নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক.
টুসি যখনই বাগানে খেলতে যেত তখনই দলে দলে প্রজাপতিরা তার পাশে এসে ভীড় করতো। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই নিয়ে তার বান্ধবী চুমকির সাথে অবশ্য তার একটু দূরত্ব বেড়েই চলছে। চুমকি চায় টুসি কেবল তাকেই সময় দিক, কিন্তু ঘটে তার উল্টোটা! ফলে দিনকে দিন তাদের দূরত্ব বেড়েই চলল।
একদিন পরিকল্পনা তার কাছে আসা সব প্রজাপতিগুলোকে ওষধ খাইয়ে মেরে ফেলবে। যে কথা সেই কাজ। কোথা থেকে যেন সে বিষ কিনে আনলো। লুকিয়ে লুকিয়ে বাগানে সব ফুলের মধ্যে দিয়ে দিল। সেদিন কাকতালীয়ভাবেই বিকেলে ঝড়ো বৃষ্টি হলো। চুমকির তো খুব মন খারাপ। কারো সাথে ভালো করে কথাই বলছে না। ঝিম মেরে তার পড়ার কক্ষে বসে রইল।
তার ছিল এক হুলো বিড়াল। বন্ধু চুমকির মন খারাপ দেখে সে যেন এখন তার পিছই ছাড়ছে না। কেবলি একটু পরপর কাছ এসে লেজ দিয়ে চুমকিকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। চুমকি এমনিতেই খুব রাগে ছিল। বিড়ালের গা ঘেঁঘাঘেঁষিতে তার খুবই বিরক্ত লাগলো। হাতে ছিল স্টিলের স্কেল। সজোরে বেড়ালের মাথায় মারতেই বেড়ালটি ম্যাও ম্যাও করে সেখানেই শুয়ে পড়লো। মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে লাগলো। সেকি ফেনা! ঝর্ণার মতো অবিরাম ধারায় বের হচ্ছে তো হচ্ছেই। থামার নামটি পর্যন্ত যেন
চুমকির সেদিকে কোনই খেয়াল নেই। সে শুধু ভাবছে কীভাবে টুসির সাথে বন্ধুত্ব আগের মতো গাঢ় করা যায়। চিন্তা করতে করতে একসময় সে ঘুমিয়ে পড়লো। কয়েক মুহূর্তেই সে স্বপ্নের রাজ্যে চলে গেল। সেখানে সে দেখল বিভিন্ন ভাবে এই হুলো বিড়ালই তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এই বিড়ালের লেজ ধরে সে যদি কোন সহযোগিতা চায় অনায়াসেই সে তা পাবে।
স্বপ্নের মধ্যে মহাবার্তা পেয়ে সে তো মহাখুশি। ঘুম ভাঙতেই দেখে তার আদরের বিড়াল বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছে। নাড়াচাড়া করার পরও সে নড়ছে না। তার ওপর মুখের ফেনাতে বিড়ালের চারপাশ ভরে গেছে দেখে চুমকি আরও বেশি ভয় পেয়ে গেল। একপর্যায়ে সে তো কান্নাই শুরু করে দিল। ওমা! সেকি কান্না! বিড়ালের জন্য কোন কালে এমনভাবে কেঁদেছে কিনা হলফ করে বলা মুশকিল! তার কান্নায় বাড়ির লোকজন চলে আসলো। বিড়ালের জন্য কাঁদছে দেখে তার বাবার একটু রাগই হলো। কিন্তু তা সাময়িক চেপে গেলেন। বেড়ালের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। বিকেলের মধ্যেই বিড়াল ভালো হয়ে গেল।
দুই.
সন্ধ্যা। স্বপ্নের নির্দেশমতো চোখ বন্ধ করে সে বেড়ালের লেজ ধরলো। প্রথমে বিড়ালটি লেজ ছাড়াতে নিজ থেকেই চেষ্টা করলো। কোনভাবেই যখন ছাড়াতে পারলো না, তখন আকস্মিকভাবেই চুমকির হাতে খুব শক্ত করে আঁচর বসিয়ে দিল। শুধু কী আঁচর! সেই সাথে এক রাক্ষুসী কামড়!
