নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালের আয়নায় মণিপুরী জীবনের চাল-চিত্র ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৫৯


প্রকৃতির অমোঘ ধারাকে স্বীকার করে স্বীয় গতিতেই চলছে মহাকাল। নদীর মতই কাল নিরবধি। চির চঞ্চল মহাকালের পালা বদলের প্রভাব পড়ে মানুষের ভাব-ভাবনায়,সংস্কার-সংস্কৃতিতে,জীবন ও মূল্যবোধে। এভাবে সভ্যতা এগোয় সোপানের পর সোপান ডিঙিয়ে। পৃথিবীতে বহুবার সভ্যতা ধ্বংশ হয়েছে, আবার নতুন করে সভ্যতা জন্ম নিয়েছে। স্থান এবং কাল ভেদে সভ্যতার রূপরেখাও ভিন্ন হয়। এই সভ্যতা টিকিয়ে রেখেছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের,বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বুদ্ধিসম্পন্ন বিচিত্র প্রকৃতির মানুষেরা। এসব মানুষদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকম সংস্কার। কালের যুগপৎ রেখায় অবশ্য আধুনিকতার কিছুটা ছোঁয়া সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেই বেশ একটা প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও এতে রয়েছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সুসঙ্গবদ্ধ বসবাস। দেশের স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে সৃষ্টিশীল অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে তাদের দৃপ্ত পদচারণা। এ রকমই একটি জাতি হল ‘মণিপুরী’। অপ্রিয় হলেও এ কথা সত্য যে,আমারা অনেকেই তাদের জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। তাদের বলা হয় উপজাতি; অথচ মণিপুরীরা একটি প্রাচীন জাতি। তাদের আদি বাসস্থান ভারতের মণিপুর রাজ্যে।
‘মণিপুরী’ শব্দটি দুভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। যথা- ‘মণি+পুরী’ অর্থাৎ ‘মণি’ শব্দের অর্থ হল মূল্যবান বস্ত্ত এবং ‘পুরী’ শব্দের অর্থ আলয়। সুতরাং ‘মণিপুরী’ শব্দের অর্থ বলা যায় মূল্যবান আলয় বা মূল্যবান গৃহ। আবার অন্যভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই, যারা ‘মণিপুরী’ রাজ্যের অধিবাসী তাদেরকে বলা হয় মণিপুরি। প্রকৃত পক্ষেই ভারতের মণিপুরি রাজ্যের মানুষকে মণিপুরী বলা হয়। প্রাচীনকালে মণিপুরী রাজ্যের বিভিন্ন নাম ছিল। যেমন- কংলৈপাক,কংলৈপুং,কংলৈ,মে এবাক,মেখলি,মিতাই লেইপাক। বিভিন্ন দেশের লোকেরা মণিপুরীদের ডাকত বিভিন্ন নামে। বার্মার লোকেরা বলতো ‘কাথে’। আসামের লোকেরা বলত ‘মেখলি’;কাছারের লোকেরা বলত ‘মোগলি’কারো কাছেই মণিপুরী জাতি আজকের মত মণিপুরী নামে পরিচিত ছিল না। মণিপুরী নাম হয় আজ থেকে প্রায় তিনশ বছর আগে। রাজা পামহৈবার আমলে। তখন সিলেট থেকে এক বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারক মণিপুর যান। তাঁর নাম শান্তি দাস গোস্বামী। তিনি বর্তমান মণিপুর মহাভারতের মণিপুর বলে প্রচার করেন। সেই থেকেই ঐ এলাকার নাম হয় মণিপুর। পরবর্তীতে ঐ এলাকার নাম অনুসারে ঐ এলাকার বাসিন্দারাও ধীরে ধীরে মণিপুরী বলে পরিচিতি লাভ করে। আসলে বর্তমান মণিপুর মহাভারতের মণিপুর নয়। মহাভারতের মণিপুর ভারতের উড়িষ্যার কাছাকাছি একটি জায়গা ছিল। আর বর্তমান মণিপুর ভারতের উত্তর পূর্বদিকে। বার্মার কাছাকাছি। লিখিতভাবে ‘মণিপুর’ শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় বৃটিশ যুগে। তখন মণিপুরের রাজা ছিলেন ভাগ্য চন্দ্র (১৭৬৪ - ?)। ঐ সময় মণিপুরে অনেক জাতি-উপজাতির বসবাস ছিল। রাজ্যের নাম পরিবর্তনে সবাই হয়ে যায় ‘মণিপুরী’।
