নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগামী শুক্রবার ভাতিজার নাম রাখা হবে। মামা রুবজ এ রহমান অনেক জ্ঞানী মানুষ। সিদ্ধান্ত নিলাম মামাই ওর একটা ভালো নাম রাখুক। মামাসহ গণ্যমান্য অনেককেই নিমন্ত্রণ করা হল। দেখতে দেখতেই শুক্রবার চলে এল। মামার নিমন্ত্রণ উপলক্ষ্যে বাড়িতে রান্নার বেশ আয়োজন চলছে। কোর্মা-পোলাউয়ের গন্ধে চারদিক যেন মৌ মৌ করছে। আহা! সারা পৃথিবীতে যদি প্রতিমাসে একবার কোর্মা-পোলাউ দিবস থাকত, তবে কতই না মজা হত!
চারদিকে বেশ সাজসাজ রব। যেন মাননীয় মন্ত্রী আসছেন! বৈঠক ঘরে আমরা সবাই বসলাম। সবার দৃষ্টিই মামার দিকে। কী নাম রাখেন, বা কেমন নাম রাখেন- তা নিয়ে সবার মধ্যেই একধরনের মৃদু কৌতূহল ছিল। মিষ্টান্ন খাওয়ার পর মামা বেশ একটু ভাবসাব নিয়ে বললো- দেখুন, বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নাম রাখতে হবে।... এভাবে বেশ কিছুক্ষণ বক্তৃতা করে সুন্দর একটি আবহ সৃষ্টি করলেন। ফলে তার প্রতি সবার কৌতূহলের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বেশ ভাবসাব নিয়ে তিনি বললেন- ওর নাম হল- এই বলেই একবার ঢোক গিললেন- তারপর আবার বললেন- ওর নাম হল- দোলা।
নামটি বলার সাথে সাথেই সবাই কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে। কেউ বা শ্লেজিং করে মৃদু হাসছে। কেউ কেউ আবার প্রকাশ্যে বলেই ফেললেন- এটা কোন নাম হল! মামা বিজ্ঞের মতো ব্যাখ্যা করে বললেন- দোলা চমৎকার নাম। বিশ্বসভ্যতায় দোল খায় যে সেই হচ্ছে দোলা। তাছাড়া এই নাম রাখার পিছনে এক বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তা হল- সে যখন স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে তখন তার বড়রা তাকে ডাকবে- দোলা এদিকে এসো, কিন্তু ছোট যারা তারা তো আর নাম ধরে ডাকতে পারবে না, তারা ডাকবে দুলাভাই...!
কথাটি শেষ হতেই বৈঠক জুড়ে হাসির রুল পড়ে গেল। সেকি হাসি যেন থামতেই চায় না। সেই থেকে আমরা তাকে উপাধি দিয়েছি রসিক রুবজ! পরের দিন। মামার কলেজের নতুন বিল্ডিংয়ের উদ্ভোধন। তিনি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এমপি মহোদয়, ইউএনও, সাংবাদিক নেতৃবৃন্ধসহ সুধীসমাজ উপস্থিত। চারদিকে বেশ আনন্দঘন পরিবেশ। সবার সক্রিয় উপস্থিতি ও মুর্হমুর্হু করতালির মাধ্যমে উদ্ভোধনের কাজ শেষ হল। নিজের নাম ও কলেজকে হাইলাইটস করার জন্য তিনি বেশ বড় করে ব্যানারে লিখিয়েছিলেন রুবজ এ রহমান মহিলা কলেজ।
ব্যানারটি এমনভাবে টাঙ্গানো ছিল যে তিনি অবস্থান করছিলেন ব্যানারের একেবারে বামদিকে। সাংবাদিকরা বেশ কিছু ছবি তুললেন। সারাংশ লিখে নিলেন। কষ্ট স্বীকার করে এসেছেন বিধায়ই সাংবাদিকদের কিছু পারিতোষিকও দেওয়া হল। পরের দিন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে বেশ বড় করে নিউজ হল। কিন্তু যে ছবিটা দেওয়া হল তা দেখে যেন চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা! উপরে লেখা- শুভ উদ্বোধন, নিচের লাইনের সম্পূর্ণটা আসেনি। আসছে- রুবজ এ রহমান মহিলা!!! হায়রে! কপাল। সাংবাদিকদের উপর তিনি বেশ চটে গেলেন। অশিক্ষিত সাংবাদিক, কুলাঙ্গার সাংবাদিক... ইত্যাদি শ্রাব্য অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিতে থাকলেন। সাংবাদিকদেরই বা কী দোষ! প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত তিনি ব্যানারের বামদিকে ছিলেন বিধায় তার মাথার পিছনে কলেজ শব্দটি ঢাকা পড়েছে! সকাল থেকেই পত্রিকাগুলো হটকেকের মতো বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি হওয়ারও তো কথা!