চুমকি তো অবাক। একি হলো! এমন তো হবার কথা ছিলো না। হাত থেকে যখন রক্ত বের হচ্ছে তখনই চুমকি কেঁদে ফেলল। চুমকির এটা এক বিরাট খারাপ অভ্যাস। কান্না শুরু হলে আর শেষ হতেই চায় না। ঘটনা শুনে চুমকির বাবা তো অনেক রাগ করলো। রাতের ভিতরেই বিড়ালটাকে নদীতে ফেলে দিয়ে আসবে।
যেইকথা সেই কাজ। চুমকি বাবা টিটন মল্লিক যেইমাত্র বিড়ালটিকে ধাওয়া করলো অমনিই তার প্রেসার বেড়ে গেল। হায়! রে , এ বিড়াল তো দেখা যায় সত্যিই অশুভ! কোথা থেকে যেন চুমকির মা বিষ কিনে এনেছে। রাত দশটার দিকে দুধভাতের সাথে খেতে দিবে।
চুমকির হাতের ব্যথা তখনো সারেনি। কিন্তু বিড়ালটিকে মেরে ফেলবে শুনে তার খুবই মন খারাপ হয়ে গেল। হয়ত একটু আঁচরই দিয়েছে, এ আর এমন কি গর্হিত অপরাধ। এই ক্ষুদ্র অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড মোটেও প্রাপ্য নয়। ছোট হলেও বিষয়টি সে খুউব করে উপলব্ধি করলো। কীভাবে বিড়ালটিকে বাঁচানো যায় মনে মনে সে এই চিন্তা করতে লাগলো। শেষপর্যন্ত সেই আঁচর খাওয়া হাত দিয়ে পুনরায় সে বিড়ালকে কাছে ডাকলো। বিড়ালটি ছিল বেশ আহ্লাদি। ডাকার সাথে সাথেই কাছে এল। সব অভিমান ভুলে চুমকিও বিড়ালটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বিড়ালও মনিবের সোহাগে পেয়ে চোখ বন্ধ করে দিল।
এরপর সে হঠাৎ করেই বিড়ালের লেজ ধরে চোখ বন্ধ করে বলল- আমাকে হীরের আংটি এনে দাও। একি আর আলাদীনের জাদুর চেরাগ, যে চাইলেই পাওয়া যাবে! কিন্তু টুসি থেমে থাকার পাত্রী নয়। সে বিড়ালের লেজটি পুনরায় টান দিয়ে বলল- আমাকে হীরের আংটি এনে দাও।
তীব্র ঝাঁকুনির চোটে বিড়াল আর সইতে পারলো না, পায়খানা করে দিল। বর্ষার অবিরাম বৃষ্টির মতো পায়খানা করছে তো করছেই। মুহূর্তের মধ্যেই সমস্ত বিছানাটি ভরিয়ে ফেলল। চোখ খোলতেই সে দেখতে পেল সমসত বিছানাটি বিড়ালের পায়খানায় ভরে গেছে। বিড়ালের গুয়ের গন্ধে তার খুব বমি পেল। হাতের কাছেই ছিল স্কেল। সে আর কালিবাহি করলো না। স্কেল হাতে নিয়েই বিড়ালে পিঠে এ ঘা বসিয়ে দিল। প্রহারের চোটে বিড়ালটি ম্যাও ম্যাও করতে করতে বেরিয়ে গেল।
চুমকি তার আম্মুকে ডাকতে ডাকতে নিজেই বিড়ালের পায়খানা পরিষ্কার করার কাজে লেগে গেল। বিড়ালের পায়খানা পরিষ্কার করতে গিয়ে তার চোখ তো কপালে উঠার মতো অবস্থা। একি কাণ্ড! সত্যি সত্যি বিড়ালটি হীরের আংটি দিয়ে গেছে। তবে একটি নয় এক জোড়া! চুমকি তো মহাখুশি। তার আম্মুকে সব খুলে বললো। এরই মধ্যে তার বাবাও চলে এলো। তার আম্মুর কাছ থেকে তিনিও সব শুনলেন। খুব করে আশ্বাস দিলেন বিড়ালটিকে যেমন করেই হোক ফিরিয়ে আনবেন।
কিন্তু একদিন গেল, দুদিন গেল, তিন দিন। কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া গেল না। এভাবে সপ্তাহ, মাস, বছর পেরিয়ে গেল। সে অভিমানী বিড়াল আর ফিরে এলো না।
--------------------
মুনশি আলিম
২৫.০৫.২০২৫
জাফলং, সিলেট
©somewhere in net ltd.