গাড়ি রাখায় ভদ্রলোকের অপ্রত্যাশিত অপূরণীয় ক্ষতিতে উপস্থিত অনেকই অনেক প্রকারের সান্ত্বনা দিতে লাগলো।মামার কান্নায় উপস্থিত দর্শনার্থিদের অনেকেই স্ব স্ব চোখ মুছতে দেখলাম। বাম চোখের পানি মুছতে মুছতে আমিও মামাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, চিন্তা করো না মামা, তোমার গাড়ির মত গাড়ি উদ্ধার করে দেয়া হবে। মামা, আমার পিঠে স্নেহসিক্ত হাত চাপড়ালেন আর কিছু বললেন না।

আকাশে তখনও কালোমেঘের ধোঁয়া উড়তেছিল।



.................................................

৩১ আগস্ট, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ

টিলাগড়, সিলেট







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.