নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অ
- এত সাজুগুজো কইরা কনু যাও?
- হশুর বাড়ি।
- নগে কইরা কিছু নিলা না?
- কি নিমু? পুইরান অইয়্যা গেছি না!
কথাটি বলে এমরান একগাল হাসে। ও হাসলে ওর তক্তপোষের মত চোয়াল শিড়দাঁড়ার মত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কথাবার্তায় তেমন একটা পটু না হলেও এলাকায় বিদ্বান হিসেবে তার বেশ নামডাক রয়েছে। এলাকায় ছোটখাট বিচারে সে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে। দেখতে বেশ লম্বাটে এবং একটু সরল প্রকৃতির। তার চুলগুলো মহিলাদের মত মাথার মাঝখান দিয়ে সিঁথি কাটা। তার একটা বিশেষ গুণ হল সে ভাল গীতি কবিতা লিখতে পারে। কবিতার প্রতি তার প্রেম যত বাড়তে লাগলো তার স্ত্রী হেমর প্রতি তার আকর্ষণ ততই যেন কমতে লাগলো! অবশ্য এর জন্য এমরানকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।
এমরান শ্বশুরবাড়ি কখনো টাই পড়ে যায় নি। আজ খুব শখ করে সে সুটকোট টাই পড়ে একেবারে কাছেই সে দ্বারস্থ হয়েছে, চুপি চুপি টাই বেঁধে দেওয়ার কথা বলেছে, কিন্তু তারা অপারগতা প্রকাশ করা মাত্রই তার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। শেষটাতে সে রশি গিট দেওয়ার মত করে টাই গিট দিয়ে কোন রকমে কলারের সাথে বেঁধে রেখেছে। এতক্ষণ সে যার সাথে কথা বলেছে তার নাম শহিদ আশরাফ। এই এলাকারই এক অর্ধশিক্ষিত বুদ্ধিজীবী। মক্কেলের পকেট থেকে টাকা বের করে আনার কৌশল যেমন উকিলদের ভাল জানা থাকে তেমনি এলাকায় বিচারস্থ বাদী বিবাদী উভয়ের পকেট থেকেই কৌশলে টাকা আদায় করার কৌশলেও তার জুড়ি নেই। এই গুমপাড়া এলাকায় ছোটবড় সকলেই তাকে এ+ গ্রেডের মাতব্বর হিসেবে জানে। এমরানও মাতব্বরির কলাকৌশল শহিদ আশরাফের কাছ থেকে প্রত্যেহ সিফারা ছবক নেওয়ার মত করে ছবক নেয়। তাছাড়া সমবয়সী হওয়ার কারণেও শহিদ আশরাফের সাথে তার বেশ অন্তরঙ্গতার সৃষ্টি হয়েছে।
কৌশলে শহিদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একটু সামনে যেতেই এক মিষ্টির দোকান পড়ল। সেও ভাবল আজ সুটকোট পড়ে যাচ্ছি একটা কিছু না নিয়ে গেলে কেমন হয়! কথাটি মনে উদয় হতেই সে আর দেরি করল না। দোকান থেকে দুই কেজি মিষ্টি কিনে শ্বশুর বাড়ির দিকে রওয়ানা দিল। তার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। বাসযোগেই যেতে হয়। সে একটু হেঁটেই মেইন রাস্তায় এসে পড়ল।
একটু পরপর সে টাইয়ে হাত দিচ্ছে। ভাবখান এমন, যেন এইমাত্র সে বিদেশ থেকে এসেছে! রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে সে বাসের অপেক্ষা করছে। রাস্তায় বেশ খানাখন্দ। তাছাড়া কিছুক্ষণ আগে তুমুল বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে রাস্তার অনেক খানাখন্দের মধ্যেই পানি টইটুম্বুর করছে। একটি লাইটেস খুব দ্রুত আসতেছিল। এমরানের সে দিকে বিশেষ খেয়াল নেই। তার দৃষ্টি তখন দূর দিগন্তে। সাদা মেঘের ভেলার দিকে। কবিদের এই একটা দোষ। প্রায় সময়ই তারা অন্য মনস্ক হয়ে ওঠে। লাইটেস দ্রুত রাস্তা অতিক্রম করার সময় খানাখন্দের জমানো কাদা-পানি ছিটকে এমরানের প্রায় সমস্ত শরীর ভিজে যায়। পানির কিছু অংশ তার মিষ্টির বাক্সেও ঢুকে। চক্ষু রক্তবর্ণ করে এমরান কিছু বলতে বলতেই গাড়িটি দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। কাদায় কোটপ্যান্ট লেপ্টে যাওয়ায় সেদিন তার আর শ্বশুর বাড়ি যাওয়া হল না।
আ
পরের দিন। সকাল বেলা। বাড়ির পাশেই সে গরু দিয়ে হাল জুড়েছে। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর তার স্ত্রী হেম তার জন্য ভাত নিয়ে যায়। ভাত খেয়ে বউয়ের আঁচল দিয়ে হাত মুছে। হেমও তখন পানের খিলিটা এগিয়ে দেয়। পান খেতে খেতে তখন সে মনের সুখে গান ধরে। এমরান অবশ্য উপস্থিত গান রচনা করতে পারত। গলার অবস্থা বেসুরো হলেও তার গানের কথাগুলো ছিল হৃদয় হরণ করার মত। কৃষি কাজ করেও কবিতা ভাল লিখতে পারে বলে অনেকই তাকে কৃষক কবি বলে! আবার সে তার রচিত গানের সুর করে গায় বলে অনেকই তাকে গাতক বলে। এ রকম বেশকিছু সৃষ্টিশীল গুণ ছিল তার।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে বউ ঘরে ফিরলে এমরান আবারও চাষ শুরু করে। সূর্য তখন তার তীব্র তেজসক্রীয়তা ছড়াচ্ছে। সূর্যের তেজস্বক্রীয়তায় মনে হল কেউ যেন কারেন্ট দিয়ে শরীরে হিট দিচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে তার খুব তপানি তৃষ্ণা পেল। সে গলা ছেড়ে বেশ কয়েকবার হেম বলে হাঁক দিল। বাড়ির পাশে ধান ভাঙ্গানোর মেশিনের চলমান শব্দে বোধ করি সে হাঁক হেমর কর্ণগোচর হল না। উচ্চ স্বরে বেশ কয়েকবার হাঁক দেওয়ার ফলে তার আরও বেশি পানি তৃষ্ণা পেল। মনে হল ওর বুক পর্যন্ত যেন শুকিয়ে ওঠেছে! শরীর মুছার গামছাটা পর্যন্ত এখন সে খুজে পাচ্ছে না!
