নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক.
একবার ম্যাটিনি কুমিরে খুব খিদে পেল। গত দুদিন থেকে সে না খাওয়া। খিদের জ্বালায় সে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পরিকল্পনা করল যাকে সামনে পাবে তাকেই সাবার করে ফেলবে। এতে সে ছোট হোক বা বড় হোক। যে কথা সেই কাজ। নদীতে তন্নতন্ন করে শিকার খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও পেল না। শেষ পর্যন্ত তার মনে হলো একবার ডাঙায় উঠে শিকারের খোঁজ করলে কেমন হয়! মানুষ হোক কিংবা অন্যকোন প্রাণী হোক যে কোন একটা হলেই চলবে। পরিকল্পনামাফিক সে শিকার ধরার জন্য ডাঙায় উঠে এল। তখন সূর্যবাবু অনেকটা মায়া করে স্নিগ্ধ আলো বিতরণ করছিল পৃথিবীতে। পাশেই বল নিয়ে খেলা করছিল শোভন নামের সাত বছরের এক শিশু। দেখতে বেশ ফুটফুটে। সে খেলায় এতই মগ্ন ছিল যে, তারপাশে অন্যকিছু আছে কিনা তা তার দৃষ্টিগোচর হয়নি।
শোভনের একটু দূরে নদীর কিনারেই রোদের তাপ নিচ্ছিল টিউ নামের এক গ্যাছো ব্যাঙ। গত সপ্তাহে প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টিতে ভিজে তার খুব সর্দি লেগেছিল। যদিও সাধারণত ব্যাঙদের সর্দি লাগে না। কিন্তু তার ক্ষেত্রটা ভিন্ন। শাররীকভাবে টিউ ছিল খুবই দুর্বল। অনেক ডাক্তার বদ্যি দেখানোর পরও কোন উন্নতি না হওয়ায় শেষপর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত নিল প্রতিদিন সে সকালোর রোদ পোহাবে। এর নেপথ্যে অবশ্য অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণও রয়েছে। রাতের বেলা সে স্বপ্ন দেখেছে। ঘুমের মধ্যে কোন এক ‘মহাসাধু ব্যাঙ’ এসে তাকে ‘রোদ পোহানোর’ এ পরামর্শটি দিয়েছে। সেই সাথে এও হুমকি দিয়ে গেছে যদি সে রোদে তাপ না নেয় তাহলে সে অচিরেই ফুসফুস ক্যানসারে মারা যাবে! অনেকটা জীবনের ভয়েই সে এখন রোদে তাপ নেওয়ার জন্য গর্ত থেকে বাহিরে আসে। শরীর দুর্বল থাকায় সে আগের মতো আর উপার্জন করতে পারে না। ফলে প্রায়সই তাকে অর্ধাহারে-অনাহারে কাটাতে হয়। আর এই কারণেই তার স্বাস্থ্যের অনেকটা অবনতি হয়েছে। স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে বটে কিন্তু সে ভেঙ্গে পড়েনি। ‘মহাসাধু ব্যাঙ’র কথা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করছে।
মধ্যযুগের সব কবিরা যেমন স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে কবিতা লেখার প্রেরণা পেত তেমনি ব্যাঙরাজ্যের সব ব্যাঙই ঘুমের ঘোরে স্বপ্নকে খুব গুরুত্ব দিয়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করত। আর সে ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জনৈক কবি লিখেছিলেন, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে। ব্যাঙরাজ্যের ক্ষেত্রেও তেমনিভাবে বলা যায়- ঘুমিয়ে আছে ‘মহাসাধু ব্যাঙ’ সব ব্যাঙেরই অন্তরে! যদিও কবি উক্তিটি লেখার সময় চরমভাবে পক্ষপাতিত্ব করে মাতাকে বাদ দিয়ে শুধু পিতাকেই লিখেছিলেন!
