নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যগল্প 'মামার উপহার'

০৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:১৭






এক.
আষাঢ় মাস। রুবজ এ রহমান মামার পুকুর ভর্তি পানি। বৃষ্টি একটু বেশি হলেই তার পুকুর গাঢ় ব্যাঙ ও পানিতে ভরে ওঠে। ঝুম বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। মামাকে সবাই ‘মুটকো’ বলে ডাকলেও আমি কিন্তু ভুলেও সে নামে ডাকিনি। বরং আমি তাকে ‘বিজ্ঞানী’ নামে ডাকি। বিজ্ঞানী মানে ভাষাবিজ্ঞানী আর কি! সবচেয়ে মজার বিষয় হলো উনি মানব ভাষা বিজ্ঞানী নন, জীবজন্তুর ‘ভাষাবিজ্ঞানী’! বাবুই টিয়ে ময়না, তেলাপোকা, টিকটিকি প্রভৃতি সব প্রাণীরই ভাষা বুঝতেন। এটা কেউ বিশ্বাস না করলেও আমি বিশ্বাস করতাম।
একবার ঝুম বৃষ্টির মধ্যে মামা আমাকে পুকুর পাড়ে নিয়ে এলেন। আমি বললাম- কিতা অইছে মামা?
- আইয়ো মজা দেখবায়।
আমি মজার কথা শুনে আর কথা বাড়ালাম না। ছোট্ট শিশুর মতো তাকে অনুসরণ করলাম। পুকুরের দিকে তাকাতেই দেখি দুপাশ থেকে বড় বড় গাঢ় ব্যাঙ লাফিয়ে পুকুরে পড়ছে। ব্যাঙের রাজ্যটি কতই না ভালো! কোন ব্যক্তি পূজা নেই, চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি নেই; নেই পেট্রোল বোমার মতো ভয়ানক ছড়াছড়ি! আহা! কতই না মিল তাদের। পুকুরে বৃষ্টির সাথে পাল্লা করে ভরাট গলায় ডাক শুরু করে দিয়েছে। গ্যাগু, গ্যাগু...। মামা একটু ম্লান হেসে বলছে- অউ শুরু অইল ব্যাঙীয় সঙ্গীত! ব্যাঙ আমার বেশ ভালো না লাগলেও ব্যাঙের ডাক আমার ভীষণ ভালো লাগে। কারণ বাঙীয় ভাষার উপর দীক্ষা নিচ্ছি তো তাই! মাঝে মাঝে তো মনে হয় ব্যাঙীয় সঙ্গীতের কাছে অনায়াশেই হার মানবে রবীন্দ্র সঙ্গীত! বিখ্যাত কবি অতুল প্রসাদ সেন বলেছিলেন, কী জাদু বাংলা গানে... । ব্যাঙের ভাষার উপর দীক্ষা নেওয়ার পরপরই আমি কবির এই লাইনটা সংশোধন করে বলি- কী জাদু ব্যাঙের গানে... !
যাইহোক, একদল ব্যাঙকে দেখলাম সমম্বরে গ্যা গু করে উঠতে। আমি মামাকে বললাম- আইচ্চা মামা, শিয়ালোর লাখান তারা একলগে গ্যাগু খরে খেনে? উখটার অর্থ খিতা? মামা বিজ্ঞের মতো হাসি দিয়ে বললেন, - অউমাত্র ফানিত নামছইন যারা- তারা বিদেশ তাকি আইছইন। আইয়াও খইরা - খই গো ময়নার মা, ফুল পরির মা ... জলদি আও। বৃষ্টিত হানিমুন খরতাম! হানিমুনের কথা শুনে আমার একটু একটু লজ্জাই লাগলো। মনে মনে বললাম, হায়রে! ব্যাঙেরও আবার হানিমুন! তবুও মামার কথাটির অর্থ পরিপূর্ণ না বুঝে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।

মামা বুঝলেন আমি তার কথা বিশ্বাস করিনি। তিনি তার কথার সত্যতা প্রমাণের জন্য বললেন- অউ দেখ, ব্যাটা ব্যাঙ ডাখার লগে লগেই বেটিন ব্যাঙ গর তাকি বারইয়্যা আইছে। উ দেখ তারা এখটা আরেকটার উফরে ...! আমি একটু তাকিয়েই কেমন যেন লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। অস্ফুট স্বরে বললাম- ছি!
এরা আসলে বাংলাদেশের কোন পুকুরে বাস করছে নাকি প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রে বসবাস করছে ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না! তিনি আরও বলতে থাকেন- ব্যাঙ সম্প্রদায়র মধ্যে কোন হিংসা-কিনা নাই, জাতপাত নাই, ধনী-গরিব নাই। এরা সখলে একলাখান। তবে মাঝে মাঝে তর লাখান দু-একটা বেয়াদদপ আছে-
- আমার লাখান মানে?
- আমি মামার দিকে ভ্রু কুচিয়ে তাকালাম। মামা বললেন- মানে স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়া খালি ফুরিনতর পিছে ঘোরে আরকি!
- আমি ফুরিনতর পিছে ঘুরিনি, না ফুরিন আমার পিছে ঘুরে?