বাংলাদেশে মণিপুরীরা বসবাস করছে প্রায় আড়াইশ বছর ধরে। বর্তমানে সবাই সিলেট বিভাগের অধিবাসী। তবে সবাই একই সময়ে আসেননি। মণিপুরীদের বংলাদেশে আসার সময়কে মোটামুটিভাবে তিনভাগে ভাগ করা যায়। ১৭৬৪/১৭৬৫ সালে মোয়রাংথেম নামে এক গোত্র প্রধান তার দলবল নিয়ে প্রথমে সিলেটে শ্রীমঙ্গল থানার সাঁতগাও এ বসবাস শুরু করেন। আবার অনেকের মতে বাংলাদেশের মণিপুরীরা বাস করছেন আরও আগে থেকে। ১৭০৯ থেকে ১৭৪৮ সালে রাজা পামহৈবার আমলে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার বিশগাঁও এলাকায় আসেন প্রথম মণিপুরীরা। অবশ্য আগে থেকেই সিলেটের সাথে মণিপুরীদের যোগাযোগ ছিল। মণিপুরীরা ছিল বৈষ্ণব। আর বৈষ্ণব ধর্মের গুরু শ্রী চৈতন্যদেবের জন্মস্থান সিলেটের ঢাকা দক্ষিণে
দ্বিতীয় পর্যায়ে মণিপুরীরা বাংলাদেশে আসে ১৭৯৮ সালে। সর্বশেষ ১৮২৫ সালে বার্মার অত্যাচারে অনেকেই দেশের বাইরে পালিয়ে যায়। যাদের অনেকেই পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন -সিলেট, ঢাকা ও নেত্রকোনায় বসতি স্থাপন করে। কিন্তু বর্তমানে সিলেট বিভাগ ছাড়া আর কোথাও মণিপুরী বসতি নেই।
মণিপুরীদের সাক্ষরতার হার অনেক বেশি। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে মুণপুরী সাহিত্যের এক জরিপে জানা যায় যে,এ সময়ে সাক্ষরতার হার ছিল ৬১%। ১৯৯৭ সালে এ সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৭০%। আর বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫% এ দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল মণিপুরীদের উচ্চ শিক্ষার হার কম। প্রায় প্রতিটি মণিপুরীই স্কুলে যায়। গ্রামে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ না থাকায় দারিদ্ররা উচ্চ শিক্ষা নিতে পারে না।
তবে শহরে সুযোগ থাকায় উচ্চ শিক্ষার হার অনেক বেশি। অনেকে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। তবে তা তাদের মোট জনসংখ্যার তুলনায় খুবই নগন্ন। ১৯৯৭ সালে মণিপুরীদের মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০,০০০। আর বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজারে এসে পৌঁছেছে। মণিপুরীদের সাক্ষরতার হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে,পুরুষদের তুলনায় নারী শিক্ষার হারই বেশি। বর্তমানে নারী শিক্ষার হার ৪৬%। অবশ্য সময়ের সাথে পাল্লা করে তাদের উচ্চ শিক্ষার হারও অনেকটা বেড়েছে। বর্তমানে তা প্রায় ৩২% উত্তীর্ণ হয়েছে। তবু তা মোট সাক্ষরতার তুলনায় খুবই কম।
মণিপুরীরা খুবই পরিশ্রমী জাতি। কৃষির পরেই মণিপুরীদের প্রধান পেশা তাঁত শিল্প। মূলত মেযেরাই তাঁতের কাজ করে। পুরুষরা কৃষি কাজ ছাড়াও ব্যবসার সাথে যুক্ত আছে। কেউ কেউ আবার সরকারী চাকরিও করছে। তবে মজার ব্যাপার হল মণিপুরীদের মধ্যে কোন ভিক্ষুক নেই। সমাজে গরবিদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য অন্যরা সব সময় সহায়তা করে। মণিপুরী তাঁতশিল্প যতটা নিখঁত ও উন্নত ততটা কিন্তু তার প্রচার ,প্রসার ও ব্যাপকতা পায়নি। সরকারের একটু শুভ দৃষ্টির মাধ্যমেই সম্ভব তাদের তাঁত শিল্পের প্রচার,প্রসার ঘটানো। সম্ভব তাদের উৎপন্ন বস্ত্র বিদেশে রপ্তানীর মাধ্যমে তাদের সৃষ্টিশৈলিতার মূল্যায়ন প্রদান করা। তাদেরকে স্বাবলম্বী ও শৈল্পিক কাজে উৎসাহ প্রদানে সরকারের শুভ দৃষ্টির বিকল্প নেই।