ব্যাঙদের মধ্যে সবাই সমান। তাদের মধ্যে পুরুষাধিপত্য নেই বললেই চলে। ব্যাঙদের মধ্যে কোন কবি ভুলেও বলে না- আমাদের দেশে হবে সেই পুরুষ ব্যাঙ কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে! বরং তারা সমানাধিকারের রেশ তুলে বলে- আমাদের দেশে হবে সেই ব্যাঙ কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
যাইহোক, অন্যমনস্ক হয়ে রোদে তাপ নিচ্ছিল টিউ ব্যাঙ। ম্যাটিনি কুমিরের চোখ কেন যেন প্রথমে তার দিকেই পড়ল। সে বড় করে হা করতেই বাইরে থেকে বাতাস শো শো করে তার মুখের মধ্যে প্রবেশ করতে লাগলো। এ যেন সুনামির চেয়েও কোন অংশে কম নয়! প্রথম শো শো শব্দ শুনতেই টিউ ব্যাঙের চৈতন্য ফিরলো। কিন্তু পালানোর যেন আর উপায়ই নেই। কুমিরটি তার খুবই কাছে চলে এসেছে। বাতাসের প্রচণ্ড চাপে নিজেকে সে আর সংবরণ করতে না পেরে একেবারে সে কুমিরের মুখেই এসে পড়ল। আজ আর রক্ষে নেই। মরার আগেই সে যেন মরার উপক্রম হলো। তবুও মনে খুউব সাহসে এনে সে করজোর করে বলল- মহারাজ, আমি অত্যন্ত ক্ষুদ্র প্রাণী, আমাকে খেয়ে আপনার তো পেট ভরবেই না বরং আরও জ্বালা বেড়ে যাবে। আপনি যদি আমার প্রাণ ভিক্ষে দেন তবে আমি আপনার এক মাসের আহারের বন্দোবস্ত করে দিতে পারি। ম্যাটিনি কুমিরটি ছিল ভারী লোভী। খানিকক্ষণ কী যেন ভাবলো। তারপর বললো- বেশ তাই হোক। তবে মনে রাখিস, চালাকি করলে তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর প্রাণ যাবে কিন্তু!
দুই
টিউ ব্যাঙটি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। লাফ দিয়ে সে ডাঙায় নামলো। মনে মনে পালানোর ফন্দি আঁটছে। কিন্তু কোন উপায়ই সে খুঁজে পাচ্ছে না। আরেকটি লাফ দিতে পারলেই সে বাঁচে। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। কেননা, কুমিরটি তাকে বেইমান মনে করে পুনরায় খেয়ে ফেলবে। হঠাৎ তার মনে হল ছোট্ট শিশুর কথা। মনে হতেই সে বলল- মহারাজ, ঐ যে আপনার শিকার! তবে সাবধান!
ছেলেটিকে দেখেই কুমিরে জিভে জল চলে এল। আহা! কতদিন হয় এমন নাদুস নুদুস খাবার সে খায় না। ব্যাঙ ক্ষীণ কণ্ঠে বলে- মহারাজ খুব আস্তে যাবেন কিন্তু, কোন রকমের যেন শব্দ না হয়। ভুলেও যেন সে টের না পায়।
নিজের জীবন কোনরকমে রক্ষা পেল এটা ঠিক, কিন্তু আরেক জনের জন্যও তার বেশ খারাপ লাগছে। ছেলেটি দেখতে খুব ফুটফুটে। ওর জন্য তার ভারী মায়া হল। তার চোখের সামনেই এমন সবর্নাশ হতে যাচ্ছে দেখে সে খুবই বিচলিত হয়ে পড়লো। কিছু একটা করতেই হবে, কিন্তু কী? কীভাবেই বা শিশুটিকে রক্ষা করা যায় তড়িৎ গতিতে সে চিন্তা করতে করলো- হ্যাঁ একটা উপায় আছে, কিন্তু খুবই রিস্কি। শিশুটির একটু আগেই ছিল এক লাল বালতি। বালতিতে যেন কালো রঙের কী রাখা আছে। ঐ কালোরঙ কৌশলে কুমিরের চোখে দিতে পারলেই হলো।
কিন্তু এ তো মহা বিপদের কথা। যে কোন সময়ই কালো রঙ তার দেহে লেগে যেতে পারে। তাছাড়া বালতি সে কীভাবে কাত করবে তা নিয়েও সে বেশ বিপাকে পড়লো। সময় খুবই কম। আর এ কম সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে। যে কথা সেই কাজ। ব্যাঙ বলল- মহারাজ সামনে আসেন, ঐ লাল বালতির মধ্যেও আপনার আরও একমাসের খাবার রাখা আছে। বেশ মজাদার, বিদেশি সুপ!
আরও একমাসের খাবার! তাও বিদেশি সুপ! কুমির তো মহাখুশি। খুশিতে সে গেয়েই উঠলো- আহা! কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে! ব্যাঙ কথাটি বলেই সে এক লাফ দিয়ে বালতির কাছে গেল। কুমির কিন্তু ধীর গতিতে আসছে। আসতে আসতে বালতির প্রায় একেবারে কাছেই চলে এলো।
টিউ ব্যাঙ খুব করে বালতির হাতলে উঠে বসলো। কিন্তু বালতি যেন কোন কিছুতেই কাত হচ্ছে না। বিপদ আসন্ন দেখে ব্যাঙের চোখে পানি এসে গেল। নিজের বোকামির জন্যই আজ তার নিজের উপর খুব ঘৃণা হচ্ছে। মনে মনে ভাবছে- আমি তো গেলামই সাথে শিশুটিকে নিয়ে গেলাম। কেউ কী নেই রক্ষা করার। তার মনে পড়লো সাধু ব্যাঙের কথা। কিন্তু মনে হলেই বা কী! সাধু ব্যাঙ তো দিনে কথা কয় না। সে কেবল রাতে আসে রাতে যায়, তাও স্বপ্নের মধ্যে!