আমি একটু মনখারাপ করলাম দেখে মামা হঠাৎ করে আরেক জোড়া নতুন ব্যাঙের জুটি দেখিয়ে বললেন- অউ দেখ তারা অইল গিয়া নতুন প্রেমিক-প্রেমিকা। তারার দুইয়োটার মধ্যে এখন অভিমান চলের! তোমার মামির লগে যেলা আমার চলের! বুলগেরিয়ার ফুরিন মার্কেটে তানতান দামান খোঁজ খরইন, আর ব্যাঙীরা খোঁজ খরইন পানিত! বুঝছোনি ভাগনা? মামার কথা শুনে আমার বেশ হাসিই পেল। কিন্তু বেয়াদবি হবে ভেবে খুউব করে চেপে গেলাম।

দুই
পরের দিন। মামার এক বন্ধুর বিয়ে। বিয়েতে কী উপহার দেওয়া যায় তাই নিয়ে তিনি বেশ চিন্তায় আছেন। আমি বললাম- মামা বই উপহার দেন। তিনি বললেন- দূর বেটা! নিজে তো বেটা কবি মানুষ এর রাগি খাল বই বই খররে! তর লাখান তারা অত বইয়ের পাগল নায়। বুজরেনি। তিনি কী একটা কুটকৌশলী চিন্তা করলেন। কিন্তু মুখফুটে কিছুই বললেন না।

বিয়ে বাড়িতে মহাধুমধাম চলছে। একের পর এক অতিথিরা উপহার সামগ্রী দিয়ে অভ্যর্থনাশালায় রেখে ভিতরে প্র্র্র্রবেশ করছে। মামা বেশ বড় একটা উপহারের কাটুন নিয়ে এসেছেন। ভিতরে কী আছে আমাকে বলেননি। আমি সাহস করে আর জিজ্ঞেস করিনি। হঠাৎ করে নেমপ্লেডের দিকে চোখ পড়তেই আমার গা শিউরে উঠলো। আমি কেবল ক্ষীণস্বরে বললাম- আফনার শত্রু ‘খাইখাই তালুকদার’র নাম লেখলা খেনে?
-মাতিস না। খইমুনে ফরে।
খাইখাই তালুকদার মামার পুরনো শত্রু। একই এলাকায় না থকলেও তাদের মধ্যে ছিল বনিয়াদি শত্রুতা! সুযোগ পেলেই একে অপরকে কৌশলে বাঁশ দিতেন। আজ কী মনে করে যেন মামা উপহার কার্ডে নিজের নাম না লিখে খাইখাই তালুকদারের নাম লিখেছেন। আমার কৌতূহল যেন আর সরতেই চায় না। আমার কেবলি মনে হতে লাগলো ভিতরে তিনি ভালো কিছু দেননি।

বিয়ের পরের দিন বিশ্বস্তসূত্রে জানলাম- মামা উপহারের খাইখাই তালুকদারকে জব্দ করার জন্য বাক্সে দুই হালি ব্যাঙ দিয়েছিলেন! সবাই নাকি খুব সমালোচনা করেছিল খাইখাই তালুকদারের। কেবলমাত্র তার বন্ধু শোভনই তালুকদারের কোন সমালোচনা করেননি। কেননা, উপহার কার্ডে মামার হাতের লেখা দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা আসলে খাইখাই তালুকদারের কাজ নয়; কাজটি রুবজ এ রহমানের। এরপর থেকে তার বন্ধুটি আর কোনদিনও তার সাথে কথা বলেননি। এখানেই শেষ নয়, উপহারটি দেওয়ার পরের দিন থেকে সেই যে মামার হাতে হুট করে ব্যথা উঠল, কত ডাক্তার কবিরাজ, বদ্যি দেখানো হলো, কোন উন্নতি হয়নি। সেই থেকে মামার ডান হাতটি এখনো প্রায় অকেজো।

--------------------------
০৮.০৫.২০১৫
মুনশি আলিম
জাফলং, সিলেট




মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৩

সুমন কর বলেছেন: পড়ে মজা পেলাম। গল্পে মজা থাকলেও শেষ দুই লাইন ভাল লেগেছে। সব কিছু নিয়ে দুষ্টমী করা ঠিক নয়।

১ম +।

০৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন:

:)

:D


ধন্যবাদ ।

প্রিয় বন্ধুবর ।

২| ০৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভালোই লাগলো।

০৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: এক সমুদ্র ভালোবাসা রইল।

৩| ০৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:১৬

শায়মা বলেছেন: গুড!!!


এই গল্পটা অনেক ভালো হইসে!!!:)

সাবধান ভাইয়া এই ব্লগে একজন দার্শনিক আছে তিনি আবার আপনার গল্পের প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের সন্ধান পাইয়া এখানে দৌড়ে আসতে পারেন!!!!

০৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:২৯

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: :) :D B-) :#) !:#P !:#P :P :P
আপনি হয়ত জানেন না আমি সম্পর্কে ওনার দাদু হই...

আসলে
কয়েকশ
বছর
ধরে
আমি
তাকেই
খুঁজছি

ধন্যবাদ ও শুভ কামনা । প্রিয় ...

৪| ০৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:২২

জেন রসি বলেছেন: মজা পাইলাম :)

০৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৪

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: :) :D B-) :-B :#) =p~ :P


হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা

৫| ০৮ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৫৩

শায়মা বলেছেন: বুঝতে পেরেছিলাম তুমি তার দাদু......

০৯ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪০

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: :D :D :D :D :D :D :D =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ :P :P :P :P :P :P :P :P :P


ধন্যবাদ । আপনার কী ফেবু আইডি আছে ???

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.