মণিপুরীরা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বসবাস করেন। প্রতিটি মণিপুরী পাড়াতেই থাকে একটি মন্দির এবং মন্ডপ। মন্দির ও মন্ডপ সকল ধর্মীয় ও সামাজিক কাজের কেন্দ্র। প্রতিটি পাড়ায় শিংলুপ নামে একটি সংগঠন থাকে। পাড়ার সব পরিবার শিংলুপ এর সদস্য। পাড়ার সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হল শিংলুপ এর প্রধান। আবার কাছাকাছি কয়েকটি পাড়া মিলে হয় লৈপাক পনচায়’ বা সমাজ। মণিপুরী সমাজের সবাই বিনা তর্কে ‘লৈপাক পনচায়ের’ বিচার মেনে চলেন;যা গণতন্ত্রের বা স্বাধীনতার পরিপন্থি বলে অনেকেই অভিযোগ তোলেন।
বর্তমানে মণিপুরী বসবাসকারীদের মধ্যে রয়েছে তিনটি সম্প্রদায়।
যথা- ক. মৈতৈ বা মৈতি, খ.বিষ্ণুপ্রিয়া, খ.মৈতৈ পাঙান। মৈতৈ পাঙানরা মুসলমান। মৈতি বা মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়ারা বৈষ্ণব ধর্ম পালন করে। তবে মৈতদের মধ্যে প্রাচীন ধর্মের অনুসারীও আছেন। প্রাচীন ধর্মের নাম ‘আপোকপা’। মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়াদের মধ্যে বেশ মত বিরোধ আছে। যে রকম মুসলিম শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যে দেখা যায়। একদল অন্যদলকে মণিপুরী বলে স্বীকার করতে চান না।বর্তমানে তাদের এই মতভেদ অন্তঃদ্বন্ধে পরিণত হয়েছে।
মণিপুরীদেও দুইটি ভাষা আছে। একটি মৈতৈ ভাষা এবং অপরটি বিষ্ণুপ্রিয়া। ভাষায় দুই দলের মধ্যে কোন মিল নেই বললেই চলে। একদল আরেক দলের ভাষা বোঝে না। মৈতৈদের ভাষা বাংলা ভাষা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ ভাষা তিববতী ও চীনা ভাষার কাছাকাছি। বিষ্ণুপ্রিয়ার ভাষা মৈতে,আসাম,চাকমা ও বাংলা ভাষার মিশ্রণ। মৈতৈ ভাষার একটি বর্ণমালা আছে। প্রায় ২,০০০ বছর আগে এ বর্ণমালার সৃষ্টি হয়। তখন বর্ণ সংখ্যা ছিল ১৮টি। পরে মহারাজা খাগেম্বার আমলে আরও ৯টি বর্ণ যোগ করা হয়। এখন মোট বর্ণ সংখ্যা ২৭টি। মণিপুরী ভাষার প্রতিটা বর্ণের নাম মানুষের দেহের এক একটি অঙ্গের নামে। এক সময় এ বর্ণে সবকিছু লেখা হত। রাজা পামহৈবার আমলে মৈত ধর্ম রাজ ধর্ম হয়ে যায়। বৈষ্ণব ধর্মের সবকিছুই ছিল বাংলা ভাষায় লেখা। তখন থেকে মণিপুরী ভাষাও বাংলা বর্ণমালায় লেখা শুরু হয়। বর্তমানে অনেকেই অবশ্য পুরনো বর্ণমালা চালু করার চেষ্ট করছে। দুঃখের বিষয় হল - তাদের নিজস্ব বর্ণমালা আছে ঠিকই কিন্তু তার যেমন লিখিত স্পষ্ট রূপ নেই,তেমনি সরকার কর্তৃক স্বীকৃতিও নেই।
মণিপুরীদের বেশির ভাগই বর্তমানে বৈষ্ণব ধর্ম পালন করে। রাজা পামহৈবার আমলে ১৭০৯ থেকে ১৮৪৮ সালে বৈষ্ণব ধর্মের বিস্তার ঘটে। অপরদিকে মণিপুরে ইসলাম ধর্ম প্রবেশ করে প্রায় ৪০০ বছর আগে। মণিপুরীরা সবাই নামের সাথে সিংহ উপাধি রাখেন। অবশ্য এই উপাধি নিয়ে মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়াদের মধ্যে বিতর্ক আছে। এইসব বিতর্কের সুরাহা এখনো হয় নি।
মণিপুরীদের বিয়ে বড়ই বিচিত্র প্রকৃতির। সম্পূর্ণ বিয়ে শেষ হতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে যায়। মণিপুরী ছাড়া অন্য কারো সাথে মণিপুরীদের বিয়ে নিষেধ। কেউ কোন অমণিপুরীকে বিয়ে করলে তাকে কুল ত্যাগী ঘোষণা করা হয়। মৃত ঘোষণা করে তার শ্রাদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন প্রকার মন্ত্রের মাধ্যমে তাদের বিয়ের কাজ সমাপ্ত করা হয়। তবে উল্লেখ্য যে মণিপুরীদের মধ্যেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে থাকে। বর্তমানেও তা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। তাদের বিয়েতে রেজিস্টারি প্রথা না থাকায় অনেকেই মামলা মোকদ্দমা তথা ন্যায় বিচার পায় না। সরকারও অবশ্য রেজিস্টারি ব্যবস্থা চালু না করার কারণে মূল্যবান রাজস্ব হারাচ্ছে। রেজিস্টারি ব্যবস্থা চালু করলে একদিকে যেমন মণিপুরীরা উপকৃত হবে তেমনি সরকারও এ থেকে কিছুটা রাজস্ব পেতে পারে। সুতরাং সরকারের এদিকে একটু দৃকপাত করা উচিত।

