নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাব্য: সূর্যসবুজ
জামিল জাহাঙ্গীর বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রতিভাবান শব্দ সৈনিক। শব্দ নিয়ে খেলতে খেলতে শৈল্পিক করে তোলাই যেন তাঁর অন্যতম প্রধান কাজ! এককথায় টগবগে তরুণ কবি। লক্ষ্মীপুর জেলার রামনগর উপজেলার রামগঞ্জ গ্রামের মাতুলালয়ে ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা: মুহম্মদ ফজর আলী, পেশায় শিক্ষক। মা মোসাম্মত মনোয়ারা আলী। পেশায় গৃহিণী।
ছোটবেলা থেকেই কবি জামিল জাহাঙ্গীর ছিলেন সংস্কৃতিমনা। সংস্কৃতির প্রায় সকল অঙ্গনেই তিনি বুক ফুলিয়ে চষে বেড়ানোর চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে গান ও লেখালেখি নিয়েই তিনি বেশি ব্যস্ত সময় পার করতেন। অবশ্য প্রথম দিকে গুনগুনিয়ে গানের কাজই বেশি চালিয়ে যেতেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রকার গানের অনুষ্ঠানে ধীরে ধীরে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০১২ সালে তার প্রথম গান ‘এখনো সূর্যটা আলো দিয়ে যায়’ প্রচারিত হয়। সেই থেকে এখনো তিনি গানের একজন নিবেদিত প্রাণ। এ তো গেল একদিক। তাঁর সবচেয়ে বেশি সফলতা হল কাব্য সাহিত্যে।
যতদূর জানা যায়, খুব ছোটবেলাতেই তাঁর কবিতায় হাতেখড়ি হয়। তার প্রথম প্রকাশিত ‘চারপ্রশ্ন’ কবিতাটিও অবশ্য জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক মানবজমিনে ছাপা হয়। দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করলেও তিনি বইয়ের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসেন ২০০৮ সালে। তাঁর প্রথম কাব্যের নাম ‘বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’(২০০৮)। তিনি একাধারে কবি, আবৃত্তিকার, গীতিকার, সুরকার, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক প্রভৃতি। একনজরে তাঁর সাহিত্যসৃষ্টি-
বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড (২০০৮)
শুভ্র প্রেম ধ্রুব তুমি (২০০৯)
এসো চুরি হয়ে যাই (২০১০)
তোর জন্য কালো কবিতা(২০১০)
সূর্যসবুজ(২০১৩)
উপন্যাস: রাত্রিগাঁথা (২০১২)
কবি জামিল জাহাঙ্গীরের প্রকাশিত প্রথম কাব্য বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড (২০০৮) থেকে পঞ্চম কাব্য সূর্যসবুজ (২০১৩) এর বিষয়বস্তুর দিক থেকে যেমন পার্থক্য রয়েছে তেমনি পার্থক্য রয়েছে ভাষার সরলীকরণে। সূর্যসবুজ কাব্যটি চার ফর্মার। সাহস পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত এই কাব্যটির প্রচ্ছদ করেছেন সোহাগ পারভেজ। কাব্যে সর্বমোট কবিতার সংখ্যা হল: ৫০টি। তাঁর কাব্যের বৈশিষ্ট্য ঠিক তাঁরই মতো স্বতন্ত্র। কাব্য বিশ্লেষণে যে কয়েকটি দিক ফুটে ওঠেছে তা হল-
• সমকালীন বাস্তবতা,
• রঙ্গ-ব্যাঙ্গ
• রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি,
• শ্রেণি বৈষম্য
• মানবিকতা,
• ইতিহাস-ঐতিহ্যতা,
• প্রেম, প্রকৃতি,
• বৈশ্বিক জটিলতা,
• দেশপ্রেম প্রভৃতি।
• বিবিধ