ব্যাঙের যেন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। জোরে গ্যাগু করে শেষ বারের মতো সে হাতলে লাফিয়ে পড়লো। শব্দ করলে নাকি ভয়কে জয় করা যায়। এটি তার দাদি ছোটবেলায় তাকে শিখিয়েছিল। কুমিরকে সে শব্দ করতে নিষেধ করেছে অথচ সে নিজেই শব্দ করে হাতলটাতে লাফিয়ে পড়ছে। কুমিরের রাগ আর দেখে কে! আজ দুটোরই রক্ষে নেই। আমার শিকার নষ্ট করছিস, দাঁড়া তোর শব্দ করা দেখাচ্ছি- এই বলেই সে আরও জোড়ে বুক চালিয়ে বালতির কাছে চলে এলো।
তিন
ব্যাঙের গ্যাগু শব্দ শুনেই শোভন পিছন দিকে তাকায়। দেখে বিরাটাকারের এক কুমির। ভয়ে সেও চিৎকার করে ওঠে। ততক্ষণে তার হাতের বলটি গড়াতে গড়াতে বালতির গায় গিয়ে লাগতেই বালতিটি কাত হয়ে গেল। ব্যাঙ পড়িমরি করে বেঁচে গেল। বালতি কাত হতেই কালো রঙের কী যেন কুমিরের মুখে গিয়ে পড়লো। বিদেশি সুপ মনে করে কুমির তো মহানন্দে খেতে লাগলো।
একে একে সব চেটেপুটে খেল। ওমা, বিদেশি সুপের এত তেজ কেন? আমার পেট জ্বলে যাচ্ছে, সারা শরীর যেন পুড়ে যাচ্ছে! ওরে ভণ্ড ব্যাঙ! আমাকে কী খাওয়ালি, দাঁড়া, তোকে দেখাচ্ছি মজা! কিন্তু কুমির আর নড়তে পারে না। কালো সুপ খাওয়ার সাথে সাথেই তার মুখ, পেট, বুক ঝলসে গেল। মুহূর্তের মধ্যেই কুমিরের সমস্ত শক্তি যেন নিঃশেষ হওয়ার পথে। শিশুর চিৎকারে বাড়ির গৃহকর্তা বিজ্ঞানী শুভ্র তালুকদার দৌড়ে এল। একি কাণ্ড! কুমিরে বালতির সব সায়ানাইট দেখছি খেয়ে ফেলেছে! ঐ তোরা কে কোথায় আছিস, দেখে যা। দৌড়ে আয়।
নিথর কুমিরকে দেখতে একে একে সবাই সশস্ত্র হাজির হলো। কিন্তু কাউকেই কিছু করতে হলো না। দেখতে দেখতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই কুমিরটি মৃত্যুর কোলে টলে পড়লো।
কেউ খেয়াল না করলেও শিশুটি তখন ব্যাঙের দিকে তাকাল। ব্যাঙ মুচকি হাসি দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগে বলল- বন্ধু ভালো থেকো।
-------------------
০৯.০৫.২০১৫
মুনশি আলিম
জাফলং, সিলেট।
০৯ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: অফুরন্ত ভালোবাসা । শুভ কামনা সতত।
২| ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৪
সানজিদা আয়েশা সিফা বলেছেন:
আপনাকে প্রথমেই অভিনন্দন জানাই যে আপনি শিশুদের নিয়ে লিখছেন । আমাদের দেশে শিশু সাহিত্যের আসলেই খুব অভাব ।
লেখা ভাল হয়েছে । তবে শিশুরা সাধারণত কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করে , তাই গল্পে যত ফ্যান্টাসি টুইস্ট থাকবে তারা ততই সেটা পছন্দ করবে ।
ভাল থাকুন নিরন্তর ।
০৯ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: আপু, আপনার সুপরার্শের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানবেন।
৩| ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
শিশুতোষ?
০৯ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৯
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: আপনার কী মনে হয়- বুড়াতোষ???
ধন্যবাদও শুভ কামনা
৪| ১০ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ভালো লাগা।
১০ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৫
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: আজকের সবটুকু ভালোবাসাই রইল আপনার প্রতি। শুভ কামনা সতত।
৫| ১০ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:০৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সায়ানাইট বালতিতে রাখে নাকি?
গল্প মোটামুটি ভাল লেগেছে
১০ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:১৩
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: বিজ্ঞানী শুভ্র তালুকদার কেন রাখলো তা তো জানি না, হয়ত কোন কাজের জন্যই রেখেছিলো।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:১৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ বেশ মানবপ্রেমি ব্যাঙ তো!