নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প \'ট্রেইনিং\'

০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩২






এক.

- তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কতদিন হয় দেখি না! তোমার হাতের ভাত খাওয়া হয়ে উঠে না কতদিন! জানো, এক মুহূর্তের জন্যও তোমার কথা ভুলতে পারিনি। বাড়ির সবার কথাই মনে পড়ে। গ্রামের মেঠোপথের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে দস্যিপনার কথা! আম্মু, আম্মু এখন রাখছি। পরে কথা হবে।

কথাটি বলেই মোবাইলটি বন্ধ করে দেয় অনিক। পাছে কোন উধ্বর্তন অফিসার দেখে ফেলে এই ভয়ে সর্বদাই সে তটস্থ থাকতো। কেননা, সেনাবাহিনীতে ট্রেইনিং অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। অনিক দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে দীর্ঘশ্বাসের ভিতর ছটফট করে মুক্ত হওয়ার বাসনা।

পৃথিবীর কোল জুড়ে খা খা রোদ্দুর। তবুও দূর আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে শাদা মেঘের ভেলাগুলো মুচকি হাসছে। কেবল বৃক্ষ গুল্মই কেমন পানির অভাবে হাঁপিয়ে ওঠেছে! ঠিক এদের মতোই পরিবারের সদস্যদের দেখার জন্য অনিকের মনও কেমন যেন তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছে ।

মনে মনে ট্রেইনিংয়ের হিশেব করতে থাকে। কতদিন পর তার ট্রেইনিং শেষ হবে, আর কবেই বা সে তার মাকে দেখতে পাবে। সবেমাত্র দুইমাস গেল! আরও চার মাস বাকী। হায়রে! দিন যেন ফুরোতেই চায় না!

দুই.

পরের দিন। একটু পরেই প্যারেড গ্রাউন্ড জাম্পিং হবে। ট্রেইনিং যে কষ্টের সে জানতো কিন্তু এতোটা কষ্টের তা জানতো না। যথাসময়েই জাম্পিং শুরু হল। অল্প সময়ের মধ্যেই তার খুব তেষ্টা পেল। মনে হচ্ছে তার বুকের পাঁজর বুঝি ফেটেই যাবে! সিনিয়রকে বলেও কোন লাভ হয়নি। শেষপর্যন্ত দুরুদুরু বুক নিয়ে কমান্ডিং অফিসারের দ্বারস্থ হল।

কমান্ডিং অফিসার সুনীল তালুকদার খুবই শক্ত মানুষ। আর সে কারণেই একটু রূঢ় কণ্ঠে বলে দিলেন- নির্দিষ্ট সময়েই খানি হবে। এর আগে কোন প্রকার খানি বা বিশ্রাম নেওয়া যাবে না।

অগত্যা আর কোন উপায় না দেখে মনে মনে সে খুব মূষড়ে পড়লো। একবার ভাবলো চাকরিটা ছেড়েই দিবে। যে চাকরিতে বিন্দুমাত্র স্বাধীনতা নেই, মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয় সে চাকরি করেই বা লাভ কী! নিজের পক্ষে যুক্তি খুঁজে বের করার চেষ্টা করে কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হলো, ট্রেইনিং পিরিয়ডে তো চাকরি ছাড়া যায় না, কেবল পালিয়ে গেলেই...! মুহূর্তের মধ্যে সে কত কি-ই না ভাবলো। একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়লো। জাম্পিংয়ে তার ডাক পড়লো। অন্যনস্ক থাকায় অফিসার খুবই রাগ করলেন। অফিসারের কথা যে কত বড় অন্যায় সেনাবাহিনীতে যারা চাকরি করে কেবল তারাই জানে!

অনিকের ক্ষেত্রেও তাই ঘটল। শাস্তি পেতেই হবে। শুরু হয়ে গেল তার শাস্তি। তার দুপায়ে একটি করে ইট বেঁধে দেওয়া হল। এপার থেকে ঐপারে সাঁতরিয়ে যেতে হবে। কমান্ডিং অফিসার নৌকোতে চড়ে তার পিছনে পিছনে থাকলেন, যাতে সে পানিতে তলিয়ে না যায়। অনিক মনে মনে ভাবছে আজকের পর সুযোগ পেলেই সে পলায়ন করবে। যে করেই হোক তাকে পুকুরের শেষপ্রান্তে পৌঁছতেই হবে। কিছুদূর যাওয়ার পর অনিক খুবই হাঁপিয়ে ওঠলো। এই বুঝি তলিয়েই যাবে। উপায়ন্তর না দেখে বুটের দিকে হাত বাড়ায়। কিন্তু অফিসারের তাতে মন তো গরলই না উপরন্তু অনিকের হাতে বেত দিয়ে আঘাত করলো। একবার ‘উ মা’ বলে চিৎকার করলো। তারপর জীবন বাজি রেখে প্রাণপণে হাতপা চালানোর চেষ্টা করে। এমন সময় অফিসারের মোবাইলে কল আসে। অফিসার আলাপে মত্ত হয়ে ওঠে।

পুকুরটির দৈর্ঘ্যও বেশ বড়। প্রায় আশি হাত। পুরো উদ্যম চালিয়ে অপর প্রান্তের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। কিন্তু তার শক্তি ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। শত চেষ্টা করেও সে যেন আর পানির উপরে মাথা তুলতে পারছে না। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। হাত বের করে একবার হেল্প চাইল। পরবর্তীতে সে শত চেষ্টা করেও আর পানির উপরে হাত তুলতে পারেনি। ক্রমশই সে পানির নিচে তলিয়ে যেতে থাকে।



অপরাহ্ণ। সকালের সেই খা খা রোদ্দুরের লেশও নেই। আকাশের কোল জুড়ে স্থান নিয়েছে কালোমেঘ। এই বুঝি নামবে মেঘ। প্রকৃতিকে বুঝে ওঠা খুবই মুশকিল। কেননা, ক্ষণেই সে হাসে আবার ক্ষণেই সে কাঁদে। এই প্রকৃতির চেয়েও যেন মানুষ রহস্যময়। শতবছর একত্রে বসবাস করেও মানুষকে সঠিকভাবে বুঝা যায় না। শেষপর্যন্ত বৃষ্টি নামলো না। সমস্ত আকাশ জুড়ে কালোমেঘের গুমোট একটা ভাব ছড়িয়ে পড়লো। এ বুঝি প্রকৃতির চির বিষণ্ন রূপ! কিংবা সর্বোচ্চ মনখারাপের দিন! এভাবে অনেকক্ষণ পর অফিসারের কথা বলা শেষ হল। কথা বলতে বলতে তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন অনিকের কথা।

হঠাৎ অনিকের কথা মনে হতেই সে হকচকিয়ে ওঠে। অনিক বলে জোরে ডাক দেয়। এক দুই তিন... এভাবে ডাকতেই থাকে। কথা বলতে বলতে যে কখন প্রায় আধঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেছে সে বলতেই পারে না! অফিসারের নিজের ভিতর দহন শুরু হয়। চিৎকার করে উঠে। অনিক! অনিক! ওঠো। আফিসারের চিৎকার পুকুরের চারদিকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ক্রমে ক্রমে মিলিয়ে যায় মহাকাশের গভীর থেকে গভীরে।


-------------
মুনশি আলিম
০১.০৭.২০১৫
জাফলং, সিলেট
ইমেইল: [email protected]


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৫১

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:১৩

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ । শুভ কামনা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.