মণিপুরীরা নাচপ্রিয় জাতি। নাচ-গান মিশে আছে তাদের ধর্মীয় জীবনের সাথে। নাচ মণিপুরীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র বিষয়। মণিপুরী নাচ বা নৃত্য প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত। লোক নৃত্য ও শাস্ত্রীয় নৃত্য। লাইহারাওবা,খাম্বা থোইবী,থাবল চোংবী,মাইবি জাগোই,লৈমা জাগই ,লৈমেশ জাগোই হচ্ছে লোকনৃত্য। শাস্ত্রীয় নৃত্য হচ্ছে রাস, গোষ্ঠীলীলা,উদূখল,মৃদঙ্গ নৃত্য। মণিপুরী নৃত্যের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাস নৃত্য। রাস তাদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এতে রাধা কৃষ্ণ ও গোপীনীদের অভিনয় দেখানো হয়। এই রাস নৃত্য আবার পাঁচ ধরনের। যথা -মহারাস,বসন্তরাস,কুঞ্জরাস,দিবারাস ও নিত্য রাস।
মণিপুরী লোককথা বা গ্রামীন গল্পকে বলা হয় ফুঙ্গাওয়ারী। ‘ফুঙ্গা’ হচ্ছে মণিপুরী ঘরের ঠিক মাঝখানে যে আগুন রাখা হয় তার নাম। আর ‘ওয়ার মানে ‘গল্প’। শীতের রাতে দাদা-দাদীরা, নাতি-নাতনীদেরও আগুনের চারপাশে বসিয়ে যে গল্প শোনাতেন তাই ‘ফুঙ্গাওয়ারি’। এর আরেক নাম চাকঙাই ওয়ারি। ‘চাকঙাই’ অর্থ ‘ভাতের অপেক্ষা’। দিনের কাজকর্ম সেরে মা যখন রান্না করতে যান তখন মুরববীরা ছোট বাচ্চাদের একত্রে বসিয়ে ভাতের অপেক্ষা করতে করতে গল্পকরতেন। মণিপুরদের এই লোককথা,গাঁথাগুলো সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কালের গর্ভে প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। সরকারের একটু শুভ ইচ্ছার মাধ্যমেই এর আশু সমাধান করা সম্ভব।

সময় গতিশীল। এই সময়ের সাথে পাল্লা করে চারপাশের অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটছে। আধুনিকতার ছোঁয়া কিংবা শহুরে সংস্কৃতিরও অনুপ্রবেশ ঘটছে গ্রামাঞ্চলে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল মণিপুরীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার বেশি থাকলেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে সচেতনতা যেন এতটুকুও পৌঁছে নি। তারা জন্ম বিরতিকরণ বা জন্ম নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে এখনও অনেকটাই অজ্ঞ। সরকার এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো একটু খতিয়ে দেখে তাদের জন্ম নিয়ন্ত্রনের আওতায় আনার জন্য ইতিবাচক প্রচার এবং প্রসরের মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। মণিপুরীরা সমাজ ও দেশ সম্পর্কে কিছুটা সচেতন থাকলেও প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে তেমন জড়িত নয়। তারা আজ আদিবাসী হিসেবে নয়,অধিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চায়। চাকরি ক্ষেত্রে যে কোঠা পদ্ধতি রয়েছে তারও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চায়। বর্তমান সরকার দিন বদলের মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী আবার সমানাধিকার সম্পর্কেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আশা করছি, মণিপুরী সম্প্রদায়েরাও অর্থনীতি, রাজনীতি,সংস্কৃতি,ধর্মনীতি প্রতিটা ক্ষেত্রেই সবার মত সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে। এ ব্যাপারে সরকারের শুভ দৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন।
....................
২৪।১০।২০১৪
মুনশি আলিম
জাফলং, সিলেট

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.