শুধু এখানেই শেষ নয়। সকাল থেকেই মামার মোবাইলে ফোন আসা শুরু হয়েছে- কোন পুরুষ মানুষ মহিলা হলো-এটা কী উদ্বোধনের বিষয়? মামী মেডিকেলে ছিলেন। কার কাছ থেকে যেন খবর পেয়েছেন। শেষে নিজ চোখে পত্রিকা দেখে তিনি তো অগ্নিশর্মাই হয়ে গেলেন। উত্তপ্ত কণ্ঠে ফোন করে বললেন- ছি! তুমি মহিলা হয়েছ? এমপি-মন্ত্রী দিয়ে নিজের মহিলাসত্ত্বকে কেউ উদ্বোধন করে? তোমার সাথে আর যাই হোক, আমার ঘর করা সম্ভব নয়!!!
অবস্থা খুবই খারাপ! মামা কাঁদো কাঁদো হয়ে আমার কাছে এলেন। ক্ষীণস্বরে বললেন- ভাগিনারে আমি তো শেষ হয়ে গেলাম! মামার দুঃখে আমারও বেশ খারাপ লাগতে লাগলো। একবার মনে হল-এই দিনে ‘বিশ্বকান্না দিবস’ পালন করা উচিত! পিছন থেকে মামার ভাবী তখনোও ছড়া কেটে বলেই চলছে-
আষাঢ় মাসের পহেলা
রবজ হইল মহিলা!
বাজাও তোমরা বেহালা...
-------------
মুনশি আলিম
০১.০৭.২০১৫
জাফলং, সিলেট
ইমেইল: [email protected]
০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০৪
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন:
আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ।
এটা স্বীকার্য যে এটা বই উপযোগী করে তৈরি করা হয়নি। অনেক বড় লেখাকে ছোট করে আনা হয়েছে। ফলে শিল্পবোধ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে।
আপনার পরামর্শের জন্য আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ ।
শুভ কামনা সতত।
২| ০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০৩
মশিকুর বলেছেন:
বুঝলাম দুলাভাইয়ের আবিষ্কারক এখন মহিলা
রম্য ভালই লেগেছে। প্রচেষ্টা চলুক
০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০৬
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন:
ধন্যবাদ কষ্ট স্বীকার করে পড়ার জন্য।
শুভ কামনা জানবেন।
৩| ০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪২
নাসরীন খান বলেছেন: +
০৩ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৪৩
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: ধন্য হলাম। ভালোবাসা অফুরান।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৪
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভালই হয়েছে। আরও ভালো হতে পারতো। অনেক জায়গায় জোর করে হাসানোর চেষ্টা দেখা যাচ্ছে- রম্য মানে কিন্তু জোর করে হাসানো নয়।
কিন্তু সর্বোপরি খারাপ না। আপনার লেখার হাত বেশ ভালো। সাবলীলভাবে বর্ণনা করতে পারেন। একটানে পড়া যায় লেখা, কিন্তু এ রম্যটায় কেমন যেন
একটু খামতি ছিল।
রম্য লেখার চেষ্টা করতে থাকুন। শিবরাম চক্রবর্তী একদিনে শিবরাম চক্কত্তি হননি