কবি জামিল জাহাঙ্গীর শব্দকে শিল্প করে তুলতে যেমন সিদ্ধহস্থ তেমনি সিদ্ধহস্থ দৃষ্টিকটু বিষয়কে রঙ্গ-ব্যাঙ্গের মাধ্যমে আয়নার মতো করে চোখের সামনে তুলে ধরতে। ইতিহাসের আলোকে আমরা দেখি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থার শ্রেণিবৈষম্য। যুগে যুগে এ বৈষম্যের কেবল রূপের বদল ঘটে, যেভাবে বদল ঘটে শাসকের। শাসকরা সমাজে টিকে থাকতে খুব বলিষ্ঠ হাতে লালন-পালন করে গোষ্ঠী, কিংবা মিডিয়া। বর্তমান চ্যানেল মিডিয়াগুলোও যেন কেমন পোষা হয়ে উঠেছে। বাংলা সিনেমাগুলো দেখলে যেমন অনেকটা বলে দেওয়া যায় কোন ঘটনার পর কী ঘটবে তেমনি নাজুক হয়ে উঠছে এইসব চ্যানেলগুলো। ‘সূর্যসবুজ’ কাব্যের প্রথম কবিতাতেই তিনি একধরনের ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপের বান ছুড়ে মেরেছেন সমাজের শাসক শ্রেণির পালিত চ্যানেলগুলোর প্রতি।
বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়েছে পিএসসি
শু্ক্রবার সন্ধ্যায় পুঁজরক্ত বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত
কইলজাখোর কাফনচোর খইল্লার প্রত্যাবর্তন
হাবিলদারকে স্যার না বলায় জেনারেলের
বিরুদ্ধে মানহানি মামলা, পাশের বাড়ির
জড়িনার সঙ্গে ভেগেছে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও
উৎস: চ্যানেল পত্রিকা, সূর্যসবুজ, পৃষ্ঠা: ১১
সমকালীন বিষয়বস্তুকেই তাঁর কাব্যে তুলে আনতেই তিনি বেশি দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। বর্তমান আমাদের দেশে লোডশেডিং হচ্ছে নিত্যনৈমেত্তিক সমস্যা। অবশ্য এ বৃহৎ সমস্যা সম্পর্কে দেশের ছোট-বড় সকলেই জ্ঞাত আছে। এমনকি স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের পাঠ্যপুস্তকেও তা পাঠ্য করা হয়েছে। অতএব প্রতিদিন শুনতে শুনতে এইসব শব্দগুলো এখন যেন আর গায়েই লাগে না। কিন্তু বিষয়টি মৌলিক বিধায় তিনি অনেকটা আবেগঘন করে এই বিষয়টা উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন।
আমার বাবার কবরের পাশ দিয়ে বিদ্যুতের তার
হেঁটে গেছে দূর গ্রামে
লোডশেডিংয়ে খুউব চিন্তিত হই
বাবা বুঝি এই গরমে চরম হাঁসফাঁস করছেন!
উৎস: লোডশেডিং, সূর্যসবুজ, পৃষ্ঠা: ১২
মাইকেল মধুসূদন দত্ত যেমন তাঁর জন্মস্থানের মাতৃতুল্য কপোতাক্ষ নদকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন, জীবনস্মৃতিতে মালার মতো করে গেঁথেছেন তেমনি স্মৃতির বীণায় গাঁথতে চেয়েছেন কবি জামিল জাহাঙ্গীর।
ডাকাতিয়া নামক কবিতাতেই তার প্রমাণ মিলে।
তাঁর কবিতাতে তিনি ইতিহাসকে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন নিপুণভাবে। তাঁর কবিতার চরণে কবিতা যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। যেমন:
চারশ বছরের পুরনো শহরে জলন্ত লাভার
এমন দাপাদাপি বিপন্ন জীবনের ছুটোছুটি
হোসেনী দালান জুড়ে ফের নেমে আসা
যেনো সেই কারবালা মাতম
উৎস: হোসেনী দালান, সূর্যসবুজ, পৃষ্ঠা: ১৪
তাঁর কাব্যশৈলিতে যেমন স্বাতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায় তেমনি লক্ষ্যণীয় তাঁর কাব্যের ভাষার সরলীকরণ। পাঠক মাত্রই যেন অনায়াসে তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। যেমন:
এমন এমন আকাশ আছে
নিমিষেই বেঁধে ফেলা যায়
ইচ্ছের শাদা সুতোয়
কিছু কিছু মানুষ আছে
যার গন্তব্যের কোন সবুজ সংকেত নেই
এরকম রাত আকাশ ও মানুষের কাছাকাছি আমিও ছিলাম
পৃথিবী ঘুমুতে যাবার একটু আগে।
উৎস: না রাত না আকাশ না মানুষ, সূর্যসবুজ, পৃষ্ঠা: ১৯
(চলবে)
-----------------------
২৩.০৬.২০১৫
মুনশি আলিম
জাফলং, সিলেট
ইমেইল: [email protected]
©somewhere in net ltd.