প্রচণ্ডরাগে সে চাষে ইস্তফা দেয়। লাঙ্গল জোয়াল কাঁধে নিয়ে গরু দুটিকে পিটাতে পিটাতে বাড়ি গেল। ওদোর পিণ্ডি যেন বুধোর ঘাড়ে! ঘরে পা ফেলতেই হেমকে বলল- গামছা দে। হেম গামছা খুঁজে বের করার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল। সারা ঘর তন্ন তন্ন করে কোথাও যখন পেল না তখন বেশ অসহায় হয়েই বলল- গামছা মুনে কয় রাইকা আইছ। গরের মইদ্যে কুহানে তো পাইলাম না।
-তুই জানস, সারা চক আমি গামছা খুঁজছি! কুনহানেই পাই নাই, গামছা কি উইরা যাইবো? যা বালো কইরা দেখ; আর হুন একগেলাস পানি দিয়া যা।
হেম ঘরের ভিতর গিয়ে দেখল পানি শেষ হয়ে গেছে। অন্য কাজের চাপে পড়ে কুয়া থেকে পানি তুলা হয়ে ওঠে নি। মস্ত বড় অপরাধীর মত সে এমরানের কাছে ঈষৎ নত কণ্ঠে বলল- তুমি বহ, আমি পানি নিয়া আইতাছি
-গরে পানি নাই?
-না
-নাই কেন?
-সারা দিন কার বাল ছিরস? মাগি কোহানকার!
কথাটি বলেই সে তার হাতের গরু মারার বেত দিয়ে হেমর পিঠে এক ঘা বসিয়ে দিল। হায়রে! কবি, কবিতা আজ যেন গরু মারার লাঠিতে! হেম বড় অদ্ভূত মেয়ে। চিৎকার চেচামেছি কিছুই করল না। কেবল আঁচল দিয়ে তার চোখের কোণের অশ্রু মুছতে মুছতে পানির জন্য বের হয়ে গেল। মুহূর্তেই এমরানের মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিয়ের এতদিন পর আজই প্রথম সে বউয়ের গায়ে হাত তুলেছে। নিজের ভেতরেই দহন শুরু হল। একবার ভাবলো না মারলেও হয়ত পারতো; কথা দিয়েও তো মানুষকে শায়েস্তা করা যায়! তখন নিজের উপর তার বেশ রাগ হতে লাগল। যন্ত্রনা লাঘবের জন্য নিজের হাত দিয়ে নিজের চুল টানতে গেল। মাথায় হাত দিতেই খেয়াল করল তার মাথার মধ্যেই রয়েছে গামছাটি। তখন সে একবার জিব কেটে লজ্জিত হয়ে প্রলাপের স্বরে বলতে লাগলো- হেম, তোর এই হাবাগোবা, আত্মভোলা জামাইডারে মাফ কইরা দিস রে, মাফ কইরা দিস।
ক্রমেই দিন গড়াতে লাগলো।
..................
২৭.০৯.২০১৪
মুনশি আলিম
শিবগঞ্জ, সিলেট
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৪
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো।
কষ্ট স্বীকার করে পড়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ।
শরতের সকল শুভ্রতা ছুঁয়ে যাক আপনার সৃষ্টিশীল আগামির প্রতিটি ক্ষণ।
অনেক ভাল থাকুন। শুভ কামনা।@ পরিবেশ বন্ধু
২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪০
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ১ম ভালোলাগা +
এই গল্পটাও ভালো লেগেছে ভ্রাতা ।
ভালো থাকবেন সবসময়
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৪
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো।
কষ্ট স্বীকার করে পড়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ।
অনেক ভাল থাকুন। শুভ কামনা। @অপূর্ণ রায়হান
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৫
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বেশ সুন্দর গলপকথা